মঙ্গলবার ● ২৯ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » স্বাধীনতাবিরোধী কিছু কুলাঙ্গার ছাড়া সবাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি : ভূমি মন্ত্রী
স্বাধীনতাবিরোধী কিছু কুলাঙ্গার ছাড়া সবাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি : ভূমি মন্ত্রী
পাবনা প্রতিনিধি :: (২৯ মার্চ ২০১৬: বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭.২৩মিঃ) ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতাবিরোধী কিছু কুলাঙ্গার ছাড়া সবাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি৷
১৯৭১ সালের আজকের এ দিনে পাবনার দাপুনিয়ার মাধপুর বটতলায় শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর নেতৃত্বে পাকিস্তানী আর্মির সাথে সম্মুখ সমরে নিহত ১৭ জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতিচারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি মন্ত্রী এ কথা বলেন৷
মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের একটি অধ্যায় শেষ হয়েছে মাত্র৷ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন সেদিনই পূরণ হবে যেদিন দেশের শাসন ব্যবস্থায় সকলের জন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে এবং গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পাবে৷ মন্ত্রী বলেন, মানবিকতার শত্রু, স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতকারী, তাদের এদেশ থেকে রাজনৈতিকভাবে নিশ্চিহ্ন করা হবে৷ তিনি বলেন, এদেশে বিপথগামী মানুষ ধ্বংস হয়ে যাবে৷
মন্ত্রী ১৯৭১ সালের ২৯ মার্চ মাধপুর বটগাছ তলায় পাকিস্তানী আর্মির সাথে সম্মুখ যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিজ কানে শুনে এসে ঈশ্বরদী পেপার মিল, পাকশি রেলওয়ে, থানা ও বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা ৪২টি দেশীয় অস্ত্র সংগ্রহ করি৷ আমরা আগে থেকেই পরিকল্পনা করছিলাম পাকিস্তানী আর্মির উপর হামলা চালানোর৷ ২৮ মার্চ পাবনার ডিসি নূরুল কাদেরের নেতৃত্বে পুলিশ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ সাধারণ জনতা পাকিস্তানী আর্মির উপর হামলা চালায়৷ হামলায় পাকিস্তানী সৈন্য ধরাশায়ী হয়৷ রাজশাহী থেকে পাকিস্তানী আর্মি কর্নেল বাকি বেলুচ এর নেতৃত্বে কামান, গোলা, হেভী অস্ত্রশস্ত্রসহ ১৩টি সাজোয়া ট্রাক নিয়ে পাবনায় আটকে পড়া পাকসেনাদের রিকভারির জন্য আসে৷ ২৯ মার্চ আমরা জানতে পারি তারা পাবনা থেকে দাশুড়িয়া হয়ে রাজশাহী ফিরছে৷ পাক আর্মি আক্রমণের এটাই সুযোগ ভেবে আমরা পাকশি মাঠ থেকে পাবনার উদ্দেশ্যে হাজার হাজার জনতাসহ ঝাপিয়ে পড়ি৷ পাবনার দাপুনিয়ার মাধপুর নামক স্থানে একটি বট বৃৰকে উপযুক্ত স্থান ভেবে পাকি আর্মিদের প্রতিরোধের জন্য সেখানে টেন্স খনন করি৷ একসময় পাকসেনাদের সাথে আমাদের সংগৃহীত ৪২টি অস্ত্র, পাবনা থানা থেকে পাওয়া আরও ৭টি আধুনিক অস্ত্র ও তীর, বল্লম, হাসুয়া বাঁশ নিয়ে হাজার হাজার জনতা পাকিস্তানী ১৩টি ট্রাক বহরের উপর সেদিন আমরা ঝাপিয়ে পড়ি৷
আমাদের আক্রমণে সেদিন পাকিস্তানী সেনা মেজর আসলামসহ এক ডজন পাক আর্মি নিহত হয়৷ পাকিস্তানী আর্মির এ বহরের কাহারো রাজশাহী যাওয়ার রাস্তা চেনা না থাকায়, মাধপুরের হামলায় তাদের গোলাবারুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় এবং বিভিন্ন দিক থেকে আক্রমণ আসায় তারা তাদের সাজোয়া যুদ্ধ যান ফেলে রেখে যে যেভাবে পারে পালাতে চেষ্টা করেছিল৷ কিন্তু পরে জেনেছিলাম ঐ পাকিস্তানী আর্মি বহরের সব সৈন্যই রাজশাহী পৌঁছার আগেই বিভিন্ন জায়গায় জনস্রোতের আক্রমণে অনেকেই মারা যায়৷ সেদিনের সেই স্মৃতি ভুলার নয়৷ মন্ত্রী বলেন, আমি হয়তো ঐ যুদ্ধে শহীদ হতে পারতাম৷ আজ গাজী হয়েও এক বুক ব্যথা নিয়ে ঢুকরে ওঠি৷ এখনও খুঁজি রাজুকে, এখনও খুঁজে বেড়াই হাশেম মল্লিককে৷ তাঁরা হারায়নি, তাঁরা ইতিহাসের পাতায় আজীবন থাকবে৷ বঙ্গবন্ধুর সেই ৭ মার্চের মুক্তি সংগ্রামের ডাকই আমাদের পাগল করে দিয়েছিল৷ এরপর বঙ্গবন্ধুর আহ্বান পেয়ে আমরা উজ্জীবিত হয়ে পাক আর্মির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধের প্রস্তুতি নেই৷ তার কিছুদিন পরে যদিও ১১ এপ্রিল আমরা ভারতে গেলাম৷ ১৭ এপ্রিল অস্থায়ী সরকার গঠিত হলো, মুক্তিযোদ্ধারা সুসংগঠিত হলো, তবুও মাধপুরের সেইদিনের এ অদম্য বিশাল আত্মত্যাগ জাতিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখতে হবে৷ পাবনার প্রথম স্বার্থক সম্মুখ মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে এ যুদ্ধটি স্বীকৃতি পাবে বলে আমি আশা করছি৷
পাবনার মাধপুর ঐতিহ্যবাহী বটতলার পাশেই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিস্তম্ভের জন্য ১০ কাঠা জমি আমরা বর্তমান বাজার দরে কিনে রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি৷ এ এলাকায় বেশ কিছু খাস জমি রয়েছে এছাড়া অল্প কিছু জমি ব্যক্তি মালিকানায় রয়েছে আমরা তাদের কাছ থেকে উপযুক্ত মূল্য দিয়ে কিনে নেব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি৷ মাধপুরে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে একনেকে অনুমোদনের পরই অচিরেই মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, একটি লাইব্রেরিসহ একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে৷
মুক্তিযোদ্ধা লাবু সরদারের সভাপতিত্বে এসময় অন্যান্যের মধ্যে পাবনা জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার হাবিবুর রহমান হাবিব, ডেপুটি কমান্ডার আবদুল বাতেন, আবুল কাশেম বিশ্বাস, রশীদুলস্নাহ, মোসত্মাফিজুর রহমান সেলিম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প পরিচালক মুজিবুল হোসেন সমাজী, আ. খালেক, আনিসুন্নবী বিশ্বাস, ঈশ্বরদী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রাজ্জাক, ঈশ্বরদী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন বক্তব্য দেন৷