রবিবার ● ২৭ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » ঢাকা বিভাগ » আওয়ামী ওলামালীগসহ সমমনা ১৩ দলের মানববন্ধন
আওয়ামী ওলামালীগসহ সমমনা ১৩ দলের মানববন্ধন
প্রেস বিজ্ঞপ্তি :: বাবা-মা কর্তৃক শিশুহত্যা ও নির্যাতন বন্ধ এবং মাদক-দুর্নীতি প্রতিরোধসহ সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় রোধে সংবিধানে সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন। সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বহাল রাখতে হবে৷ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে জাতিসংঘ কর্তৃক অবিলম্বে বিশ্বনেতা ঘোষণা করা হোক এবং ২৫ মার্চকে আনত্মর্জাতিক গণহত্যা দিবস ঘোষণা এবং মহান ২৬ শে মার্চকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মদিন ঘোষণা করা হোক ৷ পাশ্ববর্তী দেশ ভারতের সাথে ইতিহাসের সর্বোচ্চ সুসম্পর্ককারী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ভারতে মুসলিম স্বার্থ সুরৰায় ভারতের প্রতি আহবান জানানো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সংসদে বিল পাশের মত ‘কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ হবে না তা সংসদে পাশ করা’৷
“৭২ সাল থেকেই হিন্দুদের উপর আওয়ামী নির্যাতন চালাচ্ছে,” “বঙ্গবন্ধু সাম্প্রদায়িক”, “৯৮ ভাগ মুসলমানের এদেশে গরম্ন কুরবানী করা যাবে না”- এরকম চরম উস্কানীদাতা কট্টর সাম্প্রদায়িক সংগঠন হিন্দু-বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এদেশে নিষিদ্ধ করতে হবে৷
অর্পিত সম্পত্তি ও দেবোত্তর সম্পত্তির নামে মুসলমানদের বঞ্চিত করা যাবে না৷ রাষ্ট্র্রীয় সম্পত্তি ও ক্ষতিগ্রস্থ মুসলমানদের সম্পত্তি রক্ষয় এসব আইন বাতিল করা হোক৷
মুসলমানদের মেধা ও যোগ্যতা এবং সংখ্যা কী দিন দিন কমে যাচ্ছে ? হিন্দুরা আনুপাতিকহারের চেয়ে অকল্পনীয় বেশিহারে সুবিধা পাচ্ছে ৷ যা জামাতী-হেফাজতীরা ইসু্য তৈরী করছে৷ এ বিষয়ে ধর্মপ্রাণদের আশ্বসত্ম করতে হবে ৷
বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগসহ সমমনা ১৩টি ইসলামিক দলের উদ্যোগে ৭ দফা দাবীতে গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক বিশাল মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়৷
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানে বহাল রাখতে হবে : বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের ২য় বৃহত্তম মুসলিম দেশ ৷ এদেশের ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠি মুসলমান ৷ এদেশের মুসলমানরা স্বভাবগতভাবেই ধর্মপ্রাণ ও ধর্মভীরু ৷ যে দেশে ১০লাখ মসজিদ রয়েছে ৷ যেদেশে প্রতি জুমুয়ার জামাতে কোটি কোটি লোকের সমাগম হয়৷ সেদেশে সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানদের ধর্ম হিসেবে রাষ্ট্রধর্ম হবে ‘ইসলাম’ তা বলার অপেক্ষা রাখে না৷ কারণ বর্তমানে বিশ্বের ৬০টিরও অধিক দেশে সংখাগরিষ্টদের ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম করা হয়েছে ৷ যেমন, খ্রিষ্টান অধু্যষিত দেশগুলোর মধ্যে আর্জেন্টিনা, স্পেন, পর্তুগাল, ডেনমার্ক, নরওয়ে, ব্রিটেনসহ ২৬টি দেশে ক্যাথলিক ও প্রোটেষ্ট্যান্ট মতবাদ তাদের রাষ্ট্রধর্ম৷ একমাত্র গ্রীসে অর্থডক্স মতবাদ তাদের রাষ্ট্রধর্ম ৷ আবার ভুটান, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ ৫টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম বৌদ্ধ ৷ কিছুদিন পূর্বেও নেপালের রাষ্ট্রধর্ম ছিল সনাতন বা হিন্দু ৷ অন্যদিকে মুসলিম বিশ্বে ২৭টি দেশের রাষ্ট্রধর্ম হলো পবিত্র দ্বীন ইসলাম ৷ তাই বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ‘ইসলাম’ হওয়াও স্বাভাবিক এবং রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ‘ইসলাম’ বহাল থাকাও স্বাভাবিক ৷
বক্তারা বলেন, যারা বলে, রাষ্ট্রের কোন ধর্ম নেই, ধর্ম হলো ব্যক্তির, এছাড়া রাষ্ট্রে একাধিক ধর্মাবলম্বিরা রয়েছে ফলে কোন নির্দিষ্ট ধর্মকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না৷ যদি তাই হয়, তাহলে একইভাবে রাষ্ট্রেরও কোন ভাষা থাকতে পারে না৷ কারন রাষ্ট্র কখনো কথা বলে না৷ কথা বলে ব্যক্তি ৷ অথচ এদেশে চাকমা-মারমা-সাওতাল-বিহারীসহ বহু ভাষী লোক রয়েছে ৷ তাই রাষ্ট্র ভাষা বাংলা কি বাদ দেয়া হবে ? যদি না দেয়া হয় তাহলে রাস্ট্রধর্ম হিসেবেও ‘ইসলাম’ বাদ দেয়া যেতে পারে না ৷
বক্তারা বলেন, ধর্ম থাকতে হলে কি ব্যক্তিকে মানুষ হতে হয় ? সেবাই পুলিশের ধর্ম ৷ এখানে তো একটি সংস্থারও ধর্ম পাওয়া গেল ৷ রাষ্ট্র মানুষ না হোক মানুষের জন্যই তো রাষ্ট্র৷ যদি রাষ্ট্রের ভাষা হতে পারে, তাহলে ধর্ম হতে পারবে না কেন ? যদি রাষ্ট্রের ধর্ম না হতে পারে তাহলে রাষ্ট্রের নীতি, আদর্শ, মতবাদ বা দর্শন থাকে কী করে? রাষ্ট্র একটি ব্যক্তি বা মানুষ না হওয়া সত্ত্বেও গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতার মতো ইজম যদি রাষ্ট্রের হতে পারে তাহলে তার ধর্ম হতে পারবে না কেন ? ব্যক্তি না হলেও যদি রাষ্ট্র স্বাধীন, পরাধীন, মুক্ত, অবরুদ্ধ, দুর্বল, শক্তিশালী, সফল ও ব্যর্থ সবই হতে পারে, তাহলে রাষ্ট্র ধর্মসমৃদ্ধ হতে পারবে না কেন ? এসব যুক্তি ধোপে টিকবে না ৷ মূলত একশ্রেণীর স্বাধীনতাবিরোধী বুদ্ধিজীবী ও বাংলাদেশের স্বকীয়তা বিধ্বংসী একটি দুষ্টচক্র রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম তুলে দিতে কোমর বেঁধে নেমেছে ৷ ‘৭২-এর সংবিধানে ধর্মনিরপেৰতা ও সমাজতন্ত্র সংযোজনের ফলে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের আশা-আকাঙ্খা এবং স্বাধীনতার প্রকৃত চেতনার প্রতিফলন যেমন হয়নি, তেমনি দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিন্তা -চেতনার রূপায়ণ ও অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি ঘটেনি ৷ কেননা এদেশের মানুষের জীবনধারা প্রমাণ করেছে, তারা ধর্মনিরপেক্ষ নন ৷ এই বাস্তব ও সত্য কথাটা ভুলে বুদ্ধিবৃত্তির সিন্ডিকেট করে সুদূরপ্রসারী অভিপ্রায়ে বাংলাদেশের আদর্শিক মূল শিকড় কেটে ফেলে ধর্মনিরপেক্ষতা রাজনৈতিক ও সমাজতন্ত্র অর্থনৈতিক দর্শন হিসেবে সংবিধানে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয়৷ সংবিধান একটি দেশের রাজনৈতিক দর্শনের প্রতিফলন৷ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিনত্মা-চেতনা, ঈমান-আকি্বদার রূপায়ণ ৷ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তি৷ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের চিনত্মা-চেতনার রূপায়ণ ৷ তাই গণতান্ত্রিক দায় হিসেবে এবং এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের ধর্মীয় বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও চেতনার স্বাতন্ত্র্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে সংবিধানে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংযোজন করা হয়৷ তাছাড়া জনগণের অনুভূতির কথা বিবেচনা করে পবিত্র বিসমিল্লাহ, সর্বশক্তিমান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা ও বিশ্বাসসহ অনেক ধর্মীয় মূল্যবোধকেও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার মধ্যে আনা হয় ৷ কেননা পৃথিবীর সব দেশেই সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে গুরুত্ব দেয়া হয় ৷ এটাই গণতন্ত্রের কথা৷ তাই মুসলিম জনসংখ্যা অধু্যষিত বাংলাদেশের সংবিধান থেকে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার চিন্তা -ভাবনা অনভিপ্রেত ৷
বক্তারা আরো বলেন, সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে শুধু পবিত্র দ্বীন ইসলাম উনাকেই রাষ্ট্রধর্ম করা হয়নি বরং হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ধর্মকেও রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে ৷ অন্যান্য ধর্মকেও যেখানে সমমর্যাদা দেয়া হয়েছে সেখানে পবিত্র দ্বীন ইসলাম ধর্মকে রাষ্ট্রধর্ম থেকে বাদ দেয়া কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য ও বরদাস্তযোগ্য নয় ৷ এমতাবস্থায় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বাদ দেয়ার রিট কোনভাবেই চলতে পারেনা ৷
বাবা-মা কর্তৃক শিশুহত্যা ও নির্যাতন বন্ধ এবং মাদক-দুর্নীতি প্রতিরোধসহ সামাজিক মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় রোধে সংবিধানে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার উপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন :
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি ঢাবি’র উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন ‘ধর্ম শিক্ষা থেকে দূরে সরে আসায় শিশুও নারী নির্যাতন, হত্যা বেড়েছে ৷ এজন্য নীতি নৈতিকতা এবং ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব৷ আমরা মনে করি আরেফিন সিদ্দিক সাহেব সঠিক কথা বলেছেন৷ কারণ দেশের শিক্ষাব্যবস্থাসহ কোন ক্ষেত্রেই ইসলামী শিক্ষা নেই৷ ইসলামী মূল্যবোধ তুলে দেয়া হয়েছে ৷ তাছাড়া ‘সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ এটাও সংবিধান থেকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে ৷ এতে মুসলমানরা ইসলামী আক্বীদা বিশ্বাস থেকে দূরে সরে গেছে ৷ খোদাভীতি ভূলতে বসেছে ৷ শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যনত্ম সবার মধ্যে ইসলামী মূল্যবোধের অভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে ৷ পরকীয়ার মতো অপরাধে লিপ্ত হয়ে মা-বাবা কর্তৃক শিশু হত্যার মতো অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটাচ্ছে ৷ মূলত ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিফলনে সংবিধানে ‘সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ পুণঃস্থাপন না করা পর্যন্ত এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় সিলেবাসে ইসলামী শিক্ষা অর্ন্তভূক্তি ব্যতীত শিশু নিপীড়ণসহ কোন অপরাধ বন্ধ করা সম্ভব নয় ৷ তাই অতিসত্ত্বর সংবিধানে ‘সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস’ পুণঃস্থাপন করা হোক ৷ রক্ষা করা হোক এদেশের ৯৮ ভাগ মুসলমানের ঐতিহ্যকে, পারিবারিক বন্ধনকে, মা-বাবা কর্তৃক শিশু হত্যাকে ৷
বক্তারা বলেন, প্রসঙ্গত, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী “সর্বশক্তিমান মহান আলস্নাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস” এ অনুচ্ছেদ উঠাতে হলে জাতীয় সংসদে পাশ হলেও সংবিধানে অন্তর্ভুক্তির জন্য গণভোটের প্রয়োজন ৷ কিন্তু সে গণভোট ছাড়াই কীভাবে তা উঠিয়ে নেয়া হলো এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান জানতে চায়৷ কারণ অন্য কোন দল নয় একমাত্র আওয়ামী লীগের পোষ্টারেই সবার উপরে লেখা থাকে মহান আল্লাহ পাক সর্বশক্তিমান ৷ “২০০৮ এর পোষ্টারে, ২০১৪ সালের নির্বাচনী পোষ্টারেও মহান আল্লাহ পাক সর্বশক্তিমান” লেখা ছিল ৷ তা দেখে, তা অনুভব করে, তাতে অনুপ্রাণিত হয়েই দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমান আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় ৷ সেক্ষেত্রে সংসদে সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহ পাক উনার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস এর পক্ষে ভোট দেয়াই সঙ্গত ছিল ৷ কিন্তু আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা সুবিধাবাদী, ষড়যন্ত্রী, বামপন্থীদের কারণে তা হলো না৷ এতে করে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আঘাত পেয়েছেন৷ একথা বিশ্বাস না করলে পুনরায় এ প্রশ্নে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী গণভোট দেয়া হোক ইত্যাদি ৷