রবিবার ● ১০ এপ্রিল ২০২২
প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিশ্বনাথে ইলিয়াসবিহীন বিএনপিতে প্রতিশোধের আগুন
বিশ্বনাথে ইলিয়াসবিহীন বিএনপিতে প্রতিশোধের আগুন
মো. আবুল কাশেম, স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপি নেতা এম ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর সিলেটের বিশ্বনাথ বিএনপিতে অশনি সংকেত দেখা দিয়েছে। নেতাকর্মীরা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তাদের মধ্যে চলছে গৃহযুদ্ধ। প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে ইলিয়াস আলীর হাতে গড়া এ সংসার।
ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পূর্বে এই উপজেলা বিএনপির কোনো নেতার যা সাহসের ভেতরে আসেনি। দলকে সংগঠিত করতে ইলিয়াস আলীর একক সিদ্ধান্তই মেনে নিতেন নেতাকর্মীরা।
আর এখন নিজেকে বড় নেতা মনে করে দলটিকে ডুবাতে বসেছেন সিনিয়র নেতারা। তাই অনেকটা বিপাকে রয়েছেন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
বিগত ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল এম ইলিয়াস নিখোঁজের পর থেকেই আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা বিএনপিতে এমন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা বিএনপির কিছু নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক সহিংসতা। এতদিন তাদের ভেতরে ভেতরে সেই প্রতিহিংসার আগুনে পুড়লেও সম্প্রতি সেটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সুহেল আহমদ চৌধুরী উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে জুতাপেটার পর থেকে প্রতিশোধের আগুনে পুড়ছে বিএনপি। গত মঙ্গলবার সুহেল চৌধুরীর জুতাপেটার জবাব দিতে পৌর শহরে প্রতিবাদ মিছিল করেছে উপজেলা বিএনপি।
গত শুক্রবার দিবাগত রাতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও অলংকারি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লিলু মিয়াকে ভিডিও ধারণ করে অমানবিক ভাবে জুতা দিয়ে পেটান সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা সুহেল আহমদ চৌধুরী।
এ ঘটনায় মারপিটে জখম ও চুরির ধারায় লিলু মিয়া বাদী হয়ে সুহেল আহমদ চৌধুরীসহ দুজনকে আসামি করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। তবে ওই মারপিটের ভিডিওটি বিভিন্ন ফেসবুকে ভাইরাল হলে গত তিন দিন ধরে ক্ষোভে ফুঁসছেন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
এছাড়াও রোববার রাতে অলংকারি ইউনিয়নবাসীর আয়োজনে লিলু মিয়ার পুরাতন বাড়িতে এক প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হয়। আর এই প্রতিবাদ সভায় সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মতছিন আলী।
এর পূর্বে ২০১৯ সালে উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতিকেও লাঞ্ছিত করেন সুহেল আহমদ চৌধুরী। এখন তার পাল্টা জবাব দিতে মাঠে নেমেছেন তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা।
তবে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে নারাজ রয়েছেন ইলিয়াসপত্নী লুনা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আমির আলী চেয়ারম্যান দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন উপজেলা বিএনপির সম্পাদককে এভাবে লাঞ্ছিত করা মোটেই ঠিক হয়নি। এটা শুধু বিএনপির রাজনীতিতে নয় অন্য দলের জন্যও এক অশনিসংকেত বলে তিনি মনে করেন। এমন মনোভাব পরিহার করে রাজনীতি করার জন্য তিনি সকল দলের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
উপজেলা জাতীয় পার্টির আহবায়ক জয়নাল আবেদীন এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এমন লাঞ্ছনায় বিশ্বনাথের রাজনীতির জন্য এক অশনিসংকেত। এটা কখনো বিশ্বনাথের জনগণ চায় না। তাদের প্রতিশোধের আগুনে শান্ত বিশ্বনাথ যাহাতে অশান্তি হয়ে না ওঠে সেজন্য সবার প্রতি তিনি অনুরোধ করেন।
প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে শুক্রবার রাতে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে জুতাপেটা করেন সুহেল চৌধুরী। এ ঘটনায় শনিবার বিকালে লিলু মিয়া নিজে বাদী হয়ে সুহেল আহমদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে বিশ্বনাথ থানায় মারপিটে জখম ও চুরির একটি মামলা করেছেন। মামলার এজাহারে দুজনকে আসামি করা হয়েছে। আরও ৭ থেকে ৮ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি রাখা হয়েছে।
এ ঘটনায় বিশ্বনাথ থানার অফিসার ইন-চার্জ ( ওসি) গাজী আতাউর রহমান মামলার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বাদী লিলু মিয়া তার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, শুক্রবার রাতে পূর্ব বিরোধের জের ধরে বিশ্বনাথ রশিদপুর রোডের কারিকোনা মসজিদের কাছে আসামিরা তাকে আটকিয়ে মারপিট করে টাকা পয়সা নিয়ে গেছে। আর এ ঘটনায় তিনি থানায় মামলা দিয়েছেন।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত সুহেল আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেন, আমার একই বাসের যাত্রী ছিলাম। কিন্তু ভাড়া নিয়ে কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে বাসের কন্ট্রাক্টর লিলু মিয়াকে থাপ্পড় মারলে আমি সমাধান করে তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেই। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।