শুক্রবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » উপ সম্পাদকীয় » পার্বত্য চুক্তির রজত জয়ন্তী : রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা ৯০% ভোগ করছেন তিন জনগোষ্ঠীর লোকজন বাকিরা ১০% পার্বত্য চুক্তিতে বিশাল ধরনের বৈষম্যে
পার্বত্য চুক্তির রজত জয়ন্তী : রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা ৯০% ভোগ করছেন তিন জনগোষ্ঠীর লোকজন বাকিরা ১০% পার্বত্য চুক্তিতে বিশাল ধরনের বৈষম্যে
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তরফ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটি এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার অধিবাসীদের পক্ষ হইতে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি চারি খন্ড (ক,খ,গ,ঘ) সম্মিলিত ভাবে চুক্তি করা হয়।
১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সম্পাদিত এই চুক্তিতে সই করেন। ২রা ডিসেম্বর ২০২২ সালে পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হল যাকে বলা যায় পার্বত্য চুক্তির রজত জয়ন্তী। এই ২৫ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কি-কি বৈষম্যের স্বীকার তা নিয়ে একটি পর্যালোচনা করা অতিব প্রয়োজন। পার্বত্য চুক্তির আলোকে গঠন করা হয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, শরণার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্স, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন, পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯ (রাঙামাটি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, বান্দরবান পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা স্থানীয় সরকার পরিষদ আইন, ১৯৮৯) এবং এর বিভিন্ন ধারা সমূহের পরিবর্তন, সংশোধন, সংযোজন ও অবলোপন করার মাধ্যমে গঠন করা হয় রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ। এর আগে থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা প্রশাসন, তিন জেলার গুইমারাসহ ২৬ উপজেলার উপজেলা প্রশাসন, তিন পার্বত্য জেলার পৌরসভা ও তিন পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদ বিদ্যমান। পার্বত্য চুক্তির মধ্য দিয়ে শক্তিশালী করা হয় চাকমা সার্কেল, বোমাং সার্কেল ও মং সার্কেল চীফদের কার্যক্ষমতা। এর বাইরে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় এর অধিদপ্তর/পরিদপ্তর আওতাধীন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কার্যালয় রয়েছে। এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে রয়েছে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা ইউএনডিপি-সিএইচটিডিএফ, এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক এডিবির পার্বত্য চট্টগ্রাম পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প ও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সংস্থা। এর বাইরে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক সংসদীয় কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মূল্যায়ন কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহায়তাকারী উপদেষ্টা কমিটি, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ কমিটি ইত্যাদি। পার্বত্য চুক্তির প্রারম্ভে বেশ কিছু বিষয় গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, তন্মধ্যে সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল নাগরিকের রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা ও অর্থনৈতিক অধিকার সমূন্নত এবং আর্থ সামাজিক উন্নয়ন প্রক্রিয়া তরান্বিত করা এবং বাংলাদেশের সকল নাগরিকের স্ব-স্ব অধিকার সংরক্ষন এবং উন্নয়নের কথা থাকলেও কিন্তু কৌশলগত ভাবে পার্বত্য চুক্তির আগে এবং শতবছর ধরে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বড়ুয়া, সাঁওতাল, অহমিয়া ও গুর্খা জনগোষ্ঠীর কথাও চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। পার্বত্য চুক্তির পর থেকে প্রতিটি স্থরে এবং রাজনৈতিক ভাবে পার্বত্য অঞ্চল বসবাসরত এ সকল জনগোষ্ঠীর মানুষ প্রতি পদে পদে বৈষম্যের শিকার এবং বাঙ্গালী (মুসলামান), বড়ুয়া, তনচঙ্গা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীকে পার্বত্য অঞ্চল থেকে উৎখাত করার সুদুর প্রসারী ষড়যন্ত্র চলমান। অন্য দিকে রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকল সংখ্যালঘুদের ভূমি কৌশলে কেড়ে নিয়ে এ অঞ্চল থেকে বিতারিত করার অঘোষিত প্রথা চালু রয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রনালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড এবং রাঙামাটি,খাগড়াছড়ি ও বান্দারবান পার্বত্য জেলা পরিষদে পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বাঙ্গালী (মুসলমান), বড়ুয়া, তনচঙ্গা, সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর জন্য কোটা সংরক্ষণ হাতে গোনা, পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছরেও চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠির তুলনায় ইসলাম ধর্মের বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তনচঙ্গা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন ২৫ বছরে অনেক বেশী পিছিয়ে পড়েছে। কেউ মানুক বা না মানুক এটাই সত্য। পার্বত্য অঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের যে রাজনৈতিক অধিকার ছিল চুক্তির পর ২৫ বছরেও আদৌ তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌছতে পারেনি তার মুল কারণ হচ্ছে : উগ্র সম্প্রদায়িকতা, বৈষম্যে ও ক্ষমতার লোভ।
এছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে রাষ্ট্রিয় সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা ৯০% ভোগ করছেন তিনটি জনগোষ্ঠীর লোকজন বাকি ১০% বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তনচঙ্গা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর লোকজন বিশাল ধরনের বৈষম্যে এ অঞ্চলে চলমান। যার কারণে সহজ-সরল জনগোষ্ঠীর লোকজন ছোট-ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিতে বাধ্য হচ্ছে।
১৯৯৭ সালে ২রা ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক জাতীয় কমিটির আহবায়ক আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ্ ও পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের পক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল) সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা সম্পাদিত এই চুক্তিতে সই করে ছিলেন তখন পাহাড়ে আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল ছিলো মাত্র পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল)। অর্থাৎ মাত্র একটি আঞ্চলিক দল।
১৯৯৭ সালে পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য চট্টগ্রামের রাজনীতি গত ২৫ বছরে অনেকটাই বদলে গেছে।
পার্বত্য চুক্তির এক বছরের মধ্যেই চুক্তির পক্ষের পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস-মুল) সঙ্গে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল), রক্তক্ষয়ী সংঘাত শুরু হয়। ২০০৭ সালে পিসিজেএসএস-মুল ভেঙে গঠিত হয় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-সংস্কারপন্থি বা এমএন লারমা), নামের নতুন দল। ২০১৭ সালে খাগড়াছড়িতে ইউপিডিএফের মধ্যে ভাঙন সৃষ্টি হয়। ওই বছরের ১৫ নভেম্বর তপন জ্যোতি চাকমার নেতৃত্বে ইউপিডিএফ গণতান্ত্রিক নামের নতুন দলের আত্মপ্রাশ ঘটে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে এই চারটি উপ দল বা গ্রুপের বাইরেও আরও কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি)। এই দলের সদস্যদের অবস্থান বান্দরবানের গহিনে। ২০১৮ সালে এএলপি ভেঙে গঠিত হয় মগ পার্টি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ইত্যাদি। তাদের অবস্থানও বান্দরবানে। তবে এই তিন দলের অবস্থান শুধু বান্দরবানে, রাঙামাটি কিংবা খাগড়াছড়িতে এদের কোনো তৎপরতা নেই।
বাংলাদেশ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট বা কেএনএফকে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হিসেবে বর্ণনা করলেও সংগঠনটির দাবি তারা বাংলাদেশের কোন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন নয়। একইসঙ্গে তারা জানিয়েছেন, তাদের ভাষায়, “সুবিধা বঞ্চিত কুকি-চিন জনগোষ্ঠীর জন্যে স্বশাসিত বা পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ক্ষমতাসহ একটি ছোট রাজ্য” চাইলেও তারা কোন স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়নি।
তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানা গেছে, কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট এর অস্ত্রধারী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মির ভারতের মিজুরাম প্রদেশে ৩ হাজার অস্ত্রদারী সামরিক প্রশিক্ষণ নিচ্ছে।
এদিকে চলমান সংলাপ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ইউপিডিএফ মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে সরকারের নিকট দলের ৮৭টি দাবিনামা পেশ করেছে।
গত ৯ জুন ২০২২ খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলাধীন ২ নং চেঙ্গী ইউনিয়নের বড়কলক এলাকায় এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পানছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান শান্তি জীবন চাকমাসহ স্থানীয় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিগণের উপস্থিতিতে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় সদস্য উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা মেজর (অবঃ) এমদাদুল ইসলামের কাছে এ দাবিনামা হস্তান্তর করেন।
উজ্জ্বল স্মৃতি চাকমা বলেছেন, গত শতকের ‘৭০, ৮০ দশকের পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে আজকের পার্বত্য চট্টগ্রামের বিস্তর ফারাক। কিন্তু তারপরও যেন কোন কোন মহলের দৃষ্টিভঙ্গি সেই আগের মতোই রয়ে গেছে। তারা ৭০, ৮০ দশকের চোখ দিয়ে বর্তমান পার্বত্য চট্টগ্রামকে দেখতে চাইছেন এবং সেইভাবে মূল্যায়ন করছেন। কিন্তু এটা স্পষ্টতই ভুল। আমাদেরকে অবশ্যই এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। কারণ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য এটা বলা যায় প্রথম ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শর্ত।’
মধ্যস্থতাকারীদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর এমদাদুল ইসলাম তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন, তিনি ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের নিকট চুক্তি আকারে পেশকৃত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মূল) এর দাবিনামা এবং তার যৌক্তিকতা’ সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন বলে জানান।
২৬ নভেম্বর- ২০২২ তারিখে পার্বত্য চুক্তি সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ।
এতে পরিস্কার মি. জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা এককভাবে পাহাড়িদের নেতা থাকলেও বর্তমান ওনার একক নেতৃত্ব বা কর্তৃত্ব সীমিত হয়ে গেছে। সাবেক গেরিলা নেতা মি. জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা এখন আর পাহাড়িদের অবিসংবাদিত নেতা নয়।
পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত স্ব-স্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে সামাজিক উন্নয়ন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা ছিল কিন্তু ২৫ বছর পর সামাজিক অধিকারের বিষয়ে বলতে গেলে বরঞ্চ সংঘাত, গুম, খুন হানাহানি আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় এ ধরনের সংঘাতে অন্তত ৪২ জনের প্রাণ গেছে। আঞ্চলিক দলগুলোর স্বার্থের দ্বন্ধ, চাঁদা আদায়, ভাগ-বাঁটোয়ারাকেই সংঘাত-হানাহানির মূল কারণ বলে মনে করেন পার্বত্য এলাকার লোকজন।
সরকার পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে একজন নাগরিকের জন্মগত মৌলিক অধিকার ৫টির মধ্যে অন্যতম শিক্ষার অধিকার স্থানীয়দের হাতে ন্যস্ত করে পার্বত্যঞ্চলের বসবাসরত অধিবাসীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার যে সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে ২৫ বছর পর শিক্ষার মেরুদন্ডই ভেঙ্গে পড়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম এলাকায় গিয়ে দেখা যায় প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিতে শিক্ষকদের উপস্থিতি নেই। একটি বিদ্যালয়ে ৫ জন শিক্ষক মিলে একজন বর্গা শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন, আর জেলা পরিষদ সমূহ ঘুষ বাণিজ্যের মাধ্যমে যাদের শিক্ষক পদে নিয়োগ দিয়ে থাকে তারা কখনো নিজেদের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকেন না। তা ছাড়া বেশী ভাগ শিক্ষক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের আত্ময়ী-স্বজন। পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষা খাতে যে বরাদ্ধ রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে ব্যয় করা হয় তা কেবল অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা সামগ্রী ক্রয়, শিক্ষকদের বেতন-ভাতা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ইত্যাদি বিষয়ে সীমাবদ্ধ। কিন্তু এসবের সুবিধাভোগী শিক্ষার্থীরা কোন ধরনের সুযোগ সুবিধা পায়না। বিগত ২৫ বছরে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া পার্বত্য অঞ্চলের এসএসসি, এইচএসসি শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পায়নি বললেই চলে। পার্বত্য অঞ্চলে শিক্ষার মান এতবেশী নীচে নেমে গেছে যে, অনেক স্কুলে পাশের হার ০%। ক্ষমতাসীন দলের পরিবারের সদস্য শিক্ষকরা প্রত্যন্ত অঞ্চল ছেড়ে জেলা শহরে এসে রাজনীতি আর ব্যবসা বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত।
পার্বত্য চুক্তির মারপ্যাচে স্থানীয় জনসাধারন অসহায়। শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবিক অবস্থানে ফিরে না গেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা গভীর সংকটে নিমজ্জিত হবে তাতে কোন সন্দেহ নাই। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারীদের অর্থনৈতিক অধিকার একটি গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি হয়ে আছে। পার্বত্য অঞ্চলে গড়ে উঠেনি কোন মিল, কারখান ও পর্যটন শিল্পের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। কেবলমাত্র কাঠ,বাঁশ, মাছ, পাথর ও মৌসুমৗ ফল ক্রয় বিক্রয় ছাড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনে চুক্তি স্বাক্ষরকারী আওয়ামীলীগ-পিসিজেএসএস-মুল উভয়ে উদাসীন একে অপরের ওপর দায় চাপাতে ব্যস্ত। চুক্তির পর বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা-এনজিও সমূহ পার্বত্য অঞ্চলে তাদের সুদের ব্যবসা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পরিচালনার সুযোগ পেয়েছে। প্রতিনিয়ত গরীব থেকে আরো গরীব হয়ে পরেছে এই অঞ্চলের খেটে খাওয়া নাগরিকরা। তার উপর রয়েছে চাঁদাবাজদের উপদ্রব। পার্বত্য চুক্তিকালিন পাহাড়ে ছিলো ১টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। চুক্তির পর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আরো ৬টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। পাহাড়ে এখন ৭টি আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল। কোন সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন কাজ করলে ঐ কাজের ঠিকাদারকে দিতে হয় ৬% করে চাঁদা, অফিস খরচ ৩৭%, ৬% করে ৪টি আঞ্চলিক দলকে = ২৪%+ ৩৭% = ৬১%। ১শত টাকার মধ্যে ৪ আঞ্চলিক দলকে ২৪ টাকা আর অফিসকে ৩৭ টাকা মোট ৬১ টাকা। বাকি ৩৯ টাকায় কোটেশন প্রাপ্ত ঠিকাদারগণ কোন ধরনের গুণগত মানের উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে থাকেন আশা করি বুঝতে কারো অসুবিধা হবে না। কাপ্তাই হৃদে মৎস্য শিকারী, মৎস্য ব্যবসায়ী, বাঁশ ব্যবসায়ী, কাঠ ব্যবসায়ী, মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী, নির্মান সামগ্রী ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সাধারন ব্যবসায়ী, লঞ্চ, স্পিড বোট, কাঠ, হলুদ, আদা, মৌসুমী ফল, নির্মান সামগ্রী, আন্তঃ জেলা পশু ব্যবসায়ী, মৎস্য পরিবহনকারি ইঞ্জিন বোট, বাস, ট্রাক, সিএনজি অটো রিক্সা, মাইক্রো, চাঁদের গাড়ি (জিপ), মোটরসাইকেলসহ প্রতিটি যানবাহন, গবাদি পশু, শুকর,হাঁস, মুরগী, কৃষিপণ্য, জেলা শহর ব্যতিত প্রতিটি বাজারের দোকানদার, ব্যাংক, বিমা, সুদের কারবারি এনজিও, হোটেল-মোটেল এবং প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষকে সামাজিক অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা দিয়ে জীবন যাপন করতে হচ্ছে। বিগত ২০২১ সালের নভেম্বরে ১১ তারিখ এবারের ২য় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫ নং বড় হরিণা ইউপিতে ভোটারগণ তাদের পছন্দের চেয়ারম্যান-মেম্বার প্রার্থী ভোট দিতে পারেনি। আঞ্চলিক দলের পছন্দের প্রার্থীর জিতিয়ে নিতে প্রতিটি কেন্দ্রের বুথে অস্ত্রধারীদের উপস্থিতি ছিল শতভাগ। ১টি স্বাধীন দেশে এঘটনায় ভোক্তভোগীরা স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্দ। যদিও তাদের প্রানের ভয়ে কোন অভিযোগ প্রকাশ করতে অপারগ। আঞ্চলিক দল সমুহের যে কোন অনুষ্ঠানে পাহাড়ে বসবাসকারিদের গুনতে হয় বাড়তি চাঁদা। এসব আঞ্চলিক দল গুলো হচ্ছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস-মুল),পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সংস্কারপন্থী (পিসিজেএসএস-এমএন লারমা), ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ-মুল), ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট গণতান্ত্রিক (ইউপিডিএফ-সংস্কাপন্থী) আরাকান লিবারেশন পার্টি (এএলপি) মগ পার্টি ও কুকি চীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট ইত্যাদি। এছাড়া সরকারি বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হুমকিতে তাদের নির্দিষ্ট দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় বসে সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছেন না। এলজিইডি, পিডিবি, গণপুর্ত, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, সড়ক ও জনপথ বিভাগ চাঁদাবাজদের কারণে ঠিক সময়ে উন্নয়ন কাজ শুরু এবং শেষ করতে পারছেন না। খোদ সরকার দলীয় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালেয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি দীপংকর তালুকদার এমপি উভয়ের দাবি বিগত বছরের তুলনায় পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বেড়ে গেছে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর বিগত ২৫ বছরে পাহাড়ের জনগণ হারিয়েছে তাদের স্বজন, স্বতন্ত্রতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ভূমির অধিকার ও মৌলিক অধিকার। পাহাড়ের সাধারন জনগণ ক্রমেই জিম্মি হয়ে পড়েছে গোয়েন্দা সংস্থা, দল ও উপদল সমুহের কাছে। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলে রাষ্ট্রিয় সংস্থার টেলিফোন, বে-সরকারি মোবাইল নেটওর্য়াক, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল, উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা নিয়ন্ত্রন সেনাবাহিনীর কাছে, পাহাড়ের প্রায় প্রতিটি সড়কে চেক পোষ্ট বসিয়ে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রন করছেন। পাহাড়ে সেনাবাহিনী থাকবে না একথা বলছি না, অবশ্যই পাহাড়ে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন শেষ হয়ে যায়নি। প্রয়োজন ছাড়া তাদের খেয়াল খুশি মত ১শত গজের ভিতর একাদিক চেকপোষ্ট বসিয়ে গণপরিবহনে তল্লাশী চালিয়ে সাধারন মানুষ এবং পর্যাটকদের চলাচলে বাঁধা সৃষ্টি করায় জনসাধারন এটাকে হয়রানি বলে ধরে নেন এছাড়া প্রতিদিন ভোর বেলায় তাদের পিইটি-পেরেট চলাকালিন ঘন্টার পর ঘন্টা মুল সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা কতটুকু যুক্তিক। গণমাধ্যমে পার্বত্য চুক্তির পক্ষে যাতে জনমত গড়ে না উঠে, পার্বত্য অঞ্চলের সাংবাদিকদের সমিতি, কমিটি, প্রেসক্লাব ও সংগঠন সমুহে বহিরাগত উগ্রসম্প্রদায় ব্যতিত স্থানীয় প্রগতিশীল কোন সাংবাদিক যেন সদস্য হতে না পারে তা ঠিক করে দেয় সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন। গোয়েন্দা সংস্থা তাদের ইচ্ছা মতে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে এবং পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে রাজধানীসহ বিভিন্ন নামে অনলাইন নিউজ পোর্টাল চালু করে স্বাধীনতা বিরোধী জামাত-শিবিরের নেতা-কর্মীদের দিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ ব্যয় করে পাহাড়ে বসবাসরত জনগণের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ বা টকশোর নামে অপপ্রচার অব্যাহত রেখেছে। কেউকেউ গোয়েন্দা সংস্থার সমর্থন নিয়ে এনজিও এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে পার্বত্য জনগণের বিরুদ্ধে অপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা উচিৎ কারণ তারা সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী। গোয়েন্দা সংস্থার ইচ্ছা বা মতের বাইরে পার্বত্য অঞ্চলের জনস্বার্থে কোন সংবাদ পরিবেশন বা প্রকশ করলে সেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে তাদের চক্রের লোক দিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বানোয়াট হয়রানি মুলক মামলা দায়ের, পুলিশ এবং ক্ষমতাসীদের গুন্ডা-মাস্তান দিয়ে ঐ সাংবাদিকের বাড়ি-ঘরে গভীর রাতে হামলা-ভাংচুড় করে। পার্বত্য চুক্তি সমর্থনকারি পাহাড়ের গণমানুষের পক্ষে কথা বলায় এবং পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংসকারী সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় সৎ সেই সাংবাদিককে তার ২৫ মাসের শিশু-স্ত্রীসহ মিথ্যা মামলায় জেলখাটানো তার পর র্যাব ৭ এর মেজর ফাহিমকে দিয়ে সেই সাংবাদিক-কে অপহরণ করে সিলেট হবিগঞ্জের চুনারুঘাট থানার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে চোখ বাঁধাবস্থায় ফেলে দিয়ে আসার নজির দেশের মানবিধাকারের জন্য মোটেও শুভ লক্ষণ নয়। পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষারকালিন যারা পাহাড়ে কালো পতাকা উড়িয়ে ছিলো পার্বত্য চুক্তির বিরোধীতা করেছিল সেই সব উগ্রবাদি ইসলামপন্থিদের নিয়ে সরকারের ১টি গোয়েন্দা সংস্থার দহরম মহরম কি প্রমান করে ? সেই সকল উগ্রমৌলবাদিদের দিয়ে পাহাড়ে সুবিধা বঞ্চিতদের অধিকার আদায়ে কথা বলে নিত্য-নতুন সংগঠনের জন্ম দেয়া হচ্ছে তাদের কাজ, যাতে পাহাড়ে বাঙ্গালীসহ বৈষম্যের শিকার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের কোন সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করতে না পারে। পার্বত্য অঞ্চলে কর্মরত গোয়েন্দা সংস্থা সমুহের ভুমিকা অত্যন্ত রহস্যজনক! এক সময় পার্বত্য অঞ্চলে কর্মরত সেনাবাহিনী ও ডিজিএফআই এর কর্মকর্তারা বলতেন, সরকার প্রয়োজন মনে করে পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন, তার ভাল-মন্দ এবং বাস্তবায়ন স্থায়ী রাজনৈতিক নেতা আর জনগণের করার ক্ষেত্রে তাদের সহযোগিতা প্রয়োজন হলে অবশ্যই তাঁরা চুক্তির পক্ষে হয়ে সহায়তা করবেন। ২০০৭ সালের পর পাহাড়ে বসবাসরত স্থানীয়দের সাথে সেনাবাহিনীর সেই সর্ম্পক এখন আর নেই। পার্বত্য চুক্তির পর পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর নাগরিকরা আশায় বুক বেধেঁছিলো যে, পার্বত্য চুক্তি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত মানুষদের মুক্তির সনদ হিসেবে কাজ করবে কিন্তু সে আশায় গুড়ে বালি। ২৫ বছরে পার্বত্য অঞ্চলে সংবাদমাধ্যমের সংখ্যা বেড়েছে কিন্তু সংবাদিকতার মূল কাজ যে পিসিজেএসএস, সেনাবাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন ও ক্ষমতাবানদের প্রশ্ন করা, সেই ক্ষমতা মোটেই বাড়েনি। পার্বত্য অঞ্চলে গোয়েন্দা সংস্থার কারণে খুবই কমসংখ্যাক গণমাধ্যম সঠিক তথ্য তুলে ধরতে পারছে। পার্বত্য অঞ্চলে সেনাবাহিনীর সদস্যদের ভাল কাজের নজির আছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সম্মানিত আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা)র নিকট বিনয়ের সাথে গণমাধ্যমের মাধ্যমে পার্বত্যবাসীর পক্ষ হয়ে একটি প্রশ্ন রাখতে চাই “পার্বত্য চুক্তির সুবিধাভোগী কারা”? পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহ অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর করার লক্ষ্যে ২৩ জন সদস্য নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ। অন্তর্বতীকালীন গঠিত এ আঞ্চলিক পরিষদ চুক্তির পরবর্তী বছর দুয়েক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তদারকি ও সমন্বয় সাধনের কাজ করলেও বিগত বছরগুলিতে এ প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম জনমনে প্রশ্নবিদ্ধ। সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ এবং তার সদস্যরা পার্বত্য চুক্তি পরবর্তী পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত অধিবাসীদের আস্থা অর্জনে সক্ষম হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ তিন পার্বত্য জেলার সকল সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে না। দেশের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে তিনটি (চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা) সম্প্রদায় কেবল দায়িত্ব পালন করবে পার্বত্য অধিবাসীরা মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেন না। যারা রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের স্বীকার তাদের দ্বারায় স্বগোত্রের বা সম্প্রদায়ের জনসাধারন বৈষম্যে এবং নির্যাতনের শিকার। চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে উপস্থাপন করা হয়েছে, এ পরিষদ পৌরসভাসহ স্থানীয় পরিষদ সমূহ তত্বাবধান ও সমন্বয় করবে, তিন পার্বত্য জেলায় সাধারন প্রশাসন, আইন শৃংখলা উন্নয়নের ব্যাপারে আঞ্চলিক পরিষদ সমন্বয় সাধন ও তত্বাবধান করতে পারবে। আঞ্চলিক পরিষদ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান কার্যক্রম পরিচালনাসহ এনজিওদের কার্যবলী সমন্বয় সাধন করতে পারবে। উপজাতীয় আইন ও সামাজিক বিচার আঞ্চলিক পরিষদের আওতাভুক্ত থাকবে। আঞ্চলিক পরিষদ ভারী শিল্পের লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে। পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, পরিষদের সাধারন ও সার্বিক তত্বাবধানে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীনে পরিচালিত সকল উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয় সাধন করবে ইত্যাদি। এতকিছুর পরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের সুবিধাভোগী কারা ২৫ বছরেও বিষয়টি পরিস্কার নয় পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের কাছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে “পার্বত্য চট্টগ্রাম চাকমা পরিষদ” নামে নামকরণ করিলে ভুল হবেনা কারণ এ পরিষদের ৯৮% অফিসার, পিয়ন-আদালী সবাই চাকমা জনগোষ্ঠীর সদস্য। শরণার্থী বিষয়ক টাস্কর্ফোসের অফিস, জনবল ও অবকাঠামো চুক্তির ২৫ বছর পরেও দৃশ্যমান নয়। এই টাস্কর্ফোসের অধীনে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যতে অবস্থানরত শরণার্থীদের দেশে ফিরিয়ে আনার পর শরণার্থীদের সর্বশেষ আবস্থান খুজে পাওয়া মুশকিল। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন এর কার্যক্রম এখনো পর্যন্ত সভা আর সাংবাদিকদের স্বাক্ষাতকার প্রদান ছাড়া মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশনের প্রবিধান আজও আলোর মূখ দেখেনি। অথচ এই কমিশনের চেয়ারম্যান একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির প্রতি তিন বছর অন্তর- অন্তর মেয়াদ বৃদ্ধি করে ব্যয়ভার রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে করা হচ্ছে। তার সাথে সদস্য হিসাবে রয়েছেন তিন সার্কেল চীফ, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার (রাষ্ট্রিয় প্রতিনিধি) ও রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানগণ। পার্বত্য চুক্তির মুল সমস্যা ভুমি সমস্যা। এই পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন কি কাজ করেন পার্বত্য অধিবাসীদের কাছে আদৌ পরিস্কার নয়। এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশনে বাঙ্গালী, বড়ুয়া, তনচঙ্গা,সাঁওতাল, অহমিয়া, গুর্খা, কুকি, পাংখোয়া, লুসাই (মিজু), চাক, খুমি, খিয়াং ও ম্রো জনগোষ্ঠীর কোন প্রতিনিধি ভুমি কমিশনে অন্তর্ভক্ত নাই। চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি থাকতে পারিলে অন্য সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি কেন থাকতে পরিবেনা ? তাহলে কি পার্বত্য চুক্তির মাধ্যমে কেবলমাত্র তিনটি জনগোষ্ঠীর কাছে পার্বত্য চট্টগ্রাম সরকার কৌশলে লিজ দিয়েছেন! না-কি পাহাড়ের তিনটি জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ভুমি সমস্যা আছে, বাকিদের ভুমি সমস্যা নেই ? হতাশার কথা দুঃখজনক হলেও সত্য ২৫ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভুমি কমিশন আজ পর্যন্ত একটি অভিযোগের ও নিষ্পত্তি করতে পারেনি। অথচ এই কমিশনের উপরে নির্ভর করছে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারীদের বাপ-দাদার সম্পদ ফিরে পাওয়ার রায়। এ ভুমি কমিশন আইন প্রবিধান আদৌ কি আলোর মূখ দেখবে পার্বত্যবাসীদের প্রশ্ন থাকাটা স্বাভাবিক। ভুমি কমিশনে যারা সদস্য বিশেষ করে সার্কেল চীফরা ভুমি সমস্যার সমাধানে সহায়তার পরিবর্তে এদের দ্বারাই প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে অন্যদিকে পাহাড়ের প্রতিটি উপজেলা ভুমি অফিসে কর্মরত চাকমা জনগোষ্ঠীর চেইনম্যান, কানুগো রেকর্ড কিপারদের কারণে ভুমি নিয়ে জটিলতা কাটছেনা। পার্বত্য অঞ্চলের প্রতিটি উপজেলা ভুমি অফিস থেকে চাকমা জনগোষ্ঠীর লোকজনদের সরিয়ে নিলে এঅঞ্চলের ভুমি সদস্যা অনেক আংশে কমে যাবে বলে অভিজ্ঞাজনদের ধারনা। এছাড়া সার্কেল চীফদের হেডম্যান ও কারবারীগণ শিক্ষিত নয়, তাই তারা ভুমি সংক্রান্ত কোন নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করেন না। বিগত ২৫ বছরে পাহাড়ে ভুমি বিরোধ নিষ্পত্তির পরিবর্তে ভুমি বিরোধ প্রতিনিয়ত ভাবে বেড়েই চলছে। রাঙামাটি টিভি উপকেন্দ্রের পিছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের ভবন নির্মানের জন্য সরকারীভাবে নির্ধারিত জায়গাতে শতশত অবৈধ দখলদার বাড়ীঘর নির্মান করে বসবাস করছে, ক্ষমতাসীন দলের একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে জায়গা কেনা বেচা অথচ সরকারী ভাবে খাস ভুমি ক্রয়-বিক্রয় নিষেধ, তার পরও অবাধে চলছে খাস ভুমি ক্রয়-বিক্রয়। পাহাড়ে বিগত বছরের তুলনায় গত ১৫ বছরে হাজার-হাজার অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে, রাঙামাটি শহরের ভেদ ভেদী এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রয়াত রুহিনী বড়ুয়া জায়গা দখল করে গড়ে তুলা হয়েছে রাঙামাটি পৌর কাঁচা বাজার ও আওয়ামীলীগের অফিস কাম রাসেল স্মৃতি সংসদ।
এছাড়া রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদ ও পাহাড় কেটে দুষন এবং দখলের প্রতিযোগিতা থামছে না। যত্রতত্র দখল ও দুষনের কারণে পর্যটন শহর পরিবেশ ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। দখলের প্রতিযোগিতায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কের দুইপাশ্বে টার্মিনালসহ সরকারি-বেসরকারী কোথাও বাদ পড়েনি। ১৯৬০ সালে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কাপ্তাই বাধ দেয়া হলে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার দৈর্ঘ্য কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্টি হয় । বর্জ্য ফেলে হ্রদের নাব্যতা কমে গিয়ে পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে, কয়েক দফা উদ্যোগ নিলেও নেই কোন ড্রেজিং করার পরিকল্পনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম কাপ্তাই লেকে জরিপ করে অবৈধ দখলদারদের তালিকা ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কাপ্তাই লেকে মাটি ভরাট,দখল, ড্যাম,স্থাপনা অবকাঠামো যেন আর নির্মাণ না হয় সে বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো কোন প্রতিষ্টান বা সংস্থা কার্যক্রম শুরু করার প্রক্রিয়া চোখে পড়েনি।
উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, রাঙামাটি সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, রাঙামাটির সদর পৌরসভার মেয়র, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) ব্যবস্থাপক, রাঙামাটি সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি), রাঙামাটির কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৭ অক্টোবর-২০২২ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন। কাপ্তাই লেকের মধ্যে নির্মিত সকল অবকাঠামো স্থাপনা, ড্যাম ধ্বংস, উচ্ছেদে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং কাপ্তাই লেকের সকল ধরনের দখল, ভরাট,ড্যাম, স্থায়ী ও অস্থায়ী স্থাপনা অপসারণে সকল বিবাদীদের ব্যর্থতা নিষিক্রয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
উল্লেখ্য যে, জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেয়া হলে এই বিশাল কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদের সৃষ্টি হয়। ১৯৫৬ সালে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয় বাঁধের নির্মাণ কাজ। জল বিদ্যুৎ বাঁধের কারণে ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি ডুবে গিয়ে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার কৃত্রিম হ্রদ সৃষ্ট্রি হয় । ঐসব এলাকার মোট কৃষি জমির ৪০ শতাংশ। রাঙামাটির বরকল উপজেলার বড় হরিণা এলাকা হচ্ছে বাংলাদেশ প্রান্তে হ্রদের সীমানা লুসাই পাহাড় ঠেগামুখ। এরপর ভারতের মিজোরামেও এর বিস্মৃতি আছে। মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলীর উৎপত্তি।
রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি এলাকা জুড়ে হ্রদটির অবস্থান। বর্তমানে হ্রদের আয়তন ৬৮ হাজার ৮শ হেক্টর। রাঙামাটি পৌর এলাকায় হ্রদের জায়গা সবচেয়ে বেশি বেদখল হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান গুলোর খাস জমি দখল করে স্থাপনা নিমার্ণ। চাকমা সার্কেল চীফ এক সনের অস্থায়ী লিজ দেয়া হয় চাষাবাদের জন্য কিন্তু অনেকেই চাষাবাদ না করে জলে ভাসা জমির ওপর স্থাপনা নিমার্ণ করতে দেখা গেছে। পার্বত্য চুক্তিতে চাকমা সার্কেল চীফকে এধরনের ক্ষমতা দিয়ে রাষ্ট্রের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে। একারণে এসব অবৈধ স্থাপনা বন্ধ করার স্থানীয় প্রশাসনের উদ্দ্যোগ নাই বলে ধারনা করা হচ্ছে।
রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ সমূহ আলাদা ভাবে প্রনয়ন করা স্থানীয় জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে গঠনের আইন থাকলেও সরকার ভোটারদের মূল্যায়ন অগ্রাহ্য করে অন্তর্বতীকালীন পরিষদ গঠন করে রাজনৈতিক নেতাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের গঠন :
(ক) চেয়ারম্যান
(খ) বিশ জন উপজাতীয় সদস্য
(গ) দশ জন অ-উপজাতীয় সদস্য
(ঘ) তিনজন মহিলা সদস্য, যাহাদের দুইজন উপজাতীয় এবং একজন অ-উপজাতীয় মহিলা হইবে।
ব্যাখ্যা- দফা (ঘ)তে উল্লেখিত উপজাতীয় মহিলা সদস্যগণের ক্ষেত্রে জেলার বিভিন্ন উপজাতির জন্য কোটা থাকিবেনা।
(২) চেয়ারম্যান ও অন্যান্য সদস্যগণ জনসাধারণ কর্তৃক প্রত্যক্ষ ভোটে এই আইন ও বিধি অনুযায়ী নির্বাচিত হইবেন।
(৩) বিশ জন উপজাতীয় সদস্য উপজাতীয় সদস্যগণের মধ্যে –
(ক) দশ জন নির্বাচিত হইবেন চাকমা উপজাতি হইতে ;
(খ) চার জন নির্বাচিত হইবেন মারমা উপজাতি হইতে ;
(গ) দুই জন নির্বাচিত হইবেন তনচঙ্গা উপজাতি হইতে ;
(ঘ) এক জন নির্বাচিত হইবেন ত্রিপুরা উপজাতি হইতে ;
(ঙ) এক জন নির্বাচিত হইবেন লুসাই উপজাতি হইতে ;
(চ) এক জন নির্বাচিত হইবেন পাংখু উপজাতি হইতে ;
(ছ) এক জন নির্বাচিত হইবেন খেয়াং উপজাতি হইতে ;
(৪) চেয়ারম্যান উপজাতীয়গণের মধ্যে হইতে নির্বাচিত হইবেন।
(৪ এর ক) চেয়ারম্যান পদের জন্য যে কোন উপজাতীয় মহিলা, এবং উপ-ধারা (৩) এ উল্লিখিত কোন উপজাতির জন্য নির্ধারিত সদস্য পদের জন্য যে কোন উপজাতীয় মহিলা এবং উপ-ধারা (১) (গ) তে উল্লিখিত অ-উপজাতীয় সদস্য পদের জন্য যে কোন অ-উপজাতীয় মহিলা, বিধির বিধান সাপেক্ষে, নির্বাচন প্রার্থী হইতে পারিবেন।
(৫) কোন ব্যাক্তি উপজাতীয় কি না এবং হইলে তিনি কোন উপজাতির সদস্য তাহা জেলার (সার্কেল চীফ) স্থির করিবেন এবং এতদসম্পর্কে (সার্কেল চীফ) নিকট হইতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ব্যতীত কোন ব্যাক্তি উপজাতীয় হিসাবে চেয়ারম্যান বা কোন উপজাতীয় সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হইতে পারিবেন না।
(৬) কেন ব্যাক্তি অ-উপজাতীয় কি না এবং হলে তিনি কোন সম্প্রদায়ের সদস্য তাহা সংশ্লিষ্ট মৌজার হেডম্যান বা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা, ক্ষেত্রমত, পৌরসভার চেয়ারম্যান কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে প্রদত্ত সার্টিফিকেটের ভিত্তিতে সার্কেল চীফ স্থির করিবেন এবং এতদসম্পর্কে সার্কেল চীফের নিকট হইতে প্রাপ্ত সার্টিফিকেট ব্যতীত কোন ব্যাক্তি কোন অ-উজাতীয় সদস্য পদের জন্য প্রার্থী হইতে পারিবেন না।
৫। চেয়ারম্যানের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা । (১) কোন ব্যাক্তি উপজাতীয় সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইলে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন।
(২) কেন ব্যাক্তি উপজাতীয় সদস্য নির্বাচিত হইবার বা থাকিবার যোগ্য না হইলে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হইবার বা থাকিবার যোগ্য হইবেন।
৬। উপজতীয় ও অ-উপজাতীয় সদস্যগণের যোগ্যতা ও অযোগ্যতা । (১) কোন বাক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হইলে, রাঙামাটি/ খাগড়াছড়ি/বান্দরবান পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হইলে, কোন উপজাতির অন্তর্ভুক্ত হইলে এবং তাঁহার বয়স ২৫ বৎসর পূর্ণ হইলে,
উপ-ধারা (৩) এ বর্ণিত বিধান সাপেক্ষে, তিনি তাহার উপজাতির জন্য নির্ধারিত আসনে উপজাতীয় সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন।
(২) কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের নাগরিক হইলে, রাঙামাটি পার্বত্য জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হইলে, অ-উপজাতীয় হইলে, এবং তাঁহার বয়স পচিঁশ বৎসর পূর্ণ হইলে উপ-ধারা (৩) এ বর্ণিত বিধান সাপেক্ষে, তিনি অ-উপজাতীয়দের জন্য নির্ধারিত আসনে অ-উপজাতীয় সদস্য নির্বাচিত হইবার যোগ্য হইবেন।
(৩) কোন ব্যাক্তি উপজাতীয় বা অ-উপজাতীয় সদস্য নির্বাচিত হইবেন এবং থাকিবার যোগ্য হইবেন না, যদি-
(ক) তিনি বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পরিত্যাগ করেন বা হারান;
(খ) তাঁহাকে কোন আদালত অপ্রকৃতিস্থ বলিয়া ঘোষণা করেন;
(গ) তিনি দেওলিয়া ঘোষিত হইবার পর দায় হইতে অব্যাহতি লাভ না করিয়া থাকেন;
(ঘ) তিনি অন্যত্র স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাঙামাটি জেলা ত্যাগ করেন;
(ঙ) তিনি নৈতিক স্থলনজনিত কোন ফৌজদারী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হইয়া অন্যুন দুই বৎসরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন এবং তাঁহার মুক্তি লাভের পর পাঁচ বৎসর কাল অতিবাহিত না হইয়া থাকে;
(চ) তিনি প্রজাতন্ত্রের বা পরিষদের বা অন্য কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোন কর্মে লাভজনক সার্বক্ষনিক পদে অধিষ্ঠিত থাকেন;
(ছ) তিনি জাতীয় সংষদের সদস্য বা কোন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বা সদস্য হন বা থাকেন;
(জ) তিনি পরিষদের কোন কাজ সম্পাদনের বা মালামাল সরবরাহের জন্য ঠিকাদার হন বা ইহার জন্য নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হন বা পরিষদের কোন বিষয়ে তাঁহার কোন প্রকার আর্থিক স্বার্থ থাকে বা তিনি সরকার কর্তৃক নিযুক্ত অত্যাবশ্যক কোন দ্রব্যের দোকানদার হন বা অথবা
(ঝ) তাঁহার নিকট সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রুপালী ব্যাংক, শিল্প ব্যাংক, শিল্প ঋণ সংস্থা বা কৃষি ব্যাংক হইতে গৃহিত কোন ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ অবস্থায় অনাদায়ী থাকে।
মহামান্য হাই কোর্ট বলেছেন, পার্বত্য চুক্তি আইন হচ্ছে : দেশের সংবিধান পরিপন্থি এবং বৈষম্যেমূলক আইন।
এছাড়াও প্রত্যকটি পার্বত্য জেলা পরিষদ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের পরিবর্তে চালানো হচ্ছে অ-নির্বাচিতদের দ্বারা এদিকে ৩১ জন সদস্যদের পরিবর্তে কখনো ৫ সদস্য, কখনো ১০ সদস্য আবার কখনো ১৫ জন সদস্যদের দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হচ্ছে, আইন বা নিয়ম নীতি কোন বলাই নেই।
রাজনৈতিক ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে কবেলমাত্র পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি এর আত্মীয় হওয়ার সুবাদে বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ক্যশৈহ্লা বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদে ২০ (বিশ) বছর ধরে চেয়ারম্যান। তাহলে কি বান্দরবান জেলায় বা বান্দরবান আওয়ামীলীগে জনাব ক্যশৈহ্লা ব্যতীত বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ার মত যোগ্য ব্যাক্তি নাই ?
পার্বত্য চুক্তির আগে ও পরে রেওয়াজ ছিলো রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হবে একজন চাকমা উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর সদস্য, খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হবে একজন উপজাতীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর সদস্য কিন্তু পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি অযাচায়ীত ভাবে তার ক্ষমতার অপ-ব্যবহার করে রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনোনীত করেন তারই মারমা সম্প্রদায়ের লোকজনকে যাহা পার্বত্য চুক্তির পরিপন্থি এবং বৈষম্যেমূলক ।
স্থানীয় সরকার পরিষদ সর্বপ্রথম চেয়ারম্যান গৌতম দেওয়ান, চেয়ারম্যান পারিজাত কুসুম চাকমা, চেয়ারম্যান রবিন্দ্র লাল চাকমা, (পার্বত্য চুক্তির আলকে) রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান চিংকিউ রোয়াজা, চেয়ারম্যান মানিক লাল দেওয়ান, চেয়ারম্যান জগতজ্যোতি চাকমা, চেয়ারম্যান নিখিল কুমার চাকমা, চেয়ারম্যান বৃষকেতু ও রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংশু প্রু চৌধুরী ।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরী তো জনাব ক্যশৈহ্লা চেয়ে ভয়ংকর তিনি কাউখালী উপজেলার আওয়ামীলীগ এবং মারমা জনগোষ্ঠীর লোকজন ছাড়া কিছুই বুঝেন না। একজন অ-নির্বাচিত নেতা হিসাবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর নাম রাঙামাটি বাসী অতি সহজে ভুলতে পারবেন না।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুই প্রু চৌধুরীর ন্যায় বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদ সমুহের সদস্যরা আইন-কানুনের তোয়াক্কা না করে যেমন খুশি তেমন করেই চালাচ্ছেন এসব জেলা পরিষদের কার্যক্রম। হাজারো প্রকল্প বাস্তবায়নে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত জেলা পরিষদগুলো পার্বত্য অধিবাসীদের কাছে নেই কোন জবাবদিহিতা। জেলা পরিষদগুলো যেন এনজিও সংস্থা। লেকচার পিকচার ভাউচার যেন তাদের দৈনন্দিন কাজ। সাধারন জনগণের কাছে বিতরণ করা খাদ্য শষ্য ও নগদ অর্থ বিতরণের মাষ্টার রোল এ সুবিধা ভোগীদের স্বাক্ষর অথবা মোবাইল নাম্বার পর্যন্ত ফাইলে খুঁজে পাওয়া যায় না। এসমস্ত জেলা পরিষদ সমূহ থেকে তথ্য অধিকার আইনে তথ্য চাইলেও পাওয়া যায়না। দুর্নীতি-অনিয়ম কাকে বলে ? তা কত প্রকার এবং কি-কি শিখতে হলে বা দেখতে পার্বত্য জেলা পরিষদ সমুহ অন্যতম। কিন্তু অদ্যবধি এদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। দুদক নিরভ দর্শক এর ভুমিকায়। তিন জেলার ২৬টি উপজেলার উপজেলা প্রশাসন কেবলমাত্র নিয়ম রক্ষার্থে সাধারন জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। এসব উপজেলা পরিষদ কি কাজ করে জনসাধারন জানে না। তিন পার্বত্য জেলার পৌরসভা ও তিন পার্বত্য জেলার ইউনিয়ন পরিষদগুলো এখন হয়ে উঠেছে ঠিকাদারদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। এদের সাধারন জনগণের সাথে যোগাযোগ নেই বললে চলে। দলীয় পরিচয় ছাড়া সাধারন জনগনের কদর এখন তাদের কাছে নেই। পার্বত্য চুক্তির আলোকে যে সমস্ত বিভাগ পার্বত্য জেলা পরষদ সমূহে হস্তাান্তরিত করা হয়েছে তন্মধ্যে - ১.কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ২.জেলা প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগ ৩.মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ ৪.তুলা উন্নয়ন বোর্ড ৫.জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ ৬.পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ৭. প্রাণীসম্পদ বিভাগ ৮.মৎস্য বিভাগ ৯.বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ১০.ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সাংস্কৃতি ইন্সটিটিউট ১১.জেলা শিল্পকলা একাডেমী ১২.বাজারফান্ড প্রশাসন ১৩.টেক্সটাইল ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট ১৪.জেলা সরকারী গণগ্রন্থাগার ১৫.যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর ১৬.স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর ১৭.আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউট (আরপিটিআই) ১৮.জেলা সমাজসেবা বিভাগ ১৯.হর্টিকালচার সেন্টার ২০.জেলা সমবায় বিভাগ ২১. নার্সিং ট্রেনিং ইন্সটিটিউট ২২. স্বাস্থ্য বিভাগ ২৩. জুমচাষ ২৪. কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ২৫. জেলা ক্রীড়া অফিস ২৬. পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ ব্যতিত ইমপ্রুভমেন্ট ষ্ট্রাষ্ট ও অন্যান্য শাসন সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ২৭. স্থানীয় শিল্প বানিজ্য লাইসেন্স ২৮. জন্ম-মৃত্যু ও অন্যান্য পরিসংখ্যান ২৯. মহাজনি কারবার ৩০. স্থানীয় পর্যটন ইত্যাদি। জেলা পরিষদ সমূহের কাছে হস্তান্তরিত এসব বিভাগ সমূহের কাজ কি ? প্রতিমাসে জেলা পরিষদ সমূহের সাথে মাসিক উন্নয়ন সভা-সমন্বয় সভা ব্যতিত হস্তান্তরিত বিভাগের বেতন ভাতা স্বাক্ষর করা ছাড়া উন্নয়ন বা অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়। পার্বত্য চুক্তি করার পর থেকে পার্বত্য অঞ্চলের মানুষ যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরী পাবে এমন আশা করেছিলো, সমতলে যেখানে তিন লক্ষ টাকা খরচ করে একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রার্থী চাকুরী পায়, সেখানে পার্বত্য অঞ্চলে জেলা পরিষদগুলোর মাধ্যমে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের চাকরী পেতে গুনতে হয় আট থেকে দশ লক্ষ টাকা। পার্বত্য চুক্তির পর একটি বারের জন্য চুক্তি সম্পাদনকারী উভয়ে কেউ বলেনি যে, সরকারী চাকুরী পেতে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করা হোক। উল্টো চুক্তি সম্পাদনকারীদের দলীয় নেতাদের ঘুষ না দিলে মিলেনা চাকুরী। এখানে একটি কথা পরিষ্কারভাবে খোলাসা করা প্রয়োজন- পার্বত্য চুক্তির আলোকে স্থানীয় পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চাকরী পাওয়ার কথা কিন্তু ঘুষ বাণিজ্য ও আমলাতন্ত্রের জটিলতার কারণে পার্বত্য অঞ্চলের বাহিরের লোকজন চাকুরীর বাজার দখল করে আছে। যারা পার্বত্য অঞ্চলের মানুষকে ভালোবাসেন তাদের মধ্যে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম। বড়ই আশ্চার্যের বিষয় যারা বছরে ৩৬৫ দিনের মধ্যে ৩৬৪ দিন পার্বত্য চুক্তি বিরোধী কার্যকলাপে লিপ্ত থাকে আবার চুক্তি স্বাক্ষরের দিন আসলে অর্থাৎ ২রা ডিসেম্বর আসলে জাক জমক পূর্ণভাবে দিনটিকে তারাই পালন করে। হাস্যকর হলেও অবিশ্বাস্য এদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি নিয়ে অথবা চুক্তির পক্ষে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের বাধ্যবাদকতা তাদের কাছে জিম্মি। এরা কারা? এরা কার স্বার্থে কাজ করে? মূলতঃ ২০০৭ সালের পর থেকে পার্বত্য চুক্তি মুখ থুবরে পরেছে। সরকারের বাস্তবায়নকারীরা সরে গেছে তার মূল স্প্রিড থেকে।
পার্বত্য অঞ্চলের মুল সমস্যা হচ্ছে ভুমি সমস্যা যা আজ পর্যন্ত সমধান হয়নি এবং বর্তমান সরকারের নীতি নির্ধারকদের পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে মনোভাব, দৃষ্টি পরিবর্তন না হলে পার্বত্য অঞ্চলের ভুমি সমস্যা সমধান হওয়ার সম্ভবনা নাই। পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর স্বার্থ সংরক্ষণ করে এবং সকল সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠান বা প্রশাসনকে সমভাবে মর্যাদা দিয়ে ১৯০০ সালের রেগুলেশন আইন, বাজারফান্ড আইন সম্পুর্ণভাবে বাতিল করে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি পূর্ণমূল্যোয়ন এখন প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে বা সময়ের দাবি। একই সাথে পার্বত্য অঞ্চলে দুইটি আইন চলতে পারে না। যে কোন একটি আইন দ্বারা পাহাড়ের জনসাধারনকে শাসন করা হোক। দেশে প্রচলিত অনেক আইনের পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু পার্বত্য অঞ্চলে পার্বত্য চুক্তির দোহাই দিয়ে জনসাধারনকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত, এক দেশে দুই আইন স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থি।
পার্বত্য অঞ্চলের বিশেষ করে প্রত্যান্ত অঞ্চলের অধিবাসীরা না পারে সইতে না পারে কইতে এমন একটা জীবণ যাপন করছে তাদের কথা যেমন গণমাধ্যমে আসেনা তেমনি মুখ খুললে পরের দিন লাশ পরে থাকে। জিম্মি দশায় রয়েছে পার্বত্য অঞ্চলের সাধারন খেটে খাওয়া অধিবাসীরা। মুক্তি চায় এবং শান্তিতে বাঁচতে চায় পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ। শুক্রবার ২রা ডিসেম্বর ২০২২ সালে পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছর পূর্ণ হবে। দেশের সংবিধান পরিপন্থি এবং বৈষম্যেমূলক আইনে বিগত ২৫ বছরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ কিছুই পায়নি বিধায় পাহাড়ে কর্মকান্ড আছে সেই সকল জাতীয়, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি এবং পাহাড়ে বসবাসরত সকল জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করে কেবল মাত্র কাগজে কলামে নয়, বাসতবসম্মতভাবে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণঃ মুল্যায়ন করা এখন পার্বত্যবাসীর প্রাণের দাবি।
প্রয়োজনে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণঃমূল্যায়ন করার লক্ষে পার্বত্য অঞ্চলের সুবিধাভোগী সাধারন জনগণের রায় নেয়ার জন্য গণভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করা অত্যন্ত জরুরী।
লেখক : সাংবাদিক নির্মল বড়ুয়া মিলন, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক লেখক, ৩০ নভেম্বর-২০২২ ইংরেজি, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা।