সোমবার ● ১৩ জুন ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৬ বছর : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ
কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৬ বছর : হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: পার্বত্য চট্টগ্রামের নারী নেত্রী কল্পনা চাকমা অপহরণের ২৬ বছর উপলক্ষে চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের প্রকাশ্য গণআদালতে বিচারের দাবিতে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবিতে আন্দোলনরত নারী সংগঠন হিল উইমেন্স ফেডারেশন।
আজ ১২ জুন ২০২২, রবিবার সকাল ১০টার সময় খাগড়াছড়ি সদরের স্বনির্ভরে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে খাগড়াছড়ি সদর এলাকা থেকে প্রায় ৩৫০ জন নারী অংশগ্রহণ করেন।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে অপহরণ-ধর্ষণ-খুন-গুম-বিনাবিচারে হত্যা বন্ধ কর’ শ্লোগানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা। সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীতি চাকমার সঞ্চালনায় এতে আরো বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের সভাপতি কণিকা দেওয়ান।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সভাপতি নিরূপা চাকমা বলেন, ১৯৯৬ সালে এই দিনে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৭ ঘন্টা আগে মধ্যরাতে বাঘাইছড়ি কজইছড়ি ক্যাম্পে দায়িত্বরত লে. ফেরদৌস ও তার সহযোগীরা মিলে তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক কল্পনা চাকমাকে অপহরণ করে। আজ ২৬ বছর পূর্ণ হলেও সরকার তাঁর কোনো হদিস এখনও দিতে পারেনি। বরং কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারীদের শাস্তি না দিয়ে এ ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে নানা প্রপাগান্ডা ও মিথ্যাচার করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে ওয়াশিংটন ডিসিতে বাংলাদেশ দূতাবাসে ক্ষমতাসীন সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ব্যানার নিউজ নামে এক নিউজ পোর্টালকে দেয়া সাক্ষাতকারে কল্পনা চাকমা অপহরণ নিয়ে মিথ্যাচার করে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। কল্পনা চাকমা অপহরণ নিয়ে তথ্যের বিকৃতি না ঘটাতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে সতর্ক করে দেন নিরূপা চাকমা।
আন্দোলন জোরদার করার আহবান জানিয়ে নিরূপা চাকমা বলেন, কল্পনা চাকমার সন্ধান করতে গিয়ে স্কুল ছাত্র রুপন চাকমা আত্মবলিদান দিয়েছেন, সমর-সুকেশ-মনোতোষ গুমের শিকার হয়েছেন। তাদের এই অবদান আমরা কোনোদিন ভুলব না। তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানান।
তিনি বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনার বিচারের ক্ষেত্রে সরকার বরাবরই উদাসীনতা দেখিয়ে যাচ্ছে। কল্পনা চাকমা অপহরণের পর বাঘাইছড়িতে মামলা হয় এবং এই মামলা তদন্তে ৩৯ জন কর্মকর্তা বদলী হলেও কল্পনা চাকমার কোন হদিস দিতে পারেনি। তিনি প্রশাসন এবং রাষ্ট্রের অনীহা ও ঘটনার সাথে রাষ্ট্রীয় বাহিনী সংশ্লিষ্ট থাকার কারণে দীর্ঘ ২৬ বছরেও বিচার হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন।
নিরূপা চাকমা মতলববাজীদের অবস্থান তুলে ধরে বলেন, এই দিনটিতে অনেকে নামে বেনামে ভুইফোঁড় সংগঠনের নাম দিয়ে লোকদেখানো নানা কমর্সূচি পালন করেন। কিন্তু এরা কল্পনা চাকমার নাম ভাঙিয়ে নিজেদের পরিচিতি তুলে ধরা ছাড়া কিছুই করছে না। তিনি এভাবে আন্দোলনে পানি না ঢেলে কল্পনা চাকমার সঠিক নীতি আদর্শের প্রতিবাদী ধারাকে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
তিনি কল্পনা চাকমার চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের প্রকাশ্য গণআদালতে বিচার করার দাবি জানান।
সমাবেশে কণিকা দেওয়ান বলেন, কল্পনা চাকমার অপহরণ ঘটনা জাতিগত নিপীড়নেরই অংশ। কল্পনা অপহরণের ২৬ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সরকার তার বিচার এখনও করেনি। একইভাবে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের ভিতরে সোহাগী জাহান তনু হত্যার বিচারও হয়নি।
তিনি বাংলাদেশের বৈষম্যমূলক বিচারব্যবস্থা তুলে ধরে বলেন, এদেশে ধর্ষক, নিপীড়ক, খুনীরা যদি ক্ষমতাবান হন কিংবা ক্ষমতাবানদের ছত্রছায়ায় থাকে তাহলে তারা রেহাই পেয়ে যায়। তিনি নারী নিরাপত্তা ভূলন্ঠিত হওয়ার কারণ হিসেবে রাষ্ট্রের এই বৈষম্যমুলক বিচারব্যবস্থা ও বিচারহীনতাকে দায়ী করেন।
তিনি ভ্রাতিঘাতি সংঘাত বাঁধিয়ে দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে অভিযোগ করে অনতিবিলম্বে এই ষড়যন্ত্র বন্ধ করার দাবি জানান।
কণিকা দেওয়ান সমাবেশে অংশগ্রহণকারীসহ সকল নারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পরিবার, সমাজ তথা পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন কায়েমের লক্ষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে সামিল হতে হবে।
তিনি আর কালক্ষেপন না করে কল্পনা চাকমা ও মাইকেল চাকমার সন্ধান দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।
সমাবেশ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামসহহ সারাদেশে নারী ধর্ষণ, নির্যাতন, গুম-খুন, অপহরণ, বিনাবিচারে হত্যাসহ সকল অন্যায়-অবিচার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।