শনিবার ● ২০ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ক্ষুদ্র ঋণের নামে অলিখিত চেক রেখে ব্যবসায়ীদের হয়রানীর অভিযোগ
ক্ষুদ্র ঋণের নামে অলিখিত চেক রেখে ব্যবসায়ীদের হয়রানীর অভিযোগ
ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: ঝালকাঠিতে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়ার নামে অলিখিত চেক রেখে সেই চেকে প্রতারণার মাধমে ইচ্ছামত টাকার অংক বসিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে কথিত আইনজীবী সহকারী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে । নজরুলের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগ এনে গতকাল শনিবার দুপুরে ঝালকাঠি প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী বিমান দাস । উপস্থিত ছিলেন নজরুলের প্রতারণার শিকার আশিষ দত্ত, সোহাগ হাওলাদার, মাহতাব জাবেদ শামীম ও খোকন হাওলাদার । সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, একাধিক চাঁদাবাজি ও মাদক মামলার আসামী এবং প্রতারণার অভিযোগে ঝালকাঠি আইনজীবী সহকারী সমিতি থেকে বহিস্কৃত নলছিটির সুবিদপুর গ্রামের সামশুল হক মহুরির ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম ঝালকাঠি শহরের কালিবাড়ি সড়কের একটি ভবনে দেশ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে ঋণদান অফিস খুলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদান করে আসছিল । করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নজরুলের সমিতি থেকে ১০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নিত । যারা নজরুলের কাছ থেকে ঋণ নিত তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেক রাখা হতো । কাউকে ঋণের বিপরিতে রাখা চেকের নম্বর উল্লেখ করে অঙ্গীকারনামা দেয়া হতো আবার কাউকে দেয়া হতো না। সম্পূর্ন ঋণ পরিশোধ করার পরও অনেকের বিরুদ্ধে কয়েক লক্ষ টাকার মামলা এবং লিগ্যাল নোটিশ করে হয়রানীর একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে নজরুলের বিরুদ্ধে । ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক খন্দকার নজরুলের কাছ থেকে ঋণ নেন একলাখ টাকা । এর মধ্যে ৭৬ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তাঁর কাছে বকেয়া থাকে ২৪ হাজার টাকা । রাজ্জাকের অলিখিত চেকে ৫ লাখ টাকা বসিয়ে আদালতে এনআই এক্টে মামলা করেছে নজরুল । একইভাবে কমল শীলের কাছে বকেয়া ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা কিন্তু মামলা করেছে ৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকার । বাহের রোডের আবু সালেহ আকন ঋণ নেয় ৩৫ হাজার টাকা তার নামে লিগ্যাল নোটিশ করা হয়েছে তিন লাখ টাকার । আশিষ দত্তের কাছে বকেয়া আছে মাত্র ৬ হাজার টাকা তাকেঁ লিগ্যাল নোটিশ করা হয়েছে তিন লাখ টাকার। মাহতাব জাবেদ শামীমের কাছে কোন পাওনা না থাকা সত্ত্বেও তাকে নোটিশ করা হয়েছে ৮ লাখ টাকার । সাংবাদিক সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয় নজরুলের পৈত্রিক বাড়ি নলছিটির সুবিদপুর গ্রামে । নজরুল এক সময় নলছিটি ভূমি অফিসে দালালী করতো । পরবর্তীতে ঝালকাঠি আইনজীবী সমিতিতে মহরীর কাজ শুরু করে । আইনজীবী সহকারী সমিতে দাখিল পরীক্ষার জাল সার্টিফিকেট জমা দেয়ার অভিযোগে ২০১২ সালে তাকে বহিস্কার করা হয় । এরপর হঠাৎ করে বরিশালের আঞ্চলিক পত্রিকার সাংবাদিক বনে যায় এবং সাংবাদিকতার নামে চাঁদাবাজী শুরু করে । তার নামে একাধিক চাঁদাবাজী মামলা দায়ের হয় এবং গ্রেফতার হয়ে হাজতবাস করে। ২০১৮ সালে ডিবি পুলিশের হাতে ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হয় । প্রতারণার অংশ হিসেবে সর্বশেষ নজরুল দেশ সমবায় সমিতি খুলে মানুষকে প্রতারণার জালে হয়রানী করে আসছে । সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ব্যবসায়ীরা আরও অভিযোগ করেন যে নজরুলের দৃশ্যমান কোন আয় নাই সে লক্ষ লক্ষ টাকার মামলা করে কিভাবে । কয়েকজন গ্রাহক আরও অভিযোগ করেন, নজরুল তাদেরকে এই বলে হুমকি দিচ্ছে যে , লিগ্যাল নোটিশ এবং এন.আই.এ্যাক্টের মামলায় কাজ না হলে তার দ্বিতীয় স্ত্রী জেসমিনকে বাদী বানিয়ে ধর্ষণ চেস্টার মামলা দিয়ে হলেও সে টাকা আদায় করবে ।
এ ব্যাপারে নজরুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেককে টাকা ধার দিয়েছি । সময়মত তাঁরা টাকা পরিশোধ না করায় কারো বিরুদ্ধে আমি মামলা করেছি, কারো বিরুদ্ধে মামলা করেছি । আমার কাছ থেকে নেয়া টাকা আত্মসাৎ করার জন্য আমার বিরুদ্ধে কিছু ব্যাক্তি মিথ্যা অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে। আমার কোন দ্বিতীয় স্ত্রী নেই । আর কাউকে ধর্ষণ চেস্টা মামলার হুমকিও দেই নাই ।
রাজাপুরে এসির বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে স্বামী-স্ত্রীর মৃত্যু, আহত ৩
ঝালকাঠি :: ঝালকাঠির রাজাপুরে এসির বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে স্বামী ও স্ত্রী নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের ছেলেসহ তিনজন আহত হয়েছে। আহতদের রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার সাতুরিয়া ইউনিয়নের চান্দের বাড়ি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার সকালে কক্ষের দরজা ভেঙ্গে আহত ও নিহতের উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, সাতুরিয়ার আমতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ফোরকান হাওলাদার (৫০) জেনারেটর চালিয়ে বাড়ির একটি কক্ষে এসি ছেড়ে স্ত্রী মাহিনুর বেগম (৪০), ছেলে মাইনুল ইসলাম (১৪), ছোট ভাইয়ের স্ত্রী মাহফুজা বেগম (৩২) ও ভাইয়ের মেয়ে মায়ামনিকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। রাতে এসিতে বিকট শব্দ হয়। এরপরই বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে ওই কক্ষে। সেখানে ঘুমিয়ে থাকা পাঁচজনই অসুস্থ হয়ে পরে। আজ শনিবার সকাল ১১ টার দিকে তাদের কোন সারাশব্দ না পেয়ে বড়ভাই সেলিম হাওলাদার গেটের তালা ভেঙে ভেতরে গিয়ে লোকজন নিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। এর মধ্যে ব্যবসায়ী ফোরকান হাওলাদার ও তাঁর স্ত্রী মাহিনুর বেগমকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। আহতরা অজ্ঞান ছিল, তাদের উদ্ধার করে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
রাজাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম মোস্তফা জানান, জেনারেটর দিয়ে এসি চালানোর কারণে রাতেই বিষাক্ত গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে। কক্ষটিতে পাঁচজন ঘুমিয়ে ছিলেন, তারা প্রত্যেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। এর মধ্যে দুইজন মারা গেছেন, অন্যদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হবে ।