রবিবার ● ১ মে ২০২২
প্রথম পাতা » জাতীয় » ইলিয়াস আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে পারছে না তার পরিবার
ইলিয়াস আলীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতে পারছে না তার পরিবার
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: ইলিয়াস আলীর পরিবারসহ ‘গুম’ হওয়া ব্যক্তিদের সব পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টের মধ্যে আছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাতের পর সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইলিয়াস আলীর পরিবার অনেক বিপদে আছেন। তার (ইলিয়াস আলী) ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরিবার হেন্ডেল (লেনদেন) করতে পারছেন না। তার গাড়ির ট্যাক্সও তারা দিতে পারছেন না। এই বিষয়গুলো তার পরিবারের কাছে একটা মর্মান্তিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার মেয়ের ভর্তির ব্যাপারে অনেক সমস্যার মধ্যে তাদের পড়তে হয়েছে। সব কলেজে মেয়েকে ভর্তি করছিল না। পরিবর্তিকালে অনেক চেষ্টা-তদবির করে তার মেয়েকে ভর্তি করানো হয়েছে।
বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী ২০১২ সালে ১৭ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ। বনানীর বাসার কাছে আমতলী থেকে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়েছিল বলে বিএনপি ও তার পরিবারের অভিযোগ। তার স্ত্রী তাহসিনা রশদীর লুনা, এক ছেলে ব্যারিস্টার আবরার ইলিয়াস এবং এক মেয়ে সাইয়ারা নাওয়াল।
দুপুর ১২টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দলের যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকে নিয়ে বনানীতে ইলিয়াস আলীর বাসায় যান। সেখানে তার সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদীর লুনার সঙ্গে কথা বলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে পরিবারের জন্য ঈদ উপহার দেন। এ সময় সিলেট জেলা সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা গুম হওয়া পরিবারগুলোর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে ঈদ উপহার পৌঁছে দিচ্ছি। বিভিন্ন জেলাগুলোতে যারা ভিকটিম আছেন তাদেরকে জেলা পর্যায়ের নেতারা এই ঈদ উপহার ও সহযোগিতা করার চেষ্টা করছেন।
‘জবাবদিহিতার অভাবে বিচারবহির্ভূত হত্যা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি দুইজন ক্রসফায়ারে মারা গেছে। এটা ঘটেছে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার চার মাস পরে। এটার কারণটা হচ্ছে, আমি যেটা মনে করি- র্যাবের যে ক্যারেক্টার তারা তৈরি করে দিয়েছে, সেই ক্যারেক্টারে সমস্যা সমাধান বলতে সেটাকেই তারা মনে করে। একইভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে তারা কাজ করছে এবং করে যাবে।’
এজন্য ‘জবাবদিহিতার অভাব’ রয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ওই কাজে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তার জন্য স্বাভাবিকভাবে এসব হবে। এর একমাত্র কারণ এখানে কোনো জবাবদিহিতা নেই। আমরা বারবার এ কথা বলেছি যে, সরকারের বড় সমস্যা হচ্ছে তাদের যেহেতু জবাবদিহিতা জনগণের কাছে নাই, অন্য যেসব প্রতিষ্ঠান আছে তাদেরও সেই জবাবদিহিতার থাকার প্রয়োজন তারা মনে করে না।’
ইলিয়াস আলীর সন্ধানে সরকারের প্রচেষ্টা নেই অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গুম হওয়া নেতাকর্মীদের সন্ধানে সরকারের কোনো প্রচেষ্টাই দেখা যায় না। ইলিয়াস আলীর গুম হওয়ার বিষয়ে কোনো প্রচেষ্টা দেখা যায়নি। যেহেতু সরকারই জড়িত। যখন ইলিয়াস আলীকে তুলে নিয়ে গেছে ওখান থেকে (বাসার সামনে থেকে) তখন তো মানুষজন দেখেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে।
যারা দেখেছেন তারাও গুম হয়েছে, তার গাড়ির চালকও গুম হয়েছে। খুব পরিষ্কার যে, এই সরকারের দ্বারাই এটা হয়েছে। সেই কারণে তারা উদ্যোগ নেয় না।’
র্যাব ও এর সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলতে ভারতের কাছে সহযোগিতা চাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকার ও আওয়ামী লীগ একটা ব্যানক্রাফট হয়ে গেছে। তারা জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ভারতকে অনুরোধ করতে চায়। ভারতকে বলবে যে, তাদেরকে দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করাবে। বিষয়টা হচ্ছে যে, এই সরকারের সেই মুখ নেই, তারা এটা নিয়ে মানুষের কাছে দাঁড়াতে পারছে না।’
তিনি বলেন, ‘অন্যদিকে তারা তো ক্ষমতায় জোর করে বসে আছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এইসব বাহিনীকে ব্যবহার করছে। এইভাবে ব্যবহার করার পরে তাদের বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নেবে, তাদের শাস্তি দেবে, তাদেরকে বের করে দিবে অথবা তাদেরকে আইনের আওতায় আনবে- এটা তারা করতে পারছে না।
যেহেতু সরকার গুম করে, খুন করে নির্যাতন করে ক্ষমতায় টিকে আছে, তাদেরকে নিয়ে এসব অপকর্ম করছে সেজন্য তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না। তারা (সরকার) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে গেছে।
এ সময় ‘গুম-খুন’ নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়ার বিষয়ে তারা কাজ করছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
গুম’ থেকে ফেরত আসা সালাহউদ্দিন আহমেদের প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘তিনি (বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ) ওখানে (ভারত) নিম্ন আদালতে মুক্ত হয়েছিলেন। পরে আবার আপিল কোর্টে আপিল করে তাকে আটকে রাখা হয়েছে।