মঙ্গলবার ● ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » কৃষি » বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোয় ৬শ’ হেক্টর বোরো ফসলের আবাদ ব্যাহত
বাঁধ দিয়ে পানি আটকানোয় ৬শ’ হেক্টর বোরো ফসলের আবাদ ব্যাহত
এস.এম. সাইফুল ইসলাম কবির, বাগেরহাট প্রতিনিধি :: বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে একটি প্রবাহমান খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে একটি প্রভাবশালী মহল। শত শত কৃষকের এখন ৬শ’ হেক্টর বোরো ধানের ক্ষতির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা সোমবার ওই মাঠে বাঁধটি অপসারনের দাবিতে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের ছোট কুমারখালী গ্রামজুড়ে চিংড়াখালী বলেশ্বর নদীর প্রবাহমান তালতলা খালের প্রশাখা কুমারখালী খাল। এ খালটির একদিকে পলিপড়ে ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে গত দুই সপ্তাহের পূর্বে ওই গ্রামের মিন্টু হাওলাদার ব্যক্তিসার্থে খালে বাঁধ দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ করে রেখেছেন। যে কারনে কুমারখালী, বৌলপুর, কিছমত বৌলপুর এ ৩টি মৌজায় বোরো ধানের প্রায় ১ হাজার বিঘার বড় ফসলের মাঠে পানি প্রবেশে বাঁধা হওয়ায় পুরো মাঠ ফেটে এখন চৌচির হয়ে পড়েছে। এতে ৩ গ্রামের ৮ শতাধিক কৃষক এখন তাদের জমিতে পানি তুলতে না পারায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বোরো ধানের বীজতলা মরে যাওয়ার সম্ভাবনায় আতংকে রয়েছে তারা। মাঠের মধ্যে বিভিন্নস্থানে বোরো বীজ হলুদ রং ধারন করে শুকিয়ে যাচ্ছে বীজতলা। হাজার হাজার টাকা ব্যায় করে কৃষক তাদের বোরো ফসল ঘরে তুলতে পারবে কিনা এ নিয়ে শংশয় রয়েছেন তারা।
ওই ফসলী মাঠের জমির মালিক আব্দুর রহিম ফকির, নোমান খন্দকার, শহিদ ফকির, বাবু হাওলাদার, মারুফ শিকদার, ছালাম ফকির, সাইদ ফকির, শহিদুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান সহ একাধিক কৃষকরা বলেন, বছরে শুধুমাত্র বোরো ধানের ফসল ফলায় তারা। যা থেকে চাহিদা মিটিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ মন ধান বাজারে ধান বিক্রি করে পুরো বছর পরিবারের সংসার চলে তাদের। কৃষকের বিঘাপ্রতি জমিতে খরচ হয়েছে ২০/২৫ হাজার টাকা। এখন বাঁধের কারনে প্রথম গোনে মাঠে পানি তুলতে পারেনি। এ গোনেও যদি পানি তুলতে না পারে তাহলে আর ফসল হবে না। রেকর্ডীয় খাল কিভাবে বাঁধ দিয়ে এ ভোগান্তি করেছে আমাদের। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে অবহিত করেও কোন সমাধান হয়নি।
এ বিষয়ে মিন্টু হাওলাদার বলেন, ৪ বছর ধরে আমার জমি থেকে পানি তুলেছে। রেকর্ডীয় খালটি উত্তর পাসে। এ বছর আর পানি তুলতে দিবো না।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার আকাশ বৈরাগী জানান, বোরো মৌসুমে কৃষক মাঠে পানি দিতে না পারলে বীজতলা সম্পূন্ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ফসল হবে না। ওই গ্রামের বিষয়টি তিনি অবহিত নন। তবে, উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তাকে সরেজমিনে পাঠানো হবে। বৃদ্ধমান সমস্যার বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে কথা বলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাটে উদ্বোধনের অপেক্ষায় উপজেলা কমপ্লেক্স নতুন আধুনিক ৫ তলা ভবন
বাগেরহাট :: আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে উদ্বোধনের অপেক্ষায় বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স নতুন ভবন। বহুল প্রতিক্ষিত ৫ তলা বিশিষ্ট এ ভবনের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আর এজন্য সৌন্দর্য় বৃদ্ধি পেয়েছে গোটা উপজেলা এলাকা। দেশের অন্যতম উপজেলা হিসেবে পরিচিত মোরেলগঞ্জ উপজেলা। এটি আয়তনের দিক থেকে দেশের ২য় বৃহত্তম। ১৬টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এক সময়ের লিটেল কলকাতা খ্যাত এই মোরেলগঞ্জ।
এ উপজেলার অবকাঠামোগত দিকগুলো উন্নয়নের দিক থেকে দিনদিন বেশ উন্নত হতে চলেছে। একের পর এক শিক্ষা প্রতষ্ঠান, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট উন্নয়নসহ গড়ে উঠতে চলেছে নানান সরকারি-বেসকরকারি স্থাপনা। ঠিক এমনই একটি দৃষ্টি নন্দিত স্থাপনা হচ্ছে সম্প্রসারিত ‘মোরেলগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প ভবন’।
জানা গেছে, ২০১৯ অর্থবছরে শুরু হয় উপজেলা পরিষদ নতুন কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের কাজ। ১০ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩৪ কক্ষ ও দুই অংশবিশিষ্ট এই ভবনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ২০২২ সালের জুন মাসে। নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পালন করেছে মেসার্স এস এস ব্রাদার্স নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
উপজেলা পরিষদের আওতায় মোট ১৭টি সরকারি দপ্তর রয়েছে। এসব দপ্তরের অধিকাংশই স্থানান্তরিত হচ্ছে উপজেলা সম্প্রসারিত প্রশাসনিক কমপ্লেক্স ভবনে।
সরকারি সকল সুবিধা একত্রিভাবে সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছে ৫ তলা বিশিষ্ট এ আধুনিক ভবনটি। উপকূলীয় এলাকা বিবেচনায় সাইক্লোন টাইপের নির্মিত ভবনের সাথে রয়েছে একটি যুক্ত সড়ক ও নির্মিত হয়েছে পার্কিং সুবিধা। নিচ তলায় ভিন্নভাবে সক্ষমতা বৃদ্ধি সেবা গ্রহীতাদের জন্য রয়েছে বসার স্থান।
এ ভবন থেকে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানদ্বয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ উপজেলা প্রশাসনের অধিকাংশ দপ্তরের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এছাড়া রয়েছে ১২৮ সিট ধারন ক্ষমতাসম্পন্ন ৫ হাজার ১শ বর্গফুটের একটি হলরুম। রয়েছে আধুনিক কনফারেন্স রুম। জেন্ডার সমতা বিধানের কথা চিন্তা করে নারী-পুরুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে পৃথক টয়লেট ও সৌচাগার।
একেক অফিস একেক স্থানে হওয়ায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় সেবা প্রত্যাশী সাধারণ জণগনকে। এসব সমস্যা উত্তোরণে গ্রাম হবে শহর বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এমন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উপজেলা উপজেলার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের পাশাপাশি পরিষদের প্রশাসনিক ভবনকে আধুনিকায়নের আওতায় আনা হয়। উপজেলা পরিষদের সার্বিক সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর অর্থায়নে নির্মিত হয়েছে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স নতুন ভবন।
এবিষয়ে মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম জানান, পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা সম্বলিত প্রশাাসনিক কর্মকান্ডকে গতিশীল করতে সম্প্রসারিত নতুন ভবন নির্মিত হওয়ায় উপজেলা পরিষদের কার্যক্রমগুলো একই ছাদের নিচ থেকে পরিচালিত হবে। মূলত জনসাধারণকে সেবা নিশ্চিত করতেই নির্মাণ হয়েছে এ অত্যাধুনিক উপজেলা সম্প্রসারিত প্রশাসনিক ভবন ও হল রুম। যা এখন স্বপ্ন নয়, উদ্বোধনের অপেক্ষায়।
তিনি আরও জানান, উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প ভবনটির কাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। খুব দ্রæত এই ভবনটি আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা হবে। নতুন ভবনে কার্যক্রম শুরু হলে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি সকল দাপ্তরিক কাজ একই ছাতার নিচ থেকে পরিচালিত হবে এবং সেবা গ্রহনকারী জনসাধারণ তাদের সকল সুবিধা এবং সেবা একত্রিতভাবে গ্রেহন করতে পারবেন।