মঙ্গলবার ● ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি নেতা, বড় ভাই আ’লীগ নেতার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি নেতা, বড় ভাই আ’লীগ নেতার ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি প্রতিনিধি :: সম্পর্কে তারা তিনজন আপন ভাই, থাকেনও এক ছাদের নিচে। কিন্তু দুজন করেন বিরোধীদল বিএনপি ও ছাত্রদল, অপরজন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত, দলে আছে গুরুত্বপূর্ণ পদও। ছোট ভাই শামীম তালুকদার ও মুসফিকুর রহমান বাবু যখন আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে সরব থাকেন, ঠিক তখন বড় ভাই মঈন তালুকদারকে দেখা যায় বিপরিত মেরুতে অর্থাৎ বিএনপিবিরোধী রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচিতে বা সরকারি অনুষ্ঠানে। মঈন তালুকদার শুধু ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদকই নন, তিনি সদর উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানও বটে। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী করে এই বিশেষ মর্যাদা পেয়েছেন। অথচ এই আওয়ামী লীগ নেতার ছোট দুই ভাই একজন করেন বিএনপি, আরেকজন করে সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, তারপরে আবার সরকারবিরোধী প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজপথে অগ্রভাগে থাকছেন দুই ভাই। আপন তিন ভাই দুই দলের নেতা এবং তাদের এক ছাদের নিচে বসবাস করা নিয়ে বিগত সময়ে স্থানীয় রাজনীতিতে এবং রাজনৈতিকদের মুখে নানান কথা শোনা যাচ্ছিল। সর্বশেষ গতকাল ৪ ফেব্রুয়ারি ছোট ভাই জেলা যুবদলের আহ্বায়ক শামীম তালুকদার উল্লেখসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে বরিশালের জিলা স্কুল মাঠে আয়োজিত বিএনপির সমাবেশে যোগ দেওয়ায় ঝালকাঠির রাজনৈতিক অঙ্গনে বিষয়টি আলোচনায় বিশেষ প্রাধান্য পাচ্ছে। ছোট দুই ভাইয়ের রাজনৈতিক অবস্থান এবং সরকারবিরোধী কর্মকান্ড রোধে বড় আওয়ামী লীগ নেতার ভূমিকা কী তা নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন।
আওয়ামী লীগ দলীয় একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এতদিন এই বিষয়টি জেলার শীর্ষনেতারা গুরুত্ব দিয়ে না দেখলেও বিএনপি সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনের দিকে ধাবিত হওয়ায় এখন বেশ আলোচিত হচ্ছে এবং দলের অভ্যন্তরে বহু কথা রটছে। ফলে আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাইদ্বয়ের ওপর সতর্ক দৃষ্টি রাখতে শুরু করেছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতা মঈন তালুকদার দাবি করেছেন, ছোট ভাই শামীম ও বাবুর সাথে তার কোনো রাজনৈতিক যোগাযোগ বা সমঝোতা নেই।
তবে জেলার একাধিক রাজনৈতিক অভিযোগ করেন, যুবদল নেতা শামীম ও ছাত্রদল নেতা বাবু আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকলেও তাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করার উদাহরণ কম রয়েছে। সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা হলে তারা সেসব মোকাদ্দমায় আসামি হচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু রাতারাতি পুলিশ তাকে খুঁজে পায় না। কিছুদিন পরে উচ্চআদালত থেকে আগাম জামিনে এসে ফের দলীয় কর্মসূচি এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামেন।অনেকে ধারণা করছেন, শামীম এবং বাবু বিএনপির রাজনীতিতে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত এবং সরকারবিরোধী কর্মকান্ড করলেও বড় ভাই প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা ও ভাইস চেয়ারম্যান হওয়ায় কিছুটা সুবিধা পাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে বিএনপির সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় কোনো মামলা হলে তারা আসামি হচ্ছেন, কিন্তু দ্রুত গ্রেপ্তার হওয়ার নজীর নেই। বরং মামলা হবে, গ্রেপ্তার হতে পারেন এসব বিষয় যেন তারা আগেই আঁচ করতে পেরে উচ্চআদালত থেকে জামিন আনতে প্রস্তুত থাকেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা বড় ভাই মঈন গত তিন ফেব্রুয়ারি ঝালকাঠি সরকারি কলেজ মাঠে ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সম্মেলনে অংশ নেন এবং সেখানে বিএনপির নেতিবাচক কর্মকান্ড তুলে ধরে বক্তব্যও রাখেন। ওই সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন সাবেক শিল্পমন্ত্রী ঝালকাঠি সদর আসনের এমপি আমির হোসেন আমু। বিপরিতে ছোট ভাই শামীম বরিশালে বিএনপির সমাবেশে যোগ দিতে কর্মী-সমর্থকদের প্রস্তুত করছিলেন। অবশ্য তিনি ৪ ফেব্রুয়ারি বরিশালের ওই সমাবেশে উল্লেখসংখ্যক কর্মী-সমর্থক নিয়ে যোগও দেন।
শহরের পশ্চিম ঝালকাঠিতে তিন ভাইয়ের এক ছাদের নিচে বসবাস এবং ছোট দুজন বিরোধীদল বিএনপির সাথে থেকে সরকারবিরোধী কর্মকান্ড করায় বড় ভাই আ’লীগ নেতার ভূমিকা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেছেন। কারও কারও মতে, আওয়ামী লীগ নেতার কারণে তার দুই ভাই বিএনপি করলেও হয়রানি তেমন একটা লক্ষ্যণীয় নয়।
বিএনপি ও ছাত্রদল নেতা দুই ভাইয়ের সাথে রাজনৈতিক কোনো সম্পর্ক বা সমঝোতা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা মঈন তালুকদার। বরং বলছেন, দুই ভাইকে বিএনপির রাজনীতি থেকে ফেরাতে এবং কোনো সরকারবিরোধী কাজ না নামতে ইতিপূর্বে বেশ কয়েকবার পরামর্শ দিয়েছেন, কিন্তু তাঁরা শোনেননি।
আপনার ক্ষমতার প্রভাব কী তাদের সরকারবিরোধী কাজে উৎসাহিত করছে- এমন প্রশ্নে আওয়ামী লীগ নেতা বলেন- এক ছাদের নিচে থাকি ঠিই, কিন্তু রাজনৈতিক প্রশ্নে কোনো ছাড় নয়, তাছাড়া স্থানীয় পুলিশ-প্রশাসনও তাদের ছাড় দেয় না। এইতো কদিন হলো শামীম জেল খেটে বেরিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে মামলাও আছে ডজনখানেক।
এই বিষয়ে জানতে ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও অপরপ্রান্ত থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে এই নেতার ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, বড় ভাই আওয়ামী লীগ নেতা ছোট দুই ভাই বিএনপি-ছাত্রদল করে এবং তারা সরকারবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি ইতিমধ্যে নানান ভাবে কানে এসেছে। এবং আগামীতে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী চূড়ান্ত আন্দোলনে জোর প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামতে পারেন সেটিও শোনা যাচ্ছে। এই বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অন্দরমহলে আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। ফলশ্রুতিতে জেলার শীর্ষনেতারা বিষয়টি নজরদারিতে রেখেছেন এবং সার্বিক গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছেন।’