শুক্রবার ● ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » বাঙ্গালহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আদোমং মারমার বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থা
বাঙ্গালহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আদোমং মারমার বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থা
স্টাফ রিপোর্টার :: রাঙামাটি পার্বত্য জেলার রাজস্থলী উপজেলায় ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এর নির্বাচিত চেয়ারম্যান আদোমং মারমার বিরুদ্ধে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ১১ জন সদস্য (মেম্বারগণ) একজোট হয়ে একসভার মাধ্যমে অনাস্থা প্রস্তাব পাশ করেন।
জানা যায়, বাঙ্গালহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আদোমং মারমা সরকারি অনুদান বন্টন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নসহ বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ সদস্যদের সাথে কোন ধরনের সভা ও আলাপ-আলোচনা ব্যতিত চেয়ারম্যান তার মনগড়া ভাবে নিজস্ব স্বার্থে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনাসহ ১৪টি অভিযোগে চেয়ারম্যান আদোমং মারমার বিরদ্ধে বাঙ্গালহালিয়া ইউপির সকল সদস্যরা অনাস্থা প্রস্তাব আনেন এবং চেয়ারম্যাকে বাঙ্গালহালিয়া ইউপি কার্যালয়ে অবাঞ্চিত ঘোষনা করা হয়।
বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত ১১ জন সদস্যদের ৭ সেপ্টেম্বর-২০২২ ইংরেজি তারিখের সভার রেজুলেশন সূত্রে জানা গেছে, বাঙ্গালহালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আদোমং মারমা ঈদুল ফিতরে অসহায় পরিবারের মধ্যে ভিজিএফ এর খাদ্য বিতরণ না করিয়া ১৭ বস্তা খাদ্য শষ্য আত্মসাতের উদ্দেশ্যে অন্যত্র মজুদ রাখিলে প্রশাসন কর্তৃক উহা হাতে নাতে জব্দ করা হয়। যাহা বাঙ্গালহালিয়া ইউপির ভাবমুর্ত্তি ক্ষুন্ন করা হয়। ২. আর.এম.পি ৪০ দিনের কর্মসূচি যথাযথ স্থানে কাজ না করে, বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের এলাকার বাহিরে রাইখালী ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিস্বার্থে তার নিজ বাগানের মধ্যে রাস্তা সংস্কার করে, যাহা ব্যক্তিস্বার্থে আত্মসাতের সামিল। ৩. বিশেষ বারাদ্ধের ১০০ টন খাদ্য শষ্য পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের ব্যতিরেকে এবং পরিষদ সদস্যদের অগোচরে চেয়ারম্যানের পরিবারের সদস্যদের নামে প্রকল্প দেখাইয়া সম্পুর্ণ খাদ্য শষ্য আত্মসাত করে। ৪. এলাকার লোকজনের ৩ বছরের হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া দেখাইয়া আনুমানিক ১২ লক্ষ টাকা আদায় করে সম্পুর্ণ আত্মসাত করে। ৫. বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সচিবকে তার কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেয়া হয়না। তাকে (সচিব) কে বাদ দিয়ে চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত লোক দিয়ে সবিবের দায়িত্বে নিয়োজিত করে, যাহার কারণে নিয়োজিত সচিব নির্বাচিত সদস্যদের প্রয়োজনীয় কাজকর্মে অনিহা প্রকাশ করে। ৬. টি.আর কা.বি.খা প্রকল্পে, প্রকল্পের দাখিল করে নির্বাচিত মেম্বারদের (সদস্য) নিকট হইতে অগ্রিম স্বাক্ষর গ্রহন করে, প্রকল্পের সম্পূর্ন অর্থ আত্মসাত করে চেয়ারম্যান। ৭. গ্রামীন অবকাটামো উন্নয়নে সদস্যদের নিকট হইতে অগ্রীম স্বাক্ষর নিয়ে ১০% কাজ বাস্তবায়ন না করিয়া সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাত করে। ৮. ভোটার তালিক নবায়ন/সৃজনে কঠিন নীতিমালা অবলম্বন করে, ভোটার তার পৈত্রিক সম্পত্তির কাগজপত্র থাকলেও তাদের নিজ নামে সম্পত্তি না থাকিলে তার ভোটার তালিকায় নাম অন্তভুক্ত করা হয়না। যার কারণে ৩৫% লোক ভোটার তালিকায় অন্তভুক্ত হইতে পারে নাই, যাহা ভোটার বিধিমালার পরিপন্থী। ৯. পার্বত্য বাজার ফান্ড হইতে ২৫% টাকা ইউপি নামে উত্তোলন করিয়া চেয়ারম্যান নিজে সেই টাকা আত্মসাত করে। ১০. নির্বাচিত ইউপি সদস্যগণ চেয়ারম্যানের এহেন কার্যকলাপের বিষয়ে জানতে চাইলে সেখানে চেয়ারম্যানের ভাষ্য যে, তার নির্বাচনী ব্যয় ৪৫ লক্ষ টাকা, উক্ত টাকা উত্তোলনের পরে অন্য প্রকল্পের কাজ করবে। ১১. ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রে নিয়োজিত ব্যক্তিকে বাতিল করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চেয়াম্যানের ব্যক্তিগত লোককে নিয়োগ করেছে, যাহার কারণে সাধারন মানুষ তথ্য সেবা গ্রহনে অনেক টাকা খরচ করে তথ্য সেবা নিতে হয়। ১২. উপরের উল্লেখিত বিষয়ে প্রতিকার পাওয়ার জন্য সকল সদস্যবৃন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর নিকট রাজস্থলী যাওয়ার পথে তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে বাঁধা প্রদান করা হয়। ১৩. এল.জি.এস.পি এর বরাদ্ধকৃত প্রকল্পে, বিধি অনুযায়ী উল্লেখ্য প্রকল্পের বরাদ্ধকৃত অর্থ চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যরা ও সচিবের যৌথ স্বাক্ষরে হিসাব খোলা হবে, পরবতী পরিষদের রেজুলেশন করে যথাস্থানে প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু চেয়ারম্যান একাউন্টে কোন টাকা জমা না করিয়া কোন প্রকার সভা ও রেজুলেশন না করে অবৈধ উপায়ে টাকা উত্তোলন করে চেয়ারম্যান আত্মসাত করে। ১৪. স্থানীয় সরকার হইতে আসবাব পত্র ক্রয়ের জন্য বরাদ্ধকৃত দুই লক্ষ টাকা কোন প্রকার আলোচনা বা ক্রয় কমিটি না করে চেয়ারম্যান নিজে সমস্ত টাকা আত্মসাত করে।গণপ্রতিনিধি হিসাবে জনস্বার্থে কোন প্রকার সেবা দিতে চেয়ারম্যান সাহেবের আদৌ ইচ্ছা নাই, তার আচরণ বিধি সিংহভাগ সদস্যদের অসন্তোষের কারণ। উপরোল্লিখিত প্রস্তাবলী উপস্থিত সভায় বিশদ আলোচনা- পর্যালোচনায় চেয়ারম্যান কর্তৃক এহেন কার্যকলাপে সত্যতা প্রমান থাকায় এলাকা, পরিষদ ও জনস্বার্থে বর্তমান চেয়ারম্যান আদোমং মারমাকে অনাস্থা প্রস্তাব আনায়ন করে, উক্ত অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থিত সদস্যগণের নিকট গৃহীত হয়। জনস্বার্থে এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড অব্যহত রাখতে ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ পরিচালনার নিমিত্তে সভায় ৭ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্যাচিংহলা মারমাকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। এখন থেকে ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সকল কার্য়ক্রম ৭ সেপ্টেম্বর-২০২২ ইংরেজি তারিখ হইতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাচিংহলা মারমা স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত চড়ান্ত হয়।
৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ৭ সেপ্টেম্বর-২০২২ ইংরেজি তারিখের সভায় উপস্থিত ছিলেন, ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. এমদাদুল হক, ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল কাদের হওলাদার, ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য থুইসিংমং মারম, ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মংউচিং, ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শিমুল দাশ, ৭নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ক্যচিংহলা মারমা, ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ইখ্যাইমং মারমা, ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য থোয়াই সুইমং মারমা, সংরক্ষিত ১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সালমা আকতার, সংরক্ষিত ৪, ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য বাপ্পি দেব, সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য এসাইচিং মারমা।
এবিষয়ে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমার বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থেকে ১০টি প্রকল্পের অধিনে ১০০ মেট্রেক টন খাদ্য শষ্য বরাদ্ধ দিয়েছেন সেই খাদ্য শষ্য দিয়ে আমি ১৭টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, ইউপিতে কার নামে কি বরাদ্ধ দেয় তা সব অনলাইনে রয়েছে, ইউপি সদস্যরা আমার নামে রাজস্থলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট যে অভিযোগ করেছে তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট দিলে সব পরিস্কার হয়ে যাবে। এছাড়া ইউপি সদস্যরা আমার বিষয়ে তাদের আপত্তি বা অভিযোগ আমাকে তো তারা জানায়নি, আমাকে জানালে আমি তাদের নিয়ে বসে বিষয়টি সুরাহা করিতাম।
আদোমং মারমা আরো বলেন, এসব ইউপি সদস্যরা জামায়াত-বিএনপির লোক তাই তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, আমার এলাকার উন্নয়নের জন্য জনগণ আমাকে ভোট দিয়েছেন, আমি নিজের টাকা খরচ করে বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের কাজকর্ম করি। তিনি নিজেকে আওয়ামীলীগের একনিষ্ঠাকর্ম বলে দাবি করেন।
রাজস্থলী উপজেলার ৩নং বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান আদোমং মারমার বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থার প্রস্তাব পরিষদ সভায় চুড়ান্ত বলে নিশ্চিত করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাচিংহলা মারমা।
বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আদোমং মারমার বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থার প্রস্তাবনার বিষয়ে জানতে বাঙ্গালহালিয়া ইউপি সচিব থোয়াইসু মং মারমার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয়ে তিনি ফোন রিসিভ না করায় বাঙ্গালহালিয়া ইউপি কার্যালয়ের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।