রবিবার ● ৪ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোইকে হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোইকে হত্যার প্রতিবাদে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: খাগড়াছড়ির গুইমারায় গতকাল সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফ’র স্থানীয় সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন-কে হত্যার প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২২) খাগড়াছড়ি উপজেলা সদর, পানছড়ি, রামগড়, মানিকছড়ি, লক্ষ্মীছড়ি, সাজেক, বাঘাইছড়ি ও নান্যাচরে ইউপিডিএফ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো এসব বিক্ষোভের আয়োজন করেন।
এসব সমাবেশে বক্তারা সেনা মদদে পরিচালিত এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, জনগণ যখন ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত বন্ধে সোচ্চার হয়েছে, সংঘাত বন্ধের জন্য মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে তখনই এ ধরনের হত্যাকাণ্ড সংঘাতকে উস্কে দেয়া ছাড়া আর কিছুই নয়। শাসকগোষ্ঠি পাহাড়িদের মধ্যে সংঘাত জিইয়ে রেখে ফায়দা লুটতে চায়।
তারা আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় তাদের সৃষ্ট নব্যমুখোশ দুর্বৃত্তরা নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসীদের লেলিয়ে দিয়ে প্রতিনিয়ত খুন, অপহরণসহ নানা অপকর্ম সংঘটিত করা হচ্ছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে সেনা মদদে হত্যাকাণ্ড নতুন নয় উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ২০০৯ সালে লক্ষ্মীছড়িতে ইউপিডিএফ নেতা রুইখই মারমাকে হত্যা করে সেনা মদদপুষ্ট বোরকা পার্টির সন্ত্রাসীরা। সেনা মদদে ২০১৮ সালে খাগড়াছড়িতে মিঠুন চাকমা ও স্বনির্ভর-পেরাছড়ায় পিসিপি নেতা তপন, এল্টন ও যুব নেতা পলাশ চাকমাসহ ৭ জনকে খুন করা হয়। এরই অংশ হিসেবে গুইমারায় গতকাল নব্য মুখোশ নবীন চাকমা গংকে লেলিয়ে দিয়ে ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমাকে দিন দুপুরে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
বক্তারা বলেন, সেনাবাহিনীর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকায় সন্ত্রাসীরা প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরাফেরা করলেও প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করতে সাহস পায় না।
পার্বত্য চট্টগ্রামে ইউপিডিএফের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ন্যায়সঙ্গত গণআন্দোলন দমনে সরকার মরিয়া হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, ইউপিডিএফ ভূমি রক্ষার আন্দোলন থেকে শুরু করে শাসকগোষ্ঠির সকল অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনগণকে সাথে নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে। ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধের লক্ষ্যেও ইউপিডিএফ জনগণের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। যার কারণে সেনাবাহিনী শঙ্কিত হয়ে সন্ত্রাসী দিয়ে ইউপিডিএফের নেতা-কর্মীদের হত্যা করছে।
বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে নিয়োজিত সেনাবাহিনী নিরাপত্তার নামে ভক্ষকের ভূমিকা পালন করছে মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, তারা কথিত সন্ত্রাসী খুঁজে বেড়ায়, অথচ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে খুন-খারাবি করে যাচ্ছে। শুধু তাই নয় তারা প্রতিনিয়ত এই সন্ত্রাসীদের সাথে নিয়ে জনগণের ঘরবাড়িতে তল্লাশিসহ নানা হয়রানি করছে।
সমাবেশ থেকে বক্তারা অবিলম্বে অংথোই মারমা হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনাশাসন প্রত্যাহার এবং খুনি-সন্ত্রাসীদের সেনা আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদদান বন্ধ করার জোর দাবি জানান।
খাগড়াছড়ি উপজেলা সদর এলাকায় আজ দুপুরে গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে সংগঠনটির খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি ক্যামরন চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশনে খাগড়াছড়ি জেলা শাখার আহ্বায়ক এন্টি চাকমা ও বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের খাগড়াছড়ি জেলা শাখার সভাপতি নরেশ ত্রিপুরা।
পানছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)-এর প্রতিনিধি নীতিদত্ত চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের পানছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক রিপন ত্রিপুরা পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের পানছড়ি উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক সাবিনা চাকমা প্রমুখ। সমাবেশে সঞ্চালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পানছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সুনীল ময় চাকমা।
রামগড়ে সকাল ৯টায় ইউপিডিএফ’র স্থানীয় ইউনিটের উদ্যোগে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয। মিছিল পরবর্তী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র রামগড় ইউনিটের সংগঠক হ্লাচিং মারমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের রামগড় উপজেলা সাধারণ সম্পাদক লিটন চাকমা ও পিসিপি’র রামগড় উপজেলা শাখার সদস্য পনা ত্রিপুরা।
মানিকছড়িতে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে পিসিপি’র মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ঈশান মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র মানিকছড়ি ইউনিটের সংগঠক অংচিং মারমা ও পিসিপি’র মানিকছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পদাক অংসালা মারমা।
লক্ষ্মীছড়িতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে রাখেন ইউপিডিএফ’র লক্ষ্মীছড়ি ইউনিটের সংগঠক বিবেক চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সভাপতি পাইচি মারমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা সহ-সভাপতি রিটন চাকমা। এতে সঞ্চালনা করেন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের লক্ষ্মীছড়ি উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রাঞ্জল চাকমা।
অপরদিকে রাঙামাটির সাজেকে ইউনিয়নের বাঘাইহাট ও মাচলঙ এবং বাঘাইছড়ি সদর ও নান্যাচরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
দুপুর ১২টার সময় সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল পরবর্তী অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইংগেছ চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক আর্জেন্ট চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের সাজেক থানা শাখার সভাপতি কালো বরণ চাকমা। এ বিক্ষোভটি আয়োজন করে ইউপিডিএফ’র ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম গঙ্গারাম ইউনিট
একই ইউনিয়নের মাচলঙে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ ইউপিডিএফ’র সাজেক ইউনিটের আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে কিরণ চাকমার সঞ্চালনায় বক্ত্য রাখেন ইউপিডিএফ সংগঠক সুমন চাকমা ও যুব নেতা সুমন চাকমা প্রমুখ।
আর বাঘাইছড়িতে স্থানীয় ইউনিটের উদ্যোগে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে বিমল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফ’র বাঘাইছড়ি ইউনিটের সংগঠক রিয়েল চাকমা, গণতান্ত্রিক যুব ফোরারেমর বাঘাইছড়ি উপজেলা সভাপতি রত্নজ্যোতি চাকমা ও সুজন চাকমা প্রমুখ।
অপরদিকে নান্যাচরে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে। এতে মিছিল পরবর্তী সমাবেশে গণতান্ত্রিক ফোরামের নান্যাচর উপজেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক প্রিয়তন চাকমার সঞ্চালনায় ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ নান্যাচর উপজেলা শাখার সভাপতি লুইস চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন নান্যাচর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পূজারী চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রজেন্টু চাকমা।
উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সকাল পৌনে ১০টার সময় খাগড়াছড়ির গুইমারা উপজেলার দেওয়ান পাড়ায় নামক স্থানে সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসীরা ওঁৎ পেতে থেকে ইউপিডিএফ সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন (৫২) এর ওপর গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে আজ নিজ বাড়িতে যথাযথ মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
উপরোক্ত বিভিন্ন জায়গায় আয়োজিত সমাবেশ থেকে অংথোই মারমা হত্যার প্রতিবাদে আগামীকাল রবিবার (৪ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির ৫ উপজেলায় (গুইমারা, মাটিরাঙ্গা, রামগড়, মানিকছড়ি ও লক্ষ্মীছড়ি) ডাকা আধাবেলা সড়ক অবরোধ সফল করতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
গুইমারায় সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীরা ইউপিডিএফ সংগঠককে হত্যার নিন্দা
ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ)-এর খাগড়াছড়ি জেলা সংগঠক অংগ্য মারমা এক বিবৃতিতে আজ শুক্রবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকালে গুইমারায় সেনা মদদপুষ্ট নব্যমুখোশ সন্ত্রাসী কর্তৃক ইউপিডিএফের স্থানীয় সংগঠক অংথোই মারমা ওরফে আগুন (৫২)-কে গুলি করে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, আজ সকাল ৯:৪৫টার দিকে অংথোই মারমা সাংগঠনিক কাজে যাবার পথে গুইমারার দেওয়ান পাড়া নামক স্থানে আগে থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলার শিকার হন। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। তাকে হত্যার পর সন্ত্রাসীরা তাঁর মৃতদেহের পাশে একটি পিস্তল রেখে দেয়।
নিহত অংথোই মারমার পিতার নাম কংহ্লাউ মারমা। তাঁর বাড়ি উপজেলার যৌথখামারের বুদুংপাড়ায়।
বিবৃতিতে অংগ্য মারমা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সেনাবাহিনী সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিয়ে একের পর এক ইউপিডিএফ নেতা-কর্মীকে হত্যার কাজে লেলিয়ে দিচ্ছে। অংথোই মারমাকে হত্যার ঘটনাটিও তারই অংশ।
বিবৃতিতে তিনি আরো বলেন, ভ্রাতৃঘাতি সংঘাত বন্ধে পক্ষে গণেজোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় এ গণআন্দোলনকে ভেস্তে দিতে শাসকগোষ্ঠি ও তার বাহিনী ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যার কারণে তারা সন্ত্রাসী লেলিয়ে দিয়ে খুন-খারাবি করে সংঘাত উস্কে দেয়ার মরিয়া অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি সবাইকে শাসকগোষ্ঠির এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সজাগ থাকার আহ্বান জানান।
খুন, গুম, অপহরণ ও দমন-পীড়ন চালিয়ে ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন দমন করা যায় না উল্লেখ করে অংগ্য মারমা বলেন, ইউপিডিএফ পার্বত্য চট্টগ্রামে জনগণের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন করছে। জনগণের ঐকান্তিক সমর্থন নিয়েই ইউপিডিএফ শত বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আন্দোলন এগিয়ে নিচ্ছে। কাজেই, নেতা-কর্মী হত্যা করে, অন্যায় নিপীড়ন চালিয়ে ইউপিডিএফ’র ন্যায়সঙ্গত আন্দোলন কখনো দমিয়ে রাখা যাবে না।
বিবৃতিতে তিনি অবিলম্বে অংথোই মারমা (আগুন)-এর হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপুর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং সন্ত্রাসীদের সেনা মদদদান বন্ধ করার দাবি জানান।