মঙ্গলবার ● ২২ মার্চ ২০২২
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » নির্বাহী প্রকৌশলীর সীমাহীন দূর্নীতি : সাব-স্টেশনের ৫০ লক্ষ টাকার ইকুইপমেন্ট গায়েব
নির্বাহী প্রকৌশলীর সীমাহীন দূর্নীতি : সাব-স্টেশনের ৫০ লক্ষ টাকার ইকুইপমেন্ট গায়েব
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে যোগদান করার পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি অর্থ। জড়িয়ে পড়েছেন টেন্ডার বাণিজ্যে। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রধান প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন দপ্তরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। তার অবৈধ অর্থ-বাণিজ্যর কারণে আজ কুষ্টিয়া গণপূর্তের গোটা অফিস মুখ থুবড়ে পড়েছে। তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলীর সময়ে কুষ্টিয়া ডিসি কোর্টের লোড ক্যাপাসিটি ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ডিসি কোর্ট চত্বরে ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ৬৯.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ইকুইপমেন্ট সহ সাবস্টেশন ভবন নির্মাণ করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। বর্তমানে সাব-স্টেশন ভবন পাওয়া গেলেও উক্ত ভবনের মধ্যে কোন ইকুইপমেন্ট এর হদিস নেই। উক্ত সাব-স্টেশনে এখনো পর্যন্ত কানেকশন দেওয়া হয় নাই। অথচ সাব-স্টেশনের মধ্যে কোন ইকুইপমেন্ট আছে কিনা তা পরির্দশন না করেই বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে উক্ত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জামানত ফেরত দেন। বিষয়টি নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। উল্লেখ্য গত ২০ তারিখে সরেজমিনে সাব-স্টেশনের তালা খুলে দেখা গেছে তার মধ্যে কোন ইকুইপমেন্ট নেই। উক্ত ইকুপমেন্ট এর মূল্য প্রায় ৫০ লক্ষ টাকার উপরে হবে। সাবষ্টেশন বিল্ডিং থাকলেও ইকুইপমেন্ট গায়েবের বিষয়টি ইতিমধ্যে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক সহ সর্বমহলে জানাজানি হলে টক অফ দা টাউন এ পরিণত হয়েছে। এছাড়াও বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে দায়িত্ব গ্রহন করার পর থেকে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে। ভুয়া বিল ভাউচার করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের রাস্তা, ড্রেন, কালভার্ট, পুকুর খনন কাজের সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদাররা তার বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান প্রকৌশলী সহ একাধিক দপ্তরে অভিযোগ দায়ের করেন। অন্যদিকে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর এস এম শামীম অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, আমি সর্বনিম্ন দরদাতা হওয়ার পরও আমাকে কার্যাদেশ না দিয়ে সর্বোচ্চ দরদাতাকে অর্থের বিনিময়ে কার্যাদেশ দেন। অন্যদিকে কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ হাসপাতাল ভবন নির্মান কাজের চূড়ান্ত বিল পরিশোধের আগেই এবং সময় বৃদ্ধি না করে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্যের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৭৫ লক্ষ টাকা অগ্রিম জামানত প্রদান করেছেন বর্তমান দুর্নীতিবাজ নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম। যা সম্পূর্ণ নিয়ম বহির্ভূত। বর্তমানে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের অসংখ্য চলমান নির্মান কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ঠিকাদারগন আজ অসহায়। নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম চাকুরী জীবনের প্রথমে ২০১১ সালে সহ: প্রকৌশলী হিসেবে কক্সবাজারে ১ এক বছর চাকুরীতে ছিলেন। পরবর্তীতে ২০১২ সালে এসডিও পদে যোগদান করেন ওখানেই। ওখান থেকেই তার ঘুষ-দুর্নীতির যাত্রা শুরু। ওই সময় মেরিন টেকনোলজি ভবন নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে তাকে তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সুপারিশে ২০১৪ সালে তাকে বদলি করেন প্রধান কার্যালয়ে গণপূর্ত বিভাগ-২ তে। কক্সবাজারে থাকাকালীন অবস্থায় প্লান পাস করা থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতির অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিল এই বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলী। যে কারণে মেরিন টেকনোলজি ভবনটি উদ্বোধন হতে দীর্ঘ সাত বছর লেগে যায়। ঢাকায় বদলী হলেও থেমে থাকেনি তার দুর্নীতি যোগ দেন আলোচিত আলোচিত জি কে শামীমের জিটিসিএল ভবন নির্মান কাজের তদারকিতে। তারপর থেকে আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। জিটিসিএল ভবন নির্মানে নানা অনিয়ম ও দুর্নিিত করা সহ বিভিন্ন অনিয়ম করে মাত্র ০১ এক বছরে আলাউদ্দিনের প্রদীপ পাওয়ার মত কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যান। তার সীমাহীন দুর্নীতি ধরা পড়লে তাকে বরিশাল গণপূর্তে বদলি করেন। ওখানে এক বছর চাকরি করার পর তিনি নাটোরে বদলি হন। এবার তিনি কুষ্টিয়া গণপূর্ত অফিস ডুবানোর জন্য এসেছেন। এখানেও তিনি ইতিমধ্যেই আলাউদ্দিনের চেরাগ পেয়েছেন। হয়েছেন আরো কোটিপতি। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের টেন্ডার বাণিজ্য সহ অনেক কিছু তিনি নিজ হাতে করে চলেছেন। অবৈধ অর্থ-বাণিজ্য সহ সার্বিক বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীর মুঠোফোনে কথা হলে তিনি নিজেকে ধোয়া তুলসী পাতা বানাতে চান। তিনি বলেন, এখন আমার নামে বিভিন্ন কথা উঠছে কী কারণে তা আমি বুঝতে পারছি। এগুলো সব মিথ্যা ও বানোয়াট।