বৃহস্পতিবার ● ২৮ জুলাই ২০২২
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » জেবুন্নেছার বিরুদ্ধে এনআইডি জালিয়াতি করে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
জেবুন্নেছার বিরুদ্ধে এনআইডি জালিয়াতি করে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়ায় আবারও এনআইডি জালিয়াতি করে কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম তারিখ পরিবর্তন করে অবৈধভাবে নিয়োগ প্রদানের অভিযোগ উঠেছে খোদ প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা সবুজের বিরুদ্ধে। ইতোমধ্যে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত পরিচ্ছন্নকর্মী চায়না খাতুন এমপিওভুক্ত হয়ে বেতন উত্তোলন করছেন। বিষয়টি কুষ্টিয়া জেলা জুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এ বিষয়ে কিছুই জানেন না স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নিয়োগকালীন সভাপতি আসগর আলী। অথচ তিনি নিয়োগ বোর্ডের অন্যতম সদস্য এবং তার রেজুলেশন ছাড়া নিয়োগ বোর্ড গঠন কিংবা নিয়োগ প্রদান সম্পূর্ণ অবৈধ এবং বেআইনী। তাকে না জানিয়ে এই নিয়োগ
প্রদানের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে চাকুরি প্রাপ্ত ব্যক্তি প্রতিবেদককে জানান, চাকুরি বিধি অনুযায়ী বয়স হতে হবে ন্যূনতম ৩৫ বছর। কিন্তু তার বয়স ৩৭ হওয়ায় প্রধান শিক্ষক তাকে বলেন বয়স ঠিক করে আনো। এর পরেই তিনি বয়স পরিবর্তনের জন্য জালিয়াতির পথ বেছে নেয়। কুষ্টিয়া পৌরসভায় ওয়ারিশ সার্টিফিকেটে তার জন্ম তারিখ, সুরক্ষায় তার টিকা কার্ডের বয়স এবং জেলা নির্বাচন অফিসের সার্ভারে তার জন্ম তারিখ প্রদর্শিত হচ্ছে ০১/০১/১৯৮৫। অথচ চাকুরী ক্ষেত্রে সে ব্যবহার করেছে ০১/০১/১৯৯০ এর একটি জাল জাতীয়পত্র।
কুষ্টিয়া কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক ন্যাশনাল আইডি কার্ডকে টেম্পারিং করে বয়স কমিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চাকুরী প্রদান করেছেন এক পরিচ্ছন্ন কর্মীর। মূল সার্ভারে বয়স সঠিক থাকলেও প্রদর্শিত আইডি কার্ডের বয়স কমানো হয়েছে ৫ বছর। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছে সব ঠিক আছে।
স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি, ডিজির প্রতিনিধি সহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন তারা জানতেন না ন্যাশনাল আইডি কার্ড টেম্পারিং করা হয়েছে। হরিজন সহ একাধিকজন চাকুরী প্রত্যাশী থাকলেও ভোরের ডাক পত্রিকার ২৩শে আগস্ট ২০২১ তারিখে গোপন সার্কুলারে নিয়োগ দেয়া হয়েছে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের আস্থা ভাজন চায়না খাতুনকে।
চায়না খাতুন জানান, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আমাকে চাকুরীতে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক জেবুননেছা সবুজ। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা সবুজ বলেন, আমি অনেক কিছু করতে পারি, এটা তো তেমন কিছু না। এদেশে পুলিশের চাকুরি থেকে শুরু করে ভুরি ভুরি অনিয়ম হচ্ছে। সামান্য এক দেড় বছর বয়সের ব্যবধান ওটা তেমন কিছু না। নিয়োগ প্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মী বলেন, তিনি শুধু চাকুরী পাওয়ার জন্য তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডে টেম্পারিং করে বয়স কমিয়েছেন। তবে প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে এগুলো করা হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে নিয়োগ প্রত্যাশী আরিফুল ইসলাম আরিফ অভিযোগ করে বলেন, নিয়োগ সার্কুলার গোপন করে বয়স সীমা অতিক্রমকারীকে টাকার বিনিময়ে প্রধান শিক্ষক কেন নিয়োগ প্রদান করলেন এর জন্য ঐ শিক্ষকের উপযুক্ত বিচার দাবী করেন তিনি।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার একরামুল হক সরকার বলেন, এই নিয়োগের সাথে জড়িত সকলেই চাকুরী যাওয়ার মতো অপরাধ করেছেন। তাকে চাকুরি দেওয়ার আগে আইডি কার্ডসহ প্রত্যেকটি কাগজপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষা করে নেওয়া উচিত ছিল।
কুষ্টিয়া জেলা সিনিয়র নির্বাচন অফিসার বলেন, কেউ যদি ন্যাশনাল আইডি কার্ডে টেম্পারিং করে তাহলে তিনি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন এর জন্য বিচার
হওয়া উচিত।
কলকাকলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দীর্ঘ ২/৩ বছর ধরে হরিজন সম্প্রদায়ের এক ছেলে কর্মরত ছিল। অথচ নিয়োগের সময় তাকে নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয়নি। তার বয়স চাকুরিবিধির মধ্যে থাকলেও কেন এবং কি কারণে তাকে বাদ দিয়ে প্রধান শিক্ষক বয়স অতিক্রমকারী ব্যক্তিকে বেছে নিলেন? কুষ্টিয়ার সর্বস্তরের মানুষ বিষয়টি দুদকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
উল্লেখ্য যে, প্রধান শিক্ষক জেবুন্নেছা সবুজের স্বামী ব্যাংকে জাল সঞ্চয় পত্রের বিপরীতে কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় চাকুরি হারান এবং কারাবরণ করতে হয়। জেবুন্নেসা তিনি এতই ক্ষমতাধর ব্যক্তি যে, তার একটি মেয়ে সোনালী ব্যাংক কুষ্টিয়া পোর্ট বিল্ডিং শাখায় কর্মরত আছে। উক্ত ব্যাংকে সম্প্রতি এক সাংবাদিক সেবা প্রত্যাশীর সঙ্গে তার মেয়ের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মোবাইলে এই ক্ষমতাধর মহিলা তার ব্যাংকার মেয়ের পক্ষ নিয়ে ঐ সাংবাদিকে হুমকি ধামকিও প্রদান করেন বলে অভিযোগ উঠে এসেছে।