মঙ্গলবার ● ২৩ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » অর্থ-বাণিজ্য » পাট নিয়ে বিপাকে পাটচাষিরা
পাট নিয়ে বিপাকে পাটচাষিরা
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: শনির দশা কাটছে না পাটচাষিদের। ফলন ভালো হলেও খরায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে ভোগান্তির শেষ ছিল না। এবার দামে হতাশ চাষিরা। বাজারে পাটের চাহিদা থাকলেও আশানুরূপ দাম পাচ্ছেন না তাঁরা। পাট পঁচানো ও ধোয়ার কাজে বেগ পেতে হয়েছে চাষিদের, সেই সঙ্গে বেড়েছে খরচও। আবার পানিস্বল্পতায় ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় পাটের আঁশ কালচে হয়ে গেছে। সব মিলিয়ে এ বছর বিপাকে পড়েছেন পাটচাষিরা। এ বছর অনেক চাষিকে পাট জাগ দেওয়ার জন্য ১ থেকে ২ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরে যেতে হয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার নতুন বাজারে সপ্তাহের শনি ও মঙ্গলবার সাপ্তাহিক পাটের হাট বসে। গতকাল শনিবার সকালে পাটের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারজুড়ে ক্রেতা-বিক্রেতা আর ব্যাপারীদের ভিড়। কৃষকেরা বাজারে পুরোদমে পাট আনতে শুরু করেছেন। দাম-দর করে কৃষক ও ব্যাপারীরা যানবাহনের ওপর থেকেই পাট কেনাবেঁচা করছেন। বাজার জমে উঠলেও হতাশ চাষিরা। মৌসুমের শুরুতে ৩ হাজার টাকা মণ দরে পাট বিক্রি হলেও বর্তমান বাজারে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কালচে ও নিন্মমানের পাট হলে ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মধ্যম মানের পাট ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে, আবার পাটের রং ভালো হলে ২ হাজার ৮০০ টাকা দরেও বিক্রি হচ্ছে। গড়ে প্রতি মণ পাট ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা জানান, এবার বিঘাপ্রতি পাট চাষ ও কাটা-ধোয়া করতে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। প্রতি বিঘায় এবার ফলন হয়েছে ১০ থেকে ১২ মণের বেশি। বাজারে পাটের প্রতি মণ গড় দাম ২ হাজার ৬০০ টাকা, সে হিসাবে প্রতি বিঘায় গড়ে ২৬ হাজার টাকার পাট হয়েছে। উপজেলার মাঠপাড়া গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, তিনি এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। তাঁর জমিতে আনুমানিক এক হাজার হাতা পাট হয়েছে। পাট কাটতে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার টাকা, টানতে ৪ টাকা হাতা করে ৪ হাজার, ধোয়ায় ৫ টাকা হাতা করে ৫ হাজার ও বাজারে নিতে ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। মোট ১৩ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে, বিক্রি করেছেন ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে ২৫ হাজার টাকায়। বাজারে পাট বিক্রি করতে আসা বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক আ. রহিম বলেন, এবার বৃষ্টি ঠিকমতো না হওয়ায় সেচ দিয়ে অল্প পানিতে পাট জাগ দেওয়ায় পাটের রং কালচে হয়েছে, তাই বাজারে তেমন দাম পাচ্ছেন না। সাধুহাটি গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, এবার ঠিকমতো বৃষ্টি না হওয়ায় পুকুর ও ডোবায় সেচ দিয়ে পাট জাগ দিতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাজারে বর্তমানে পাটের যে দাম, খরচ বাদ দিলে কিছুই থাকছে না। আশা ছিল পাটের দাম বাড়বে, কিন্তু আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় তাঁরা হতাশ। খুলনা থেকে আসা পাট ব্যবসায়ী তোজাম শেখ বলেন, এখানের হাটে বেশি পাট ওঠায় তাঁরা প্রতিবছর এখান থেকে পাট কেনেন। বাজারে সোনালি পাটের চাহিদা বেশি, তবে পানির অভাবে কৃষকেরা ঠিকমতো জাগ দিতে না পারায় বাজারে কালচে পাট বেশি দেখা যাচ্ছে। আগের বছরের তুলনায় এবার পাটের মান তুলনামূলক খারাপ। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহফুজুর রহমান বলেন, এবার উপজেলায় মোট ৯ হাজার ৩৫০ মেট্রিক টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, উৎপাদিত হয়েছে ৯ হাজার ৫০০ মেট্রিক টনের মতো। অন্যান্য বছরের চেয়ে ফলন তুলনামূলক ভালো হয়েছে।
মহেশপুরে স্কুল ছুটি দিয়ে আলোচনা সভা, শেষে ভুড়িভোজ
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের মহেশপুরে নোটিশ করে ছুটি দিয়ে স্কুল মাঠে শোক দিবসের আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল করা হয়েছে। এমনকি বিদ্যালয়ে টানানো হয়নি জাতীয় পতাকা। আর এ অনুষ্ঠানের অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। শনিবার মহেশপুর উপজেলার শ্যামকুড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই অনুষ্ঠানের আযোজন করে শ্যামকুড় ইউনিয়ন পরিষদ। ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিরুল হক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মহেশপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ময়জদ্দীন হামীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী, মহেশপুর থানার ওসি সেলিম মিয়া, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আজিজুল হক আজা। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা জানায়, শুক্রবার সারাদিন ধরে স্কুলের ভবনের সামনে স্টেজ করা হয়। শনিবার সকাল থেকেই ৪/৫ টা মাইক লাগিয়ে আলোচনা শুরু করে। স্কুলে শিক্ষকরা এলেও কোন ক্লাস নেওয়া হয়নি। ৭ম শ্রেণির এক ছাত্র বলেন, গত বৃহস্পতিবার ক্লাসে এসে স্যাররা নোটিশ করে বলে দিয়েছেন যে শনিবার স্কুল বন্ধ। আমরা আজ ক্লাস করতে পারিনি। ১০ম শ্রেণির এক ছাত্র বলেন, আগে থেকেই স্কুল ছুটি দিয়েছে। আজ শোক দিবসের অনুষ্ঠান তাই এসেছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা করা হচ্ছে। তাই বলে স্কুল ছুটি দিয়ে কেন? ওই দিন কি ঘটেছিলো তা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে জানাতে হবে। শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে এ আলোচনা করে কি লাভ হবে? আলোচনা সভা বিকেলে করলে ভালো হতো। অনুষ্ঠান শেষে শিক্ষক মিলনায়তনে গণভোজের নামে ভুড়িভোজের আয়োজন করা হয়। সভায় আগতদের খিচুড়ি দেওয়া হলেও অতিথিরা ইলিশ মাছ, মাংস, দই, মিষ্টি দিয়ে গণভোজে অংশ নেয়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, আজ আবহাওয়া খারাপের কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম ছিলো। স্কুল ছুটির কথা তিনি অস্বীকার করেন। এ ব্যাপারে আযোজক শ্যামকুড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জামিরুল হককে একাধিকবার কল দেওয়া হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, আমি বিকালে গিয়েছিলাম। ক্লাস হলো কি মা আপনি ওই স্কুলের হেডমাস্টারকে জিজ্ঞাসা করেন। শোক দিবসের আলোচনায় গিয়ে, খাসির মাংস, ইলিশমাছসহ ভুড়িভোজ হয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যারা আযোজন করেছে তাদের জিজ্ঞাসা করেন। এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন, স্কুল ছুটি দিয়ে আলোচনা সভা করতে হবে এমন কোন নির্দেশনা নেয়। যদি নোটিশ দিয়ে স্কুল বন্ধ করে তাহলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।
কালীগঞ্জে দুই ডেন্টাল ক্লিনিকে জরিমানা ২৫ হাজার; অন্যরা ডেন্টাল ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে সটকে পড়ে
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠেছে অবৈধ ডেন্টাল ক্লিনিক। যেখানে রোগীরা প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছে। এমন লাগাতর অভিযোগের ভিত্তিতে নড়েচড়ে বসেছে কালীগঞ্জের প্রশাসন। রোববার বিকালে প্রশাসনের একটি টিম শহরের মধুগঞ্জ বাজারের শোভা ডেন্টাল ও নাজমা সার্জিক্যাল ক্লিনিকে অভিযান চালায়। এ সময় নানা অব্যবস্থাপনায় ভরা ক্লিনিক দুটিকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার মাধ্যমে মোট ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতটি পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কমকর্তা সাদিয়া জেরিন। নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, কালীগঞ্জে প্রায় অর্ধ শতাধিক ডেন্টাল ক্লিনিক রয়েছে। তাদের অনেকেরই অনুমোদন, অভিজ্ঞ ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই। আবার অনেকে স্বল্প জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে পুরনো যন্ত্রাংশ ব্যবহারে অপচিকিৎসা চালাচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে এমন অভিযোগ উঠায় তিনি রোববার বিকালে শহরের অভিযান চালিয়ে ছন্দা হলের বিপরীতে শোভা ডেন্টালকে ২০ হাজার টাকা এবং নাজমা সার্জিক্যাল ক্লিনিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ অভিযানকালে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর ডেন্টাল সার্জন ডাঃ মনিরুল ইসলাম, মেডিকেল অফিসার ডাঃ কৌশিক সাদিক ও কালীগঞ্জ থানার পুলিশ প্রশাসনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন সাংবাদিকদের আরও জানান, জনস্বার্থে এ অভিযান অব্যহত থাকবে। কোন ক্রমেই চিকিৎসার নামে অপচিকিৎসা করতে দেয়া হবে না। শহরের ডেন্টাল ক্লিনিকে প্রশাসন অভিযান চালাচ্ছে এ খবর জানাজানি হলে অন্য ডেন্টাল ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে মালিকপক্ষ সটকে পড়ে।