শুক্রবার ● ১ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » কালীগঞ্জে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন : পাচঁ প্রার্থীর ভোট বর্জন
কালীগঞ্জে ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন : পাচঁ প্রার্থীর ভোট বর্জন
মুহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :: ব্যাপক অনিয়ম, কারচুপি, জালিয়াতি, জালভোট ও জোরপূর্বক সিল মারার মধ্যদিয়ে ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ধাপে গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে ৷ নির্বাচনে অনিয়ম ও কারচুপির অভিযোগ এনে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থী হারুন অর রশিদ দেওয়ান বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন ৷
এছাড়া একই অভিযোগে উপজেলার বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বিএপির চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়নাল আবেদীন শেখ, মুক্তারপুর ইউনিয়নের বিএনপি’র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. রফিকুল ইসলাম, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের বিএপির চেয়ারম্যান প্রার্থী নেছার উদ্দিন নূহ এবং জামালপুর ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মো. খাইরুল আলম নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দিয়েছেন ৷
৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ নিজ এলাকায় সাংবাদিক সম্মেলন করে ওই নির্বাচন বর্জনের ঘোষনা দেন প্রার্থীরা ৷
নির্বাচনী কেন্দ্র সমূহে বিএনপি সমর্থক নেতাকর্মী ও এজেন্টদের তেমন একটি দেখা যায়নি৷ কেন্দ্র গুলো মূলত আওয়ামীলীগ সমর্থকদের দখলে ছিল৷ তাদের দাপটে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী ও এজেন্টরা ছিল অসহায় ৷
জামালপুর ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খাইরুল আলম অভিযোগ করেন, জামালপুর ইউনিয়নে সরকার দলীয় সমর্থকরা তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে জোপূর্বক নৌকা প্রতীকে সিল মেরেছে৷ বিভিন্ন কেন্দ্রে তার সমর্থকদের উপর হামলার অভিযোগ করেন৷ হামলায় তার বড় ভাই আব্দুল আউয়াল বাদল, তার স্ত্রীর বড় ভাই আতিকুর রহমান মোল্লা, চাচাত ভাই রফিকুল ইসলাম এবং তার সমর্থক কর্মী আশরাফুল, সাইফুল, মুনসুর, আলী হোসেন, সোহাগ, জয়নাল গুরুত্বর আহত হয়৷ এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশংকাজনক৷ তাদের কালীগঞ্জ সহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ও চিকিত্সা দেয়া হয়েছে ৷
নির্বাচন বর্জনকারী চেয়ারম্যান প্রার্থী হারুন-অর-রশিদ অভিযোগ করেন, ভোটারদের কাছ থেকে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে নৌকায় সিল মেরেছে৷ সকাল থেকেই নৌকার লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে সব কেন্দ্র থেকে তাদের নির্বচনী এজেন্টদের বের করে দিয়েছে৷ যার কারনে তারা ওই নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷
বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের বিএপির চেয়ারম্যান প্রার্থী জয়নাল আবেদীন শেখ জানান, নৌকার কর্মীরা জোড়পূর্বক কেন্দ্রে প্রবেশ করে ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে সিল মেরে বাঙ্ েফেলছে৷ তার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে৷ যার কারনে তিনি নির্বাচন বর্জন করছে ৷
প্রত্যক্ষদর্শীরা আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানায়, বৃহস্পতিবার বেলা ১২টার সময় জামালপুর ইউনিয়নের সাহিদা মোল্লা বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান খায়রুল আলম কেন্দ্রে পরিদর্শনে গেলে তার কর্মীদের ধাওয়া করে মারধর ও হুমকি প্রদান করা হয়৷ এসময় প্রার্থীর বড় ভাইসহ ৮ জন আহত হয়৷ আহতদের স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিত্সা দেয়া হয়৷
এর আগে একই কেন্দ্রে টাকার বিনিময়ে পুলিশ সদস্যরা ভোটারদের ভোট প্রদানের অভিযোগে রফিক নামে এক পুলিশ সদস্যকে কেন্দ্র থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার পরিদর্শক-২ মমিনুল ইসলাম ৷
তিনি আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, জাঙ্গালিয়া ইউনিয়নের দুবরিয়া কেন্দ্রে ভোটারদের বাধা প্রদান করা হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য লাঠি চার্চ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ৷
এ ইউনিয়নের বিএনপি সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী নেছার উদ্দিন নুহু অভিযোগ করে আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে বলেন, দড়ি জাঙ্গালিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র, জাঙ্গালিয়া মাদরাসা কেন্দ্রসহ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকার সমর্থকরা প্রকাশ্যে ভোট প্রদানে বাধ্য করে ভোটারদের৷ এছাড়া বাহাদুরসাদী ইউনিয়নের ফকির শামসুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে সকালের দিকে ব্যালট পেপার নিয়ে সমস্যার কথা জানিয়েছেন ভোটাররা ৷ নাগরী ইউনিয়নে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদানের অভিযোগে করেছেন আওয়ামী লীগের ২ বিদ্রোহী প্রার্থী ৷
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শাহ আলম আমাদের গাজীপুর জেলা প্রতিনিধিকে জানান, প্রার্থীদের ভোট বর্জনের বিষয়টি শুনেছি, কিন্তু কেউ লিখিত ভাবে কিছু জানাননি৷ তবে দুই-একটি এলাকায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট গ্রহন সমাপ্ত হয়েছে, কোথাও কোন গোলযোগের ঘটনা ঘটেনি ৷