বৃহস্পতিবার ● ৩ নভেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » রাঙামাটি পৌর এলাকায় একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ
রাঙামাটি পৌর এলাকায় একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে ৫ গ্রামের মানুষ
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: রাঙামাটি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডে একটি সেতুর অভাবে যুগ যুগ থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে পাঁচ গ্রামের শিক্ষার্থীসহ হাজারও মানুষ। এলাকার উৎপাদিত ফসল বাজারজাতকরণ নিয়ে একদিকে কৃষকেরা যেমন বিরম্বনায় পড়ছেন, অন্যদিকে শিক্ষার্থী এবং সাধারণ গ্রামবাসী পথচারিরাও পড়েছে বিপাকে।
পর্যাটন নগরী রাঙামাটি পার্বত্য জেলার সদর উপজেলার পৌর এলাকার সবুজে ঘেরা ৯নং ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি গ্রামের মধ্যে উলুছড়া, আলুটিলা, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়াদাম ও কাটাছড়ি। এ গ্রাম সমুহের দক্ষিণ-পূর্বে দিক দিয়ে বয়ে গেছে কাপ্তাই হ্রদ বা খাল। হ্রদে সারাটা বছর জুড়ে বর্ষা ও শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকে। এ খালের উত্তরপাশে পাঁচশত পরিবারের বসবাস যা উলুছড়া, আলুটিলা, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়াদাম ও কাটাছড়ি। হ্রদের পানি শুকিয়ে গেলে খালের পশ্চিম দিকে রয়েছে বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। গ্রামের শতশত কৃষক এ মাঠেই বোরো ও আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করে থাকেন। গ্রাম ও মাঠের মধ্যদিয়ে প্রবাহিত খালের উপর কোন সেতু না থাকায় মাঠের ফসল ঘরে তুলতে তাদের দ্বিগুণ অর্থ ব্যয় হয়। এদিকে মাঠ ছাড়াও ওই খালের পাড়ে উলুছড়া রয়েছে গ্রামবাসীর শ্মাশান। যেখানে মৃতদেহ বহনে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
এদিকে পাঁচ গ্রাম সমুহে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় কাটাছড়ি ভাবনা কেন্দ্রে মাসব্যাপী ভাবনা অনুষ্ঠান (ধ্যান), উলুছড়া সাবা বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান, আলুটিলা উপগুপ্ত বন বিহারে কঠিন চীবর দান, বোধিপুর, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়াদাম এলাকায় কাটাছড়ি ভাবনা কেন্দ্র, স্বর্গপুর বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান ও কাটাছড়ি কলাবনিয়া বৌদ্ধ বিহারে কঠিন চীবর দান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয় । যে চীবর দানোৎসবকে কেন্দ্র করে হাজার হাজার লোক সেখানে সমবেত হন। দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত সেখানে বসে রকমারি জিনিষপত্রের দোকান। দানোৎসবকে কেন্দ্র করে খালের উত্তর পাশে হাজার হাজার লোকের পদচারণায় এলাকা মুখরিত হয়ে উঠে। কিন্তু খালের উপর কোন সেতু না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো দিয়েই পারাপার হতে হয় গ্রামবাসীদের।
উলুছড়া ছাবা বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ শুভদর্শী মহাথেরো বলেন, আমাদের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, উন্নত যোগাযোগ অবকাঠামো এবং যুগোপযোগী পরিবহন সেবা টেকসই আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। যুগের পর যুগ রাঙামাটি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ডের আওতাধীন উলুছড়া, আলুটিলা, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়াদাম ও কাটাছড়ি গ্রাম এদের রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, সুপেয় খাওয়ার পানি, সড়ক বাতি নাই। এসব এলাকার উন্নয়নে জনপ্রতিনিধিগণ উদাসিন। আর না হলে যুগের পর যুগ রাঙামাটি পৌর এলাকার ভিতর রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, সুপেয় খাওয়ার পানি, সড়ক বাতি নাই কেন ? পাহাড়ের প্রত্যন্ত এলাকার মত উলুছড়া, আলুটিলা, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়াদাম ও কাটাছড়ি গ্রামের অবস্থা। বর্তমান জনপ্রতিনিধিরা যত দ্রুত সম্ভব এসব গ্রামের জনসাধারনকে পৌর নাগরিক সুবিধার আওতায় নিয়ে আসবেন বলে তিনি আশাবাদি।
রাঙামাটি সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও একটি সেতুর অভাবে ৫ গ্রামবাসীর স্বপ্ন যেন থমকে আছে “বাতির নীছে আন্ধকারে”। অতীতে অনেক জনপ্রতিনিধি এ খালের উপর সেতু নির্মানের কথা বললেও ভোটের পর তাদের আর দেখা মেলে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
উলুছড়া গ্রামের বাসিন্দা সমাজ সেবক জুঁই চাকমা বলেন, বর্তমানে এ গ্রামে বিভিন্ন উপজেলা থেকে নতুন বসতি গড়ার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে অনেক লোক খালের উত্তর পারে জনবসতি গড়ে তুলেছেন। তাদের জরুরী স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাতায়াত নির্মান সামগ্রী ও কৃষি পণ্য পরিবহনে এখানে একটি সেতু নির্মাণ অতীব জরুরী। এসকল গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সময় ক্ষেপন না করে আগামী অর্থ বছরের মধ্যে ঐ এলাকায় রাস্তাসহ একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানান জুঁই চাকমা।
গত ১০ অক্টোবর উলুছড়া ছাবা বৌদ্ধ বিহারের কঠিন দান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রাঙামাটি-২৯৯ আসনের সংসদ সদস্য দীপংকর তালুকদার বলেন, এ খালের উপর একটি সেতু নির্মাণ করা জরুরী। তবে ভেদ ভেদী আনসার অফিসের ভিতর দিয়ে আনা হলে কোন না কোন সময়ে তারা তাদের গেইট বন্ধ করে দিয়ে গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিতে পারে। আমরা এমন একটি স্থান বেঁচে নিতে চাই যেন রাস্তাও হবে এবং একটি সেতুও হবে। আনসার অফিসের বাউন্ডারীর বাইরে দিয়ে জনস্বার্থে যতদ্রুত সম্ভব একটি সেতু নির্মান বাস্তবায়ন করা হবে বলে এমপি দীপংকর তালুকদার তাঁর বক্তব্যে বলেন।
এবিষয়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জেলা কমান্ড্যান্ট (চলতি দায়িত্ব) সহকারী জেলা কমান্ড্যন্ট ফয়জুল বারী বলেন, গ্রামবাসী এখন যে রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন সেই রাস্তা সরকারি বাউন্ডারীর ভিতর, রাস্তার পাশে আমাদের অস্ত্রাগার রয়েছে। আমরা গ্রামবাসীর জন্য সেতু ও রাস্তা নির্মাণের পক্ষে তবে সেটা আমাদের বাউন্ডারীর যে কোন এক পাশ দিয়ে হয়ে ভাল হয়।
জেলা কমান্ড্যান্ট ফয়জুল বারী বলেন, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর সাথে এবিষয় আমার কথা হয়েছে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয়ের পশ্চিম পাশে আগে থেকে স্থানীয়দের চলাচলের রাস্তা ও সিড়ি আছে, এই সিড়ির মুখ রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মুল সড়কের সাথে যুক্ত, যদি মুল সড়কের সাথে যুক্ত করে জেলা কমান্ড্যান্ট কার্যালয়ের পিছনের কিছু অংশ (পশ্চিম-উত্তর) দিক দিয়ে বাউন্ডারীর পাশ দিয়ে উড়াল সড়ক বা পাহাড় ঘেঁষে রাস্তা নির্মাণ করে ১ হাজার গজ সামনে নিয়ে তার পর সেতু নির্মান করা হয় তাহলে আমাদের বা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কোন ধরনের আপত্তি নাই।
জনস্বার্থে উলুছড়া, আলুটিলা, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়াদাম ও কাটাছড়ি গ্রামবাসীর যাতায়াতের জন্য একটি সেতু ও পাকা রাস্তা অত্যন্ত জরুরী বলে জেলা কমান্ড্যন্ট ফয়জুল বারী একমত পোষণ করেন।
এবিষয়ে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, উলুছড়া, আলুটিলা, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়আদাম ও কাটাছড়ি গ্রামবাসীর জন্য সেতু ও রাস্তা অত্যন্ত প্রয়োজন। মেয়র বলেন, গ্রামবাসীর পূর্বের চলাচলের রাস্তাটি আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর জেলা কার্যালয় বাউন্ডারী ভিতরে হওয়াতে গ্রামবাসীর যাতায়াতের রাস্তা সীমিত হয়ে গেছে। রাঙামাটি পৌর এলাকার মধ্যে অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করা হয়েছে কিন্তু সেতুর জন্য জায়গা না পাওয়াতে ঐ এলাকার গ্রামবাসীর জন্য সেতু ও রাস্তা নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি।
রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী স্বীকার করেন যে, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর রাঙামাটি পার্বত্য জেলার জেলা কমান্ড্যান্ট (চলতি দায়িত্ব) সহকারী জেলা কমান্ড্যান্ট ফয়জুল বারীর সহিত সেতু নির্মাণের বিষয়ে কথা হয়েছে এবং তাদের কার্যালয়ের পিছনের অংশে বাউন্ডারী দিয়ে রাস্তা ও সেতু নির্মাণ করা হলে তাদের আপত্তি নাই।
মেয়র বলেন, আমি এবিষয়টি পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলী ও রাঙামাটি পৌরসভার প্রকৌশলীদের বলেছি। কম সময়ের মধ্যে উলুছড়া, আলুটিলা, মোষমারা, নির্বানপুর, নোয়াদাম ও কাটাছড়ি গ্রামবাসীর জন্য একটি সেতু ও রাস্তা নির্মাণ করা হবে বলে রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী জানান।