শনিবার ● ২০ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » অপরাধ » শৈলকুপায় শিক্ষক হত্যা মামলায় ৩ জনকে মৃত্যুদন্ড ১ জনকে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদাণ
শৈলকুপায় শিক্ষক হত্যা মামলায় ৩ জনকে মৃত্যুদন্ড ১ জনকে আমৃত্যু কারাদন্ড প্রদাণ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহের শৈলকুপায় স্কুলশিক্ষক খান মোহাম্মদ আলাউদ্দিন হত্যা মামলায় ৩ জনকে মৃত্যুদন্ড ও ১ জনকে আমৃত্যু কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। বুধবার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোঃ নাজিমুদ্দৌলা এ দন্ডাদেশ প্রদান করেন। দন্ডিতরা হলো-শিতলী গ্রামের মৃত গোলাম কুদ্দুস খাঁন’র ছেলে রান্নু খাঁন, শামছুর রহমান খাঁন ও তার ছেলে জামাল খাঁন, কানু খাঁন। মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে শৈলকুপা উপজেলার শিতলী গ্রামে আলাউদ্দিনকে নিজ বাড়িতে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর যখম করে আসামীরা। সেখান থেকে তাকে প্রথমে শৈলকুপায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ঝিনাইদহ সদর হাসপাতাল থেকে রেফার্ড করা হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় পরদিন তার স্ত্রী শিউলী খাতুন বাদী হয়ে ৭ জনের বিরুদ্ধে শৈলকুপা থানায় হত্যা মালা দায়ের করে। তদন্ত শেষে ২০১৫ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারী আসামীদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট প্রদান করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। দীর্ঘ শুনানী ও বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত প্রতিবেশী রান্নু খাঁন, জামাল খাঁন ও কানু খাঁনকে মৃত্যুদন্ড ও শামছুর রহমান খাঁনকে আমৃত্যু কারাদন্ডের আদেশ দেয়। একই সাথে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসমীদের প্রত্যেককে ৪০ হাজার টাকা করে ও আমৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত আসামীকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলায় অপর ৩ জন নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়েছে। নিহত আলাউদ্দিনের ছেলে রাশিদুল ইসলাম রাশেদ বলেন, আমাদের চোখের সামনেই আমার বাবাকে ওই ৭ জন পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে। রায়ে ৩ জন খালাস পাওয়ায় আমার আদালতের প্রতি সম্মান রেখে দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই ৩ জনও শাস্তির আওতায় আনার দরকার। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি ইসমাইল হোসেন বাদশা বলেন, আদালত যে রায় দিয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করছি। দ্রুত এই রায় কার্যকর যেন হয় সেই আশা করছি।
নবজাতককে গলা টিপে হত্যর ঘটনায় অবশেষে মামলা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে সদ্য ভুমিষ্ঠ এক ছেলে শিশুকে গলা টিপে নির্মমভাবে হত্যার অভিযোগে মামলা হয়েছে। বুধবার ঝিনাইদহ সদর থানার এসআই রিফাত হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলার আসামীরা হচ্ছে নবজাতকের মা নুরুন্নাহার খাতুন, নানি কমলা খাতুন ও মায়ের কথিত প্রেমিকা আলিফ আবেদীন গুঞ্জন। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি (অপারেশন) হরিদাশ রায় জানান, পিতৃত্ব নিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি হতে পারে এমন শংকা থেকে মা ও নানির যৌথ ষড়যন্ত্রে শিশুটিকে হত্যা করা হয় বলে প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা মিলেছে। তিনি বলেন, গত সোমবার (১৫ আগষ্ট) রাতে যখন প্রসব বেদনা নিয়ে নুরুন্নহার হাসপাতালে ভর্তি হয় তখন ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে। অভিভাবক হিসেবে মা বলে এক নাম মেয়ে বলে আরেক নাম। এতে হাসপাতালের নার্সদের মাঝে সন্দেহ হয়। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ননামতে, বাচ্চাটি জন্ম নেওয়ার পর মা নুরুন্নাহার ও নানি কমলা খাতুন যুক্তি করে নবজাতককে হাসপাতালের একটি গলির মধ্যে নিয়ে হত্যা করে। প্রথমে শিশুটির অন্ডকোষ টিপে ধরে গলায় গামছা জাতীয় কিছু পেচিয়ে হত্যা করে আবার হাসপাতাল বেডে আনা হয়। বেডে আনার পর দেখে নবজাতকের সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ। পুরুষাঙ্গ দিয়ে রক্ত ঝরছে। গলায় দাগ। খবরটি দ্রুত হাসপাতাল এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে উৎসুক জনতার ভীড় বাড়তে থাকে। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বুধবার বিকালে জানান, নার্সদের কাছ থেকে এমন নির্মম খবরটি পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতারসহ ঘটনার অন্তরালে লুকিয়ে থাকা ক্লু ও মোটিভ উদ্ধার করতে সমর্থ হয়। নবজাতকের মা নুরুন্নাহারের ভাষ্য, বাচ্চা জন্মদানের ১৫ দিন আগে কালীগঞ্জের আড়পাড়ায় তার বিয়ে হয়। বিয়ের সময় তিনি যে গর্ভবতী ছিলেন, তা গোপন রাখা হয়। এর আগে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নে নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে তিন বছর পর স্বামী তাকে তালাক দেয়। নুরুন্নাহার পুলিশ ও গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে স্বীকার করেন এই নবজাতকের পিতা হচ্ছে ব্যাপারীপাড়ার তারেক আবদীনের ছেলে আলিফ আবেদীন গুঞ্জন। এক বছর ধরে গুঞ্জনের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক রয়েছে। গুঞ্জন সম্পর্কে তার চাচাতো ভগ্নিপতি বলে নুরুন্নাহার দাবী করেন। নুরুন্নাহার আরো জানিয়েছেন, তার পিতা হরিণাকুন্ডু উপজেলার হামিরহাটি গ্রামের আকতার হোসেন মৃত্যুবরণ করলে তার মা কমেলা খাতুনের সঙ্গে নানা বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার কাদিরকোল গ্রামে চলে আসেন। কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়ায় নুরুন্নাহারের বিয়ে হলে তারা শহরে নদীপাড়ায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করছে। মামলা রকের্ড হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহলে রানা জানান, নবজাতক হত্যার প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনজনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামীরা সবাই কারাগারে। তাদের রিমান্ডে নিয়ে জজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
অবৈধভাবে হয়েছেন কোটিপতি
ঝিনাইদহ :: দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের আলোচিত সেই বিট কয়েন কেনা-বেচার মাস্টারমাইন্ড চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার নাগদাহ গ্রামের মারজেত আলীর ছেলে মাসুদ রানা মিথুন। বাংলাদেশে অনলাইনে নিষিদ্ধ ভার্চুয়াল মুদ্রা বিট কয়েন (BitCoin) কেনা-বেচার মাধ্যমে প্রতারণা করে নিঃস্ব করেছে অনেক পরিবারকে। বিট কয়েন বিক্রি ও প্রতারণার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা কেনা-বেচার এই মাস্টারমাইন্ড।
শুধু তাই নয়, প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেওয়া এসব অর্থ বিদেশেও পাচার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়াও শুধু অর্থ পাচার নয়, জঙ্গি অর্থায়নও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় তার প্রতারণার শিকার এক ভুক্তভোগী থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। সাধারণ মানুষকে নানা ভাবে বুঝিয়ে বিট-কয়েনে টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলে তাদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। অনেকের কাছ থেকে টাকা আদায় করতে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী নিয়ে তাদের অপহরণ করেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নাগদাহ গ্রামের এক শ্রমিকের ছেলে মিথুন। কয়েক বছর আগেও বেকার ছিলো। অনলাইনের কাজ শুরু করার পর যুক্ত হয় বিট কয়েন কেনা-বেচা চক্রের সাথে। এলাকার প্রভাবশালী সাধারণ মানুষকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিট কয়েন কেনা-বেচায় বিনিয়োগ করিয়েছেন। কিছুদিনের মধ্যেই সেই টাকা চুরি করে দায়ভার ওইসব ভুক্তভোগীদের উপর দিচ্ছে। এরপর শুরু হয় তার ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার। নির্দোষ ব্যক্তিদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ শুরু করেন।
এক পর্যায়ে অপহরণ করে টাকা আদায় করেছেন তিনি। এছাড়াও মিথুন অবৈধ ব্যাবসা করে গড়ে তুলেছেন আলীশান বাড়ীও বিলাস বহুল গাড়ী। বিভিন্ন ব্যাংকে নামে বে নামে রেখেছেন কোটি কোটি টাকা। শুধু তাই নয় অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। জনমনে প্রশ্ন ইতি পূর্বে কারিগরের কাজ করে তার পরিবারের লোকজন কোন মতে সংসার চালিয়ে আসতো। অল্প সময়ে তিনি কি ভাবে অবৈধ সম্পদের মালিক হলেন এলাকা বাসীর জানতে চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, আমি তার প্রলোভনের পড়ে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা বিনিয়োগ করি। কিছুদিন পর সে আমার বিট-কয়েন বিক্রির কথা বলে আমার মোবাইল থেকে সব টাকা তার একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেয়। কিছুদিন পর তার টাকা চুরি হয়ে গেছে বলে জানায়। আমি টাকা ফেরত চাইলে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। টাকা না দিয়ে উল্টো ৬ কোটি টাকা চুরির অভিযোগ আনে আমার বিরুদ্ধে। আমাকে অপহরণের জন্য বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছে। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি। জীবনের নিরাপত্তার জন্য আলমডাঙ্গা থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছি আমি।
আরেক ভুক্তভোগী আতিয়ার বলেন, আমাকে অপহরণ করে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে টাকা আদায় করার চেষ্টা করে। মিথুন, তার ছোট ভাই মাসুম ও তার ক্যাডার বাহিনীর প্রধান হিরালাল এবং রফিক অপহরণ করে নির্যাতন করে। পুলিশের সহযোগিতা নেওয়ার পর আমি উদ্ধার পাই। তার ও তার বাহিনীর কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। যা দিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে।
আতিয়ার বলেন, মিথুন অবৈধ এই সিন্ডিকেটের প্রধান। তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে এলাকার সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন সময় অপহরণ করছে ও অপহরণ করার হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি এই অপকর্ম করে আসছে। আমি দ্রুত এই ডিজিটাল সন্ত্রাসীর গ্রেফতার দাবী করছি। এব্যাপারে অভিযুক্ত মিথুনের সাথে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
ঝিনাইদহে নির্বাচন পরবর্তী হামলায় ৫ জন আহত, ২০ টি বাড়ীঘর ভাংচুর
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের সদর উপজেলার বাগডাঙ্গা ও রতনহাট গ্রামে নির্বাচন পরবর্তী হামলায় অন্তত ৫ জন আহত হয়েছেন। এসময় ২০ টি বাড়ীঘর ভাংচুর করা হয়। মঙ্গলবার রাতে সদর উপজেলার সুরাট ইউনিয়নের রতনহাট ও বাগডাঙ্গা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন, সুজন হোসন, মিল্টন হোসেন, বোরহান উদ্দীন, আব্দুল আলিমও শিশু রিদয় হোসন। স্থানীয়রা জানায়, সদর উপজেলার সুরাট ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম ও সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন জোয়ার্দ্দারের সমর্থকদের মাঝে নির্বাচন নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। মঙ্গলবার রাতে কবির হোসেনের এক সমর্থককে মারধর করে আশরাফুলের সমর্থকরা। এতে সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেনের সমর্থক অন্তত ৫ জন আহত হন। পরে রাতভর রতনহাট ও বাগডাঙ্গা গ্রামের কবির হোসেনের সমর্থকদের ২০টি বাড়ী ঘর ভাংচুর করে আশরাফুলের লোকজন। আহতদের ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে সুজন নামের এক জনের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে। সাবেক চেয়ারম্যান কবির হোসেন জানান, বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে আমার দলীয় নেতা কর্মীদের উপর একের পর এক হামলা করে যাচ্ছে। বর্তমান চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, আমি কিছুই জানিনা। রাতে সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা আমাকে ফোন করে বলে আপনার লোকজন মারামারি করছে। বিষয়টি দেখেন। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছ্। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।