শনিবার ● ২৪ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » প্রকৃতি ও পরিবেশ » ঈশ্বরগঞ্জে বন বিভাগের ৪৫ লক্ষ টাকার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত
ঈশ্বরগঞ্জে বন বিভাগের ৪৫ লক্ষ টাকার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার আহবান করে গাছ কর্তন না করায় ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বন বিভাগের প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকার গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এলাকাবাসী ও বন রক্ষণাবেক্ষণ সংশ্লিষ্ট সদস্যরা।
সরেজমিন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার শিমুলতলী হতে উচাখিলা রাস্তার নারায়নপুর পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়কের দু’পাশে বিভিন্ন স্থানে মূল্যবান গাছ মরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। আবার কিছু গাছ ঝড়ে উপড়ে পড়ে এবং বিদ্যুতের তার ও কুটির উপর বিপদজনক অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
উপজেলার বড়হিত ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শাহ জালাল জানান, তার আমলে ১৯৯৪ সালে বনবিভাগ রাস্তার দু’পাশে মেহগনি, সেগুন, শিশু ও আকাশি জাতের ২হাজার চারা গাছ রোপন করে। পরে বনবিভাগ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাসকারী স্থানীয় নারীদের নিয়ে স্ট্রীপ বাগান সমিতি গঠন করে দশ বছর মেয়াদে গাছ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব প্রদান করে। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও গাছগুলো কর্তন না করায় মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়ে দুই শতাধিক গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
স্ট্রীপ বাগান সমিতির সভাপতি নুরজাহান বেগম, সদস্য মালেকা, আছিয়া খাতুন ও এলাকাবাসী কছুম উদ্দিন জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এক একটি গাছের মূল্য হবে প্রায় ২০থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ২শ গাছের গড় মূল্য হবে ৪৫ লক্ষ টাকা। নির্ধারিত সময়ে গাছ কর্তন না করায় সরকার ও উপকারভোগিরা বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
স্ট্রীপ বাগান সমিতির সম্পাদক শাহীদা বেগম জানান, ২৭ বছর আগে ৯৪সালে উপজেলা বন বিভাগ প্রান্তিক ভূমি ও বন শূন্য অন্তবর্তী এলাকায় বনায়নের লক্ষ্যে উচাখিলা রাস্তায় বৃক্ষ রোপন করে। রাস্তার গাছ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দরিদ্র উপকারভোগী সদস্যদের সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে বন বিভাগ।
চুক্তিপত্র সূত্রে জানা যায়, গাছ রোপনের ১০ বছর পর টেন্ডার আহবান করে গাছগুলো কর্তন করে বিক্রয়লব্ধ টাকার শতকরা ৬৫ ভাগ পাবে উপকারভোগী সদস্যরা। বাকী ৪৫ শতাংশ পাবে বন বিভাগ, ইউনিয়ন পরিষদ ও সড়ক বিভাগ।
কিন্তু চুক্তিপত্রের নির্ধারিত ১০ বছরের স্থলে ২৭ বছর অতিক্রান্ত হলেও বন বিভাগ টেন্ডার আহবানে বিলম্ব করায় গাছগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেশকিছু গাছপালা বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের উপর পড়ে আছে। সামান্য ঝড় হলে গাছপালা ভেঙ্গে রাস্তায় পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে উপজেলা বন বিভাগের সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাফিজা জেসমিন জানান, এ রাস্তায় যাওয়ার পথে গাছগুলো মরে যাওয়ার বিষয়টি আমার নজরে আসে। রাস্তার গাছগুলো দ্রুত কর্তনের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তাকে তাগিদ দেয়া হয়েছে।
বন বিভাগের রেঞ্জ অফিসার লুৎফর রহমান জানান, বিভাগীয় কাজের ব্যস্ততার কারণে নির্ধারিত সময়ে টেন্ডার আহবান করা সম্ভব হয়নি। তবে ডিসেম্বর মাসেই টেন্ডার আহবান করে গাছগুলো কর্তন করা হবে।
তিন দেবরসহ স্ত্রীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ ভাবির
ঈশ্বরগঞ্জ :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের জেরে আব্দুল হেলিম মিয়া নামক এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর ও গুরুতর জখমের অভিযোগ উঠেছে তারই সৎ তিনভাইসহ তাঁদের স্ত্রীদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল হেলিম মিয়ার স্ত্রী নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে তাঁর তিন দেবর ও জা’দের বিরুদ্ধে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের কালান্দর গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রহমানের প্রথম স্ত্রীর ছেলে আব্দুল হেলিম মিয়াকে জমি সংক্রান্ত বিরোধের জেরে রড দিয়ে বেধড়ক মারধর এবং গুরুতর জখম করেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রীর তিন ছেলে নজরুল ইসলাম বাদল (৪০), খাইরুল ইসলাম (৩৭) ও সাইফুল ইসলাম (৩৪)। এসময় তাঁদের সহযোগিতা করেন তিন ভাইয়ের স্ত্রীরা। এ অবস্থায় ভুক্তভোগী আব্দুল হেলিম মিয়ার স্ত্রী নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে (২৩ ডিসেম্বর) শুক্রবার তাঁর তিন দেবর ও জা’দের বিরুদ্ধে ঈশ্বরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী নূরজাহান বেগম বলেন, আমার স্বামীর তিন সৎ ভাই ও তাঁদের বউয়েরা মিলে আগে থেকেই আমাদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করতো। এ অবস্থায় গত ১৮ ডিসেম্বর আমার স্বামীকে তাঁর তিন সৎ ভাই মিলে লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতকরে গুরুতর জখম করে। এ সময় স্বামীকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে আমাকেও মারধরসহ আমার পড়নের কাপড় ধরে টানাহেঁচড়া করে।
নূরজাহান আরও বলেন, আমার স্বামীকে আঘাতের এক পর্যায়ে কোমড়ের ওপর লেগে প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। পরে প্রতিবেশীরা তাঁকে উদ্ধার করে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে তার অবস্থার অবনতি দেখে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বর্তমানে আমার স্বামী সেখানেই চিকিৎসাধীন। তবে তাঁর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আমার স্বামীর এই অবস্থার জন্য যারা দায়ী আমি তাদের শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত নজরুল ইসলাম বাদল বলেন, আব্দুল হেলিম আমার সৎ বড়ভাই। তাঁকে আমি কিংবা আমার ভাইয়েরা কোন মারধরই করিনি। ঘটনারদিন জমি নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে একটু হাতাহাতি হয়েছিল। আর আমার ভাইয়ের ফুসফুসে আগে থেকেই সমস্যা ছিল যেকারণে হাসপাতালে ভর্তি আছে।
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি পিএসএম মোস্তাছিনুর রহমান বলেন, লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ পাওয়ার পরই একজন উপ-পরিদর্শককে দায়িত্ব দিয়েছি ঘটনা তদন্ত করার জন্য। তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।