রবিবার ● ২২ মে ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » জোর পূর্বক ধর্ষণ : অভিযুক্ত ইয়াছিন গ্রেফতার
জোর পূর্বক ধর্ষণ : অভিযুক্ত ইয়াছিন গ্রেফতার
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি :: খাগড়াছড়ির গুইমারায় ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে জোর পূর্বক ধর্ষণের মামলায় স্থানীয় মসজিদের ইমাম মো. ইয়াছিন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার (১৯ মে) করেরহাট এলাকা থেকে ইয়াছিনকে (২২) গ্রেফতার করে কোর্ট হাজতে প্রেরণা করা হয়েছে।
গ্রেফতার ইয়াছিন (২২) গুইমারা কবুতরছড়া এলাকার আব্দুর রহমানের ছেলে।
ভুক্তভোগী একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের মেয়ে সে কবুতরছড়া মক্তবের ছাত্রী।
পুলিশ ও মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, কবুতরছড়া স্থানীয় জামে মসজিদে ইমামতি করছেন ইয়াছিন। সিরাজুল ইসলামের মেয়ে প্রতিদিন সকালে তার কাছে কোরান শিক্ষার জন্য আসতো। এ সুযোগে গোপনে প্রেমের সম্পর্ক করার চেষ্টা করে ইয়াছিন। গত ২১মার্চ রাতে বিয়ের প্রলোভনে তাকে এনে (মসজিদের পাশে) তার থাকার ঘরে তিন দিন পর্যন্ত আটকে রেখে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করে। তিন দিন পর স্থানীয় লোকজন ভুক্তভোগী মেয়েকে উদ্ধার করে।
পরে থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী মেয়ের পিতা সিরাজুল ইসলাম। মামলার পর থেকে ইয়াছিন পলাতক ছিলেন।
অপরদিকে মামলাটি প্রথমে টাকা দিয়ে সমাধানের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন গ্রেফতার ইয়াছিনের মা মাহমুদা বেগম। পরে নিজের ছেলেকে বাচাঁতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানি, চুরিসহ নানা মিথ্যা অভিযোগ তোলে। খাগড়াছড়ি আদালতে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। আদালত বিষয়টি অবগত হয়ে মামলাটি খারিজ করে দেন। এরপর পুলিশ সুপারের নিকট অভিযোগ দায়ের করেন এই মহিলা।
সিরাজুল ইসলাম জানান, তার মক্তব পড়ুয়া নাবালিকা মেয়েকে নানান প্রলোভন দেখিয়ে নিজের ইচ্ছামত ধর্ষণ করেছে ইয়াছিন।
এ বিষয়ে গুইমারা থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, মামলার পর থেকে পলাতক ছিলো ইয়াছিন। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করতো সে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুইমারা থানার পুলিশ সদস্যরা তাকে করের হাট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে।
মাটিরাঙায় গভীর রাতে অগ্নিকান্ড, ৫টি রামছাগলসহ ২টিঘর পুড়ে ছাই
খাগড়াছড়ি :: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙায় গভীর রাতে অগ্নিকান্ডে ১টি পরিবারের ২টি ঘর, আসবাবপত্র ৫টি রামছাগলসহ সর্বস্ব পুড়ে ভস্মিভুত হয়েছে।
গত বুধবার(১৮ মে) দিবাগত রাত ১টার দিকে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডে
মোঃ মোঃ মোখলেছুর রহমানের বাড়িতে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ঘটে।
ঘুমিয়ে থাকা পরিবারের লোকজন টের পেয়ে নিজেদের জীবন রক্ষা করতে পারলেও রক্ষা করতে পারেনি পাশের ঘরে পাঁচটি রামছাগল।
পরিবারের লোকজনের চিৎকারে প্রতিবেশীরা ঘুম থেকে টের পেয়ে ছুটে আসে মোঃ মিরাজ হোসেনের বাড়ীতে।
স্থানীয়দের ধারণা এতো রাতে কেউ হয়তো শত্রুতা করে আগুন লাগাতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের লেলিহান শিখা মূহুর্তেই অন্যান্য ঘরে ছড়িয়ে পড়লে ভষ্মিভূত হয় দু’টি ঘর পাঁচটি রাম ছাগল একটি ফ্রিজ এবং ঘরের যাবতীয় আসবাবপত্র।
ফায়ার সার্ভিস এসে পৌছানোর আগেই সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের বিষয়ে বাড়ির মালিক মোখলেছুর রহমানের মামা পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী আলী জানান, পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রাতের আঁধারে অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে বলে আমাদের ধারণা। যেহেতু দুপুরেই রান্নার কাজ শেষ হয়েছে, চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাতের কোনো সম্ভাবনা নেই।
আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মাটিরাঙ্গা পৌরসভার সম্মানিত মেয়র মোঃ শামসুল হক ও ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ আলমগীর হোসেন। এসময় তারা তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোহাম্মদ আলী বলেন, এ বিষয়ে সাধারন ডায়রী করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনী ব্যবস্থা নেয়া।
জমির বিরোধে নির্যাতনের শিকার প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার
খাগড়াছড়ি :: খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার মাতাব্বর পাড়ায় জায়গা-জমির বিরোধে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমানের পরিবার, প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক কর্তৃক প্রতারণামূলক মামলা ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মধ্যযুগীয় নির্যাতনকেও হার মানিয়েছে একই এলাকায় শিক্ষক মালেক গংদের মাধ্যমে এক বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে নির্যাতন করার দৃশ্য।
জানা যায়, দীর্ঘদিনের জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিবেশী আবদুল মালেক(৪৮) নামে এই ব্যক্তির দ্বারা শুধু মিথ্যা মামলাই নয়, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমানের পরিবার।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সব অভিযোগের কথা এ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান উদ্দিনের স্ত্রী আমেনা খানম(৭৪)। তিনি বলেন, আমার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা লোকমান দুরারোগ্য ব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার জন্য বসতবাড়ি সংলগ্ন ১চৌহদ্দিতে ১০শতক জায়গা ১০লক্ষ টাকা মূল্যে মাটিরাঙা মডেল সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেকের নিকট বিক্রয়ের বায়নানামা করা হয়। বায়নানামা অনুযায়ী ৩কিস্তির ১ম কিস্তি সাড়ে ৪লাখ টাকা নগদ প্রদান করলে আমার স্বামীর চিকিৎসা শুরু করি। পরে আরো টাকার প্রয়োজন হলে সে টাকা দিতে গড়িমসি করে। ফলে উন্নত চিকিৎসার অভাবে কিছুদিন পরে আমার স্বামী মারা যায়। পরবর্তীতে আব্দুল মালেক মাস্টার হঠাৎ নামজারী মামলার শুনানির কথা বলে সাদা কাগজে আমার সই-স্বাক্ষর নিয়ে ২য় কিস্তির সাড়ে ৪লাখ টাকা সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পরিশোধ করবেন বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু সে প্রতারণার মানসে দিচ্ছি-দিব বলে আশ্বাস দিয়ে অদ্যাবধি শুনানির সাড়ে ৪লাখ টাকা না দিয়ে উল্টো সমুদয় টাকা পরিশোধ দেখান। অন্যদিকে, মোট জমির ক্রয় মূল্য ১০লাখ টাকার স্থলে সাড়ে ৪লাখ টাকা ও ১০শতকের সাথে আরো ১চৌহদ্দিতে ০.০০৩৮শতক অর্থাৎ ২চৌহদ্দিতে ০.১০৩৮একর জমি মনগড়া চৌহদ্দি বসিয়ে নামজারি মামলা চালু করেন, পরবর্তীতে আমাদের বসবাসের জায়গাসহ তার ক্রয় দাবী করেন, যা সুস্পষ্ট প্রতারণা। এমতাবস্থায় তার নামে জমি রেজিস্ট্রির জন্য লিখে দিচ্ছি না মর্মে আমার নামে লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়।
পরে লিগ্যাল নোটিশের জবাব দিয়ে প্রতারক আবদুল মালেকের নামে খাগড়াছড়ি এডিএম কোর্টে ১৪৫ধারায় মামলা দায়ের করি। আদালত এ নালিশী জায়গার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে মাটিরাঙা থানার মাধ্যমে নোটিশ পাঠায়। এতে মালেক মাস্টার ক্ষিপ্ত হয়ে পরিকল্পিতভাবে তার ইন্ধনদাতা পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী শান্তিপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান মাস্টার(৬০) তার স্ত্রী পুর্ব ধলিয়া সরকারি প্রাঃ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মালেকা সুলতানা(৪৭) তার দলবলসহ লোহার রড, লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের পুরুষ বিহীন পরিবারটির উপর চড়াও হয়ে গেইট ভেঙে বাড়িতে প্রবেশ করে। আমাকে ও আমার প্রতিবন্ধী মেয়ে তাছমিন আক্তার তানিয়া(৩৬)কে গায়ের ওড়না দিয়ে পিছমোড়া করে খুঁটির সাথে বেঁধে মারধর ও শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। পরে খবর পেয়ে আমার মেয়ে নাছমিন আক্তার ৯৯৯নাম্বারে কল দিলে মাটিরাঙা থানার এএসআই সুমন ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এসময়, প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে রেজাউল, বাছরী পাটোয়ারী, মনোয়ারা, বাবুল, সিরাজুলদের সহযোগিতায় প্রতিবন্ধী মেয়ের বাঁধন খুলে দিয়ে তাকে উদ্ধার করে সিএনজি যোগে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় ২৯/৩/২০২২ইং শিক্ষক আব্দুল মালেক গংদের বিরুদ্ধে আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেছি। সম্প্রতি মালেক মাস্টার কোন ঘটনা ঘটে নি বলে চালিয়ে দিতে ১ ও ২নং স্বাক্ষীসহ অন্যান্য স্বাক্ষীদেরকে স্বাক্ষী না দিতে হুমকি-ধামকিসহ নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ক্ষতিগ্রস্থ আমেনা খানম আরো জানান, তিনি ২০১২খ্রী. মালেক মাস্টারের নিকট ১চৌহদ্দিতে বাড়ির ১০শতক জায়গা ১০লক্ষ টাকা মূল্য নির্ধারণে ৪লাখ ৫০হাজার টাকার বায়না দলিল করেন। বায়না দলিলের শর্ত ছিল বকেয়া টাকা এসিল্যান্ডের শুনানির সময় ৪লক্ষ ৫০হাজার টাকা দিবে এবং রেজিস্ট্রির দিন ১লক্ষ টাকা দিলে বিক্রেতা রেজিস্ট্রি দলিল করে ক্রেতাকে দখল হস্তান্তর করবেন। প্রথমত, বায়না দলিলের বকেয়া টাকা মালেক মাস্টার পরিশোধ না করায়। দ্বিতীয়ত, ১চৌহদ্দি ১০শতকের পরিবর্তে ২চৌহদ্দিতে ১০.০০৩৮শতক লিখায়। তৃতীয়ত, প্রতারণা করে নামজারীর মাধ্যমে লোঙ্গার জমির পরিবর্তে বসত ঘরসহ মাতাব্বর পাড়া রাস্তা পর্যন্ত রেজিস্ট্রি নেয়ার পাঁয়তারা করায়, বিষয়গুলো জানাজানি হলে মালেক মাস্টারকে নামজারি ফাইল সংশোধনের জন্য বলা হলেও তিনি তা সংশোধন না করায় অদ্যাবধি রেজিস্ট্রি দেয়া হয় নাই। আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়ে অসহায় অবস্থায় প্রতিবন্ধী মেয়ে ও নাতনিকে নিয়ে মানবেতার জীবনযাপন করছি। একটি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হচ্ছে, অথচ কোন প্রতিকার মিলছে না। আমি এ ব্যাপারে ন্যায় বিচারের আশায় প্রশাসনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করি।
এব্যাপারে অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে আবদুল মালেক বলেন, আমার নিকট সকল কাগজপত্র রয়েছে। ১০লক্ষ্য ৩৮হাজার টাকা মূল্য নির্ধারণে ০.১০৩৮ একর ক্রয়কৃত জমি ফিরে পেতে একের পর এক মামলা করেছি। তবে ক্রয়কৃত জমির মূল্য পরিশোধসহ বায়নানামা মূলে ১০শতক জায়গা ১০লাখ টাকা মূল্য নির্ধারণে ৩কিস্তিতে টাকা লেনদেনের বিষয় ও চৌহদ্দিতে রাস্তা বাবদ ০.০০৩৮একর জায়গা সংযোজনের
বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। মোবাইলের কল কেটে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার কথা বলার চেষ্টা করলেও কল কেটে দেন, রিসিপ করেননি।
এ বিষয়ে মাটিরাঙা থানার ওসি মোডহাম্মদ আলী বলেন, বিষয়টি অবগত হয়েছি। এ ঘটনাটি সুরাহার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তিনি ছুটি থেকে আসলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রপারলী ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।