মঙ্গলবার ● ২ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » আসামীদের গ্রেপ্তার না করে, দহরম-মহরম করছে পুলিশ : নিহতের মায়ের অভিযোগ
আসামীদের গ্রেপ্তার না করে, দহরম-মহরম করছে পুলিশ : নিহতের মায়ের অভিযোগ
বিশ্বনাথ প্রতিনিধি :: সিলেটের বিশ্বনাথে চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা আবদুল বাছিত হত্যা মামলার ২ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করলেও বাকী আসামীদের গ্রেপ্তার না করে, আসামীদের সাথে থানা পুলিশ দহরম-মহরম করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে গ্রেপ্তার না হওয়া আসামীরা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এমনকি চলছে আসামীদের চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার পায়তারা। আর ওই অভিযোগের তীর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানার এসআই রুমেন আহমদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (৩০ জুলাই) দুপুরে নিহত বাছিতের পরিবার এবং উপজেলা কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, উপজেলা ও সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ তুলে মামলা থেকে ওই তদন্তকারী কর্মকর্তাকে পরিবর্তন এবং অন্য কোনো সংস্থা দ্বারা মামলার সুষ্ঠ তদন্ত সম্পন্ন ও চার্জশিট প্রদানের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কান্নাজড়িত কন্ঠে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরে নিহত ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল বাছিতের মা আনোয়ারা খাতুন বলেন, আইনের সরণাপন্ন হয়ে ছিলাম সঠিক বিচার পাওয়ার জন্য, কিন্তু এখন আমরা আইনের কাছে বিচার পাচ্ছি না। পুলিশ মামলার ২ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করলেও বাকীদের গ্রেপ্তার না করে তাদের (আসামী) সাথে আতাত করে তাদেরকে চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার পায়তারা করছে।
গ্রেপ্তারকৃতরাও জামিন পেলে আমাদেরকে (পরিবারের সদস্য) হত্যা করে ফেলবে বলেও হুমকি দিচ্ছে। এক ছেলেকে হারিয়ে আমি এখন এমনিতেই জীবন্ত লাশ। আর আইনের কাছে বিচার না ফেলেতো পুরো লাশ হওয়া ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজকদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্বনাথ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহ বোরহান আহমদ রুবেল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিশ্বনাথের চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা আবদুল বাছিত খুনের ঘটনায় এতদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত সব আসামীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিএনপি-জামাতের দোষর, চিহ্নিত সন্ত্রাসী ওই আসামীগণ ধনে-জনে বলিয়ান।
প্রধান আসামী সুমন মিয়ার ভাই হিরন মিয়া ও লিটন সৌদি আরবে, শিপন যুক্তরাজ্যে, লিপন ফ্রান্সে এবং অপর আসামী ফারুকের ভাই মারুফ ও আসামী সামাদ-কাইয়ুমের ভাই আকিব কাতারে থাকায় তারা টাকার জোরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানার এসআই রুমেন আহমদকে প্রভাবিত করে ফেলেছে।
পলাতক আসামীদের সাথে এসআই রুমেনের রীতিমত দহরম-মহরম চলছে। বিশ্বনাথ বাজার ও টেংরা বাজারে তিনি (রুমেন) আসামীদের সাথে একত্রে চলাফেরা করেন। তিনি এখনও পর্যন্ত মামলার বাদী ও স্বাক্ষীগণকে জিজ্ঞাসাবাদ পর্যন্ত করেননি।
আসামীগণকে মামলা হতে বাদ দিয়ে মনগড়া প্রতিবেদন দাখিল করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। মামলায় মিথ্যা আসামী দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বাদীকে তিনি হুমকিও দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রুমেনের সাথে দহরম-মহরম থাকায় মামলার আসামী সামাদ মিয়া, কাইয়ুম মিয়া, আহাদ মিয়া প্রতি রাতেই ১২টা-১টার দিকে দিকে বাড়িতে ফিরে নিজেদের ঘরেই রাত্রিযাপন করছে।
পাশাপাশি, মামলার চার্জশীট থেকে তাদের নাম বাদ পড়বে-এমন দম্ভ দেখিয়ে ওই আসামীরা প্রকাশ্যেই মামলার বাদী ও নিহত ছাত্রলীগ নেতা বাছিতের বড় ভাই শাহীন মিয়াকে হুমকি দিয়ে আসছে যে, কেনো মামলায় তাদেরকে আসামী করা হয়েছে, সে জন্যে তাকে তারা উচিত শিক্ষা দেবে।’
লিখিত বক্তব্যে সুস্পষ্ট দাবি জানানো হয়, চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা বাছিত খুনের ঘটনা সঠিক তদন্তের স্বার্থে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রুমেন আহমদকে পরিবর্তন করা, অন্য কোনো সংস্থার দ্বারা তদন্ত কাজ করা, মামলার বাকী ৩ আসামীকে দ্রæত গ্রেপ্তার করে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সব আসামীর নাম চার্জশীটে অন্তর্ভূক্ত করা। এর ব্যত্যয় হলে দাবি আদায়ে কঠোর আন্দোলনে নামার হুশিয়ারিও দেওয়া হয় সংবাদ সম্মেলনে।
সম্মেলনে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মামলার বাদী ও নিহত ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল বাছিতের বড় ভাই শাহীন মিয়া, বড় বোন রোজিনা বেগম, সুজিনা বেগম, উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিব, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বদরুল আলম, উপজেলা ছাত্রলীগের সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম প্রিন্স, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ আহমদ, ছাত্রলীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম রুকন, জাকির হোসেন মামুন, শিপন আহমেদ, কয়েস আহমেদ, সামি, জীবান, জুয়েল আহমেদ, সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।
এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিশ্বনাথ থানার এসআই রুমেন আহমদ তার উপর আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, মামলাটি এখনো তদন্তাধীন রয়েছে। থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) গাজী আতাউর রহমান বলেন, সঠিক তদন্তের মাধ্যমেই অভিযাগপত্রটি বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল শুক্রবার দিবাগত রাতে রাস্তা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার অলংকারী ইউনিয়নের টেংরা (টিলাপাড়া) গ্রামের মৃত আপ্তার মিয়ার পুত্র এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী আবদুল বাছিত। এ ঘটনায় একই গ্রামের টেংরা (টিলাপাড়া) গ্রামের মৃত নামর মিয়ার পুত্র সুমন মিয়া, তোরন মিয়ার পুত্র ফারুক মিয়া, মৃত তছলিম মিয়ার পুত্র সামাদ মিয়া, কাইয়ুম মিয়া, টেংরার (বড় মসজিদের উত্তরের) মৃত আবদুল ছত্তারের পুত্র আহাদ মিয়া ও অজ্ঞাতনামা ১ জনকে (পিকআপ চালক) আসামী করে ১৭ এপ্রিল রাতে বিশ্বনাথ থানায় মামলা করেন নিহতের বড় ভাই শাহীন মিয়া।