বুধবার ● ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
প্রথম পাতা » অপরাধ » চুরির অপবাদ দিয়ে নলছিটিতে পিতাপুত্রকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন
চুরির অপবাদ দিয়ে নলছিটিতে পিতাপুত্রকে শিকলে বেঁধে নির্যাতন
গাজী মো.গিয়াস উদ্দিন বশির, ঝালকাঠি :: ঝালকাঠির নলছিটিতে সুপারি চুরির অভিযোগে ১১ বছরের এক শিশুকে শিকল দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে ও মাথার চুল কেটে মধ্যযুগীয় নির্যাতন করেছে। একই সাথে শিশুটির পিতাকেও ধরে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার রাত ১১টায় বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে তাদের মারধরের পর ১১ ঘন্টা শিকলে বেঁধে রেখে সোমবার ২০ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় মুচলেকা রেখে ছেড়ে দেয়া। উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের তেতুলবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, লতিফ খানের বাড়ির আঙিনায় রাখা সুপারির বস্তা থেকে রোববার রাতে দুই কুডি (৪২০ টি) সুপারি চুরি হয়। এতে প্রতিবেশী শিশু ছাব্বির ও তার বাবা মো. বাবুল হাওলাদারকে সন্দেহ করে ঘর থেকে ধরে লতিফ খানের বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর উঠানে আমড়া গাছের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে দুজনের উপর পাশবিক নির্যাতন চালায়।
রাত ১২টার দিকে স্থানীয় কসাই আব্বাস হাওলাদার শিশুর মাথার চুল কেটে দেয়। সারারাত গাছের সঙ্গে তাদেরকে বেঁধে রাখলে সোমবার সকালে এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়। পরে ঘটনা আড়াঁল করতে সকাল ১০টার দিকে লতিফ খান সাদা কাগজে মুচলেকা রেখে বাবুল হাওলাদার ও তার শিশুপুত্রকে ছেড়ে দেয় ।
নির্যাতনের শিকার বাবুল হাওলাদার জানান, মিথ্যা অভিযোগে লতিফ খান ও তার লোকজন আমাদের ধরে নিয়ে সারারাত খোলা আকাশের নিচে শিকল দিয়ে বেধে নির্যাতন করে। সারারাত শীতে অনেক কষ্ট পেয়েছি পেলেও সকালে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আমাদের ছেড়ে দেয়।
নির্যাতিত শিশুর মা শিউলি বেগম বলেন, আমার ছেলে ও স্বামীকে রাতে ধরে নিয়ে গেলে আমিও ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। তখন লতিফ খান আমাকে একটি চড় মারে। এরপর আমার স্বামী-ছেলেকে লাঠি দিয়ে নির্মম ভাবে পিটালে সারা শরীর কালো হয়ে ফুলে ওঠে। এখোন একটি প্রভাবশালী মহল ঘটনাটি কাউকে না বলতে আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে।
তবে লতিফ খান নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ছাব্বির সুপারি চুরি করায় তাকে বেঁধে রাখা হয়। ছেলে চুরি করলেও তাকে শাসন না করায় বাবাকে ডেকে আনা হয়েছে। তাদের কোন মারধর করা হয়নি।
এ ব্যাপারে নলছিটি থানার ওসি মো. আতাউর রহমান জানান, ঘটনাটি আমি এখনো জানি না। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঝালকাঠিতে মাদ্রাসা নিন্মার্ণকে কেন্দ্র করে কমিটির উপর সন্ত্রাসী হামলা
ঝালকাঠি :: ঝালকাঠি সদর উপজেলার বিনয়কাঠি ৮নং ওয়ার্ডে নাক্তা আজিজিয়া নূরানী মাদ্রাসা নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মো.রুস্তুম হাওলাদার ও তার দুই ছেলে রাসেল হাওলাদার ও রাজু হাওলাদারের নেতৃত্বে হামলা, ভাঙ্গচুর ও একজন মাদ্রাসা কমিটির তৌহিদি সদস্য মো.খোকন হাওলাদার(৪৫) গুরুত্বর রক্তাক্ত জখম হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন এলাকার ইসলাম প্রিয় মুসুল্লিসহ মাদ্রাসার কমিটির সদস্যরা।
তারা বলেন, আমরা এই নৃশংস সন্ত্রাসী হামলার সুষ্ঠু বিচার চাই। যারা পরিকল্পিত ও ষড়যন্ত্র মূলক নাক্তার শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করতে চায় তাদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই।
মুসুল্লিরা আরো বলেন, আজিজিয়া মাদ্রাসায় হামলার ঘটনা শয্য করা হবে না। দেশীয়ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা চালিয়ে মাদ্রাসা তৈরির ইট,বালু ও সিমেন্ট ফেলে দিয়ে,মাদ্রাসার কমিটির ৫নং সদস্য খোকনকে রক্তাক্ত করে চরম দৃষ্টতা আর দুঃসাহস দেখানো হয়েছে।
গ্রুত্বর আহত খোকন হাওলাদার বলেন, ঘটনাটি মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে মাদরাসা নির্মাণকে কেন্দ্র করে স্থানীয় রুস্তুম হাওলাদারের নেতৃত্বে তার দুই ছেলেসহ ১০/১২ জনের একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ অতর্কিত হামলা ও ভাঙ্গচুর করে। এসময় আমি প্রতিবাদ করলে তারা আমার উপর খিপ্ত হয়ে রাসেলের হাতে থাকা রামদাও দিয়ে আমার মাথার উপর কোপ দেয় ও রাজুসহ অন্যান্যরা লাথি ঘুসি মারতে থাকলে আমি মাটিতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। আমার মৃত্যু নিশ্চিত করে তারা চলে যায়। স্থানীয়রা আমাকে উদ্ধার করে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আমার অবস্থার অবনতি হলে দ্রুত বরিশাল শেবাচিমে রেফার করেন। বর্তমানে আমি বরিশাল শেরে-ই বাংলা মেডিকেল হাসপাতালে আছি। মাথায় ৪টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। ডাক্তার সিটি স্ক্যান করার জন্য দিয়েছেন। মাদরাসা নির্মাণে বাধা দিতে এসে এ হামলার ঘটনা ঘটায় তারা। আমি উক্ত ঘটনার তীব্রনিন্ধা জানাই ও দোষিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য প্রশাসনের প্রধান পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ ব্যাপারে অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাদের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মো.নাসির উদ্দিন সরকার বলেন, আমরা এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।