সোমবার ● ২১ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ মামলায় ঝালকাঠিতে তিন ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে
৪৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ মামলায় ঝালকাঠিতে তিন ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে
ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: গ্রাহকের নামে জালিয়াতির মাধ্যমে ঋণ দেখিয়ে ৪৭ লাখ টাকা আত্মসাতের মামলায় উত্তরা ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার সাবেক ব্যবস্থাপকসহ (চাকরিচ্যুত) তিন কর্মকর্তাকে জেল হাজতে পাঠানো নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার দুপুরে ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শহিদুল্লাহ এ আদেশ প্রদান করেন।
উত্তরা ব্যাংকের সাবেক এ কর্মকর্তারা হলেন, ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী মো. শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার মো. আমির হোসেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ঝালকাঠি শহরের কৃষ্ণকাঠি এলাকার আবদুল জলিল খানের বাসস্ট্যান্ডে আলেয়া ইলেকট্রনিক্স সেন্টার নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ২০১২ সালে উত্তরা ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী মো. শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার মো. আমির হোসেন আলেয়া ইলেকট্রনিক্স সেন্টারের নামে ৫০ লাখ টাকা সিসি (ক্যাশ ক্যাডিট) ঋণ নিয়ে জমি কিনে ব্যবসা করার প্রলোভন দেখান আবদুল জলিল খানকে।
২০১৩ সালের ২৩ অক্টোবর ওই তিন কর্মকর্তা ব্যবসায়ী জলিলের কাছ থেকে বিভিন্ন কাগজপত্রে সাক্ষর নেন। ওই বছরের ২ ডিসেম্বর তাঁর নামে ২৫ লাখ টাকার সিসি ঋণ পাস করা হয়েছে বলে একটি হিসাব খুলে টাকার অংক ও তারিখ বিহীন দশটি চেকের পাতায় সাক্ষর রাখেন। ১০ ডিসেম্বর তিনি ব্যাংকের শাখায় গিয়ে সিসি ঋণের দুই লাখ টাকা উত্তোলন করতে যান।
তখন তিনি জানতে পারেন, ওই তিন ব্যাংক কর্মকর্তারা তাঁর অজান্তেই ৫ ডিসেম্বর ২৫ লাখ টাকা তুলে আত্মসাত করেন। ব্যাংকের কাগজপত্রে দেখানো হয়, ব্যবসায়ী জলিল খান সিসি ঋণের অনুকূলে ব্যাংকের ম্যানেজারের নামে একটি আম মোক্তার নামা (দলিল) প্রদান করেন। জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হলে ব্যাংক ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস ৪০ লাখ টাকা পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেন আবদুল জলিল খানকে।
একাধিকবার অঙ্গীকার করেও তিনি টাকা পরিশোধ করেননি। উল্টো ওই ব্যাংক কর্মকর্তারা আবদুল জলিল খানের নামে ২৯টি কৃষি ঋণের গ্রান্টার হিসেবে তালিকাভুক্ত করেন। এতে বিপদে পড়েন ওই ব্যবসায়ী। এদিকে তিনি ব্যাংকে ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েন।
এমন পরিস্থিতিতে বসতঘর নিলামের হাত থেকে রক্ষা পেতে ২০১৫ সাল থেকে তিনি বাধ্য হয়ে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ঋণের সুদ পরিশোধ করেন।
এ ছাড়াও উত্তরা ব্যাংক ঝালকাঠি শাখার সাবেক এই তিন কর্মকর্তা ২৬ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ২১ লাখ ৪৩ হাজার টাকা কৃষি ঋণ পাস করে জালিয়াতির মাধ্যমে উঠিয়ে আত্মসাত করেন। এই ঋণ পাসের সময় ব্যবসায়ী আবদুল জলিলকে গ্রান্টার দেখানো হয়।
এ ঘটনায় একাধিকবার সাবেক এ ব্যাংক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করা হলেও তিনি টাকা দিতে পারেননি। অবশেষে ২০২১ সালের ২৭ মে ঝালকাঠির জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে তিনজনকে আসামি করে মামলা করেন ব্যবসায়ী আবদুল জলিল খান। আদালত মামলাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঝালকাঠি থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।
ঝালকাঠি থানার উপপরিদর্শক গৌতম কুমার ঘোষ ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে ২৮ নভেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এদিকে মামলার বাদী উত্তরা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও অভিযোগ দেন। তদন্ত শেষে অর্থ আত্মসাতের ঘটনার প্রমান পেয়ে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপক এম এ কুদ্দুস, ঋণ আদায়কারী মো. শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও সুপারভাইজার মো. আমির হোসেনকে চাকরিচ্যুত করেন। আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে চার সপ্তাহের জামিন নেন।
রোববার তাঁরা ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী নাসির উদ্দিন কবীর।ব্যবসায়ী আবদুল জলিল বলেন, উত্তরা ব্যাংকের সাবেক এই তিন কর্মকর্তা শুধু আমাকেই হয়রানি করেনি, আরো ২৬ জনের নামেও কৃষি ঋণের নামে টাকা তুলে আত্মসাত করেন। আমরা ২৭ জন তাদের প্রতারণার শিকার হয়ে নিস্ব হয়ে যাচ্ছি।