রবিবার ● ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » সকল বিভাগ » হিন্দু নারী সেজে চুরি করতে গিয়ে ২ যুবতি ধরাশায়ী
হিন্দু নারী সেজে চুরি করতে গিয়ে ২ যুবতি ধরাশায়ী
উত্তম কুমার পাল হিমেল,নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :: নবীগঞ্জ বাজার কেন্দ্রীয় গোবিন্দ জিউড় আখড়ায় প্রাঙ্গনে ১১ ফেব্রুয়ারী সৎসঙ্গের আয়োজনে অনুকূল চন্দ্রের ১৩৫ তম জন্মোৎসবের চলছিল। সবাই যখন উৎসবের আমেজে মগ্ন তখন হিন্দু রমনী সেজে শাখা-সিঁদুর পরে মহিলার স্বর্নের চেইন চুরি করতে সেখানে ঢোকে ছমিরুন আক্তার (২৪) ও রেখা বেগম (৩০) সহ ৪ নারী। দুপুরে আনন্দবাজারে প্রসাদ খায় তারা। এ সময় এক মহিলার গলা থেকে ১ ভরি স্বর্নের চেইন ছিড়ে অপে সহযোগীর কাছে দিয়ে দেয়। এ সময় উতসব কমিটির সদস্য রিংকু রায় ও অন্যন্যারা ২ জনকে হাতেনাতে আটক করেন। এ সময় বাকী ২ জন পালিয়ে যায়। শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে নবীগঞ্জ বাজারের গোবিন্দ জিউর আখড়া প্রাঙ্গনে ঘটনা ঘটে। নবীগঞ্জ থানা পুলিশকে বিষযটি অবগত করলে এস আই বিজয় তাদেরকে আটক করেন আটককৃত ছমিরুন হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নোয়াগাো গ্রামের আব্দুর রহমান শিপনের স্ত্রী এবং রেখা নাসিরনগর উপজেলার ধরমণ্ডল গ্রামের জাকির হোসেনের স্ত্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাখা-সিঁদুর পরে চুরি করার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন। এ সময় আটপকৃত ব্যাগ থেকে নেশাজাতীয় পাইডার ও রোমাল পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে নবীগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী অসিত পাল বাদী হয়ে নবীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। উৎসব কমিটির সাধারন সম্পাদক প্রেসক্লাবের সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেল উৎসবে ২ টি চেইন ছিনতাইের ঘটনা ঘটেছে বলে জানান। নবীগঞ্জ থানার ওসি ডালিম আহমদ জানান,চেইন ছিনতাইের অভিযোগ পেয়েছি। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা আরও জানায়, শনিবার ছিল সনাতন হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের ১৩৫ তম জন্মোৎসবের উপলক্ষে অনুকূল ঠাকুরের পূজা। পৌর এলাকার গোবিন্দ জিউর আখড়া প্রাঙ্গনে এ উপলক্ষে অনেক ভক্তের সমাগম হয়। দুপুরে ধর্মীয় কীর্তন চলাকালে অনুষ্ঠান চলাকালে ছমিরুন ও রেখা সহ একাধিক সংঘবদ্ধ চোর চক্রের নারী সদস্য শাখা-সিঁদুর পরে ওই মন্দিরে গিয়ে একাধিক নারীর কাছ থেকে সোনার চেইন চুরি করেন। একপর্যায়ে ধরা পড়েন ছমিরুন ও রেখা। ধারনা করা যাচ্ছে হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্টানে এভাবে সংঘবদ্ধ চোরচক্র নারী হিন্দু সেজে বিভিন্ন জায়গায় চুরি ছিনতাই করে আসছে।
ঠাকুর অনুকুল চন্দের ১৩৫ তম জন্মোৎসবে গান গাইবেন চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ বন্যা
নবীগঞ্জ :: নবীগঞ্জ উপজেলা সৎসঙ্গের উদ্যোগে যুগপুরুষোত্তম পরম প্রেমময় শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের ১৩৫ তম জন্মোৎসব ১০ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বিকালে টিত্রাংকন প্রতিযোগীতার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। ৩ টি বিভাগে ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থী এতে অংশ গ্রহন করে। সৎসঙ্গ বাংলাদেশ নবীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি মৃনাল কান্তি দাশ বাদলের সভাপতিত্বে এবং সাধারন সস্পাদক ও নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি উত্তম কুমার পাল হিমেলের পরিচালনায় এতে উপস্থিত ছিলেন এসপি আর নিরঞ্জন চন্দ নেপাল,এসপিআর গুনসিন্ধু চক্রবর্ত্তী,তাপস বনিক,শিক্ষক নিখিল চন্দ্র সুত্রধর,শিক্ষক সুব্রত দাশ,শিক্ষক সুবিনয় পুরকায়স্থ, রতিশ দাশ, রশময় শীল,নারায়ন সরকার,মৃনাল কান্তি রায় মিনু, শংকর গোপ,সজল চন্দ্র দেব, নিতেশ দাশ,প্রদীপ দাশ,শংকর শীল,আনন্দ নিকেতনের সভাপতি দীপঙ্খর ভট্টাচার্য দেবুল,শৈলেশ দাশ, গোপেন শীল, দিপন দাশ,হৃদয় শীল সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। অনুষ্টানে আজ ১১ ফেব্রুয়ারী শনিবার দিনব্যাপী অনুষ্টানমালার মধ্যে রয়েছে সকাল ৯ টায় মঙ্গল শোভাযাত্রা,১০ টায় গরীব দুঃস্থদের মাঝে বস্ত্র বিতরন,১২ টায় চট্টগ্রামের লীলা কীর্তনীয়া মৃনাল কান্তি দাশের পরিবেশনায় ঠাকুরের ভাবাদর্শে লীলা কীর্তন,বিকাল ৪ টায় মানবকল্যানে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকুল চন্দ্রের বাণী,জীবন দর্শন ও আচার্য্যবাদ আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক থাকবেন কুলাউড়ার ড. রজত কান্তি ভট্টাচার্য্য,সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টানে সংগীত পরিবেশন করবেন চ্যানেল আই সেরাকণ্ঠ শিল্পী বন্যা তালুকদার ও চ্যানেল এস শিল্পী বিন্দু সুত্রধর।
নবীগঞ্জে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানে নানা অনিয়মের অভিযোগ
উত্তম কুমার পাল হিমেল :: নবীগঞ্জ উপজেলার ১৩নং পানিউমদা ইউনিয়নে অবস্থিত ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানে লম্বা সময় ধরে ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজার না থাকা, ম্যান্টেনেইন্স এর অভাবে কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাওয়া, সি.সি মামলার সরকারি পাওনা, স্টাফদের মোটা অংকের বেতন বকেয়া থাকা, চা শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বাবদ মোটা অংকের টাকা বকেয়া রাখা, প্রায় ৮ কোটিরও বেশি টাকা ব্যাংক ঋণ, মোটা অংকের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রাখাসহ নানা অনিয়ম ও চা বাগান ব্যবস্থাপনা নির্দেশিকা অনুযায়ী সঠিকভাবে বাগান পরিচালনা না করায় মালিকপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। চা-বাগান কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়মের কারনে প্রায়ই চা-শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, কাজ বর্জনসহ নানান কর্মসূচী গ্রহণ করে থাকে তারা। ৯ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার আবারও তারা বকেয়া বেতন পাওয়াসহ বিভিন্ন দাবীতে আন্দোলনে নামেন। খবর পেয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহারীয়ার ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহীন দেলোয়ার বাগানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলনরত শ্রমিকদের শান্ত করেন।
ইমাম চা বাগানের সভাপতি রাম ভজন রবি দাস জানান, ৪ সপ্তাহ ধরে ইমাম ও বাওয়ানী চা বাগানের প্রায় ৬ শত শ্রমিক তাদের মজুরি পাননি এবং বকেয়া এরিয়া বোনাসের প্রায় ২৫-৩০ লক্ষ টাকা পাচ্ছে না। এ বিষয়ে বাগানের মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলেও সুরাহা হয়নি। বাধ্য হয়ে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। মজুরি না পেলে আবারও মহাসড়ক অবরোধসহ কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী দিয়েছেন তারা।
অন্যান্য শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন ৪ সপ্তাহ ধরে আমাদের মজুরি দেওয়া হচ্ছেনা এবং পূর্বের পাওনা বকেয়া টাকা দিতেও মালিক পক্ষ টালবাহানা করছে। বেতন না পেয়ে শ্রমিকরা না খেয়ে দিনাতিপাত করতেন। ধুকে ধুকে মরতে হচ্ছে।
ইমাম চা বাগানের দায়িত্বে থাকা টিলা বাবু শিব শংকর বলেন, আড়াই বছর যাবত ম্যানেজার নেই। সবকিছু হেড অফিস নিয়ন্ত্রণ করছে। আমাদের কিছু করার নেই। প্রায় ৪ মাস যাবত নিজেও বেতন পাচ্ছি না। খুবই অসহায় অবস্থায় আছি এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। প্রধান কার্যালয় থেকে ৩ সপ্তাহ ধরে কোনো টাকা দেওয়া হচ্ছে না। টাকা না পেলে আমরা কোথা থেকে দেবো। তাই টাকা না পাওয়ায় শ্রমিকরা আন্দোলন করছে এবং গত সোমবার থেকে তারা কাজ করছে না।
বাওয়ানী চা বাগানের দায়িত্বে থাকা টিলা ক্লার্ক শ্যাম নারায়ণ ভর এর মোবাইল নাম্বারে বার বার ফোন দিলে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- ইমাম ও বাউয়ানি পৃথক দুটি চা বাগান হলেও উভয় বাগানের একই মালিক। ২০২১ সালের মার্চ মাস থেকে বাগান ম্যানেজারের পদটি শূণ্য রয়েছে এবং সহকারী ম্যানেজারের পদটিও প্রায় ৭/৮ বছর যাবৎ শুন্য রয়েছে। উপযুক্ত মেন্টেনেইন্স এর অভাবে কারখানার যন্ত্রপাতি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
গেল বছরের নভেম্বর মাস থেকে চলতি বছরের জানুয়ারী পর্যন্ত বাগান স্টাফদের প্রায় ৪ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তাছাড়া ২০১৯-২০ইং সনে স্টাফদের বেতন বাবদ প্রায় ২৩ লক্ষ টাকা, ২০২২ইং সনে স্টাফদের প্রায় ৬ লক্ষ টাকা বোনাস এবং প্রভিডেন্ড ফান্ড এর প্রায় ৫২ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে।
গত ৩ সপ্তাহ ধরে শ্রমিকরা মজুরি না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছে, ৩ সপ্তাহে শ্রমিকদের মজুরী ও রেশন বাবদ প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বকেয়া রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে- বাগান কর্তৃপক্ষের প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ রয়েছে এবং মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকায় কয়েদিন পূর্বে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ প্রায় ৮০ লক্ষ টাকা বকেয়া থাকায় এর বিপরীতে একটি মামলা চলমান রয়েছে।
চা বাগান কর্তৃপক্ষের নানা অনিয়ম ও সঠিকভাবে বাগান পরিচালনা না করায় মালিকপক্ষের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সচেতন মহল মনে করছেন- দীর্ঘদিন সময় ধরে ম্যানেজার ও সহকারী ম্যানেজার না থাকা, সরকারি পাওনা, স্টাফদের বেতন বকেয়া থাকা, চা শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বকেয়া রাখা, প্রায় ৮ কোটিরও বেশি টাকা ব্যাংক ঋণ, মোটা অংকের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল রাখাসহ সর্বক্ষেত্রে বাগান পরিচালনায় বাগান মালিকদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। তারা মনে করেন- এভাবে চলতে থাকলে চা শিল্পের বড় ধরণের ক্ষতি এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতির সম্ভাবনা রয়েছে। বাগানের এসব অনিয়ম দূর করতে এই মালিকপক্ষের সাথে লিজ বাতিল করা প্রয়োজন বলেও মনে করছেন তারা।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান শাহারীয়ার বলেন- আমাদের পক্ষ থেকে বাগান কর্তৃপক্ষের সাথে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তারা শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও রেশন ভাতা ঠিকমতো দিচ্ছে না। বর্তমান মালিকের নামে লীজকৃত বাগান বাতিলের জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে প্রতিবেদন প্রেরণ করবো।