বুধবার ● ১১ মে ২০২২
প্রথম পাতা » ঢাকা » সিগারেট ট্যাক্স স্কোরকার্ডে সেরা দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
সিগারেট ট্যাক্স স্কোরকার্ডে সেরা দেশগুলোর তুলনায় পিছিয়ে বাংলাদেশ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: সিগারেটের কর সংক্রান্ত স্কোরকার্ডে সেরা দেশগুলোর তুলনায় এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। ২০২১ সালে বাংলাদেশের প্রাপ্ত স্কোর ২.৬৩ (৫ এর মধ্যে)। সিগারেটের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি খুচরামূল্যে করের অংশ বৃদ্ধি এবং করকাঠামোয় সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশের আরো উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। ১৬০টি দেশের সিগারেট করনীতির কার্যকারিতা মূল্যায়ন করে ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েস শিকাগো (ইউআইসি) এর হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইনস্টিটিউটের অধীনে টোব্যাকোনমিকস এই স্কোরকার্ড প্রকাশ করেছে। এটি ২য় প্রতিবেদন। আজ ১১ মে ২০২২ তারিখে ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশের ফলাফল বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহযোগিতায় গবেষণা ও তামাকবিরোধী অ্যাডভোকেসি প্রতিষ্ঠান প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে।
টোব্যাকোনমিকস বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দ্বিবার্ষিক প্রতিবেদন গ্লোবাল টোব্যাকো ইপিডেমিক এর ২০২০ সালের তথ্য ব্যবহার করে ১৬০টি দেশের সিগারেট কর নীতিমালা মূল্যায়ন করেছে। সিগারেটের দাম, সহজলভ্যতা, করকাঠামো এবং খুচরা মূল্যে করের অংশ এই চারটি মূল বিষয়ের উপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সামগ্রিকভাবে ট্যাক্স স্কোর কার্ডে বাংলাদেশ ২০১৮ সালের (২.৩৮) তুলনায় ২০২০ সালে (২.৬৩) কিছুটা উন্নতি করলেও সিগারেটের দাম ও করকাঠামোর দিক থেকে কোনো অগ্রগতি লাভ করে নাই। এবারেও উভয় ক্ষেত্রে ১ পেয়েছে। ক্রটিপূর্ণ একাধিক মূল্যস্তরবিশিষ্ট অ্যাডভেলোরেম করকাঠামো এবং সিগারেটের দাম খুবই কম থাকার কারণে বাংলাদেশ সর্বোত্তম দেশগুলোর কাতারে পৌঁছাতে পারে নাই।
গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে খুব সামান্যই, বৈশ্বিক গড় স্কোর ২.০৭ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২.২৮। ১৬০টি দেশের মধ্যে ১১৩টি দেশই তিন বা এর নিচে স্কোর পেয়েছে। সবচেয়ে ভালো করেছে নিউজিল্যান্ড এবং ইকুয়েডর (উভয়ই ৪.৬৩), এবং এরপরে রয়েছে যুক্তরাজ্য (৪.৩৮) ও কানাডা (৪.২৫)। এসব দেশে সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম পন্থা হিসেবে বিবেচিত একক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ কর ব্যবস্থা অথবা মিশ্র কর পদ্ধতি (সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ কর এবং অ্যাডভেলোরেম কর) চালু রয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলিকুজ্জমান আহমদ বলেন, “এই গবেষণার ফলাফল আমাদের নীতিনির্ধারকদের কার্যকর তামাক কর পদক্ষেপ গ্রহণে ভূমিকা রাখবে। করারোপের মাধ্যমে সিগারেটসহ সকল তামাকপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনগণের নাগালের বাইরে নিয়ে যেতে হবে, তা নাহলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব হবে না।”
টোব্যাকোনমিকস টিমের অন্যতম সদস্য আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটির সিনিয়র সাইন্টিফিক ডিরেক্টর, টোব্যাকো কন্ট্রোল রিসার্চ ড. নিগার নার্গিস গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বলেন, “সিগারেটে করারোপের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উচিত মূল্য স্তরভিত্তিক অ্যাডভেলোরেম কর পদ্ধতির পরিবর্তে একক সুনির্দিষ্ট এক্সাইজ কর পদ্ধতি অথবা মিশ্র পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে নিয়মিতভাবে করহার সমন্বয় করা। একইসাথে সিগারেটে উল্লেখযোগ্য হারে কর বাড়িয়ে দাম বৃদ্ধি করা।”
অনুষ্ঠানে ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে) এর সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামের রিজিওনাল ডিরেক্টর বন্দনা শাহ বলেন,“ তামাক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ সার্বিকভাবে উন্নতি করলেও তামাকপণ্যে কর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণে এখনও অনেক পিছিয়ে আছে। এফসিটিসি আর্টিকেল ৬ অনুসরণ করে কার্যকর তামাককর ও মূল্য পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে সরকার জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের পাশাপাশি রাজস্ব আয় বাড়াতে পারে।”
প্রজ্ঞা’র তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক প্রকল্প প্রধান মো. হাসান শাহরিয়ারের উপস্থাপনায় তামাকপণ্যে কার্যকর কর ও মূল্য পদক্ষেপ বাস্তবায়নে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপকে অন্যতম প্রধান বাধা হিসেবে দায়ি করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিটিএফকে, বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন মো. শফিকুল ইসলাম, হেড অব প্রোগ্রাামস- বাংলাদেশ, পলিসি অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড কমিউনিকেশন, ভাইটাল স্ট্রাটেজিস; সৈয়দ মাহবুবুল আলম, কারিগরি পরামর্শক, দ্য ইউনিয়ন এবং এবিএম জুবায়ের, নির্বাহী পরিচালক প্রজ্ঞা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও তামাকবিরোধী সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ৩৫ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন, ধূমপান না করেও প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লক্ষ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বিভিন্ন পাবলিক প্লেস, কর্মক্ষেত্র ও পাবলিক পরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হন। তামাক ব্যবহারের কারণে বছরে ১ লক্ষ ৬১ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তামাক ব্যবহারের অর্থনৈতিক ক্ষতির (চিকিৎসা ব্যয় এবং উৎপাদনশীলতা হারানো) পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৫৬০, যা উক্ত বছরে জিডিপির ১.৪ শতাংশ।