সোমবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে মাটিরাঙ্গায় ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে মাটিরাঙ্গায় ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: পার্বত্য চট্টগ্রামে বেদখলকৃত ভূমি ফেরত দান, সেটলারদের সমতলে পুনর্বাসন, ভারত প্রত্যাগত শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)।
রবিবার ২৫ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টার সময় মাটিরাঙ্গা উপজেলার ওয়াছু এলাকায় ইউপিডিএফ’র মাটিরাঙ্গা-গুইমারা ইউনিটের উদ্যোগে এই বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে অনুষ্ঠিত সমাবেশে ইউপিডিএফ’র গুইমারা ইউনিটের সংগঠক তানিমং মারমার সভাপতিত্বে ও নিশান মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি রজেন্টু চাকমা ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর মাটিরাঙ্গা উপজেলা সভাপতি অনিমেষ চাকমা।
সমাবেশে যুব ফোরাম নেতা রজেন্টু চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ভূমি সমস্যা। এদেশের শাসকগোষ্ঠি পরিকল্পিতভাবে লক্ষ লক্ষ সেটলার বাঙালিকে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে তাদেরকে পাহাড়িদের জায়গায় পুনর্বাসনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ভূমি সমস্যাকে জটিল করে তুলেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়িদের ওপর যে নিপীড়ন-নিপীড়ন শুরু করা হয়েছিল দীর্ঘ ৫০ বছরেও তা চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে পাহাড়িদের লক্ষ লক্ষ একর ভূমি বেদখল করা হয়েছে। এখানে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলো সেটলার ও ভূমিদস্যুদের সহযোগীতা দেয়ায় দিন দিন ভূমি বেদখলের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিন পার্বত্য জেলায় প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও ভূমি বেদখলের ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানের লামা উপজেলায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক প্রশাসনের সহযোগিতায় ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখল করে সেখান থেকে তাদেরকে উচ্ছেদের যে চেষ্টা চলছে তার জন্য তিনি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলার বাঙালিদের সমতলে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, যতদিন এই অঞ্চলে সেটলাররা থাকবে ততদিন এই ভূমি সমস্যার সমাধান হবে না। কারণ অধিকাংশ ভূমিই এখন সেটলার বাঙালিরা বেদখল করে ফেলেছে। কাজেই তাদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুনর্বাসনের মাধ্যমেই এখানকার ভূমি সমস্যার সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে।
পিসিপি নেতা অনিমেষ চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অধিকার আদায়ের ন্যায্য আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে সরকার পাহাড়িদের ওপর নিপীড়ন-নির্যাতন ও ভূমি থেকে উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। মাটিরাঙ্গাসহ গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে এখন ভূমি আগ্রাসন চলছে। গত জুলাই মাসে মহালছড়ির মাইসছড়ি জয়সেন পাড়ায় সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সেটলাররা পাহাড়িদের ৩৭টি ঘরবাড়ি ভাংচুর ও জ্বালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু প্রশাসন বরাবরেই মতোই সেটলারদের পক্ষাবলম্বন করায় পাহাড়িরা এখনো তাদের বসতভিটায় ফিরতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, কখনো বিভিন্ন বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপনের নামে, কখনো পর্যটনের নামে, কখনো উন্নয়ন কিংবা সড়ক নির্মাণের নামে এই ভূমি বেদখলের মহোৎসব চলছে। আর এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গেলে খুন, গুম, গ্রেফতারসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।
তিনি ভূমি বেদখলসহ অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য ছাত্র সমাজের প্রতি আহ্বান জানান।
ইউপিডিএফ সংগঠক ও বিক্ষোভ সমাবেশের সভাপতি তানিমং মারমা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে পাহাড়িদের নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার নীলনক্সা বাস্তবায়ন করে চলেছে। বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার নিজেকে অসাম্প্রদায়িক ও সংখ্যালঘু দরদী হিসেবে বুলি আওড়ালেও কার্যত উগ্রসাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে। ২০১১ সালে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাঙালি জাতীয়তা চাপিয়ে দিয়েছে আর ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কর্তৃক দমনমূলক ১১ নিদের্শনা জারি করে পার্বত্যাঞ্চলে দমন-পীড়ন বাড়িয়ে দিয়েছে। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ভিন্ন ভাষাভাষী জাতি ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন সাম্প্রদায়িক হামলা, মামলাসহ ভূমি বেদখল ও উচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরো বলেন, সরকার দশকের পর দশক ধরে বিশেষ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পুনর্বাসিত সেটলার বাঙালিদের রেশন সুবিধা দিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রামে বহাল রেখে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এই সেটলাররা পার্বত্য চট্টগ্রামে গণহত্যা, সাম্প্রদায়িক হামলা, ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতনসহ নানা অপরাধকর্ম সংঘটিত করছে। অন্যদিকে সরকারের প্রতিশ্রুতি ও চুক্তি মোতাবেক ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের পুনর্বাসনে সরকার এখনো সঠিক কোন উদ্যোগ নেয়নি। ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীরা এখনো তাদের ভিটেমাটি ও জমিজমা ফেরত পায়নি।
সমাবেশ থেকে বক্তারা পার্বত্য চট্টগ্রামে অব্যাহত ভূমি বেদখল বন্ধ করা এবং এ যাবত বেদখলকৃত সকল জমি ফিরিয়ে দেওয়া, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও অভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ নিজ জমিতে যথাযথ পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান করা, পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান, সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুনর্বাসন করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে অন্যায় দমনপীড়ন বন্ধ ও সেনাশাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’ তুলে নিয়ে সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা জোর দাবি জানান।