শনিবার ● ১৪ জানুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৯ কোটি টাকার কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি
ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগের ৯ কোটি টাকার কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি :: ঝালকাঠির রাজাপুরে বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের সাড়ে ৮ কিলোমিটার অংশ প্রশস্থকরণ কাজে নিন্মমানের সামগ্রী ব্যবহারসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
এ কাজে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পুরোনো মজবুত মহাসড়কও। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এলাকাবাসীর। আর ঠিকাদার বলছে, চার বছর আগের ব্যয় অনুযায়ী কার্যাদেশ পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সব জিনিসের দাম বেড়েছে এখন।
জানা যায়, আঞ্চলিক মহাসড়কের রাজাপুর অংশে ৮.৫৯২ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্থকরণ ও শক্তিশালীকরণ প্রকল্পের আওতায় উভয় পাশে তিন ফুট করে মোট ৬ ফুট ইটের সলিং কাজ চলছে। পদ্মা ব্রিজ চালু হওয়ার ফলে সড়ক যোগাযোগ ও যান চলাচলে দূর্ভোগ ও ঝুকি হওয়ায় এ উন্নয়নমূলক কাজ শুরু হয়।
ফলে ১৮ ফুট প্রশস্থ সড়কটির প্রস্থ দাঁড়াবে ২৪ ফুট। কাজটির বাস্তবায়ন করছে ঝালকাঠি সড়ক ও জনপথ বিভাগ। ৪ কোটিরও বেশি টাকা বরাদ্দে এ কাজ বাস্তবায়ন করছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ফারুক হোসেন।
সড়ক বিভাগের তথ্যানুযায়ী, রাজাপুরের মেডিকেল মোড় থেকে পাশবর্তী পিরোজপুর জেলার কাউখালী উপজেলার সীমান্ত শিয়ালকাঠি ব্রিজ পর্যন্ত ৮.৫৯২ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে প্রশস্থরণের কাজ চলছে।
২১ ইঞ্চি গভীর করে নিচে বালু দিয়ে সমান করে ৩ স্তরের ইট বিছিয়ে পাশের এজিং (ইটের সারি) এবং মাটি দিয়ে এজিং মজবুত ও শক্ত করানোর কথা কার্যাদেশে উল্লেখ করা হয়। এতে ব্যয় বরাদ্দ করা হয় সাড়ে ৪ কোটি টাকা।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক প্রশস্থকরণে নিম্ন মানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ইটের সলিং উপরিভাগে ভালো মানের ও সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা হলেও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় স্তরে ফাঁকা ফাঁকা করে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে।
প্রতিটি ইটের দূরত্ব থাকছে দেড় থেকে দুই ইঞ্চি। নির্দেশিত ২১ ইঞ্চির জায়গায় ১৫-১৬ ইঞ্চি গর্ত করেই বালু ফেলে সমান করে ইট বিছানো হচ্ছে। যাচ্ছেতাইভাবে কাজ করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে পুরোনো মজবুত সড়কও।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলিফ এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. জুয়েল জানান, ইটভাঁটায় অর্ডার করা হয়েছে ভালো ইটের। ট্রাক নিয়ে গেলে তারা যেভাবে ইট দেয়, সেগুলোই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইটের মাঝে যাতে ভালোভাবে বালু ঢুকে আটকে থাকতে পারে এ জন্য ফাঁকা রাখা হচ্ছে। যেহেতু মেশিন দিয়ে খনন করা হচ্ছে, তাই সব জায়গার মাপ সমান হচ্ছে না।
২০১৯ সালের টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যে ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে সে অনুযায়ী কার্যাদেশ পেয়েছি। এখন সব জিনিসেরই দাম বেশি। যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার মধ্যেই কাজ সারছি।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. ফখরুল ইসলাম জানান, ব্যয় বরাদ্দ হয়েছে ৪ কোটি টাকারও বেশি। পিরোজপুর ও ঝালকাঠির যৌথ এ কাজে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি টাকা।
কাজের মানের বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি জানান, প্রতিটি ইটে সামান্য ফাঁকা থাকবে বালু ঢোকার জন্য; কিন্তু দেড়-দুই ইঞ্চি ফাঁকা রাখতে পারবে না।
সঠিকভাবে গভীর করে ভালো মানের ইট দিয়ে কাজ করানোর কথা কার্যাদেশে উল্লেখ রয়েছে। তাদের অনেকভাবে বললেও শ্রমিকরা কোনো কথা না শুনেই যেভাবে ইচ্ছা সেভাবে কাজ করছে। সরেজমিন পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।