শনিবার ● ১৫ অক্টোবর ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » নদীতে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে বারইয়ারহাট পৌর মেয়র সহ গুলিবিদ্ধ -৩
নদীতে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে বারইয়ারহাট পৌর মেয়র সহ গুলিবিদ্ধ -৩
মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: মিরসরাইয়ের মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় ফেনী নদীতে বালু তোলাকে কেন্দ্র করে বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন সহ ৩জন গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, মিরসরাই উপজেলার ওচমানপুর ইউনিয়নের ওচমানপুর বাজারের পশ্চিম পাশে ফেনী নদীর মিরসরাই অংশ কলমিচর থেকে বালু উত্তোলন করছে সেনাগাজীর একটি গ্রুপ। দীর্ঘদিন ধরে বালু উত্তোলন করা নিয়ে সোনাগাজী অংশের লোকজনের সঙ্গে মিরসরাই অংশের লোকজনের বিরোধ চলে আসছে।
শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) সকালে ফেনী নদীর ঐ এলাকায় বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম খোকন কয়েকজনকে নিয়ে ফাজিলপুরের ইউপি চেয়ারম্যান মজিবুল হক রিপনের লোকজনের সাথে কথা বলতে যান। এ সময় তাদের সাথে খোকনের কথা বলার এক পর্যায়ে উভয় পক্ষ বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লে এলোপাতাড়ি গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হন বারইয়ারহাট পৌর মেয়র রেজাউল করিম খোকন (৫০), হিঙ্গুলী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক অসোক সেন (৪২), যুবলীগ কর্মী সাইদ খাঁন দুখু (৩৫) ও বোট চালক আব্দুর রহিম (৩৫)। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধারের পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার পর সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) স্থানান্তর করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে মেয়র খোকনের অবস্থা আশংকাজনক। মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মিনহাজ উদ্দিন জানান, মেয়র রেজাউল করিম খোকনের পেটে এবং শরীরের কয়েকটি স্থানে গু-লিবিদ্ধ হয়েছেন।
বারইয়ারহাট পৌর মেয়র খোকনসহ আহতরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৭ নং ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। মেয়র খোকনের চিকিৎসার খোঁজ নিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছুটে যান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাহবুব রহমান রুহেল।
বারইয়ারহাট পৌরসভার মেয়র ও বারইয়ারহাট পৌরসভা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম খোকনসহ ৩ জন গু-লিবিদ্ধের ঘটনায় শুক্রবার বিকেল পাঁচটার দিকে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের বারইয়ারহাটে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বারইয়ারহাট পৌর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে ৫ শতাধিক নেতাকর্মী অংশ নেয়। মিছিল শেষে সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে ফেনীর ফাজিলপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুল রিপনসহ দোষীদের গ্রেফতার করে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নূর হোসেন মামুন জানান, ফেনী নদীর বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বারইয়ারহাটের পৌর মেয়র রেজাউল করিমের ওপর গুলি চালানোর বিষয়ে তারা এলাকা পরিদর্শক করেছেন। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে তবে এখনও পর্যন্ত কেউ থানায় অভিযোগ দেয়নি।
মিরসরাইয়ে ফসলী জমি রক্ষা ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলা প্রশাসন
মিরসরাই :: ফেনী নদীর মিরসরাই অংশে তিন ফসলী জমি রক্ষা ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে সরেজমিন পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান।
ফেনী নদীর মিরসরাইয়ের করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার ও চর পশ্চিম জোয়ার প্রকাশ দিয়ার চর এলাকায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে তিন ফসলী জমি, হুমকির মুখে নদী পাড়ের বসতিগুলো। আবার বালু উত্তোলনের আদলে রাতের আঁধারে ফসলী জমি কাটা এবং জমি রক্ষার্থে বাঁধা দিতে আসা লোকজনকে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুর্বৃত্তের ধাওয়া এসবের প্রেক্ষিতে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে গত ১০ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করা হয়।
ভুক্তভোগী ও ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে সরেজমিন পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মিজানুর রহমান।
চর পশ্চিম জোয়ার প্রকাশ দিয়ার চর রক্ষা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শোয়াইব জানান, এই চর এলাকার তিন ফসলী জমির ফসল উৎপাদন ও জীবিকা নির্বাহ করে প্রায় সাড়ে তিন’শ পরিবার কোন না কোনভাবেই নির্ভরশীল। নদী থেকে বালু উত্তোলন কোন সমস্যা না কিন্তু বালু উত্তোলনের আদলে ফসলী জমি কাটা এবং রাতের আঁধারে ফসলী জমি কাটতে বাঁধা দিতে গেলে দুর্বৃত্তরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ভুক্তভোগীদেরকে ধাওয়া করা, ফসলী জমি ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করা এসবের বিষয়ে গত ১০ অক্টোবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ফসলী জমি কাটা এবং জমি রক্ষার্থে বাঁধা দিতে আসা লোকজনের উপর হামলার ঘটনায় অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিন পরিদর্শন করেছি, ভুক্তভোগীদের সমস্যাগুলো শুনেছি এবং এবিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এসময় ভুক্তভোগী, জমির মালিক, জোরারগঞ্জ থানার এসআই রতন কান্তি, অলিনগর বিজিবি ক্যাম্প কমান্ডার নজরুল ইসলাম, উপজেলা সার্ভেয়ার ও তহসিলদারগণ উপস্থিত ছিলেন।