রবিবার ● ২৪ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ভবনের বেহাল দশা
৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ভবনের বেহাল দশা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: হস্তন্তরের দুই বছর পার না হতেই ৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যায়ে নির্মিত আড়াই’শ বেডের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল ভবনের টাইলস উঠে গেছে। এসির পানি ধরতে বিভিন্ন স্থানে পাতা হয়েছে বালতি। অপারেশন থিয়েটারের টাইলস খসে পড়েছে। ভবনের বিভিন্ন দেয়ালে নোনা ধরেছে। মাঝেমধ্যেই অচল হয়ে পড়ছে লিফট। সাড়ে ৪৩ কোটি টাকার বেশি ব্যায়ে নির্মিত হাসপাতাল নিয়ে চিকিৎসক কর্মচারীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এসব বিষয় গত ৮ মার্চ ৩০০ নং স্মারকে অভিযোগ আকারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের অধীনে আট তলাবিশিষ্ট এ হাসপাতাল ভবন নির্মাণের দায়িত্বে ছিল ঝিনাইদহ গণপূর্ত অধিদপ্তরের। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে টি.ই এন্ড ইউসিসি জেভি নামে একটি যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ভবন ও যন্ত্রপাতিসহ এতে ব্যয় হয় মোট ৪৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা। নির্মাণ কাজ শেষে ঝিনাইদহ গণপূর্ত বিভাগ ২০২১ সালের আগষ্ট মাসে ভবন হস্তান্তর করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। ভবন হস্তান্তরের কিছুদিনের মধ্যেই নির্মানকাজে নানা ত্রুটি ধরা পড়ে। বিষয়টি নিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের উপ-সচিব মুহাম্মদ শাহাদত খন্দকার তার দপ্তরের ২৫৩ নং স্মারকে গত ৭ এপ্রিল গনপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীকে চিঠি দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, “ভবনের বিভিন্ন ফ্লোরের ইট শুড়কি উঠে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় টাইলস খসে যাচ্ছে। নিন্মমানের কাঠ ব্যবহারের ফলে দরজা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। পানির পাইপ ফেটে অনেক স্থানে পানি চুয়াচ্ছে। হাসপাতালের ইন্টারনাল ওয়ারিংয়ে নিন্মমানের তার ব্যবহার করা হয়েছে। জানালা ও বারান্দার গ্লাস ভেঙ্গে পড়েছে। মাঝে মধ্যে লিফট বন্ধ হয়ে যাচ্ছে”। সরেজমিন হাসপাতাল পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অপারেশন থিয়েটারের পশ্চিমের ওয়ালের টাইল খসে পড়েছে। ওটি রুমের এসি দিয়ে পানি ঝরছে। এসির নিচে গামলা ও বালতি বসিয়ে রাখতে হয়েছে। অপারেশন থিয়েটারের পাশের রুমের মেঝের টাইলস পুরোটাই উঠিয়ে ফেলা হয়েছে। গত এক বছরে অন্তত ৭০ বার লিফট বন্ধ হয়েছে। এতে বিভিন্ন তলায় ওঠা-নামায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে রোগী ও তাদের স্বজনদের। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্তাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম নির্মানে ত্রুটির কথা স্বীকার করে বলেন, ভবনের সমস্যার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়। সেখান থেকে বিষয়টি গণপূর্ত অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে জানানো হয়। গণপূর্ত বিভাগের খুলনার তত্বাবাবধায়ক প্রকৌশলী সরেজমিনে পরিদর্শন করে গেছেন। তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ত্রুটিগুলো ঠিক করে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু মাসের পর মাস পার হলেও সমস্যার সমাধান হয়নি। এ বিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঝিনাইদহের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড ওলিভার গুডা জানান, হাসপাতালের কিছু কাজ করা হয়েছে। বাকি সমস্যাগুলো চলতি অর্থবছরের বাজেট বরাদ্দ থেকে সমাধান করা হবে। তিরি আরো বলেন, কোনো সমস্যা দেখা দিলে মেরামত করে দেওয়া হবে। ঠিকাদার সাইফুল ইসলাম টিপু মল্লিক জানান, নির্মান কাজ গনপূর্ত ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বুঝে নিয়েছেন। এখন নির্মান কাজে ত্রুটি খুজে পাওয়ার দায়ভার ঠিকাদার নিতে পারেন না। তিনি বলেন তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার নিজে ইটালি ভ্রমন করে এসি ও লিফট কিনেছেন। এর জন্য তো আমি দায়ী নয়।
উল্লেখ্য ২০১৩ সালের ৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৭ সালে টি.ই এন্ড ইউসিসি জেভি নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মান কাজ শুরু করে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নির্মান কাজ সম্পন্ন করে ভবনটি হস্তান্তরের কথা ছিল। কিন্তু কাজের মান নিন্মমানের হওয়ায় তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার ইবনে শাইখ ঠিকাদারের বিল আটকে দেন। এ নিয়ে বিরোধ চরমে ওঠে। এক পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলী কায়সার বদলী হয়ে যান।
কালীগঞ্জে বিএসটিআই পরিদর্শকের প্রতারণা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ কালীগঞ্জে শনিবার ছুটির দিন সকাল সাড়ে ১০টায় খুলনা থেকে বিএসটিআই পরিদর্শক মেট্রালজি আলমাস মিয়া কালীগঞ্জে আসেন বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির কালীগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক সম্ভু কর্মকারের বধু জুয়েলার্স নামে দোকানে নিক্তি (সোনা পরিমাপ করা যন্ত্র) চেক করতে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি দোকানে যাবেন এবং নিক্তি চেক করে তাতে বিএসটিআইয়ের টিকিট মারবেন। কিন্তু তিনি তা না করে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির কালীগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক সম্ভু কর্মকারের বধু জুয়েলার্স নামের দোকানে বসেই তিনি সকল জুয়েলারির দোকানের টিকিট লিখছিলেন। শনিবার ২৩ জুলাই হলেও তিনি বিএসটিআইয়ের প্রায় শতাধিক টিকিটে ২৪ জুলাই তারিখ লিখছিলেন এমন সময় সেখানে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যম কর্মী উপস্থিত হলে তারা বিষয়টি নিয়ে বিএসটিআই পরিদর্শকের সাথে কথা বল্লে পরিদর্শক আলসাম মিয়া ভুল করে লেখা হয়েছে বলে জানান এবং পরে আর একদিন আসবো বলে সেখান থেকে চলে যান। এদিকে বিএসটিআই টিকিটের সরকারি মূল্য ১শ ১৫টাকা হলেও প্রতি জুলারির দোকান থেকে নেওয়া হয় ৫শ টাকা করে। একাধিক জুয়েলারি দোকান মালিক জানান ৫শ টাকার মধ্যে ৩শ ৮০ টাকা দেওয়া হয় নিক্তি চেক বাবদ আর বাকি ১শ ২০ টাকা বিভিন্ন খাতে প্রদান করা হয়। প্রায় ২শ দোকান থেকে ১শ ১৫ টাকা করে সরকারি টাকা নেওয়া হলে মোট টাকা দাড়ায় ২৩ হাজার টাকা সেখানে তাদের দিতে হয় মোট ৭৬ হাজার টাকা। ২৩ হাজার সরকারি টাকা বাদ দিলে বাকি ৫৩ হাজার টাকা যায় কার পকেটে? নিক্তি চেক না করে একটি দোকানে বিএসটিআইয়ের টিকিট দিয়ে চলেযান বিএসটিআই পরিদর্শক সেখান থেকে সব দোকানে পৌঁছে দেওয়া হয় টিকিট গুলো। কোনো জুয়েলার্সের দোকানে নিক্তিতে হেরফের থাকলেও তারা থেকে যান ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতে করে প্রতারনার শিকার হন সোনার গহনা তৈরি করতে আসা সাধারণ মানুষ। একাধিক জুয়েলারি মালিক জানান, প্রতি বছর নিক্তি চেক করাতে আসা বিএসটিআইয়ের পরিদর্শক মোবাকরগঞ্জ চিনি কলের গেস্ট হাউজে আসতো সেখানে বসেই তারা টাকা নিয়ে টিকিট দিয়ে চলে যেতো কোনো নিক্তি চেক করতোনা। এই বিষয়ে বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির কালীগঞ্জ শাখার সভাপতি ওসমান আলী জানান, আমরা সকল সদস্যের কাছ থেকে ৫শ টাকা করে নিয়ে থাকি নিক্তি চেকসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার হয়। খুলনা বিএসটিআই উপপরিচালক মেট্রালজি মোন্নাফ হোসেন জানান, প্রতিটি নিক্তি চেক করে তবেই তার গায়ে বিএসটিআইয়ের টিকিট লাগাতে হবে। তিনি যদি একজনের কাছে টিকিট দিয়ে আসার চেষ্টা করেন তাহলে অপরাধ করেছেন। আমি ছুটিতে আছি ছুটি শেষ হলে বিষয়টি দেখবো।
কথন সাংস্কৃতিক সংসদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত
ঝিনাইদহ :: নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়েছে ঝিনাইদহের জয়বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সংগঠন কথন সাংস্কৃতিক সংসদ (কসাস)’র ১৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী। দুর্যোগ মহামারী মোকাবেলা করে মানবতারই হবে জিৎ, পঞ্চদশে নব উদ্যমী কসাস হোক পথিকৃৎ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে শনিবার সকালে কেসি কলেজ চত্বর থেকে একটি শোভাযাত্রা বের করা হয়। শোভাযাত্রাটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে একই স্থানে এসে শেষ হয়। পরে কেসি কলেজ মুক্তমঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কসাসের সভাপতি হাসানুজ্জামান অন্তর’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর অশোক কুমার মৌলিক। প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার মুনতাসিরুল ইসলাম। গেস্ট অব অনার ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। বিশেষ অতিথি ছিলেন কেসি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. বি এম রেজাউল করিম, কেসি কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমিরুল ইসলাম, কথনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান, সরকারি কৌশুলী অ্যাড. বিকাশ কুমার ঘোষ, সিও সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সামছুল আলম। উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে যাত্রা শুরুর পর থেকে সংগঠনটি তাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অর্জন হিসেবে পেয়েছেন জয়বাংলা ইয়ুথ এ্যাওয়ার্ড। জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় স্থানীয় শিশু-কিশোর ও তরুণদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও সহায়তা প্রদান করে সংগঠনটি। সংগঠনের এই মূল আন্দোলনের পাশাপাশি উদ্যোক্তা তৈরি, মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও সম্মাননা প্রদান, সব জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপনসহ সমাজ সচেতনতামূলক বিবিধ কার্যক্রম করে চলেছে সংগঠনটি।