শুক্রবার ● ১ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » নাটোরে বিএনপির চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন ঘোষণা
নাটোরে বিএনপির চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন ঘোষণা
আব্দুল মজিদ, নাটোর প্রতিনিধি :: নাটোরে বিএনপির চার চেয়ারম্যান প্রার্থীর ভোট বর্জন কেন্দ্র দখল, প্রিজাইডিং অফিসারকে মেরে ব্যালট বক্স ছিনতাই একটি কেন্দ্র স্থগিত ,১১জন আটক । নাটোরের ইউপি নির্বাচনে লালপুরে বিএনপির চার চেয়ারম্যান প্রার্থী নির্বাচন বর্জন করেছেন এবং বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করায় মোট ১১জনকে আটক করা হয়েছে ৷ একজন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মোটর সাইকেল ভাংচুরের ঘটনাও ঘটেছে ৷ অর্জুনপুর-বরমহাটি (এবি) ইউনিয়নের শ্রীরামগাড়ি রেলওয়ে কলোনী কেন্দ্রে ২৪৬টি ব্যালেট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে একটি ভোট কেন্দ্র স্থগিত ঘোষণা করা হয় ৷ এসময় প্রিজাইডিং অফিসার মতিউর রহমানকে মারপিট করে ব্যালট ছিনতাই করা হয়েছে ৷ এবি ইউনিয়নের শ্রীরামগাড়ি রেলওয়ে কলোনী কেন্দ্রে ২৪৬টি ব্যালেট পেপার ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ভোট কেন্দ্র স্থগিত ঘোষনা করা হয় ৷ এসময় প্রিজাইডিং অফিসার মতিউর রহমানকে মারপিটও করা হয়েছে ৷ বেলা তিনটার দিকে লালপুর থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ পাপ্পু’র বাসভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া ও কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকায় জোড় করে সীল মারার প্রতিবাদে লালপুর সদর ইউনিয়নে আশরাফুল আলম লুলু, ২নং ঈশ্বরদী ইউনিয়নে আব্দুল আজিজ রঞ্জু, দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নে তাহমিদুর রহমান ও আড়বাব ইউনিয়নে বেল্লাল হোসেন চলতি ইউপি নির্বাচন বর্জন করে সরে দাঁড়ান ৷ লালপুর সদর ইউনিয়নে আশরাফুল আলম লুলু ও ২ নং ঈশ্বরদী ইউনিয়নে আব্দুল আজিজ রঞ্জু সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে নিজেরাই নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ৷ আর দুড়দুড়িয়া ইউনিয়নে তাহমিদুর রহমান ও আড়বাব ইউনিয়নে বেল্লাল হোসেন মোবাইল ফোনে সংবাদ সম্মেলনে তাদের ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন ৷ অন্যদিকে বেলা পৌনে চারটার দিকে লালপুর থানা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্থানীয় প্রেস ক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয় ৷ এতে থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আফতাব হোসেন জুলফুৃ বিএনপির অভিযোগ খন্ডন করে বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কোথাও কোন ভোট কেন্দ্র দখল করেন নাই ৷ নির্বাচনের শুরম্ন থেকেই বিএনপির কোন নেতাকর্মী মাঠে নেই ৷ ভোটে হেরে যাওয়াটা নিশ্চিত জেনে টালবাহানা করে শেষ মুহুর্তে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়ে তারা ভোটারদের সাথে আবারও রসিকতা করেছেন ৷ বিএপির চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আজিজ দুপুর একটার দিকে কদমচিলান ইউনিয়নের ভবানীপুর কেন্দ্রে গেলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা তাকে ধাওয়া করে তার গাড়ী ভাংচুর করে ৷ এ সময় পালিয়ে রক্ষা পান বিএনপি প্রার্থী৷ চেয়ারম্যান প্রার্থী আব্দুল আজিজ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ৷ এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে লালপুরের বাকনাই কেন্দ্রের ভিতরে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে প্রভাব বিস্তার করা নিয়ে সংঘর্ষ বেধে গেলে প্রায় দু’পক্ষই লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ৷ এতে চারজন মহিলা সহ মোট আটজন আহত হন ৷ আহতদের মধ্যে আশরত আলীর ছেলে আকতার হোসেন(৪৬), আহম্মদ হালসানার ছেলে মাখন আলী (৫০), মালেক হালসানা (৫৫), মালেকের স্ত্রী ঝরনা বেগম (৫০), মনিরুলের স্ত্রী আজমিরা বেগম (৪০), মৃত আবু তাহেরের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম(২৬) ও মৃত জমসেদ আলীর ছেলে জুয়েল রানা (৩০)৷ আহতদের মধ্যে একজন মহিলার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে চিকিত্সার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৷ আহত তিনজন মহিলাসহ সাতজন লালপুর হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৷ এর আগে সকাল ১১টার দিকে আড়বাব ইউনিয়নের আড়বাব সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় বিএনপির চারকর্মী আহত হয়েছে৷ আহত বিএনপি কর্মী জহুরুল ইসলাম জানান, সকাল অনুমান ১১টার সময় তারা ভোট দেওয়ার জন্য বাড়ি থেকে রাস্তায় উঠছিলেন ৷ এসময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ইসহাক আলীার সমর্থকরা তাতে বাধা দেয়৷ এতে উভয়ের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয় ৷ এক পর্যায়ে তারা অর্তিকতে হামলা চালায়৷ এতে তিনিসহ তাদের পরিবারের চারজন আহত হন৷ অন্যরা হলেন, তার ছোট ভাই বিপস্নব(৪৫), রেন্টু(৪৭), ছোট বোন মিতা(৪০)৷ এদের মধ্যে রঘুনাথপুর এলাকার বিপ্লবের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে ৷ লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা আব্দুল হাই তালুকদার জানান, এই ঘটনায় বাকনাই কেন্দ্র থেকে কাউকে আটক করার খবর তার কাছে নেই তবে ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করার অপরাধে লালপুর থানা পুলিশ বড়মাটি কেন্দ্র থেকে দুইজন ও অন্যান্য কেন্দ্র থেকে আরো তিনজন সহ মোট পাঁচজনকে আটক করেছে৷ এছাড়াও বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের ভোটে পাঁকা সদর ভোট কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করার অভিযোগে আওয়ামী লীগ সমর্থক পাঁচজনকে এবং চিথুলিয়া কেন্দ্রে একই অভিযোগে বিএনপি সমর্থীত একজনকে আটক করা হয়েছে ৷ নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুন্সী সাহাবুদ্দিন জানান, ঘটনার খবর পেয়েই তাৎক্ষনিক ভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয় ৷ বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে ৷ আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে ৷ ইউপি সদস্যদের মধ্যে এই সংঘষের্র ঘটনা ঘটেছে ৷ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ বলেছেন বিএনপির প্রার্থীরা নির্বাচনে হেরে যাবে আঁচ করতে পেরে তারা ভোট বর্জনের ঘোষনা দিয়েছে ৷