মঙ্গলবার ● ২৬ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » অবিলম্বে খুন, সন্ত্রাস ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন
অবিলম্বে খুন, সন্ত্রাস ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবিতে বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সোনাদেবী চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, সেনাবাহিনী, মুখোশ ও সন্তু গ্রুপের ব্যাপক বাধা ও হুমকি পিসিজেএসএস (সন্তু-মূল) -এর প্রতি অবিলম্বে খুন, সন্ত্রাস ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের দাবিতে গত রবিবার, ২৪ জুলাই ২০২২ সকালে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি, সাজেক ও খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় পৃথক পৃথকভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
সাজেক নারী সমাজ, পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও এলাকাবাসীর উদ্যোগে এই মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
মানববন্ধন কর্মসূচি বানচাল করে দিতে গতকাল থেকে পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুপ, সেনাসৃষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা এলাকার জনপ্রতিনিধি, হেডম্যান, কার্বারীদের মোবাইলে কল করে হুমকি ও বাধা প্রদান করে। আজ সকাল থেকে এ বাধায় যোগ দেয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। তারা সাজেক, বাঘাইছড়ির বিভিন্ন এলাকায় পয়েন্টে পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী লোকজনকে বাধা দেয়, গাড়ি থেকে নামিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এমনকি বাজারে যাওয়া লোকজনকেও হয়রানি করে। সকালে বাঘাইহাট জোনের সেনারা মাইকিং করে দুইজনের অধিক লোক জমায়েত হলে আটক করা হবে বলে জানিয়ে দেয়।
অন্যদিকে, খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় সকাল থেকে সেনাবাহিনী ও তাদের সৃষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা সশস্ত্র অবস্থায় বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নিয়ে লোকজনকে বাধা দেয় ও হুমকি প্রদান করে।
তবে সেনা, মুখোশ ও সন্তু গ্রুপের ব্যাপক বাধা ও হুমকি সত্ত্বেও মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি বঙ্গলতলী এলাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ ও সাজেক নারী সমাজের উদ্যোগে আয়োজিত মানববেন্ধনে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সদস্য সূচনা চাকমা।
সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট ও মাচলংয়ে পৃথক দুই স্থানে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ৯টায় বাঘাইহাটের বালুঘাট এলাকায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে রুপসা চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের কেন্দ্রীয় সদস্য উর্মিলা চাকমা। মানববন্ধন চলাকালে সেনাবাহিনী ও পুলিশ এসে মানববন্ধন কর্মসূচি বন্ধ করে দিতে চাইলে এতে উর্মিলা চাকমা প্রতিবাদ করেন। এসময় বাঘাইহাট জোনের ডিজিএফআইয়ের এক সদস্য তাকে গালিগালাজ করে ও হুমকি দেয়।
আর মাচলং-এ এলাকার প্রতিবাদী জনগণ এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার ব্যানারে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের বাঘাইছড়ি উপজেলা শাখার সভাপতি অন্বেষা চাকমা ও সাংগঠনিক সম্পাদক সবিতা চাকমা।
অনুষ্ঠিত এসব মানববন্ধনে লিখিত বক্তব্যে বক্তারা ইউপিডিএফের সাথে হওয়া সমঝোতার শর্ত ও সংঘাত বন্ধের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে জেএসএস সন্তু গ্রুপ কর্তৃক ১১ জুন থেকে নতুন করে ইউপিডিএফের ওপর সশস্ত্র হামলা ও পর পর দুই ইউপিডিএফ সদস্যকে খুনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তারা বলেন, সন্তু লারমা আঞ্চলিক পরিষদে তার গদি রক্ষার জন্য সরকারের সাথে ষড়যন্ত্র করে নতুন করে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত শুরু করেছে। সে গদি রক্ষার জন্য নিজ দলের কর্মীদর বলি দিচ্ছে, নিরীহ জনগণকে বলি দিচ্ছে। এক কথায় সে অন্যের জীবন ও রক্ত দিয়ে তার গদি ঠিক রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে। সন্তু লারমার কারণে আজ সমগ্র জাতি ও জনগণ বিভক্ত হয়ে রয়েছে, ঐক্যবদ্ধ হতে পারছে না।
লিখত বক্তব্যে বক্তারা সেনাবাহিনী ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন সন্তু লারমাকে যে কোন প্রকারে টিকিয়ে রাখতে চাইছে উল্লেখ করে বলেন, তারা তাকে নানাভাবে সাহায্য সহযোগিতা করছে। কারণ তাকে টিকিয়ে রাখতে পারলে শাসকগোষ্ঠীর লাভ, তারা তাকে ব্যবহার করে জুম্ম জনগণকে বিভক্ত করে রাখতে পারে, তাদের নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী হানাহানি সংঘাত জিইয়ে রাখতে পারে এবং এভাবে সরকার বিরোধী আন্দোলন থেকে তাদেরকে দূরে রাখতে পারে। এজন্য সেনাবাহিনী ও সরকারের কাছে সন্তু লারমার এত কদর। কিন্তু তার মতো দালালকে সরকার ও সেনাবাহিনী চিরকাল রক্ষা করতে ও টিকিয়ে রাখতে পারবে না বলে বক্তারা মন্তব্য করেন।
মানববন্ধনে বক্তারা সন্তু লারমার উদ্দেশ্যে বলেন, আপনি ভুল পথে হাঁটছেন, আপনার নিজের ও জনগণের স্বার্থে এই ভুল পথ পরিত্যাগ করুন। খুন, সন্ত্রাস ও ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতের রাজনীতি বর্জন করুন। সরকার ও সেনাবাহিনীর দালালি বন্ধ করুন। আঞ্চলিক পরিষদের গদি ছেড়ে দিয়ে আন্দোলনের সাথে যুক্ত হোন।
তারা পিসিজেএসএসের অন্যান্য নেতা কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আমাদের ভাই, আমরা বা ইউপিডিএফ-মুল আপনাদেরকে কখনই শত্রু মনে করি না। কিন্তু আপনাদেরকে ভুল বোঝানো হচ্ছে, বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। এজন্য আপনারা অনেকে যারা বন্ধু তাদেরকে শত্রু মনে করছেন, আর যারা গণশত্রু তাদেরকে বন্ধু মনে করছেন। জাতির জন্য চরম ক্ষতিকর ভ্রাতৃঘাতি সংঘাতকে আন্দোলন বলে মনে করছেন। নিজের ভাইকে শত্রু মনে করছেন। কেবল একজনের জন্য আজ আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে এমন দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে। তাই আপনাদের আত্মোপলব্ধি করতে হবে, সবকিছু সঠিকভাবে বিচার বিশ্লেষণ করতে হবে, সবকিছু অন্ধভাবে মেনে নেবেন না। উপরিস্থদের নির্দেশ জাতির জন্য ক্ষতিকর হলে তা মেনে নেবেন না। নিজের ভাইকে হত্যার নির্দেশ মেনে নেবেন না। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত জারি রাখার বা জিইয়ে রাখার ফরমান মানবেন না। মনে রাখবেন জাতির চাইতে একজন ব্যক্তিনেতা কখনই বড় হতে পারে না’।
বক্তারা সরকার, সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার লোকজনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘সন্তু লারমাকে দিয়ে ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বাঁধিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন। ঠ্যঙারে বাহিনী দিয়ে খুন, গুম, অপহরণ ও বিভিন্ন অপকর্ম করিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামকে অশান্ত করবেন না। ইউপিডিএফের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করুন।’
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, সন্তু লারমার ষড়যন্ত্র কখনই সফল হতে দেবো না। আমরা তার জাতি বিধ্বংসী অপতৎপরতা রুখবই। আমরা তার খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতিকে পরাস্ত করবই। কারণ আমাদের জাতি ও জনগণকে বাঁচাতে হবে। সন্তু লারমার মতো এক দালালের কাছে গোটা জাতি ও জনগণ চিরকাল জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।
অপরদিকে, একই দাবিতে সকাল ১০টার সময় খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার বাবুছড়া এলাকায় এলাকাবাসীর উদ্যোগে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে বক্তব্য রাখেন সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধ কমিটির বাবুছড়া শাখার সম্পাদিকা ঊষা রানী চাকমা ও যুব সমাজের প্রতিনিধি সুভাষ চাকমা।
বক্তারা বলেন, আমরা সবাই শান্তিতে থাকতে চাই। সেজন্য আমরা আজকে মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা সবাই একতাবদ্ধ হয়ে থাকতে চাই। তারা অচিরেই সংঘাত বন্ধ করে শান্তি স্থাপনের জন্য সন্তু লারমা তথা জেএসএস’র প্রতি আহ্বান জানান।
দীঘিনালায় উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচি ভেস্তে দিতে গতকাল থেকে মুখোশ ও পিসিজেএসএস সন্তু গ্রুপের সদস্যরা এলাকার জনপ্রতিনিধি, কার্বারী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণকে মোবাইলে কল করে হুমকি ও বাধা দেয় এবং আজ সকাল থেকে সেনাবাহিনী ও মুখোশরা বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্রভাবে অবস্থান নিয়ে জনগণকে বাধা প্রদান করে।