শনিবার ● ৩১ ডিসেম্বর ২০২২
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » এ সরকার ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে স্মার্ট ভাবে আগামীতে দেশের জনগণের ভোটধিকার হরণ করার পায়তারা করছে : জুঁই চাকমা
এ সরকার ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে স্মার্ট ভাবে আগামীতে দেশের জনগণের ভোটধিকার হরণ করার পায়তারা করছে : জুঁই চাকমা
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি :: গতকাল ৩০ ডিসেম্বর-২০২২ বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি রাঙামাটি পার্বত্য জেলা কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য জুঁই চাকমা প্রেরিত ভিডিও বার্তায় ও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, প্রিয় সংগ্রামী জনতা আদাব, সালাম, নমস্কার ও শুভেচ্ছা নিবেন।
আমি জুঁই চাকমা গত ৩০ ডিসেম্বর-২০১৮ তারিখে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০১৮ তে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে রাঙামাটি-২৯৯ আসনে সংসদ সদস্য পদে কোদাল মার্কায় নির্বাচন করেছি।
একাদশ জাতীয় সংদস নির্বাচনে যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু এ সরকারের নজির বিহীন ভোট ডাকাতির ফলে রাঙামাটি-২৯৯ আসনের ভোটারদের মতামতের প্রতিফলন ঘটেনি।
নজির বিহীন ভোট ডাকাতির চার বছর পুর্তিতে নিজের দায়বদ্ধতা ও বিবেকের তাড়নায় আমি নিজ দায়িত্বে জনসাধারনের কাছে জবাবদিহিতা করছি, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এক কলঙ্কিত নির্বাচন। এমন কলঙ্কজনক নির্বাচন দেশের ইতিহাসে আর হয়নি।
নজিরবিহীন ভুয়া ভোটের এ নির্বাচনের আগের রাতে প্রশাসনের সহায়তায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স ভর্তি করা হয়েছে। সরকারি দল ও একটি আঞ্চলিক দলের প্রার্থীর ক্যাডাররা মিলে আমার পক্ষের এজেন্টদের ‘হুমকি’, কেন্দ্র থেকে ‘মারধর করে’ এজেন্টদের বের করে দেয়।
৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচন হয়েছে। দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় সরকার যা ইচ্ছা তাই করছে। এ জন্য সরকারকে জবাবদিহিও করতে হয় না। ৩০ ডিসেম্বর কোনো নির্বাচন হয়নি, হয়েছে ভোট ডাকাতি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১১ জানুয়ারি ঢাকা প্রেস ক্লাবে বাম গণতান্ত্রিক জোট এর গণশুনানিতে আমি একই কথা বলেছি।
আমার রাঙামাটি পার্বত্য জেলা হচ্ছে বাংলাদেশের বৃহত্তম জেলা। যার মোট আয়তন ৬১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার। রাঙামাটি-২৯৯ আসনের নির্বাচনী এলাকায় ১০টি উপজেলা, ২টি পৌরসভা ও ৫০টি ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে গঠিত আমার জেলায় মোট ভোটার ৪১৮২১৭ জন। তার মধ্যে পুরুষ ২২০৩৫৪ জন মহিলা ভোটার ১৯৭৮৬৩ জনের অধিক।
২০১৮ সালের তামাশার নির্বাচনে আমার রাঙামাটি-২৯৯ আসনে প্রিজাইডিং অফিসার কর্তৃক সরবরাহকৃত ভোটগণনার ফলাফলের একিভূত বিবরণী যা তৎকালিন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক ও রিটানিং অফিসার রাঙামাটি-২৯৯ এ কে এম মামুনুর রশিদ ১ জানুয়ারি-২০১৯ তারিখে স্বাক্ষরিত শতকরা হার ৭৭.২৯% থেকে ৯৩.৮৪% যা সম্পূর্ন ভুয়া ও বানোয়াট। ৩০৫৭৬১ জন ভোট না-কি আমার নির্বাচনী এলাকায় ভোট প্রয়োগ করেছে বলে তাদের দাবি ! আমার নির্বাচনী এলাকায় মোট ৬জন প্রার্থী ছিলো তার মধ্যে স্বতন্ত্র, সিংহ-১০৮০৩৬, জাতীয় পার্টি এরশাদ, লাঙ্গল-৪৮৩, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, কোদাল-৪৯০, আওয়ামী মহাজোট, নৌকা-১৫৯২৮৯, ইসলামিক আন্দোলন,হাত পাখা-১৫৫৮ ও ঐক্যফ্রন্ট,ধানের শীষ-৩১৪৩৭ ভোট পায় বলে প্রশাসনের দাবি।
নির্বাচন কমিশনের অধিনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষনার আগে এবং পরের কিছু অনিয়ম এবং ভোট ডাকাতির কিছু তথ্য আমি আপনাদের কাছে উপস্থাপন করছি।
২০১৮ সালের নভেম্বরের ৮ তারিখ তফশীল ঘোষণার পর থেকে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আজ্ঞাবহ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি নিরপেক্ষ ও সর্বজন গ্রহনযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে ব্যর্থ হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সর্ম্পূন নিয়ন্ত্রিত এবং ছকে সাজানো ভোট কারচুপি আর তামাশার নির্বাচন।
এতে মারত্মক ভাবে ইমেজ সংকটে পড়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার দল।
সম্মানীত বন্ধুগণ আমি আদিবাসী পাহাড়ি একজন সহজ-সরল নারী আমার উপস্থাপনায় এবং ভাষার প্রয়োগ হয়তো যথাযথ নাও হতে পারে এজন্য সকলের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী, আমার নির্বাচনী এলাকার অনিয়ম ও এ সরকার এবং তাদের দোসরদের ভোট ডাকাতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিন্ম রুপ :
গত ১১ ডিসেম্বর-২০১৮ তারিখ থেকে শুরু হওয়া সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা বিভিন্ন ভাবে বাঁধা প্রদান করেছে আওয়ামীলীগ সরকারের বন্ধু সংগঠন আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পিসিজেএসএস ও ইউপিডিএফ সমর্থিত স্বতন্ত্র সিংহ মার্কার সংসদ সদস্য প্রার্থীর লোকজন এরা কাউখালী, লংগদু, বাঘাইছড়ি, রাজস্থলী ও বরকল উপজেলায় আমার দলীয় নেতাকর্মীদের প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আমার পক্ষে নির্বাচনী প্রচার- প্রচারণা থেকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং গ্রাম এলাকা থেকে অন্য সব স্থানে যেতে বাধাঁ দেয় ও নিষেধ করে এছাড়া আমার দলীয় নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন জব্দ করে রেখেছিলো। এছাড়াও আমার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারীদের শক্তিপ্রয়োগ, উগ্র-মৌলবাদী অপপ্রচার চালিয়ে ভোটারদের আমাকে ভোট প্রদানে বিরত থাকতে নির্লজ্জভাবে চেষ্টা চলায়।
সিংহ মার্কার স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য প্রার্থীর লোকজন আমাকে বাঘাইছড়ি, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলায় নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণায় না যেতে হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখতে পারেনি। আমি সব জেনেও বাঘাইছড়ি ও আমার নিজের বরকল উপজেলায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমি কোদাল মার্কার প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি। কারণ আমি বিশ্বাস করি হুমকি দাতা এবং সন্ত্রাসীদের কোন রাজনৈতিক দল নেই। তাদের বাধাঁর কারণে আমার গর্ভধারিনী মা-সহ গ্রামের লোকজন আমায় ভোট দিতে পারেননি। পার্বত্য চুক্তির ২৫ বছরেও পাহাড়ে অস্ত্রের ঝনঝনানি বন্ধ হয়নি।
রাঙামাটি-২৯৯ আসনের দুর্গম এলাকার ভোট কেন্দ্রের আমার এজেন্ট ও ভোটারেরা আমাকে নির্বাচন চলাকালিন ফোনে জানান, নির্বাচনের আগের দিন রাত্রি ভোট কেন্দ্রের ভিতর প্রবেশ করে ৫০% ব্যালট পেপারে সিল মেরে রাখা হয়েছে। ভোটের আগের দিন ভোট ডাকাতির এ কাজটি আমার নির্বাচনী এলাকায় ভোট কেন্দ্রে পেশীশক্তি ও অস্ত্রবল প্রয়োগ করেছেন আওয়ামীলীগ-মহাজোট সংসদ সদস্য প্রার্থী দীপংকর তালুকদারের নৌকা মার্কার পক্ষে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, সংস্কারপস্থী পিসিজেএসএস, সংস্কারপস্থী ইউপিডিএফ, প্রশাসনের লোকজন। ভোট ডাকাতির পক্ষ নিয়ে ভোটের মাঠে যারা এ কাজ করেছেন তারা যেই হোক না-কেন ভোট ডাকাতির অভিযোগে অভিযুক্ত বলে জনগণ বিশ্বাস করেন।
ভোটের পর ৪ জানুয়ারী-২০১৯ ইংরেজি তারিখ রাতের বাঘাইছড়ি উপজেলায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় পিসিজেএসএস (মুল), ইউপিডিএফ ও সংস্কারপন্থী পিসিজেএসএস (এম এন লারমা) গোলাগুলি হয় এবং এতে প্রতিপক্ষের ব্রাশ ফায়ারে সংস্কারপন্থী দলের কর্মী বসু চাকমা (৪০) নিহত হয়। আমি এবং আমার পার্টি যে কোন ধরনের হত্যাকান্ডকে সমর্থন করি না।
আমি ও আমার পার্টি শান্তি এবং মেহনতি মানুষের পক্ষে।
আমি শুরু থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রত্যাখান করেছিলাম আজও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এর ফলাফল প্রত্যাখান করছি।
ভোটার এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি না থাকায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ, রাঙামাটি জেলা প্রশাসন, জেলায় অবস্থিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ,উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা, জেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সকল সরকারি,বে-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত সকল প্রতিষ্ঠান অতিমাত্রায় দলীয় করণ করার কারণে উন্নয়ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান সমূহ এখন দুর্নীতিবাজদের আখড়ায় পরিনত হয়ে পড়েছে।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্য এবং তাদের আচরণ কোনভাবেই গণতান্ত্রিক নয়, আওয়ামী লীগ অধিকার বঞ্চিত জন বান্ধব নয়, তারা মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল বলে ঘোষণা দিয়ে দেশের ও পাহাড়ের জনগণের ভোটের এবং ভাতের অধিকার কেড়ে নিয়েছেন।
ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের মধ্যে সৌজন্যতা পর্যন্ত নাই।
নজিরবিহীন ভোট ডাকাত এ সরকার প্রশাসনের সহায়তায় রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে রাজনৈতিক বিরোধী মত প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের জেলে রেখে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ একই কায়দায় জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। সরকার বিরোধী দলের নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মানতে রাজী নয়।
আগামী ২০২৪ সালের জানুয়ারী মাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের ছক তৈরী করে “ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে স্মার্ট ভাবে আগামীতে দেশের জনগণের ভোটধিকার হরণ করার পায়তারা করছে”।
সুতরাং নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধিনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে পাহাড়ের এবং সমতলের গণমানুষের মুক্তি মানুষের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে এ ভোট ডাকাত একনায়কতন্ত্র সরকার এবং তাদের দোসরদের ব্যালটের মাধ্যমে প্রতিহত করতে মুক্তিকামী মানুষদের প্রতি গণ আন্দোলন গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি।
পরিশেষে দেশবাসী ও রাঙামাটি-২৯৯ আসনের নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে রাঙামাটি জেলার ভোটার, পার্টির বন্ধুগণ ও শুভাকাঙ্খি সবাইকে ২০২৩ ইংরেজি নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ।
ধন্যবাদ সবাইকে লাল সালাম…
দুনিয়ার মজদুর এক হও
মেহনতি মানুষের জয় অনিবার্য …..