মঙ্গলবার ● ২৯ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.আব্দুল আলী মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভুষিত হওয়ায় রাঙামাটিতে নানা আয়োজন
শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.আব্দুল আলী মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভুষিত হওয়ায় রাঙামাটিতে নানা আয়োজন
ষ্টাফ রিপোর্টার :: রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রাক্তন মহকুমা প্রশাসক শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.আব্দুল আলী ২০১৬ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভুষিত হওয়ায় ২৮ মার্চ রাঙামাটি পার্বত্য জেলা প্রশাসনের আয়োজনে আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে ৷
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনের নেতৃত্বে বিকাল ৪ টায় রাঙামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গন থেকে রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের কার্যালয় প্রাঙ্গন পর্যন্ত আনন্দ শোভাযাত্রায় দলমত নির্বিশেষে জেলার সর্ব স্তরের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাধারন জনগণ অংশগ্রহণ করেন৷ আনন্দ শোভাযাত্রা সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে রাঙামাটি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়, শহীদ আব্দুল আলী একাডেমী, রাঙামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মোনঘর আবাসিক বিদ্যালয়, ভেদভেদী উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও রানী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ হাজারের অধিক ছাত্রছাত্রীর অংশ গ্রহণ৷
শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.আব্দুল আলী ২০১৬ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভুষিত হওয়ায় আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে বিকাল ৫ টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় ৷
এসময় জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিন, প্রবীন সাংবাদিক সুনীল কান্তি দে, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের ছাত্র সংগঠক নুরুল আফসার, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রবার্ট রোনাল্ড পিন্টু, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীর কনিষ্ঠ কণ্যা নাজমা আক্তার লিলি ও তার স্বামী মুক্তিযুদ্ধা এস.এম.কিউ কবিরুল ইসলাম কাঞ্চন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর শুক্কুরের ভাই এমদাদুল হক, বোন খুরশিদ আনোয়ার, আলহাজ্ব মজিবুল হকের মেয়ে ড. শহীদুল্লাহর নাতনী কাউসার জাহান ফরিদা মনি শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.আব্দুল আলী ও জেলার শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ করেন ৷
এবার রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য শহীদ আব্দুল আলীর কনিষ্ঠ কণ্যা নাজমা আক্তার লিলি, শহীদ স্বপন চৌধুরীর কণ্যা মিনাক্ষী বিশ্বাস ও তার স্বামী চম্পক দাস, শহীদ শফিকুল ইসলামের বোন কাউসার জাহান ফরিদা মনি, শহীদ লাল বাহাদুর চেত্রীর কণ্যা শিলা রায়, শহীদ খগেন্দ্র লাল চাকমার পুত্র রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য অমিত চাকমা রাজুসহ ১১ জনকে সম্মাননা প্রদান করা হয় ৷ তার মধ্যে ৫জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য পুরষ্কার নিতে উপস্থিত ছিলেন না ৷ তাছাড়া তত্কালীন ইপিআর বর্তমান বিজিবি এর ৩ জন সদস্য তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন ৷
শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.আব্দুল আলী ২০১৬ সালের মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভুষিত হওয়ায় আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে বিকাল ৫ টায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, রাঙামাটি জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(সার্বিক) মোসত্মফা জামান, আওয়ামীলীগের রাঙামাটি জেলা কমিটির সহসভাপতি কামাল উদ্দিন, শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর শুক্কুরের ভাগিনা রাঙামাটি জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আবু সাদাত্ মোঃ সায়েম, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার মুক্তিযোদ্ধাগণ, জেলার জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক দীপন তালুকদার দীপু, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি হারুনুর রশিদ মাতব্বর, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়া ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন ৷
উল্লেখ্য, মহকুমা প্রশাসক শহীদ বীর মুক্তিযুদ্ধা এম.আব্দুল আলীকে পাকিস্তানীরা সৈন্যরা প্রথমে ইট ভাঙ্গার কাজ দেয়, এরপর তাকে দিয়ে কুরির কাজ করাতে থাকে ৷ ১২ দিনের বন্দী অবস্থায় তার শরীর ক্ষত বিক্ষত করে ফেলা হয়েছিল ৷ পাকিস্তানী সৈন্যরা ইট দিয়ে তার দাঁতগুলো ভেঙ্গে দিয়েছিল, নখ উপরে ফেলেছিল, এক পর্যায়ে তার হাতের আঙ্গুলগুলো পর্যন্ত কেটে দিয়েছিল ৷ স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করার জন্য আব্দুল আলীকে রাঙামাটি পুলিশ লাইনের এক ব্যারাকে আটকে রেখে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে আচড়ে দিয়ে লবণ মেখে দিয়েছিল ৷ সর্বশেষ ১৯৭১ সালের ২৭ এপ্রিল আব্দুল আলীর মৃতদেহ টুকরো টুকরো করে কেটে বস্তায় ভরে কাপ্তাই লেক এ ফেলে দেয় পাকিস্তানী হায়েনারা ৷
দীর্ঘ ৪৫ বছর পর শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীকে মরণোত্তর স্বাধীনতা পদকে ভুষিত করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভুমিকা পালন করায় রাঙামাটি জেলা প্রশাসক সামসুল আরেফিনসহ তার কার্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীদের ও সাংবাদিক ইয়াছিন রানাকে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সর্বস্তরের জনগণ আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ৷