সোমবার ● ৫ অক্টোবর ২০১৫
প্রথম পাতা » অপরাধ » খৃষ্টান মিশনের পুরহীতকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা
খৃষ্টান মিশনের পুরহীতকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা
ঈশ্বরদী প্রতিনিধি :: বাবার সময় হিন্দু থেকে ধর্ম পরিবর্তন করে খ্রিষ্টান হওয়া ঈশ্বরদীর ব্যাপ্টিস্ট খৃষ্টান মিশনের পুরহীত মিঃ লুক সরকার (৫২) কে তার ভাড়া থাকা বাসায় ঢুকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে৷ সোমবার সকাল নয়টায় পবিত্র বাইবেল পাঠ করার সময় বিমানবন্দর রোডের মনি মল্লিকের বাসায় ঢুকে গলা কেটে হত্যাচেষ্টা করে তিন যুবক৷ স্ত্রী আত্মচিত্কারে এলাকাবাসী জড়ো হতে থাকলে যুবকরা মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায়৷
বাড়ির মালিক মনিরল ইসলাম মল্লিক জানান, সোমবার সকাল ৯টার দিকে তার বাড়ির ভাড়াটিয়া লুক সরকার ড্রইংরুমে পবিত্র বাইবেল পাঠ করছিলেন৷ এ সময় ৩ যুবক লাল রংয়ের এ্যাপাসি মোটরসাইকেলে চেপে (ঢাকা মেট্রো-ট ১১-৯০৫৪) লুক সরকারের বাসায় আসে৷ লুক সরকারের স্ত্রী পদ্মা সরকার জানান, তার স্বামী খৃষ্টান মিশনের পুরহীতের দায়িত্ব পালনের পাশপাশি হোমিও চিকিত্সক হিসেবে বাসায় প্র্যাকটিস করতেন৷ ঘটনার সময় তিনি প্রতিদিনের ন্যায় ধর্মগ্রন্থ পাঠ করছিলেন৷ এ সময় তিন যুবক বাসায় এসে ধর্মপাঠ শোনার কথা বলে ড্রইংরুমে বসে৷ তিনি পাশের ঘরে নাস্তা আনতে গেলে ওই তিন যুবক ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে তার স্বামীর গলায় ছুরিকাঘাত করতে থাকে৷ এ সময় লুক সরকার চিত্কার শুরম্ন করেন৷ তাত্ৰনিকভাবে তিনি অন্য দরজা দিয়ে ঘটনাস্থলে আসার পর যুবকরা দৌড়ে পালাতে থাকে৷
বাড়ির কেয়ারটেকার আজগর আলী জানান, তাদের পেছনে ধাওয়া করে একজনকে জাপটে ধরার পর অন্য দু’জন তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে মোটর সাইকেল রেখেই পালিয়ে যায়৷ বাড়ির সামনে জনতার ভীড় জমলেও যুবকদের হাতে দেশীয় অস্ত্র থাকায় তাদের আটক করতে সাহস পায় না৷ ঘটনার পর লুক সরকারের মুমুর্ষ অবস্থায় ঈশ্বরদী হাসপাতালে ও পরে পাবনা হাসপাতালে ভর্তি করে গলায় সাতটি সেলাই দেওয়া হলে তিনি আশংকা মুক্ত হন৷
পুরহীত লুক সরকার বলেন, গত সেপ্টেম্বর মাসের আঠার তারিখে মোবাইল ফোনে রফিকুল নামে এক ছেলে ফোন করে বলে আপনি ধর্ম নিয়ে কাজ করেন৷ আমি ধর্ম পরিবর্তন করতে চাই৷ আপনার সাথে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে হবে৷ কখন আসবো বলেন৷ তখন লুক সরকার বলেন কখন আসবে তোমরা বললে আমি থাকবো৷ সে মোতাবেক তারা ঐদিন দুই যুবক খুব ভদ্রতার সাথে ধর্ম নিয়ে আলাপ করে চলে যায়৷ সেই সূত্র ধরে সোমবার সকাল নয়টায় ঐ দু’যুবকসহ তিনজন বাসায় আসে৷ তাদের বসতে বলি৷ তারা চেয়ারে ও বিছানায় বসে৷ এমন সময় আমার স্ত্রী নাস্তা আনার জন্য ভেতরে গেলে তারা আমার মুখ চেপে ধরে গলায় ছুরি চালাতে থাকে৷ এ সময় আমি হাতে কামর ও ধাক্কা দিলে বারান্দায় চলে যায়৷ ধস্তাধ্বস্তি ও গুংরানোর শব্দ শুনে আমার স্ত্রী ও মেয়ে এসে চিত্কার শুরু করলে তারা পালিয়ে যেতে থাকে৷ এ সময় স্থানীয় লোকজন তাদের ধাওয়া করে ধরতে ভাথ্য হয় ৷ তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়েছে যুবক তিনটি ইসলামি জঙ্গী সংগঠনের সদস্য৷ তা না হলে আমি একজন নিরপরাধ মানুষ ধর্ম নিয়ে কাজ করি৷ আমাকে হত্যা করার চেষ্টার যৌক্তিক কোনো কারণ পায় না৷
ঈশ্বরদী থানার পুলিশ পরিদর্শক আবু ওবায়েদ জানান, ঢাকা ও রংপুরের বিদেশী হত্যার সাথে লুক হত্যা চেষ্টার কোনো মিল নেই৷ তাছাড়া ঐ দুই জায়গায় গুলি করে হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে৷ এখানে চাকু ব্যবহার করা হয়েছে৷ এছাড়া ঐ যুবকদের সাথে আগেও লুক সরকারের বাড়িতে স্বাক্ষাত ও কথা হয়েছে৷ তবে ঘটনা যাই হোক পুলিশ তদনত্ম করে প্রকৃত ঘটনা উত্ঘাটন করতে সৰম হবে৷ ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বিমান কুমার দাশ জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে মোটরসাইকেলটি জব্দ করেছে৷ পাবনা পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর এ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ এ মূহূর্তে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে কিছু বলা যাচ্ছে না৷
আপলোড : ৫ অক্টোবর ২০১৫ : বাঙলাদেশ : সময় : রাত ৯.৩৩মিঃ