শনিবার ● ১৪ মে ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শাহীন আশাহত : তার সামনে এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন
দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শাহীন আশাহত : তার সামনে এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে আমরণ অনশন ভঙ্গকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধি শিক্ষার্থী শাহীন আলম আশাহত হয়েছেন। তিনি কাঙখিত সরকারী চাকরীর প্রতিশ্রিুতি না পেয়ে ঝিনাইদহ সার্কিট হাউসে দুই রাত থাকার পর গ্রামের বাড়ি ফিরে গেছেন। তার সামনে এখন অন্ধকারাচ্ছন্ন জীবন। প্রতিবন্ধি শাহীন আলম ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর ইউনিয়নের আলমপুর গ্রামের দিনমজুর আব্দুল কাদেরের ছেলে। শাহীন আলম বলেন, অনেক প্রতিবন্ধী উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও কোনো চাকরি পান না। আমি সেই পথের পথিক না হয়ে ভালোমানের একটি সরকারি চাকরির নিশ্চয়তার জন্য ঝিনাইদহ শহীদ মিনার চত্বরে আমরণ অনশন শুরু করি। কিন্তু আমার সইে প্রত্যাশা পুরণ করতে পারেনি ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসন। অথচ তাদের প্রতিশ্রুতিতে আমি অনশন স্থগিত করেছিলাম। তিনি বলেন জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ টাকা হারে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর ও ৫ হাজার টাকার চুক্তিতে শিক্ষকতার চাকরীর প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু আমার যোগ্যতার সঙ্গে এই প্রস্তাব মানায় না। তিনি বলেন সরকারী ভাবে নিয়োগকৃত ইনফরমেশন অফিসার, কমিউনিকেশন, টিচার ও ট্রোইনার হতে চেয়েছি। এগুলোর উপর আমার দক্ষতা আছে। রয়েছে সরকারী বেসরকারী সার্টিফিকেট। শহীন বলেন, আমার ভিটেবাড়ি ছাড়া কিছুই নেই। পিতা আব্দুল কাদের দিনমজুর। এই পরিবার থেকে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স শেষ করে মাষ্টার্স পড়ছি। লেখাপড়ার পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শাহীন আলম। নিজ উদ্যোগে ভারত, বাংলাদেশের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে নজীর সৃষ্টি করেছেন শাহীন। গ্রামবাসি সুত্রে জানা গেছে, শাহীন আলম জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছিলেন না। ১০ বছর বয়সে জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর ধীরে ধীরে দৃষ্টিশক্তি হারান। পরে পরিবারের সহযোগিতায় সমাজসেবা অধিপ্তরের আর্থিক অনুদান নিয়ে এসএসসি পাস করেন। সেই সহযোগিতা শেষ হলে এইচএসসি পর্যায়ে ডাচ্-বাংলা ব্যাকের বৃত্তি থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পান তিনি। প্রেমের সম্পর্কের জেরে যশোর জেলার ফুলবাড়ি এলাকায় পরিবারের অমতে বিয়ে করেন। সেই থেকেই নানা কারণে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তার সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বর্তমানে বিভিন্ন সংস্থার প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন শাহীন আলম। নিজের ও পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের কারণে তার একটি সরকারী চাকরি দরকার বলে তিনি জানান। এদিকে সরকারি চাকরির নিশ্চয়তার দাবিতে গত সোমবার (৯ মে) সকাল ৯টা থেকে ঝিনাইদহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আমরণ অনশনে বসেছিলেন শাহীন আলম। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনশন ভাঙান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সেলিম রেজা। সরকারী চাকরীর আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা আমরণ অনশন চালিয়ে যাওয়ার কথা জানান শহীন। ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক মনিরা বেগম জাগো বলেন, ‘অনশন যে কেউ করতেই পারে। এটা সাধারণ ব্যাপার। শাহীনের অনশনের পর আমরা তাকে চাকরির জন্য অফার করেছিলাম। কিন্তু সেটা সে নিতে চায় না। এখন সে যদি প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেয় তাহলে সেটা পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করতে পারি।’