শনিবার ● ১০ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » নওগাঁ » যান্ত্রিক সভ্যতার আগ্রাসনে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’ এখন শুধুই স্মৃতি
যান্ত্রিক সভ্যতার আগ্রাসনে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ‘ঢেঁকি’ এখন শুধুই স্মৃতি
নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি :: ‘ও বউ ধান ভানে রে, ঢেঁকিতে পার দিয়া…।’ ঢেঁকির পাড়ে পল্লিবধূদের এমন গান এক সময় গ্রাম-বাংলার গ্রামীণ জনপদে সবার মুখে মুখে থাকত। ধান থেকে চাল, তা থেকে আটা। একসময়ে উত্তর জনপদের শষ্য ভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাইয়ে চাল আর আটা প্রস্তুতের একমাত্র মাধ্যম ছিল ঢেঁকি। নবান্ন এলেই ঢেঁকির পাড়ে ধুম পড়ত নতুন ধানের চাল ও আটা তৈরির। আর শীতের পিঠা তৈরি আয়োজন চলত উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে।
তবে কালের বিবর্তনে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকি। আর বর্তমানে নতুন প্রজন্মের কাছে ‘ঢেঁকি’ শব্দটি শুধু অতীতের গল্প মাত্র। বাস্তবে এর দেখা মেলা ভার। উপজেলার দুএক জায়গায় থাকলেও ব্যবহার তেমন একটা নেই। আশির দশক থেকে ক্রমে বিলুপ্তির পথে ঢেঁকি।
উপজেলার প্রবীণ লোকজনদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এক সময় ঢেঁকিতে তৈরি করা আটা দিয়ে গ্রামের ঘরে ঘরে প্রস্তুত করা হতো পুলি, ভাপা, পাটিসাপটা, তেলে ভাজা, চিতইসহ নানা ধরনের বাহারি পিঠা-পুলি। পিঠার গন্ধ ছড়িয়ে পড়ত এক পাড়া থেকে অন্য পাড়ায়। উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপন করা হতো নবান্ন উৎসব। গ্রামীণ জনপদগুলোতে এখন বিরাজ করছে শহুরে আবেশ। তাই গ্রামে গ্রামে আর ঢেঁকি নেই, নেই পল্লিবধূদের মনমাতানো গান। কিছু জায়গায় নবান্ন উৎসব হলেও পিঠা-পুলির সমাহার আর চোখে পড়ে না। গ্রামবাংলার এমন চিরায়ত সব ঐতিহ্য এখন শুধুই স্মৃতি।
ঢেঁকিছাঁটা চাল শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে গ্রামের শিশুদের জাউ তৈরি করে খায়ানো হতো। কিন্তু কাল চক্রের বিবর্তন ও যান্ত্রিক সভ্যতার আগ্রাসনে হারিয়ে যাচ্ছে ধান থেকে চাল-আটা তৈরির একমাত্র মাধ্যম গ্রামীণ ঢেঁকি।
সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব ঘটেছিল। আবার গতিময় সভ্যতার যাত্রায় প্রযুক্তিগত উৎকর্ষে ঢেঁকি বিলুপ্তি হচ্ছে। একে না মেনে নিয়ে উপায় নেই। আত্রাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেও তেমন একটি ঢেঁকিরও দেখা মেলে না। আধুনিক যুগে সেই ঢেঁকির জায়গা দখল করে নিয়েছে বিদ্যুৎ–চালিত মেশিন। গ্রামগঞ্জে গড়ে উঠেছে মিনি রাইস মিল। ফলে ঢেঁকির অস্তিত্ব আজ বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। ঢেঁকিছাঁটা চাল আজ আর নেই। এখন আর আগের মতো ঢেঁকিতে ধান ভানার দৃশ্যও চোখে পড়ে না। ভোরের স্তব্ধতা ভেঙে শোনা যায় না ঢেঁকির ‘ঢেঁকুর’ ‘ঢেঁকুর’ শব্দ। চোখে পড়ে না বিয়েশাদির উৎসবে ঢেঁকিছাঁটা চালের ক্ষীর–পায়েস রান্না। অথচ একদিন ঢেঁকি ছাড়া গ্রাম কল্পনা করা কঠিন ছিল।
একসময় গ্রামের প্রায় সব সম্ভ্রান্ত পরিবারেই ঢেঁকি ছিল। ধান ভাঙা কল আমদানির পর গ্রমাঞ্চল থেকে ঢেঁকি বিলীন হওয়া শুরু হয়। ফলে গ্রামের মানুষ ভুলে গেছেন ঢেঁকিছাঁটা চালের স্বাদ। যান্ত্রিক সভ্যতা গ্রাস করেছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কাঠের ঢেঁকিশিল্পকে। বর্তমান যুগের অনেকেই ঢেঁকি চেনে না। কালের পাতায় স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে ঢেঁকি। যেখানে বসতি সেখানেই ঢেঁকি, কিন্তু আজ তা আমাদের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য থেকে মুছে যাচ্ছে। হাতের কাছে বিভিন্ন যন্ত্র আর প্রযুক্তি সহজলভ্য হওয়ায় ঢেঁকির মতো ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছুই এখন হারিয়ে যাচ্ছে।
ঢেঁকি বড় কাঠের গুঁড়ি দিয়ে তৈরি। লম্বায় অন্তত ছয় ফুটের মতো। এর অগ্রভাগের মাথার কাছাকাছি দেড় ফুট লম্বা মনাই। মনাইয়ের মাথায় পরানো লোহার রিং (আঞ্চলিক ভাষায় চুরনও বলা হয়)। চুরন বারবার যেখানে আঘাত করে নিচের সেই অংশটুকুর নাম গর। সেটিও কাঠের তৈরি। ঢেঁকিতে ধান বা চাল মাড়াই করতে কমপক্ষে তিনজন মানুষের প্রয়োজন হয়। পেছনের লেজবিশিষ্ট চেপ্টা অংশে এক বা দুজন পা দিয়ে তালে তালে চাপ দিলে মনাই সজোরে গরের ভেতর ধান বা চালের ওপর আঘাত করে। তবে মনাই ওঠানামার ছান্দিক তালে তালে আরও একজন নারী ধান–চাল মাড়াই করতে সাহায্য করে। তবে ঢেঁকিতে পাড় দেওয়া আর আলি দেওয়ার মধ্যে সঠিক সমন্বয় না থাকলে ঘটতে পারে ছন্দপতন।
বর্তমান সময়ে কিছু কিছু বাড়িতে ঢেঁকি থাকলেও তা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হয়। আগের তা হতো না। এখন প্রতি কেজি চাল থেকে আটা প্রস্তুত করতে নেওয়া হয় ১০ থেকে–১২ টাকা। ঢেঁকির মালিক নিজের লোকবল দিয়েই ওই আটা প্রস্তুত করেন। আধুনিক মেশিনে প্রস্তুত করা আটার তৈরি পিঠায় স্বাদ না থাকায় কিছু মানুষ টাকা দিয়েই ঢেঁকিতে আটা তৈরি করতে আসে।
টানা ৪০দিন জামাতে নামাজ পড়ে সাইকেল পুরস্কার পেল ২০৮ জন কিশোর
আত্রাই :: কমলমতি শিশু-কিশোরদের নামাজের প্রতি আকৃষ্ট করতে পুরস্কার ঘোষণা দিয়েছিলেন নওগাঁর আত্রাইয়ের পাঁচুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খবিরুল ইসলাম। সেই ঘোষণার উদ্বুদ্ধ হয়ে টানা ৪০ দিন মসজিদে জামাতে নামাজ পড়ে সাইকেলসহ বিভিন্ন পুরস্কার জিতে নিয়েছে ২০৮ জন কমলমতি শিশু-কিশোররা।
শুক্রবার ৯ ডিসেম্বর সকালে বিহারীপুর গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন স্থানে নওগাঁ জেলা জর্জ কোর্টের অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলমের উপস্থিতিতে সাইকেলগুলো দেওয়া হয়। সেইসাথে ইউনিয়নের নয় মসজিদের ইমাম- মোয়াজ্জেমকে বিচারকের দায়িত্ব পালন করায় বিশেষ উপহার দেওয়া হয়। এসময় মাওলানা মো: আশাদুল ইসলাম, মাওলানা মো: আক্তারুজ্জামান ও মাওলানা মো: মাহাফুজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
জানা যায়, এসো ভাই নামাজ পড়ি, এসো বন্ধু সমাজ গড়ি লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইউনিয়নের আট ওয়ার্ডের আট মসজিদে গত পহেলা অক্টোবর এ নামাজ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। একটানা ৪০ দিন চলমান প্রতিযোগিতায় স্বস্ব মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জেম বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিযোগিতায় তিন শত পঞ্চাশ জন ৮ হতে ১৮ বছরের শিশু-কিশোররা অংশগ্রহণ করে দুই শত আট জন বিজয়ী হয়।
এ বিষয়ে পুরস্কার প্রাপ্ত পার পাঁচুপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম, আশিকুর রহমান, নবিউল ইসলামসহ অনেকে আনন্দের সাথে জানায়, তারা নামাজ শিক্ষার পাশাপাশি একটি করে বাইসাইকেল পেয়েছে। এটা তাদের জীবনকে সঠিক পথ দেখানোর পাশাপাশি আদর্শবান মানুষ হিসাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করবে। একইসাথে সাইকেলের অভাব দুর হলো যা তাদের পিতা-মাতা করতে পারতো কি-না জানা নাই তাদের বলে জানায় তারা।
এ ব্যাপারে পাঁচুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান খবিরুল ইসলাম বলেন, আগামী প্রজন্মকে নেশা মুক্ত ধর্মজ্ঞান সম্পন্ন বিবেকবান আদর্শ সমাজিক মানুষ, ইসলাম ধর্ম সঠিকভাবে জানা ও বোঝা এবং আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তোলার লক্ষে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়।
আত্রাইয়ে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি দিবস পালিত
আত্রাই :: নওগাঁর আত্রাইয়ে উপজেলা প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিটির আয়োজনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস পালিত হয়েছে।
দিবসটি উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর শুক্রবার সকালে উপজেলা চত্ত্বর হতে বর্ণাঢ র্যালী উপজেলার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিন শেষে মানববন্ধন করে।
পরে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম হল রুমে ইউএনও ইকতেখারুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান প্রামানিক, উপজেলা আ’লীগ সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত দুলাল, সম্পাদক আক্কাছ আলী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এএফএম মুনসুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম, মহিলা বিষয়ক অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন, আত্রাই প্রেসক্লাব সভাপতি তপন কুমার সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু প্রমুখ।
আত্রাইয়ে বেগম রোকেয়া দিবস পালিত
আত্রাই :: নওগাঁর আত্রাইয়ে বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষ্যে মহিলা বিষয়ক অফিস ৫ জন জয়িতাকে সংবর্ধনা দেয়।
শুক্রবার ৯ ডিসেম্বর সকালে উপজেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অফিসের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বেগম রোকেয়া দিবস উপলক্ষে “জয়িতা অন্বেষনে বাংলাদেশ” শীর্ষক আলোচনা ইউএনও ইকতেখারুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমান প্রামানিক, উপজেলা আ’লীগ সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত দুলাল, সম্পাদক আক্কাছ আলী, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এএফএম মুনসুর রহমান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান মমতাজ বেগম, মহিলা বিষয়ক অফিসার মোয়াজ্জেম হোসেন, আত্রাই প্রেসক্লাব সভাপতি তপন কুমার সরকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় লিপি বেগমকে, নির্যাতনের বিভিষিকা মুছে ফেলে নতুন জীবন শুরু করায় সাথী খাতুনকে, সফল জননী নারী হিসাবে হাবিবা বেগমকে, শিক্ষা ও চাকুরীক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করায় নার্গিস খাতুনকে এবং অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জন করায় রিক্তা বেগমকে জয়িতার সম্মাননা প্রদান করা হয়।