মঙ্গলবার ● ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » ঝালকাঠি » ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নির্মান কাজের ধীরগতি
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ১৫০ শয্যার নির্মান কাজের ধীরগতি
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি :: ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত প্রকল্পের কাজের সমাপ্তি নিয়ে চরম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। একনেকের সভায় অনুমোদিত ৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মানাধীন এই প্রকল্পের মেয়াদ প্রথম দফায় শেষ হলেও কাজ শেষ করতে পাারেনি ঠিকাদার।
প্রথম ধাপে ২০১৯ সালে কাজ শেষ হবার কথা ছিল। দ্বিতীয় দফায় চলতি বছরের জুন মাসে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবার কথা রয়েছে। কাজের সাথে কয়েকটি ধাপের টেন্ডারের কাজ শুরু না হওয়া, একাধিকবার নকশা পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে এই জটিলতার কথা জানিয়েছে ঠিকাদার কোম্পানী। এদিকে ঠিকাদারের দাবি দরপত্র অনুযায়ি আসল কাজ শেষ হলেও অসমাপ্ত কাজ যথা সময়ে শেষ হবে। এ পর্যন্ত ৯টি ধাপে নকশা পরিবর্তন হওয়ায় কাজ সমাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে বলে জানা গেছে।
গত ২৪ জানুয়ারি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্প ভবনটির দ্বিতীয় ধাপের টেন্ডারের ৭ তলা ভবন নির্মানের কাজ শেষ। ৮ তলার কাজ চলছে। এছাড়া প্রথম ধাপের ৫ তলা পর্যন্ত ভবনের কাজ শেষ হলেও এখনো আনুসঙ্গিক অনেক কাজ বাকি। কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা খুবই সামান্য। প্রথম ধাপের ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত মুল ভবনের কাজ শেষ হলেও দরজা, জানালা, ইলেকট্রিক, পানির লাইন ও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থার অধিকাংশ কাজ বাকি। এ ছাড়াও বিদ্যুৎ সাবষ্টেশনের ৫ তলা সার্ভিস ভবনের টেন্ডার হলেও শুরু হয়নি কাজ । ফলে প্রকল্প ঠিকাদার কার্যাদেশ পেলে সরঞ্জাম এনে কোথায় রেখে কাজ সম্পন্ন করবে তাও অনিশ্চিত। এনিয়েও সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। এছাড়াও অগ্নি নির্বাবক সরঞ্জাম ও লিফটের কাজ এখন পর্যন্ত শুরুই করা হয়নি। সূত্র জানায় ভবন নির্মান ঠিকাদারকে লিফট স্থাপনের কাজ দিয়ে বাতিল করায় এখানেও সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। ডিপিপিতে এ প্রকল্পের লিফট স্থাপনের জন্য বরাদ্দ ছিল ৪ কোটি টাকা। কিন্তু ইহা বাতিল করে নতুন টেন্ডারে আরো দেড় কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় এ কাজের প্রক্রিয়াও বন্ধ আছে। অপরদিকে নবম তলার টেন্ডার না হওয়ায় ছাদে পানির ট্যাংকি ও লিফটের কোন কাজ করা যাচ্ছেনা।
এ প্রকল্পের ভবন নির্মানের কাজ করছে বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স কোহিনুর এন্টারপ্রাইজ ও জিএম কনস্ট্রাকশন। কথা হয় উভয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প প্রকৌশলী কবির আহমেদের সাথে। তিনি জানালেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর ২০১৮ সন থেকে ২০২৩ সন পর্যন্ত ৯টি ধাপে পরিবর্তন আনা হয়েছে নকশায়। পাথমিক পর্যায়ে ৫ গ্রুপে ২শত শ্রমিক কাজ করলেও এখন কাজের চাপ না থাকায় সামান্য শ্রমিক কাজ করছে। প্রথম দরপত্রের ৩৫ কোটি টাকা উত্তোলন করার কথা স্বীকার করেন তিনি বলেন, ‘সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলার কাজের জন্য দ্বিতীয় টেন্ডারে বরাদ্দের ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকার কোন বিল পাইনি। কিন্তু ৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। তাই অর্থসংকট থাকায় কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছি।
ঠিকাদার কোম্পানী ও সংশ্লিষ্ট গণপূর্ত বিভাগের সাথে কথা বলে জানাযায়, দুই দফায় নকশা বদলে ভবনটি ছয়তলা থেকে নবম তলার অনুমোদন নেয়া হয়েছে। এর বিপরীতে নির্মাণ বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে তিন দফায়। প্রথম দফায় প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা ছিল। বর্ধিত মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে। তবে এখনো নির্মাণসহ অধিকাংশ কাজ বাকি। ভবনটির প্রথম টেন্ডারে দরপত্র ছিল ছয়তলা পর্যন্ত। যার বরাদ্দ ছিল ৩৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা। পরে একই কাজের বরাদ্দ বাড়িয়ে ৪০ কোটি টাকা করা হয়। কাজের ধীরগতির মধ্যেই গত বছর আরও ৩ তলা বাড়িয়ে ভবনের নবম তলা পর্যন্ত নকশা ও বরাদ্দের অনুমোদন দিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। এ জন্য আরও ৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অষ্টম তলার ছাদ ঢালাই হয়েছে। টেন্ডার না হওয়ায় বাকি রয়েছে নবম তলার নির্মাণ কাজ।
এ কাজের ঠিকাদার জিএম কনষ্ট্রাকশনের প্রপাইটর গোলাম মাওলা ফরহাদ জানান, প্রকল্পের প্রথম ধাপের ৬ তলা পর্যন্ত সার্বিক কাজ শেষ। দ্বিতীয় ধাপের ৭ ও ৮ তলার ছাদসহ বাকি কাজ শেষ। ভিতরের কাজের ডিজাইন ছাড়া কাজ করা যাচ্ছেনা। ২ মাস আগে ডিজাইন পেয়ে কাজ শুরু করেছি। টেন্ডার অনুযায়ি আমার কাজ শেষ হবে মেয়াদের আগেই। কিন্তু এ কাজে দেরি হবার এক মাত্র কারণ দফায় দফায় নকশা পরিবর্তন। আমি কার্যাদেশর অতিরিক্ত কাজ করেছি। এখন নবম তলার টেন্ডার হলে কাজের সমাপ্তি টানা যাবে।
গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়সাল আলম জানান, বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্প নবম তলায় আইসিইউ ও সিসিইউ নির্মানের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক গত ২২ ডিসেম্বর ২৪৯২ স্মারকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বরিশালের তত্তাবধায়ক প্রকৌশলী নবম তলা টেন্ডারের প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৫ তলা সার্ভিস ভবনের টেন্ডার হলেও কাজ শুরু হয়নি
বিদ্যুৎ সাবষ্টেশনের। এ কাজের শুরু ও শেষ ঠিকাদারের সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে। তবে ঠিকাদার কাজ না করায় দেরি হচ্ছে। এ জন্য ইতিমধ্যেই তাকে তাগেদা দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের নবম তলার কাজ সমাপ্ত না করা পর্যন্ত কিছু কাজ অসমাপ্ত রাখা হয়েছে। ফলে পানি ট্যাংক ও লিফটের কাজ বন্ধ থাকায় জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের মেয়াদে পুরো কাজ শেষ হবে কিনা এমন প্রশ্নে উত্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ৩০ জুনের মধ্যে কাজ শেষ করতে ঠিকাদরকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি পাঁচতলা ভিত বিশিষ্ট সার্ভিস ভবন, অগ্নিনির্বাপক পাইপ লাইন ও চারটি লিফট স্থাপনের জন্য যাবতীয় কাজের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।