শনিবার ● ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » কৃষি » মিরসরাইয়ে পেয়ারা বাগান করে তিন বন্ধুর স্বপ্নপূরণ
মিরসরাইয়ে পেয়ারা বাগান করে তিন বন্ধুর স্বপ্নপূরণ
আকতার হোসেন, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি :: মিরসরাইয়ে পেয়ারা বাগান করে ৩ বন্ধুর স্বপ্নপূরণ হতে চলেছে। পোল্ট্রি খামারে ক্রমাগত লোকসান গুনতে গুনতে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে একই স্থানে পেয়ারা পেয়ারা বাগানের দিকে ঝুঁকলেন ৩ বন্ধু সৈয়দ আকরাম হোসেন মিশেল, নজরুল ইসলাম নাশিদ ও সাইদুল ইসলাম ইমন। ক্ষতি কাটিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হওয়ার লক্ষ্য এগিয়ে যাচ্ছে তিন বন্ধু।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের দক্ষিণ অলিনগর উত্তর পাড়া গ্রামের অবস্থিত বিবি মরিয়ম মাদ্রাসার উত্তর পাশে আমিগো এগ্রো নামের এই পেয়ারা বাগান প্রকল্পে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা ও উৎসাহী লোকজন ছুটে আসছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল একটা পাহাড়ি এলাকা জুড়ে পেয়ারা গাছ, যেখানে ডালে ডালে ঝুলছে পলিথিন ব্যাগ মোড়ানো পেয়ারা। বাগানে পরিচর্যা করছেন মিশেল, বাগানের কর্মচারী আব্দুল করিম এবং বাগানের তত্বাবধায়ক ও প্রচারক মেহেদী হাসান।
বাগানের মালিক ও তিন বন্ধুর একজন চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী এলাকার বাসিন্দা মিশেল জানান, পাহাড়তলী রেলওয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সময় ২০ বছর আগে থেকে তিন বন্ধু’র একসাথে পথচলা। ২০১৬ সালে পোল্ট্রি খামারে লোকসান গুনার এক পর্যায়ে ২০১৮ সালে পেয়ারা বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং আকাশি বাগান কেটে পেয়ারা বাগান করার জন্য জমি প্রস্তুত করি। ঝিনাইদহের হক এগ্রো, চুয়াডাঙ্গা ও রাজশাহীর বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে ২০১৯ সালের শেষের দিকে ৩ একর জায়গায় ১৭ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ৩ হাজার পেয়ারা চারা রোপণ করা হয়। বর্তমানে বাগানে থাই গোল্ডেন-৮ ও থাই সুপার-১০ এই ২ জাতের পেয়ারা আছে। কোন প্রকার কীটনাশক ব্যবহার করতে হয়না তাই ফলের রং সুন্দর থাকে এবং খেতে সুস্বাদু। পেয়ারা বাগানের ফাঁকে ফাঁকে ৬০০ মাল্টা (বারী-১), দার্জিলিং ও সাদিক এ ২ জাতের ১০০ কমলা গাছ রয়েছে। এই পর্যন্ত প্রায় ৩ লক্ষ টাকার মতো পেয়ারা বিক্রি হয়েছে এবং এই বছরেই ১০ লক্ষ টাকার পেয়ারা বিক্রি হবে। প্রতিদিন ৭-১০ হাজার টাকার পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি পেয়ারা ৩০০-৪০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে। আগামীতে আরও ২ একর জমিতে পেয়ারা, মাল্টা ও কমলা বাগান প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জমির মালিক নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা ও স্পেন প্রবাসী আবু নেসার তিনিও বাগানের উন্নতির জন্য আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে খোঁজ খবর নেন এবং একটা লভ্যাংশ নিবেন।
করেরহাট ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ.এইচ.এম মোমিনুল হক জানান, ৩ বন্ধুর পেয়ারা বাগানে সুফল পেতে সবরকম পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি, তাঁরাও সেগুলো মানছে এবং আমাদের পক্ষ থেকে সকল সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রঘুনাথ রাহা বলেন, করেরহাটের তিন বন্ধু’র পেয়ারা বাগান সম্পর্কে অবগত আছি এবং তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই।
করেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, আমিগো এগ্রো নামের এই পেয়ারা বাগান প্রকল্পের উদ্যোক্তা তিন বন্ধুকে সাধুবাদ জানাই এবং আমার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে।
পেয়ারা বাগানের তত্বাবধায়ক ও প্রচারক মেহেদী হাসান বলেন, বর্তমানে পেয়ারা বাগানের পাশাপাশি মাল্টা ও কমলা গাছ রয়েছে এবং আগামীতে ড্রাগন চাষ করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করায় বিষয়টি সকলের নজরে আসছে এবং মানুষ আগ্রহ দেখাচ্ছে।