বৃহস্পতিবার ● ৪ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি » ১৯ কিলোমিটার খাল খনন : স্বপ্ন দেখছেন আত্রাইয়ের ১২হাজার কৃষক
১৯ কিলোমিটার খাল খনন : স্বপ্ন দেখছেন আত্রাইয়ের ১২হাজার কৃষক
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় তিনটি খাল পুনঃখননের ফলে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও কৃষি আবাদে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে ১২ হাজার কৃষক। খাল পুনঃখননে রবিশস্য, মৎস্যচাষ, হাস পালন, সবজী চাষ সহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন তৈরী হয়েছে এলাকার উপকারভুগীদের মাঝে। খালের পানি থেকে কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার কারনে ফসল উৎপাদনে সুবিধা পাবে চাষিরা।
তিনটি খালে ১২০০ সদস্য বিশিষ্ট গ্রামীন পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অধিনে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁ (এলজিইডি) অর্থায়নে ২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৯ কি মি দৈর্ঘ্য খালটি খনন কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যার উপকারভুগীরা সুফল পেতে শুরু করেছে। এর ফলে রবিশস্যসহ বছরে তিনবার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজটি বাস্তবায়িত হয়। আত্রাই বুড়িগঞ্জ উপ প্রকল্পের অধীন আত্রাই বুড়িগঞ্জ খাল। ইসলামগাথী মারিয়া কাশিয়াবাড়ি উপ-প্রকল্পের ইসলামগাথি মারিয়া খাল; চকতেমুখ ইসলামগাথি উপ-প্রকল্পের চকতেমুখ খাল ও সমসপায়ারা খালের পুন :খনন এর কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চকতেমুখ ও সমসপাড়া খাল আত্রাই গৌড় নদী থেকে শুরু হয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে নাগর নদীর সাথে সংযক্ত হয়েছে। খাল খনন এর পূর্বে বন্যার সময় ভরা নাগর নদীর পানি সরাসরি মাঠের ফসল নিমজ্জিত হয়ে থাকত। এর কারনে বছরে বোরো ধান উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটতো। কিন্তু বর্তমানে খালটি পুন:খনন হওয়ায় কৃষকের ভাগ্য ফিরেছে। গৌড় নদী দিয়ে পানি সরাসরি নিস্কাশন হওয়ায় ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে । খালের গড় খনন গভীরতা ৩’ এবং খালের তলা ১৪-১৫ ফিট প্রশস্ত করা হয়েছে।
স্থানীয় ইসলামগাথী গ্রামের চাষি শুকবর আলী বলেন, জমিতে ধান চাষে ১০০০ থেকে ১২০০টাকা সেচ কাজে ব্যয় হতো। কিন্তু বর্তমানে তা আর করতে হবেনা না । খালটি খনন করার কারনে আমাদের ধান চাষে খরচ কমে গেল।
মারিয়া গ্রামের চাষি দিদারুল আলম বলেন, খালটি পুন:খনন করার কারনে কৃষি কাজের সুবিধার পাশা-পাশি হাস পালন, মৎস্যচাষ ,সবজি চাষে অনেক সুবিধা হবে। বন্যার পানিতে আর ফসল ফলনে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভবনা নেই। তাছাড়া খালের জমে থাকা পানি ব্যবহার করে আমরা কৃষি কাজ খুব সহজেই করতে পারবো।
কাশিয়াবাড়ি গ্রামের চাষি বিজয় কুমার বলেন, দীর্ঘদিন পরে খালটি পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে আমাদের এই এলাকার চাষিদের কৃষি কাজে অনেক সুবিধা হবে। পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে আমাদের ক্ষেতগুলো বছরজুড়ে ফসলে ভরে থাকবে।
নওগাঁ-৬ ( আত্রাই - রাণীনগর ) আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, খাল খননের ফলে ওই এলাকার কৃষকেরা ফিরে পাবে তাদের সুযোগ সুবিধা। সারা বছর চাষি ভাইয়েরা যেন জমি সেচ দিতে পারে মূলত সেই লক্ষ্যেই খালটি পুনঃখনন করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিগত দিনে এই অঞ্চলে ফসল তেমন একটি ভালো উৎপাদিত হতো না। খাল খনন এর কারনে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা বয়ে আনবে বলে মনে করছি।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনটি খাল থেকে প্রায় ২০০০ হেক্টরের বেশি জমিতে সারা বছর ফসল ফলানোর সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে। যার উপকারভুগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার। আগে বন্যায় তারা মাঠে ২ বার চাষ করতে পারতো না ঠিক মত এছাড়া অনেক সময় মাঠেই ফসল নষ্ট হয়ে যেত। এখন খাল খননের ফলে ৩ বার ফসল আবাদ করতে পারবে, ফসল নষ্টের সম্ভাবনাও অনেক কমে গেছে। আর সেচ সুবিধা তো পাবেই। প্রাকৃতিক মাছের চাহিদা পূরন হবে। খাল সংলগ্ন বসবাসকারী যারা আছেন তারা হাঁস চাষ করতে পারবেন, খালের পাড়ে শাক- সবজি আবাদ করতে পারবেন। তারা আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হবে। খালটি পুনঃখনন এর ফলে কৃষি খাতে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন বলেন, আত্রাই উপজেলার বুড়িগঞ্জ খাল খননের ফলে আত্রাই, বুড়িগঞ্জ, পাচুপুর বিহারীপুর সহ আরো কিছু গ্রাম। ইসলামগাথি মারিয়া কাশিয়াবাড়ি খাল খননের ফলে চৌথল,নোওদুলী,শফিকপুর, বাঁশবাড়িয়া,কচুয়া,পোওয়াতা সহ বেশ কিছু গ্রাম। চক্তেমুখ ইসলামগাথি খাল খননের ফলে গুড়নাই, জগদশ, নৈদিঘি, পতিসর, তেতুলিয়া পর্যন্ত এবং বরশাতা, নন্দীগ্রাম, ইসলামগাথী, খরসতী সহ আরো কিছু গ্রামের কৃষকেরা কৃষি চাষের ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে। ইতোমধ্যে খাল তিনটি পূনঃখননের এর সুফল ভোগ করতে শুরু করেছেন উপকারভুগীরা। তিনটি খাল খননের ফলে ওই এলাকার কৃষকেরা মাল্টিডাইমেশন উপকার পাচ্ছেন।