বৃহস্পতিবার ● ৩১ মার্চ ২০১৬
প্রথম পাতা » জনদুর্ভোগ » চাটমোহরে রাস্তা কেটে নদী পূনরুদ্ধারের চেষ্টা ৩০ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের ভোগান্তি
চাটমোহরে রাস্তা কেটে নদী পূনরুদ্ধারের চেষ্টা ৩০ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষের ভোগান্তি
চাটমোহর প্রতিনিধি :: পাবনার চাটমোহরের মথুরাপুর এলাকায় চলমান একটি রাস্তা কেটে বড়াল নদী পূনরুদ্ধারের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড৷ ফলে এর আশপাশের অন্তত ৩০ গ্রামের ৫০ হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন৷ ব্রীজ নির্মাণ না করে রাস্তাটি কাটার ফলে আগামি বর্ষা মৌসুম থেকে নদীটি পারাপারে এ এলাকার মানুষের অবলম্বন হবে খেয়া নৌকা অথবা বাঁশের সাঁকো৷ কতদিন তাদের খেয়া নৌকা বা বাঁশের সাঁকোয় নদী পার হতে হবে এর সদুত্তর আপাতত জানা নেই কারো৷
জানা গেছে, চাটমোহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বড়াল নদীর উপর দিয়ে কয়েক দশক পূর্বে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি রাসত্মা নির্মাণ করে৷ রাস্তাটি সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি থেকে চাটমোহরের ধানকুনিয়ায় চাটমোহর- ছাইকোলা সড়কে মিশেছে৷ বড়াল নদীর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে মথুরাপুর- দহপাড়া পয়েন্টে সেসময় রাসত্মাটির (বাঁধের) প্রায় ১শ দূরত্বে মূল নদীর পাশে একটি ক্যনাল কেটে তার উপর একটি স্লুইজগেট ও নির্মাণ করা হয়৷ নদীর বাঁধ পার হয়ে এ সস্নুইজগেটের উপর দিয়ে মথুরাপুর, পৈলানপুর, জাবরকোল, কুমারগাড়া, সোনাহারপাড়া, চরপাড়া, দোদারিয়া, মহাজের পাড়া, চরসেনগ্রাম, নটাবাড়িয়া, ধানকুনিয়া, বিন্যাবাড়ি গৌড়নগর, করকোলা, চিনাভাতকুর, মামাখালী, নুরনগর, দহপাড়া, গজারমাড়া, মৌহাটসহ প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ চলাচল করতো৷
বড়াল নদীর উত্স মুখ রাজশাহীর চারঘাট এলাকায়৷ চারঘাটেও একটি সস্নুইজ গেট নির্মিত হয়৷ পদ্মা নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে এবং চারঘাটের সস্নুইজগেট দীঘদিন যাবত বন্ধ থাকায় বড়ালে পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়৷ এক সময়ের খরস্রোতা বড়াল নদী মৃতাবস্থায় উপনীত হয়৷ বড়াল নদীর উপর নতুন বাজার খেয়া ঘাট, বোঁথর ঘাট, রামনগর ঘাটসহ কয়েকটি এলাকায় ক্রস বাঁধ নির্মাণ করা হয়৷ ফলে নদীটি খন্ড খন্ন্ড হয়ে কিছু মিনি পুকুরে পরিণত হয়ে পরে৷ নদীর বুকে শুরম্ন হয় প্রভাবশালীদের মাছ চাষ৷ বাঁধের পাড় দখল করে অনেকে তৈরী করে বাড়ি ঘর দোকান পাট৷ দখল দূষণে নদীটি ভাগারে পরিনত হয়৷ এলাকার মানুষ নদীর সুবিধা বঞ্চিত হয়ে পরে৷ নদীটি সচল করতে দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে বড়াল পারের মানুষ৷ গঠিত হয় বড়াল নদী রৰা কমিটি৷ বড়াল পাড়ের ২শ কিঃমিঃ এলাকায় মানব বন্ধনও করে তারা৷ গত ১৪ মার্চ সোমবার চাটমোহরে গনসমাবেশের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শেহেলী লায়লার মাধ্যমে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর এক লাখ মানুষের গনস্বাৰর সম্বলিত আবেদন পত্র জমা দেয়া হয়৷
নদীটি রৰায় বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) কতর্ৃক মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নং ১৫৬৭/২০১৪ মোকদ্দমার নির্দেশনা ও টাস্কফোর্সের সুপারিশের আলোকে “জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন” এর চেয়ারম্যান ২০১৫ সালের ৯ জুন মথুরাপুর- দহপাড়া এলাকায় বড়াল নদীর উপর পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ (ক্রস বাঁধ) পরিদর্শন করে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আলোচনা ও সভা করেন৷ নদী রৰা কমিশনের চেয়ারম্যান বাঁধ অপসারণের জন্য নির্দেশনা দেন৷ ২০১৫ সালের ৮ অক্টোবর পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রী উক্ত ক্রস বাঁধটি সরেজমিন পরিদর্শন করেন এবং আদালতের নির্দেশনা, টাস্কফোর্স এবং জাতীয় নদী রৰা কমিশনের সুপারিশ অনুসারে উক্ত ক্রসবাঁধ অপসারণের নির্দেশনা প্রদান করায় টেন্ডার প্রক্রিয়ার শেষে কাজ শুরম্নর অংশ হিসেবে প্রিওয়ার্ক লেভেল নেয়া হয়েছে৷ মথুরাপুর- দহপাড়া রাসত্মার (বাঁধ) দুইপাশের অবৈধ বসতিদের উচ্ছেদ করে গত ১০ মার্চ বৃহস্পতিবার রাসত্মা অপসারণের কাজ শুরম্ন হয়৷ ব্রীজ নির্মাণ না করে রাসত্মাটি কেটে ফেলায় এলাকাবাসী দূর্ভোগে পরবে এ আশংকায় বাঁধা দেওয়ার জন্য সমবেত হলেও আদালতের রায়ে বাঁধ কাটা হচ্ছে জেনে নিরুপায় হয়ে পিছু হটে তারা৷
কয়েক দিনের মধ্যে কাটা শেষ হয়ে যাবে৷ আসছে বর্ষা মৌসুম৷ সত্ত্বর ব্রীজ নির্মাণ করা না হলে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষকে আগামি দিনে নৌকায় পার হতে হবে এ নদী৷ আগামি দিনের চিনত্মায় তাই অনেকে নির্বাক চেয়ে থাকেন নদীর দিকে৷ এ ব্যাপারে দহপাড়া গ্রামের কলেজ শিক্ষক রজব আলী জানান, নদী পূনরুদ্ধারের জন্য রসত্মাটি কেটে ফেলা হলো৷ ব্রীজ নির্মাণ না হওয়া পর্যনত্ম বড়ালের দুই পারের প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষকে নৌকা অথবা বাঁশোর সাঁকোর উপর দিয়ে এ নদী পার হতে হবে৷ নদীর পারে দহপাড়া হাট, উচ্চবিদ্যালয় ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে৷ হাটুরে ও এসকল শিৰা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীকে নৌকায় নদী পার হয়ে শিৰা প্রতিষ্ঠানে যেতে হবে৷ তাছাড়া বড়াল নদীর বুকে নতুন বাজার খেয়াঘাট এবং বোঁথরে দুইটি ক্রস বাঁধ রয়েই গেছে৷ সেগুলো অপসারণ না করলে এখানে রাসত্মা কেটে নদী উদ্ধার চেষ্টা সুফল বয়ে আনবে না৷ মথুরাপুর গ্রামের আক্কাস আলী (৭০), নুরুজ্জামান (৩০) এবং দহপাড়া গ্রামের সুজন মাহমুদসহ অনেকে জানান, ব্রীজ নির্মাণ বা বিকল্প ব্যবস্থা না করে রাসত্মাটি কেটে ফেলার ফলে তা এ এলাকার মানুষের দূর্ভোগের কারণ হয়ে দাড়াল৷ এ রাসত্মায় যানবাহন চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে গেছে৷ তারা এখানে অতি সত্ত্বর ব্রীজ নির্মানের জোড় দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে৷ এ ব্যাপারে বড়াল নদী রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব এস এম মিজানুর রহমান জানান, নদীটি পুনরম্নদ্ধারে রাসত্মা কাটার ফলে যে সাময়িক সমস্যা হচ্ছে বৃহত স্বার্থের কথা চিনত্মা করে তা আমাদের মেনে নিতে হবে৷
এ ব্যাপারে পাউবো পাবনার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানান, জাতীয় নদী রৰা কমিশনের সিদ্ধানত্ম মোতাবেক রাসত্মাটি কাটা হচ্ছে৷ এখানে ব্রীজ নির্মাণ করবে রোডস এন্ড হাইওয়ে৷ পাশাপাশি রামনগর ঘাটে নদীর উপরের ক্রস বাঁধ অপসারণ করবে এবং বেইলী ব্রীজ করবে৷ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খান জানান, এলজিইডি থেকে বোঁথর ঘাটের বাঁধের স্থলে ব্রীজ নির্মাণ এবং নতুন বাজার খেয়াঘাট এর ক্রস বাঁধ অপসারণ করা হবে৷ এ লৰ্যে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে৷