সোমবার ● ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহে এক প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু
ঝিনাইদহে এক প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু
জাহিদুর রহমান তারিক, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: ঝিনাইদহে বদিউজ্জামান এ্যাপো (৫০) নামে হাই স্কুলের এক প্রধান শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে স্বর্পদংশনে মৃত্যু বলে প্রচারের পর লাশ দাফন করা হচ্ছিল। এ সময় দেখা গেলো মৃত ব্যক্তির কান ও মাথার পেছন দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ বদিউজ্জামান এ্যাপোর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার বিকালে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার এস্তেফাপুর গ্রামে। মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামান এ্যাপো পোড়াহাটী ইউনিয়নের এস্তেফাপুর গ্রামের আমিরুল ইসলাম লতার ছেলে। প্রথমে প্রচার করা হয় শনিবার রাতে তিনি স্বর্প দংশনের শিকার হন। মধ্যরাতে কিছু অজ্ঞাত যুবক বদিউজ্জামান এ্যাপোর বড় মেয়ে চৈতীকে ফোন করে জানায় তার পিতাকে স্বর্পদংশন করেছে। খবর পেয়ে তার মেয়ে হাসপাতালে পৌছে অজ্ঞাত ওই যুবকদের সঙ্গে বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হয় এবং বলেন “তোরা আমার পিতাকে হত্যা করেছিস”। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। রহস্যময় এই মৃত্যুর ঘটনা পারিবারিক ভাবে এড়িয়ে রোববার জোহর বাদ লাশ দাফনের উদ্যোগ গ্রহন করেন। মৃত ব্যক্তির জানাজা শেষে লাশ যখন কবরস্থ করা হচ্ছিল, তখন তার মাথার পেছন ও কান দিয়ে রক্তক্ষরণ হলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা দাফনে বাধা দেন এবং লাশ ময়না তদন্তের জন্য হাসপাতালে নিয়ে আসেন। প্রতিবেশিরা জানান, বদিউজ্জামানের যদি সাপে দংশন করতো তাহলে তার মুখ দিয়ে লালা ও চেহারা কালো র্বর্ণ ধারণ করতো। কিন্তু সাপে কাটার কোন লক্ষন মৃত ব্যক্তির শরীরে নেই। তাছাড়া নিজের পুকুরপাড়ে দংশন করা ব্যক্তিকে কারা পাশর্^বর্তী বালিয়াডাঙ্গা গ্রামে নিয়ে গেলো এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। রাতের আধারে ডেকে প্রধান শিক্ষক বদিউজ্জামানকে নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করিয়ে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে তার স্ত্রী পাখি খাতুন অভিযোগ করেন। ছোট ভাই কলেজ শিক্ষক খায়রুজ্জামান সাইফুল জানান, আমরা হাসপাতালে পৌছে দেখি বড় ভাই মারা গেছেন। কিভাবে ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে আমরা সঠিকভাবে জানি না। এদিকে এলাকাবাসির অভিযোগ, মৃত প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে স্থানীয় চেয়ারম্যানের দ্বন্দ চলে আসছিল। এই দ্বন্দের জের ধরে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তার নামে অনেক মিথ্যা মামলাও করা হয়। দীর্ঘ মামলা মোকদ্দমা শেষে আদালতের নির্দেশে সোমবার (২৬ সেপ্টম্বর) বদিউজ্জামানের মধুপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যোগদান করা কথা ছিল। স্কুলে যোগদানের আগেই তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হতে পারে বলে গ্রামবাসি সন্দেহ করছে। এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ সোহেল রানা জানান, বদিউজ্জামানের মৃত্যু রহস্যজনক। স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল বলে শুনেছি। এ কারণে তাকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। ওসি জানান, আদালতের নির্দেশে সোমবার স্কুলে যোগদান করার কথা ছিল তার। স্কুলে যোগদানের একদিন আগে তার এমন মৃত্যু আমরা রহস্যের চোরেখ দেখছি এবং লাশের সুরাতহাল রিপোর্ট তৈরী করে ময়না তদন্তের উদ্যোগ নিয়েছে।
চেয়ারম্যান পদে দুজনসহ পাঁচজনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহে জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুজন ও সাধারণ সদস্য (পুরুষ) পদে তিনজন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। রবিবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন দুইজন। তারা হলেন-জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দলীয় মনোনীত কনক কান্তি দাস ও সৃজনী এনজিওর প্রতিষ্ঠাতা হারুন অর রশীদ (বিদ্রোহী)। এছাড়া পুরুষ সদস্য পদে ২২ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৩ জন। ঝিনাইদহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুস ছালেক জানান, এবার ছয়টি উপজেলায় মোট ৯৫৪ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। এর মধ্যে পুরুষ ৭২৯ ও মহিলা সদস্য ভোটা ২২৫ জন। জেলার ছয় উপজেলা পরিষদ, সদর পৌরসভা বাদে পাঁচটি পৌরসভা মেয়র ও কাউন্সিলররা এবং ৬৭টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা ভোটে অংশ নিতে পারবেন।
ঝিনাইদহে মেডিকেল কলেজ ও রেল লাইনের দাবিতে মানববন্ধন
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহ শহরে মেডিকেল কলেজ ও রেল লাইনের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার সকালে ঝিনাইদহ প্রিয়া সিনেমা হলেন সামনে মেডিকেল কলেজ ও রেল লাইন বাস্তবায়ন কমিটির ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। সেসময় সংগঠনের জেলা আহবায়ক নন্দ দুলাল সাহা, মানবাধিকার নেতা আমিনুর রহমান টুকু সহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, জেলায় একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপন হলে এখানে স্বাস্থ্য সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে। তেমনি রেল লাইন স্থাপন হলে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত হবে।
ঝিনাইদহে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে ভ্রাম্যমান আদালতের ১১ মামলা জরিমানা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের পৌরসভা এলাকায় নিরাপদ সড়ক নিশ্চিতে মটরযান ও সড়ক আইন অমান্য সহ বিভিন্ন অপরাধে মটরযান ড্রাইভারদের এগারো(১১) মামলার বিপরীতে বারো(১২’৩০০/-)হাজার তিনশত টাকা জরিমানা করলেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরিফুল ইসলাম। রবিবার দুপুরে তিনি ঝিনাইদহ কুষ্টিয়া মহাসড়কে টিটিসি ট্রেনিং সেন্টার প্রাঙ্গণে এই ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালোনা করেন। এসময় ঝিনাইদহ বিআরটিএ আঞ্চলিক কার্যালয়ের এডি মোঃ আতিয়ার রহমান, মটরযান পরিদর্শক ইন্জিনিয়ার এস এম সবুজ সহ টিআই গোলাম মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন। বিভিন্ন অপরাধে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা করার পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ শরিফুল ইসলাম, বিআরটিএ এর এডি মোঃ আতিয়ার রহমান সহ টিআই গোলাম মোর্শেদ সড়ক আইন সম্পর্কে জ্ঞাত করতে বিভিন্ন যান চালোকদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করেন।
হরিণাকুন্ডুতে হারানো ঐতিহ্য লাঠি খেলা
ঝিনাইদহ :: ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী লাঠিখেলা। লাঠিখেলাকে কেন্দ্র করে উপজেলার পোলতাডাঙ্গা পরিণত হয়েছিলো উৎসবের নগরীতে। যা দেখতে দুর-দুরান্ত থেকে ভীড় করেছিলো হাজারো দর্শনার্থী। দীর্ঘদিন পর এ আয়োজন করায় খুশি দর্শক ও খেলোয়াড়রা। শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার পোলতাডাঙ্গা গ্রামে পূর্বপাড়ার যুব সমাজ এ খেলার আয়োজন করে। ১২ বছর বয়সী ক্ষুদে লাঠিয়াল বিশাল হোসেনের লাঠির জাদুতে মেতে ওঠে দর্শক। প্রতিযোগিতায় পেরে ওঠে না তার চাচা আনোয়ার হোসেন। যা দেখে আনন্দ যেন বেড়ে যায় দর্শকদের মাঝে। সেই সাথে বাদ্যের তালে তালে নেচে অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শন দর্শকদের নিয়ে যায় ঘোরের রাজ্যে। শুরু হয় লাঠি নিয়ে আক্রমন পাল্টা আক্রমন। লাঠির আঘাত রুখে দিয়ে পাল্টা আঘাতের মধ্য দিয়ে নিজের বীরত্ব প্রকাশ করতে উঠেপড়ে লাগে লাঠিয়ালরা। যা দেখে আনন্দে মেতে ওঠে উপস্থিত দর্শকরা। দীর্ঘদিন পর এ ধরনের খেলা দেখে খুশি দর্শকরা। সেই সাথে খেলায় অংশ নিতে পেরে খুশি খেলোয়াড়রাও। দিনভর এই আয়োজনে ঝিনাইদহ ও পার্শবর্তী চুয়াডাঙ্গা উপজেলা থেকে ৮ টি লাঠিয়াল দলের অর্ধশত খেলোয়াড় খেলা প্রদর্শণ করেন। সবাইকে পেছনে ফেলে প্রথম হয় শ্রীরামপুর গ্রামের মহি সর্দার। তোলা গ্রামের লাঠিয়াল সর্দার মন্টু হোসেন বলেন, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ ও বিনোদন দিতে আমরা লাঠি খেলা দেখাই। তাদের আনন্দে আমরা মজা পায়। এ খেলা আমাদের পূর্ব-পুরুষের। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে গ্রামীণ ঐহিত্যবাহী এ খেলাটি টিকে রাখা সম্ভব হবে। পোলতাডাঙ্গা গ্রামের শিপন হোসেন বলেন, কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া এ লাঠি খেলা দেখতে হাজির হন নানা বয়সের মানুষ। দর্শনার্থীদের বাড়তি আনন্দ ও বিনোদন দিতে কিছুটা হলেও পুরানো দিনের গ্রামীন চিত্ত বিনোদনের সুযোগ পান বয়ো-বৃদ্ধরা। পোলতাডাঙ্গা গ্রামের আয়োজক কমিটির আব্দুল গাফ্ফার বলেন, মাঠের স্বল্পতা আর ভিডিও গেমসের কারণে আমাদের শিশুরা ঘর মুখো। প্রথম বারের মত আমরা গ্রামিন এ খেলার আয়োজন করি। আগামীতে আরও বড় করে লাঠি খেলা করানো হবে। গ্রামীণ ঐতিহ্য ধরে রাখতে আর মানুষকে আনন্দ দিতেই এ আয়োজন। সব শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। খেলা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।