রবিবার ● ৩ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » খুলনা বিভাগ » ঝিনাইদহের ঐহিত্যবাহী ঢোল সমুদ্র দীঘি
ঝিনাইদহের ঐহিত্যবাহী ঢোল সমুদ্র দীঘি
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: (৩ এপ্রিল ২০১৬ : বাংলাদেশ সময় সকাল ১১.০০মিঃ) কিভাবে যাওয়া যায়: ঝিনাইদহ শহরের কাছে অবস্থিত ৷ এটি ভ্যান রিক্সা, ইজিবাইক যোগে এই বিখাত ঢোল সমুদ্র দীঘি যাওয়া যায় ৷ (শহর থেকে ৪ কি:মি: পশ্চিমে অবস্থিত) ঝিনাইদহে রাজা মুকুট রায় নামে এক প্রতাপশালী জমিদার ছিলেন ৷ রাজা মুকুট রায়ের অনেক সৈন্য সামন্ত ছিল ৷ কথিত আছে তিনি ১৬ হল্কা হাতি, ২০ হল্কা অশ্ব ও ২,২০০ কোড়দার না নিয়ে বের হতেন না ৷ খাঁন জাহান আলী (রাঃ) এর মত তিনিও জলাশয় প্রতিষ্ঠায় যত্নবান ছিলেন ৷ রাস্তা নির্মাণ ও জলাশয় খনন করতে করতে তিনি অগ্রসর হতেন ৷ ঝিনাইদহে তাঁর এমনি একটি অমর কীর্তি ঐতিহ্যবাহী পাগলা কানাই ইউনিয়নের ঢোল সমুদ্র দীঘি ৷ প্রায় ৫২ বিঘা জমির উপর অবস্থিত এ দীঘি ঝিনাইদহের সর্ববৃহত্ দীঘি ৷ দীঘিটি শতাব্দী পরিক্রমায় পানীয় জলের অফুরন্ত আধার হিসেবে কাজ করেছে এবং একজন পরাক্রমশালী রাজার রাজকীয় স্থাপনা সমূহের একটি স্মৃতি হিসেবে আজও টিকে আছে ৷
ঝিনাইদহ শহরের পূর্বে বিজয়পুর ছিল রাজা মুকুট রায়ের রাজধানী ৷ বাড়ীবাথানে রাজার প্রকান্ড গোশালা ছিল ৷ বহু সংখ্যক গাভী ছিল বলে লোকে তাকে ৷ বৃন্দাবনের নন্দ মহারাজা বলত ৷ বেড়বাড়ীতে রাজার উদ্যান ছিল ৷ রাজার কোড়াদার সৈন্যরা যেখানে বসবাস করত সে স্থানের নাম কোড়াপাড়া হয়েছে ৷ এ সমস্ত স্থান এখনও বর্তমান ৷ রাজা মুকুট রায়ের রাজবাটির কিছুই অবশিষ্ট নেই ৷ তবে ঢোল সমুদ্র দীঘির দক্ষিণে ক্ষয়ে যাওয়া ইটের স্তুপে কোন ঐতিহাসিক নিদর্শন লুক্কায়িত থাকতে পারে বলে পুরাতাত্তি্বকেরা মনে করেন ৷ ঢোল সমুদ্র দীঘিটি ঝিনাইদহের একটি আকর্ষণীয় বিনোদন স্থান ৷ ঢোল সমুদ্র দীঘি খননের পেছনে একটি লোকশ্রততি আছে-রাজা মুকুট রায়ের রাজত্বকালে একবার জলকষ্ট দেখা দেয় ৷ বিল, বাওড়, নদী দীঘি- কোথাও জল ছিল না ৷ অনন্যোপায় হয়ে রাজা দীঘি খননের সিদ্ধান্ত নেন ৷ অগণিত লোকের দিন রাত পরিশ্রমে দীঘি গভীর হতে গভীরতর এবং চতুর্দিকে প্রশস্ত হতে লাগল ৷ কিস্তু পুকুরে জল উঠল না ৷ হতাশ রাজা একদিন স্বপ্ন দেখলেন যে, রাণী যদি পুকুরে নেমে পূজা দেন, তবে পুকুরে জল উঠবে ৷ এ কথা জেনে প্রজাহিতৈষী রাণী পূজার নৈবেদ্য নিয়ে পুকুরে নামলেন ৷ রাণী পুকুরের তলদেশে উপস্থিত হয়ে ইষ্টদেবতাকে নিবেদন করলেন পূজার অর্ঘ্য ৷ জল ওঠা শুরু হলো ৷ প্রার্থনা পূর্ণ হওয়ায় রাণী উপরে উঠতে শুরু করলেন ৷ সহসা প্রবলবেগে জলরাশি উথি্থত হল ৷ জল দেখে উদ্বেলিত পাড়ের সহস্র প্রজার উত্সব-আনন্দ আর বাদ্য-বাজনার মধ্যে অলক্ষ্যে রাণী অথৈ জলরাশির গভীরে তলিয়ে গেলেন ৷ গভীর শোকে শোকাভিভূত প্রজাগণ রাজাকে রাজপুরীতে যেয়ে এই দুঃসংবাদ জানালেন ৷ সেই স্মৃতি স্মরণে আজও লোকজন এ দীঘিকে ঢোল সমুদ্র দীঘি বলে জানে ৷ রাজা মুকুট রায় বাড়ীবাথানের যুদ্ধে নবাবের ও পাঠান সৈন্যের মিলিত শক্তির কাছে পরাজিত হন ৷ নবাব সৈন্যরা রাজা মুকুট রায়কে বন্দী করে রাজধানীতে নিয়ে যায় ৷ রাজার পরিচয় জেনে নবাব তাঁকে মুক্তি দেন ৷ কিন্তু রাজার পরিবারের সদস্যগণ রাজার অনিবার্য পরিণতি, মৃত্যু ভেবে সবাই আত্মহত্যা করেন ৷ তাঁর কন্যার আত্মহত্যার স্থানকে কন্যাদহদু’রাণীর আত্মহত্যার স্থানকে দুসতীনের, রাজ জ্যোতিষীর আত্মহত্যার স্থানকে দৈবজ্ঞদহ নামে অভিহিত করা হয়েছে, যা আজও এ নামেই পরিচিত ৷
অবস্থান: পাগলাকানাই, ঝিনাইদহ ( ঝিনাইদহ জেলা সদর হতে দুরত্ব ৫ কি.মি)।