শনিবার ● ২ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » জাতীয় » রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা
রবিবার থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা
ঢাকা প্রতিনিধি :: উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে কাল (রোববার)। আটটি সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এ বছর ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৪ এবং ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৪ জন ছাত্রী। গত বছরের চেয়ে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৪ জন বেশি।
সারাদেশের ২ হাজার ৪৫২টি এবং বিদেশের ৭টি কেন্দ্রে একযোগে শুরু হচ্ছে আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি), মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (বিএম বা ভোকেশনাল) এবং ডিআইবিএস (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ) পরীক্ষা।
এবার পাবলিক পরীক্ষায় অপরাধ ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষাসমূহ অপরাধ আইন ১৯৮০ এর ৪ ধারা অনুযায়ী পরীক্ষা শুরুর পূর্বে প্রশ্ন সংক্রান্ত কোনো কাগজ পরীক্ষার জন্য প্রণীত হয়েছে মর্মে বা ধারণাদায়ক কোনো প্রশ্ন প্রণীত কাগজ যে কোনো উপায়ে ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের অপরাধে ৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা অর্থদণ্ড বা উপয় দণ্ডের বিধান আছে।
সেই সঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন ২০০৬ এর ৫৭ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্যকোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন যা মিথ্যা, যার দ্বারা আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র বা ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয় বা এধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠির বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয় তাহলে, এ ধরনের অপরাধের জন্য ৭ বছর থেকে ১৪ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
প্রথমদিনে বাংলা আবশ্যিক ১ম পত্র, সহজ বাংলা ১ম পত্র, বাংলা ভাষা ও বাংলাদেশের সংস্কৃতি ১ম পত্র এবং কুরআন মজিদ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে পরীক্ষা শেষ হবে দুপুর ১টায়।
২০১৬ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথমে বহুনির্বাচনী ও পরে সৃজনশীল বা রচনামূলক (তত্ত্বীয়) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। উভয় পরীক্ষার মধ্যে ১০ মিনিট সময়ের ব্যবধান থাকবে। সকাল বেলার পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমে বহুনির্বাচনী- ১০টায় শুরু হয়ে ১০টা ৪০মিনিটে শেষ হবে। ১০ মিনিট বিরতি দিয়ে ১০টা ৫০ মিনিট থেকে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হবে।
বিকেলের পরীক্ষার ক্ষেত্রে ২টা থেকে ২টা ৪০মিনিট পর্যন্ত বহুনির্বাচনী, ১০মিনিট বিরতি দিয়ে ২টা ৫০ মিনিট থেকে তত্ত্বীয় পরীক্ষা শুরু হবে। শুধুমাত্র ট্রেডিশনাল (যেসব বিষয়ে বহুনির্বাচনী পরীক্ষা নেই) বিষয়ের পরীক্ষা সকালের ক্ষেত্রে ১০টায়, বিকেলের ক্ষেত্রে ২টায় শুরু হবে।
২০১২ সালে শুধু বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা সৃজনশীল পদ্ধতিতে হয়েছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৩টি বিষয়ের মোট ২৫টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয়। এবছর নতুন ৬টি বিষয়ের ১১টি পত্রসহ ১৯টি বিষয়ের ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রাল পালসি জনিত প্রতিবন্ধী, যাদের হাত নেই- এসব শারীরিকভাবে পরনির্ভরশীল পরীক্ষার্থীদের জন্য শ্রুতি লেখক এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধীদের জন্য অতিরিক্ত ২০মিনিট সময় বৃদ্ধি থাকছে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের (অটিস্টিক, ডাউন সিনড্রোম বা সেরিব্রাল পালসি জনিত) সঙ্গে পরীক্ষা কক্ষে অভিভাবক, শিক্ষক বা সাহায্যকারী অংশ নিতে পারবে। তাদের জন্য অতিরিক্ত ৩০মিনিট সময় বরাদ্ধ রাখা হয়েছে।
এবার মোট পরিক্ষার্থী ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন। ছাত্র সংখ্যা ৬ লাখ ৫৪ হাজার ১১৪ জন। ছাত্রী সংখ্যা ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৫১৪ জন। গত বছরের চেয়ে পরিক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৪৪ জন। যার মধ্যে ছাত্র ৮৩ হাজার ১২১ জন, ছাত্রী ৬১ হাজার ৬২৩ জন। ২২৮ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৩৩টি কেন্দ্রও বেড়েছে।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ১০ লাখ ২০ হাজার ১০৯ জন। ছাত্র ৫ লাখ ২৫ হাজার ৬১৩, পক্ষান্তরে ছাত্রী সংখ্যা ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪৯৬ জন। মোট ১ হাজার ৩৭৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে ৪ হাজার ১৩৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে। ৪২৮টি কেন্দ্রে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ২ হাজার ৭০৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৯১ হাজার ৫৯১ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবে। তার মধ্যে ছাত্র ৫২ হাজার ৬০৩ জন, ছাত্রী ৩৮ হাজার ৯৮৮ জন।
কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষার্থী সংখ্যা ১ লাখ ২ হাজার ১৩২ জন। ছাত্র ৭২ হাজার ৯২ জন। ছাত্রী ৩০ হাজার ৪০ জন। ১ হাজার ৬৭৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এসব পরীক্ষার্থীরা ৬২৮টি পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশ নিবে। ডিআইবিএসের ১৮ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ৪ হাজার ৭৯৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিবে ১৮ টি পরীক্ষা কেন্দ্রে। এর মধ্যে ছাত্র ৩ হাজার ৮০৬ জন ছাত্রী ৯৯০ জন।
২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ১২ লাখ ২ হাজার ৬১৭ জন নিবন্ধিত শিক্ষার্থীর মধ্যে এবার নিয়মিত পরীক্ষার্থী ৯ লাখ ৬১ হাজার ৭০২ জন। বাকি ২ লাখ ৪৬ হাজার ৩১৪ জন অনিয়মিত। তারমধ্যে এক বিষয়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ১০০ জন, দুই বিষয়ে ৫১ হাজার ৭৭২ জন, সব বিষয়ে ৪৭ হাজার ৫১৪ জন। সর্বোমোট ১২ লাখ ১৮ হাজার ৬২৮ জন পরীক্ষার্থী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিতব্য এইচইসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
বিদেশের ৭টি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থী ২৬২ জন। ১২৪ জন ছাত্র। ১৩৮ জন ছাত্রী।
গত বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রণালয়ে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এ সব তথ্য জানান।
এসময় তিনি সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করে বলেছেন, ২০১৬ সালের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি ভোকেশনাল বা বিএম ও ডিআইবিএস পরীক্ষা-পরীক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবার নিকট আনন্দ দায়ক ও উৎসবমুখর হবে। সম্পূর্ণ নকলমুক্ত ও সুশৃঙ্খল পরিবেশে সবার স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি ভোকেশনাল বা বিএম ও ডিআইবিএস পরীক্ষা সফলভাবে অনুষ্ঠানে আপনাদের সহযোহিতা কামনা করছি।
তত্ত্বীয় পরীক্ষা আগামীকাল রোববার (৩ এপ্রিল) শুরু হয়ে ৯ জুন (বৃহস্পতিবার) শেষ হবে। ১১ জুন থেকে ২০ জুনের মধ্যে শেষ হবে ব্যবহারিক পরীক্ষা।
এবারও শিক্ষামন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সারাদেশের পরীক্ষা তদারকি করা হবে। প্রতিটি কেন্দ্রের সঙ্গে শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সরাসরি যুক্ত থেকে পূর্বের মতো মোট পরীক্ষার্থীর উপস্থিতি, অনুপস্থিতি ও বহিষ্কারসহ সার্বিক তথ্য আদান-প্রদান করবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে।
পরীক্ষা সংক্রান্ত যেকোনো তথ্যসেবা পেতে বা অভিযোগ জানাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ কক্ষে (০২৯৫৭৬৭৮০, ০১৭৭৭৭০৭৭০৫,০১৭৭৭৭৭০৭৭০৬ নম্বরে, এছাড়াও [email protected] এ ঠিকানায়) যোগাযোগ করা যাবে।