রবিবার ● ৭ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব : দুর্ভোগ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের
জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব : দুর্ভোগ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের
আকতার হোসেন (চট্টগ্রাম) মিরসরাই প্রতিনিধি :: জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে মিরসরাইয়ে। যার ফলে বন্ধ ছিলো অধিকাংশ যানবাহন। বিশেষ করে মিরসরাইয়ের বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম (মাদার বাড়ি) রুটে চলাচলকারী চয়েস ও উত্তরা পরিবহন।
ডিজেল ও কেরোসিন ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা, পেট্রোল ৮৬ টাকা থেকে ১৩০ এবং অকটেন ৮৯ টাকা থেকে ১৩৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ ডিজেল লিটার প্রতি ৩৪ টাকা, পেট্রোল ৪৪ টাকা এবং অকটেন ৪৬ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোন সিদ্ধান্ত না আসায় বন্ধ ছিলো বেশিরভাগ যানবাহন।
যার ফলে অনেকটাই দুর্ভোগ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে এই রুটে চলাচলকারী যাত্রীদেরকে।মিরসরাইয়ের সব স্ট্যান্ডে কর্মস্থলমুখী মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। অন্য দিনের তুলনায় ঢাকা-চট্রগ্রাম রুটে দূরপাল্লার বাস আগের চেয়ে অনেক কম চলাচল করতে দেখা গেছে। যাত্রীবাহী বাস ছাড়াও ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, পিকআপসহ সব ধরনের যান চলাচল অনেক কম ছিলো।
আবার এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বাড়তি ভাড়া আদায় করে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কে চলাচলকারী অন্যান্য যাত্রীবাহী কিছু পরিবহন বিশেষ করে সিডিএম পরিবহন, দাউদকান্দি এক্সপ্রেস, প্রান্তিক পরিবহন ও অন্যান্য পরিবহন। এছাড়াও হানিফ, ইউনিক, শ্যামলী, সৌদিয়া, তিশা পরিবহন ১০০ টাকার স্থলে ১৫০-২০০ টাকা ভাড়া আদায় করছে। আবার গাড়ি কম থাকায় বারইয়ারহাট চয়েস কাউন্টার থেকে অনেকেই সিএনজি অটোরিকশা করে সিটি গেইট পর্যন্ত ২৫০ টাকা করে এবং মাইক্রোবাসে করে ২৫০-৩০০ টাকা দিয়ে চট্টগ্রাম গমন করতে দেখা যায়।
এছাড়াও বারইয়ারহাট থেকে সীতাকুণ্ড রুটে চলাচলকারী লেগুনা হিউম্যান হলারগুলো চলাচল অনেক কম ছিলো। শনিবার মিরসরাইয়ের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনে এমনই চিত্র উঠে এসেছে।
বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম গামী যাত্রী আব্দু শুক্কুর জানান, দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে বাড়তি ভাড়া দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে চট্টগ্রাম আসছি। বারইয়ারহাট ফুটওভার ব্রিজের নিচে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা আরেক যাত্রী নজরুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এভাবে চলতে পারেনা। আমরা যেন অসহায় হয়ে পড়েছি, একদিকে তেলের দাম বৃদ্ধি, অপরদিকে যানবাহন স্বল্পতা ও বাড়তি ভাড়া আদায়। এটার সঠিক ও স্থায়ী সমাধান জরুরী।
বারইয়ারহাট থেকে বড়দারোগাহাট, সীতাকুন্ড রুটে চলাচলকারী লেগুনা পরিবহনের চালক নিজাম উদ্দিন বলেন, আমাদের লেগুনা হিউম্যান হলারগুলো ডিজেল চালিত। হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমরা বেসামাল হয়ে গেছি। জ্বালানি তেল খরচ ও অন্যান্য খরচ বহন করে গাড়ি চালানো খুবই দুষ্কর হয়ে গেছে। তাই গাড়ি চলাচলও অনেক কমে গেছে। যেগুলো চলেছে সেগুলোতে বাড়তি ভাড়া নিয়ে বাকবিতন্ডার ঘটনা ঘটেছে।
শনিবার বিকেলে চয়েস ও উত্তরা পরিবহনের কিছু গাড়ি বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। সেক্ষেত্রে কিছু বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়।
বারইয়ারহাট ইউনিক ও এস.আলম পরিবহন কাউন্টার মাষ্টার হারুনুর রশিদ বলেন, শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে এস.আলম পরিবহনের কোন বাস ছেড়ে যায়নি। গাড়ি কম থাকায় অন্যান্য পরিবহনগুলোও চট্টগ্রাম থেকে যাত্রী ভর্তি করে গেইটলক করে চলে যায়, তবে কাউন্টারে যাত্রী ছিলো কিন্তু বাড়তি ভাড়ার কারণে অনেকেই ফিরে যায়।
চয়েস পরিবহন মালিকদের একজন মোশারফ হোসেন বলেন, আমরা কিভাবে গাড়ি চালাবো? বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম (মাদার বাড়ি) আসা যাওয়ায় ৪৫-৫০ লিটার ডিজেল লাগে। পূর্বের ৮০ টাকা থেকে ১১৪ টাকা তার মানে ৩৪ টাকা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন প্রায় ২০০০ টাকা বাড়তি দিতে হবে। এছাড়াও গাড়ির পার্টসের দাম বৃদ্ধি, ডকুমেন্ট আপডেট করতে আয়কর বৃদ্ধি ও অন্যান্য খরচ তো আছেই।
এবিষয়ে জানতে চাইলে, রুপনগর ফিলিং ষ্টেশনের ম্যানেজার মুজিবুল হক জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ যানবাহন বন্ধ ছিলো যার ফলে আগের দিনের চেয়ে শনিবার তেল বিক্রি তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিলো।
উত্তরা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ আশরাফুল কামাল মিঠু জানান, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অধিকাংশ যানবাহন বন্ধ ছিলো এবং ভাড়া আদায়ের বিষয়ে বিআরটিএ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কিন্তু আন্তঃজেলা পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। তারপর বারইয়ারহাট থেকে চট্টগ্রাম রুটের ভাড়া সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে জানতে মুঠোফোনে কল দিলে চট্টগ্রাম জেলা ট্রাফিক পুলিশের জোরারগঞ্জ জোনের পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম, বলেন, আমি একটা বিশেষ কাজে চট্টগ্রাম আসছি। তিনি এবিষয়ে কোন কথা বলতে চাননি।