রবিবার ● ৮ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » ময়মনসিংহ » ঈশ্বরগঞ্জে পতিত জায়গায় দৃষ্টিনন্দন মডেল গ্রাম
ঈশ্বরগঞ্জে পতিত জায়গায় দৃষ্টিনন্দন মডেল গ্রাম
উবায়দুল্লাহ রুমি, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :: ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পতিত জায়গা আবাদ করে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মডেল গ্রাম। মডেল গ্রামের আধুনিক চাষ পদ্ধতি উপজেলার কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
সরেজমিন মাঠে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধি করণ প্রকল্পের আওতায় বড়হিত গ্রামের পাঁচজন চাষির বাড়ির আঙ্গিনার পতিত জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে মডেল গ্রাম। এই মডেল গ্রামের প্রত্যেক চাষিকে সাতটি করে কম্পোনেন্ট দেয়া হয়েছে।
বড়হিত ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আকছার খান জানান, কম্পোনেন্ট গুলোর সফল বাস্তবায়ন হলে প্রত্যেক কৃষক কৃষিতে স্বাবলম্বী ও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন। কম্পোনেন্ট গুলো হচ্ছে সবজি বাগান, ফল বাগান, ঔষধি বাগান, ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন শেড, খামারজাত সার উৎপাদন শেড, চারা উৎপাদন শেড, গোবর মাটি মিশ্রিত শেড। কম্পোনেন্ট গুলোর বেডে কৃষকরা ফলাবে বিষমুক্ত শাকসবজি ও ফলমূল। আর শেডগুলোতে উৎপাদন করবে জৈব সার, ফলজ ও বনজ গাছের চারা। বছরব্যাপী উৎপাদিত এসব কৃষি পণ্য দ্বারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয় বাজার ও দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন কৃষকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব থেকে দেশকে মুক্ত রাখতে প্রধানমন্ত্রী দেশের এক ইঞ্চি মাটিও পতিত না রেখে আবাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। জনকল্যাণকর এই নির্দেশনার সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বড়হিত গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন মডেল গ্রাম। মডেল গ্রামের চাষ পদ্ধতি ও আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবার সম্ভাবনা দেখে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের কৃষকরা নিজ উদ্যোগে মডেল গ্রাম স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম (৩৫) নিজ উদ্যোগে তার বাড়ির আঙ্গিনার পতিত জায়গায় মডেল গ্রাম স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন।
কৃষক শফিকুল ইসলাম জানান, তিনি মডেল গ্রাম বাস্তবায়ন করতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতা চেয়েছেন।
এ ব্যাপারে কৃষি কর্মকর্তা জানান, মডেল গ্রাম স্থাপনের জন্য যারা আগ্রহ প্রকাশ করবে কৃষি বিভাগ সবসময় তাদের পাশে থেকে সব রকম সহযোগিতা করবে।
মডেল গ্রাম বাস্তবায়নকারী কৃষক আমিনুল ইসলাম ও আলমগীর মাসুদ জানান, তাদের বাড়ির আঙ্গিনার পতিত জমিতে প্লট ভাগ করে তৈরি করা হয়েছে সবজি ফলমূল ও ঔষধি বাগানের বেড। বার্মি কম্পোস্ট জৈব সার ও চারা উৎপাদনের জন্য বাগানের চারপাশে ভিটি পাকা করে তার ওপর টিনের শেড ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শেডে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন কাজ শুরু হয়েছে। তিন মাসের মধ্যে উৎপাদিত সার নিজেরা জমিতে ব্যবহার করে অবশিষ্ট সার দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করে আর্থিকভাবে লাভ হবেন। অপরদিকে সবজি বাগানের বিষমুক্ত শাকসবজিও উৎপাদন শুরু হয়েছে।
কৃষক আব্দুল কাদের বাচ্চু জানান, চলতি মৌসুমে উৎপাদিত শাকসবজি দ্বারা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন তিনি।
কৃষকরা আরো জানান, মডেল গ্রামের কম্পোনেন্টগুলো হচ্ছে বছরব্যাপী চলমান প্রক্রিয়া। এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করলে আমরা বাগানের শাকসবজি ফলমূল থেকে পাব পুষ্টি। আর শেডে উৎপাদিত জৈব সার জমিতে ব্যবহার করে পাব অধিক ফসল। যদি বাণিজ্যিক ভাবে জৈব সার উৎপাদন করতে পারি তাহলে আর্থিকভাবে আমরা হব লাভবান।