বৃহস্পতিবার ● ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম বিভাগ » জীবদ্দশায় রাষ্ট্রিয় ভাবে স্বীকৃতি চায় চিত্রশিল্পী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা
জীবদ্দশায় রাষ্ট্রিয় ভাবে স্বীকৃতি চায় চিত্রশিল্পী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা
নির্মল বড়ুয়া মিলন :: র্দীঘ ৫৪ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ জাতীয় পর্যায়ে চারুকলা শিল্পে অবদান রাখার পরও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না পাওয়াতে ১৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী ও পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি রক্ষায় মিনি যাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা চিত্রশিল্পী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা।
লিখিত বক্তব্যের শুরুতে রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, অত্যান্ত ভারক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি। গুণী এই চিত্রশিল্পী বলেন, তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামসহ জাতীয় পর্যায়ে দীর্ঘ ৫৪ বছর চারুকলায় অবদান রাখার পরও একুশে পদক ২০২৩ এ স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ এবং সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নিকট পার্বত্য চট্টগ্রামের চারুকলা শিল্পের একমাত্র প্রতিষ্ঠান রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠানকে এবং শিল্পকলা, সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, চারুকলা ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ তাকে একুশে পদক প্রদানের জন্য আবেদনের কথা প্রকাশ করেন।
তিনি চারুকলা শিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য ১৯৬৬ সালে চট্টগ্রামের ডেপুটি কমিশনার, ১৯৭০ সালে তৎকালিন রাঙামাটির ডেপুটি কমিশনার এইচটি ইমাম, ১৯৭৭ সালে রাঙামাটি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কর্তৃক, ১৯৭৯ সালে চাকমা সার্কেল চীফ কর্তৃক, ১৯৮১ সালে বঙ্গ ভবনে মহামান্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক কৃতি যুব সংবর্ধনা, ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কার সম্মাননা। এছাড়া রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা প্রশাসক কর্তৃক সম্মাননা। বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ কর্তৃক আজীবন সম্মাননা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মানীত মন্ত্রী কর্তৃক সম্মাননা, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান কর্তৃক সম্মাননা, চারুকলা বিষয়ে পেশাগত ৫০ বছর পূর্তিতে সিএইচটি মিডিয়া কর্তৃক সম্মাননা, রেগা প্রকাশনা পরিষদ কর্তৃক সম্মাননাসহ অসংখ্য সম্মাননা এবং পুরস্কার পাওয়ার তথ্য জানান। ১৯৭৯ সালে নিজ উদ্যোগে রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী ও পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের কৃষ্টি এবং সংস্কৃতি রক্ষায় মিনি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা, সরকারি কোন অনুদান ব্যতিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতন ভাতা প্রদানের মাধ্যমে রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী সুনামের সহিত পরিচালনার কথা বলেন। এছাড়া রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীর ছাত্র-ছাত্রীরা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের সুনাম বয়ে আনার কথা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান।
সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি তার জীবদ্দশায় জাতীয় পর্যায়ে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে দীর্ঘ ৫৪ বছর চারুকলায় অবদান রাখার রাষ্ট্রিয় ভাবে যথাযথ স্বীকৃতি পাওয়ার আখাংকা ব্যক্ত করেন।
১৪ এপ্রিল-২০০৪ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলার তৎকালিন জেলা প্রশাসক ড. জাফর আহমেদ খান সম্পাদিত রাঙামাটি বৈচিত্র্যের ঐকতান বইয়ের ২০৪ পাতায় চিত্রকলা শিরোনামে লিখেছেন “চিত্রশিল্পী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা রাঙামাটি চারুকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করে শিশুদের ছবি আঁকা শেখাচ্ছেন বহুদিন ধরে। তাঁর ছাত্রী কনকচাঁপা চাকমা এখন আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত শিল্পী”।
একুশে পদক ২০২৩ প্রদান তালিকার ১১ নং ক্রমিকে শিল্পকলা (চিত্রকলা) বিভাগে চিত্রশিল্পী রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যার ছাত্রী কনকচাঁপা চাকমাকে একুশে পদক ২০২৩ প্রদান করা হবে। অথচ কনকচাঁপা চাকমার শিক্ষক রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যার নাম একুশে পদক তালিকায় নেই।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভাষা আন্দোলন, শিল্পকলা (সংগীত, নৃত্য, অভিনয়, চারুকলাসহ সকল ক্ষেত্র), মুক্তিযুদ্ধ, সাংবাদিকতা, গবেষণা, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি, সমাজসেবা, রাজনীতি, ভাষা ও সাহিত্য বিশেষ অবদানের জন্য ব্যক্তিত্ব ও প্রতিষ্ঠানকে জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে ১৯৭৬ সাল থেকে একুশে পদক প্রদান করা হয়।
রতিকান্ত তঞ্চঙ্গ্যা’র সাংবাদিক সম্মেলনে রাঙামাটি চারুকলা একাডেমীর ছাত্রী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত ইমু চাকমা ও রাঙামাটি জেলায় কর্মরত অনলাইন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিলেন।