বুধবার ● ২৪ আগস্ট ২০২২
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ভূমিহীনদের ঘর পেয়েছে সচ্ছলরা,স্বামী স্ত্রীর নামে ২টি ঘর সঠিক তদন্তের দাবী
ভূমিহীনদের ঘর পেয়েছে সচ্ছলরা,স্বামী স্ত্রীর নামে ২টি ঘর সঠিক তদন্তের দাবী
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি :: দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন সচ্ছল পরিবারের লোকজন। ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর সদর ইউনিয়নে এ ঘটনাই ঘটেছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি আইন অনুযায়ী বসতবাড়ি এবং জমি নেই এমন ভূমিহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়া হবে। এলাকায় সে রকম পরিবার না পাওয়া গেলে ১০ শতকের কম জমি আছে এমন পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দিতে হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যে ১৫ থেকে ২০ টি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে কিন্তু সেখানে থাকছেন না, তারা আসলে গৃহহীনই ছিলেন না। তাদের কয়েকজন বেশ সম্পদশালী। ২১ নংম্বর ব্রাক, একজন আবার সৌদি প্রবাসী, যার ভবন নির্মাণ কাজ চলছে। কারও কারও বাড়ির পাশাপাশি জমিজমা আছে। আবার আনসার কমান্ডার মোজাম্মেল ১৫০ নম্বর ঘরটি নিজের নামে ও ৩৭১ নম্বর ঘরটি তার স্ত্রীর নামে বরাদ্দ পেয়েছে। হ্যা যে কেউ এই প্রশ্ন তুলতে পারে এককই ব্যাক্তি দুইটি ঘর বরাদ্দ পেয়েছে কি ভাবে।
তবে একাধিক সূত্রে জানাগেছে,এই সকল ঘর বরাদ্দ পেতে গুনতে হয়েছে মোটা অর্থ। যেমন হাসিনা বেগমের স্বামী সৌদি প্রাবসী তিনিও টাকার বিনিময় ঘর পেয়েছেন । অপর দিকে টাকার বিনিময় যাহারা সরকারী ঘর পেয়েছে তাদের ব্রাক নাম্বার ৩৩২.১৪৫.৩৭৫.৩৮০ সহ দক্ষিন রাজাপুরের শহিদ নামে একজনের বাড়িতে সরকারি ঘর পেয়েছে। কিন্তু আবার বড়কৈবর্তখলী ব্রাকেও আবার একটি ঘর পেয়েছে।
দরিদ্র ও ভূমিহীন পরিবারের জন্য এসব বরাদ্দ দেওয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পেয়েছেন সচ্ছল পরিবারের লোকজন। রাজাপুর সদর ইউনিয়নের বড়কৈবর্ত খালী গ্রামে এ ঘটনাই ঘটেছে।
এই সকল দূর্নীতির পিছনে এলাকার কয়েকজন ব্যাক্তি রয়েছে যেমন ইউপি সদস্যের ভাই,উপজেলা ইউএনও অফিসের আনছারের দায়িত্বে রয়েছে শুক্কুর কমান্ডার। এদের মাধ্যমে টাকার লেনদেন হয়েছে বলে ঘর পাওয়া পরিবার গুলোর সদস্যরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে বড় কৈবর্তখালী গ্রামে আবারো প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মানের কাজ শুরু হয়ে। কিন্তু আবাদি জমির বীজতলা নষ্ট করে উপহারের ঘর নির্মানের পরিকল্পনা নেয়ায় হতাশা গ্রস্থ হয়ে পড়েছে গ্রামের একাধিক কৃষক। এ সকল আবাদি জমির বীজ যাতে নষ্ট না করা হয় এবং ঐ জমিতে চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে এমনটাই দাবি কৃষি নির্ভর ভুক্তভোগী কৃষকদের।
সম্প্রতি সরেজমিন গেলে সাংবাদিকদের সামনে জড়ো হন সেখানকার পঞ্চাশোর্ধ বহু মানুষ। সবার মুখে একই কথা, বিগত ২’শ বছর ধরে এই সকল আবাদি জমি আমাদের পূর্বপুরুষরা ভোগ দখল করেছে এবং সে অনুযায়ী বংশ পরাম্পরায় এখন আমরা এসব জমি চাষাবাদ ও ভোগদখল করে আসছি। এ সব জমির সিএস, আরএস এবং এসএ দাখিলা সহ যাবতীয় রেকর্ডীয় মালিকানার কাগজপত্র আমাদের কাছে রয়েছে। কিছু কিছু জমি নিয়ে আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলাও চলমান রয়েছে।
ভুক্তভোগী কৃষক মোঃ সেলিম বলেন, পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া এই জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও জমিতে বীজতলা তৈরি করি এবং চাষাবাদ শুরু করি। হঠাৎ করে একটি ভেকু আমার জমিতে প্রবেশ করে বীজতলা সহ জমির মাটি কাটা শুরু করে। এমন খবর শুনে আমি সহ অন্য কৃষকরা জমিতে ছুটে গিয়ে জানতে পারি ইউএনও অফিসের নির্দেশে আমার চাষের জমিতে মাটি কাটা হচ্ছে। এ ছাড়াও লাভলু হাং, মোঃ রহমান মাস্টার,উজ্জল তেওয়ারী সহ একাধিক ভুক্তভোগী জমির মালিক দাবি করে জানান, কোন প্রকারের নোটিশ ছাড়াই আমাদের বীজতলা নস্ট করে চাষকরা জমির চারিপাশে মাটি কাটার প্রত্রিুয়া শুরু করেছেন। প্রান্তিক চাষী শাহ জামাল ও নাসিমা বেগম কান্না জরিত কন্ঠে বলেন এ বছর আমাদের মনেহয় না খেয়েই থাকতে হবে। জমিগুলো যেনো খাস খতিয়ানে না নিয়ে যান এবং আবাদী জমিগুলো নষ্ট করে জীবিকা নির্বাহের পথ বন্ধ না করেন, সে জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর সু-দৃস্টির প্রার্থনা জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে রাজাপুর সহকারী কমিশনার ভুমি অনুজা মন্ডল বলেন, এই জমিতে মামলা চলমান আছে, কিন্তু মামলায় কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। মুজিব বর্ষের ঘর নির্মানের জন্য আমাদের এই খাস জমিটার প্রয়োজন তাই এখানে মাটি ও বালু ভরাট করে কাজ শুরু করেছি। যে জমিটাই আমরা কাজ করছি সেখানে কোনো বীজ রোপন করা ছিলোনা এবং কোনো চাষও দেওয়া হয়নি। অবশ্যই আমরা কৃষি জমি নস্ট করতে চাইনা , কিন্তু যে মানুষটার একে বারেই কিছু নেই সেই মানুষটার কথাও আমাদের ভাবতে হবে।