বুধবার ● ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » খাগড়াছড়ি » জমি বেদখলের প্রতিবাদে দীঘিনালায় ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
জমি বেদখলের প্রতিবাদে দীঘিনালায় ইউপিডিএফের বিক্ষোভ
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল) এর প্রচার ও প্রকাশনা বিভাগ নিরন চাকমা প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জনান, বান্দরবানের লামায় লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করা, বেদখলকৃত ভূমি ফেরত দান, সেটলারদের সমতলে পুনর্বাসন, ভারত-প্রত্যাগত শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ভূমি বেদখল বন্ধের দাবিতে খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রট(ইউপিডিএফ) দীঘিনালা ইউনিট।
আজ বুধবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল সোয়া ৯টার সময় দীঘিনালা উপজেলার আনন্দ বাজার সংলগ্ন মেইন রোড থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বাঘাইছড়ি ব্রীজের সামনের সড়কে এসে সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইউপিডিএফের দীঘিনালা ইউনিটের সংগঠক সজীব চাকমা, যুব নেতা রুপেশ চাকমা, দীঘিনালা ভূমি রক্ষা কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সুজয় চাকমা ও গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের দীঘিনালা উপজেলা সভাপতি জ্ঞান প্রসাদ চাকমা।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শাসকগোষ্ঠী ও তাদের পৃষ্ঠপোষিত বিভিন্ন কোম্পানি, সেটলার ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক প্রতিনিয়ত পাহাড়িদের ভূমি বেদখল করা হচ্ছে। দিন দিন এই ভূমি বেদখলেল মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বান্দরবানে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ কর্তৃক ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জমি জবরদখল করে তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টা চলছে। রাষ্ট্রীয় সকল প্রশাসন ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানির পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
বক্তারা আরো বলেন, শুধু লামায় নয়, গোটা পার্বত্য চট্টগ্রামে কথিত উন্নয়ন, সড়ক নির্মাণ, পর্যটন-রিসোর্ট গড়ে তোলা, ক্যাম্প সম্প্রসারণ এবং সেটলার বাঙালি ও ভূমিদস্যুদের লেলিয়ে দিয়ে ভূমি আগ্রাসন চলছে। বাবুছড়া সাধনাটিলা বনবিহারের জায়গা বেদখল করতে নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বাবুছড়ায় বিজিবি হেডকোয়ার্টার স্থাপনের কারণে জোরপূর্বক উচ্ছেদকৃত ২১ পরিবার এখনো নিজ বসতভিটা ও জায়গা-জমি ফেরত না পেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। সরকার পাহাড়িদের বিতাড়িত করতে পরিকল্পিতভাবে এই আগ্রাসন ও দমননীতি জারি রেখেছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।
বক্তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে এ যাবত পাহাড়িদের হাজার হাজার একর জমি বেদখল করা হয়েছে। পার্বত্য চুক্তির পরও পাহাড়িরা এসব বেদখলকৃত জমি ফেরত পায়নি। চুক্তি মোতাবেক ভারত-প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীসহ আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন করা হয়নি। ফলে ভারত প্রত্যাগত শরণার্থীরা এখনো তাদের ভিটেমাটিতে যেতে পারেননি।
বক্তারা বলেন, আশি’র দশকে পরিকল্পিতভাবে ৪ লক্ষাধিক সেটলার বাঙালিকে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে পাহাড়িদের জায়গায় পুনর্বাসন করা হয়েছে। ফলে পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যা জটিল আকার ধারণ করেছে। আর সরকার তথা শাসকগোষ্ঠি এই সেটলার বাঙালিদের দশকের পর দশক ধরে রেশন সুবিধা দিয়ে তাদেরকে পাহাড়িদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। সেটলারদের লেলিয়ে দিয়ে পাহাড়িদের জায়গা-জমি বেদখল, সাম্প্রদায়িক হামলাসহ, গণহত্যার মতো মানবতাবিরোধী কর্মকা- সংঘটিত করছে।
বক্তারা অবিলম্বে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো-ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জমি বেদখলের ষড়যন্ত্র বন্ধ করে ভূমিদস্যু রাবার কোম্পানির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ; পাহাড়িদের প্রথাগত ভূমি আইনের স্বীকৃতিপূর্বক পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি সমস্যার সমাধান ও বেদখলকৃত সকল ভূমি ফিরিয়ে দেওয়া; ভারত-প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থী ও আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তুদের নিজ জমিতে পুনর্বাসন; বাবুছড়া থেকে উচ্ছেদকৃত ২১ পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন করা; সেটলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে পুনর্বাসন এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে ভুমি বেদখল ও ভূমি বেদখলের সকল ষড়যন্ত্র বন্ধ করার জোর দাবি জানান।