বৃহস্পতিবার ● ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » কুষ্টিয়া » কুষ্টিয়া প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ৬ কোটি টাকা আদায় ইটভাটা সমিতির
কুষ্টিয়া প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ৬ কোটি টাকা আদায় ইটভাটা সমিতির
কে এম শাহীন রেজা, কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি :: কুষ্টিয়ায় এবারও কাঠ পুড়িয়ে অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করতে মালিকদের সংগঠন ৬ কোটি টাকা চাঁদা তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ইতিমধ্যে সমিতির নামে অবৈধ ভাটা মালিকদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে। আর এই টাকা দিয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে এই মৌসুমে ইট পোড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসেবে কুষ্টিয়া জেলায় ১৬১টি ইটভাটা আছে। এরমধ্যে পরিবেশের ছাড়পত্র আছে মাত্র ১৮টির। বাকি সব চলছে অবৈধ উপায়ে। এসব ভাটায় ইচ্ছে মতো পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, ব্যবহার হচ্ছে কৃষি জমির উপরিভাগের মাটি। এ কারণে উজাড় হচ্ছে বৃক্ষ, হচ্ছে পরিবেশ দূষণ। ক্ষতি হচ্ছে কৃষিরও। এদিকে চাঁদা তোলার বিষয়টি ইটভাটা মালিকরা স্বীকার করলেও অস্বীকার করেছেন ইটভাটা মালিকদের নেতারা।
গত মাসে দৌলতপুর উপজেলার ৬টি অবৈধ ইটভাটাকে ২৪ লাখ টাকা জরিমানা করেছে উপজেলা প্রশাসন। নাম-প্রকাশ না করার শর্তে একজন ইটভাটা মালিক বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করতে ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা ভাটা প্রতি ২লক্ষ ২০হাজার টাকা করে চাঁদা তুলেছেন। ১লক্ষ ৮০হাজার টাকা চাঁদা দিয়েও বাকি টাকার জন্য ইটভাটা মালিক সমিতির নেতারা চাপ দিচ্ছেন। টাকা দিতে রাজি না হলে ভাটায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও প্রশাসনকে দিয়ে জরিমানা করার হুমকি দিচ্ছেন সমিতির নেতারা। কুষ্টিয়ার ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়ারুল ইসলাম বলেন, ইটভাটা মালিকেরা একজন ফকিরকে ভিক্ষা দেয় না। আর ইটভাটা সমিতিকে চাঁদা দিয়েছেন এটা সত্যি হাস্যকর। যারা এমনটি বলেছেন এটা তাদের মন গড়া কথা।
কুষ্টিয়া পরিবেশ ক্লাবের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব বলেন, অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে হাইকোর্টের নির্দেশনা রয়েছে। আইনের তোয়াক্কা না করে ইটভাটাগুলোতে অবাধে কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। সামাজিক বনায়নের গাছ কেটে এসব কাঠ সংগ্রহ করায় হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে প্রশাসনের তেমন তৎপরতাও নেই। বার বার পরিবেশ ক্লাবের পক্ষ থেকে জানানো হলেও নামমাত্র দুই একটি ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। যে ভাটা মালিক চাঁদা দেয় না তাদের উপরেই এ অভিযানটা হয়। অথাৎ বোঝা যাচ্ছে চাঁদার সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তর জড়িত রয়েছে।
এ ব্যাপারে পরিবেশবাদী খলিলুর রহমান মজু বলেন, সংশ্লিষ্টদের লুকোচুরি খেলাতে জণগণকে রক্ষা করা উচিৎ। নিয়মতান্ত্রিক যেটা সেই ব্যবস্থা করা উচিৎ। পরিবেশ অধিদপ্তর কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক হাবিবুল বাসার বলেন, কোনো চেষ্টায় তাদের কাজে আসবে না। আর টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার কথা যদি কেউ বলে থাকে এটা সত্য নয়। আমরা বসে নেই, ধারাবাহিক অভিযান চলছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ৭টি অবৈধ ইটভাটায় অভিযান চালানো হয়েছে। আবারও অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, অবৈধ ইটভাটা মালিকদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সরকারী সম্পদ লুটে খাচ্ছে কুষ্টিয়ার দুই প্রভাবশালী নেতারা
কুষ্টিয়া :: কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার মহাজোটের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও জাসদের নানা বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও পদ্মা নদী ও তীরবর্তী এলাকা থেকে অবৈধভাবে মাটি এবং বালু উত্তোলনে দু’দলের নেতাদের পিরিত গলায় গলায়। উভয় দলের নেতারা মিলেমিশে উপজেলার তিন ইউনিয়নের সাতটি স্থান থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু ও মাটি উত্তোলন করে বিক্রি করছেন। এমনকি ব্যক্তি মালিকানাধীন কৃষিজমি থেকেও জোর করে মাটি বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি ভেড়ামারার বাহিরচর, মোকারিমপুর ও বাহাদুরপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, দেদার তোলা হচ্ছে নদী ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার মাটি ও বালু। পদ্মাবেষ্টিত বাহিরচর ইউনিয়নের ১২ মাইল এলাকায় চারটি, মোকারিমপুর ইউনিয়নের বাগগাড়ি মাঠসহ দুটি এবং বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা গ্রামে একটি স্থান থেকে বালু ও মাটি তুলে বিক্রি হচ্ছে।
এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, সাতটি স্পট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০ ট্রাক মাটি ও বালু উত্তোলন করা হয়। এর দাম ৭ থেকে ১০ লাখ টাকা। বাহিরচরে উত্তোলনে জড়িত ইউনিয়ন জাসদের সাধারণ সম্পাদক আবু হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সোহানুর রহমান সোহাগ ও শফি মেম্বারদের সিন্ডিকেট। মোকারিমপুর ইউনিয়নে মাটি উত্তোলনে জড়িত ফকিরাবাদের যুবলীগ নেতা কুতুব উদ্দিন। বাগগাড়ি এলাকায় একই কাজ চলছে ইউনিয়ন যুবজোটের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম তুষার ও যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাতের নেতৃত্বে। বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা ঘাট এলাকায় ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে ইউপি চেয়ারম্যান সোহেল রানা পরনের বিরুদ্ধে।
এসব কাজে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম ছানা উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু এবং বর্তমান মেয়র ও উপজেলা যুবজোটের সহসভাপতি আনোয়ারুল কবির টুটুলেরও নাম উঠে এসেছে। বাগগাড়ি মাঠ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, তীর থেকে নদীর প্রায় দেড় কিলোমিটার ভেতরে গিয়ে ট্রাকে বালু তুলে আনা হচ্ছে। সেখানে যাওয়ার পর মোটরসাইকেল নিয়ে হাজির হন কয়েকজন। এর মধ্যে যুবজোট নেতা তুষারও ছিলেন। তিনি নিজেকে পৌর মেয়র টুটুলের লোক বলে পরিচয় দেন। বাহাদুরপুর ইউনিয়নের রায়টা নতুনপাড়া পাথরঘাটের পাশেই কৃষি জমিতে দুটি ভেকু মেশিন কাটা হচ্ছে। স্থানীয় দুই কৃষক বলেন, আমাদের জামি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন চেয়ারম্যান পবন ও তাঁর লোকজন।
ইউপি চেয়ারম্যান পবনকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, রায়টা নতুনপাড়া পাথরঘাটের পাশের জায়গাটি নাটোর জেলার মধ্যে। একজন প্রতিমন্ত্রীর ভাই জায়গাটি ইজারা নিয়ে আমাদের মাটি কাটতে বলেছেন। আওয়ামী লীগ নেতা শামীমুল ছানা দাবি করেন, বাগগাড়ি সংলগ্ন নদী থেকে বালু কাটার ইজারা আছে। আর চেয়ারম্যান পবনের শত্রু বেশি। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলবে, এটা স্বাভাবিক। আমাদের নামও বলতে পারে নেতাকর্মীরা। অন্যায় কিছু করছি না। উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠু বলেন, আমি অনেক কিছু জানি, তবে বলতে পারি না।তবে আমি এসব কাজের সঙ্গে থাকি না। পৌর মেয়র ও জাসদ নেতা টুটুল বলেন, আমি প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করে এসব বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। কোনো চোর-বাটপার আমার নাম ভাঙিয়ে এসব করতে পারে। এটার সঙ্গে আমার ও দলের কোনো নেতার সম্পর্ক নেই। ইউএনও হাসিনা মমতাজ বলেন, আমি সরেজমিন গিয়েছিলাম বিষয়টি দেখতে। এসব বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার অফিসের কেউ জড়িত থাকলেও ব্যবস্থা নেব। জেলা প্রশাসক সাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান।
মাসুদ খাঁ হত্যাকাণ্ডে প্রাণনাশের হুমকি দিলেন খোকা, থানায় জিডি
কুষ্টিয়া :: কুষ্টিয়ার বহুল আলোচিত ঐতুব কেমিক্যালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলে করিম খোকার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়া মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন স্থানীয় হাসিব খান নামের এক যুবক। গত ৪ জানুয়ারী কুষ্টিয়া থানায় হাজির হয়ে সাধারণ ডায়েরি করেন ঐ ভুক্তভোগী যার নং ২৭১। সাধারণ ডায়েরির বরাত দিয়ে জানা যায়, কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া এলাকার মৃত আব্দুর রশিদ এর ছেলে ফজলে করিম (৬৮) পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতি করার চেষ্টা করে আসছে। সবশেষ গত ৩ জানুয়ারী আনুমানিক বিকাল সাড়ে ৪টার সময় মহাশ্মশান রোডের মাঠে যাত্রাকালে ভুক্তভোগীর পিতা মাসুদ খাঁর হত্যা মামলা তুলে নেবার জন্য বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন ও প্রাননাশের কথা বলে। তাছাড়া অভিযুক্ত থোকা প্রায়ই বিভিন্ন স্থানে ভুক্তভোগীর পিতা হত্যার বিচারাধীন মামালা নিয়ে মিথ্যা কথা প্রচার করা সহ ভুক্তভোগীর নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়ানোর কথা বলে থাকেন। যার কারণে ভুক্তভোগী আতংকে দিন পার করছে।
আরো জানা যায়, গত ২৭ জুন কুষ্টিয়ার আলোচিত মাসুদ খাঁ হত্যাকাণ্ডে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১০ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর লাবলু সহ রঞ্জু হোসেন, মাসুদ রানা, দীন ইসলাম ও রাসেল হোসেনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। হত্যাকাণ্ডের এই ৫ আসামি অভিযুক্ত খোকার আস্থাভাজন। এজন্য বিভিন্ন সময় তাদের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে খোকার বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য, গত ০৫ মে ২০২২ ইং তারিখ ভোর ৫.০০ ঘটিকার সময় ১-৫ নং আসামি মাসুদ খাঁর বাড়ীর সামনে তার নাম ধরে ডাকাডাকি করতে থাকলে মাসুদ ও তার স্ত্রী এবং পরিবারের বেশ কয়েকজন সদস্য বাড়ির বাইরে বের হয়ে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে উপরে উল্লেখিত আসামিগন সহ অজ্ঞাতনামা ৬/৭ জন আসামি জরুরি কথা বলার জন্য মাসুদ খাঁকে তাদের সাথে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে সারাদিন মাসুদ বাড়ী ফিরে না আসায় তার স্ত্রী সহ পরিবারের অনান্য সদস্যরা উল্লেখিত আসামিদের বাড়িতে সহ সম্ভাব্য সকল জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার পরও মাসুদের কোন সন্ধান না পেয়ে চিন্তায় পরে যান। তাছাড়া মাসুদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
বর্তমানে মামলাটি আদালতের বিচারাধীন ও কুষ্টিয়া সি.আই.ডি কর্তৃক তদন্তাধীন রয়েছে। উক্ত মামলার ৫জন আসামী বর্তমানে কারাবন্দী রয়েছে। এই মামলার স্বাক্ষী ও নিহতের সন্তান এবং ‘জাতীয় দৈনিক বর্তমান কথা প্রত্রিকার’ স্টাফ রিপোর্টার “মোঃ হাসিব খান” বলেন যে, আমার পিতার হত্যাকান্ড নিয়ে ফজলে করিম বিভিন্ন সময় অপ্রিতিকর কথাবার্তা বলা ও মামলা তুলে নেওয়ার হুমকি প্রদান করে। আমার পরিবার মনে করে যে, এই হত্যাকান্ডের ব্যপারে ফজলে করিমের যোগসুত্রতা রয়েছে। আমরা আমাদের জীবনশঙ্খায় আছি। আমি কুষ্টিয়া’র সুযোগ্য পুলিশ সুপার মহাদয় এর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, আমারা যেন নিরপত্তার সকল বিধি ব্যববস্থা পায়।