মঙ্গলবার ● ৪ এপ্রিল ২০২৩
প্রথম পাতা » চট্টগ্রাম » মাছে প্রজনন মৌসুমে হালদার মুখে বালুবাহী যান্ত্রিক নৌযানের উৎপাত
মাছে প্রজনন মৌসুমে হালদার মুখে বালুবাহী যান্ত্রিক নৌযানের উৎপাত
আমির হামজা, রাউজান প্রতিনিধি :: বঙ্গবন্ধু মৎস্য হোরটেজ প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর দুই পাড়ে এখন মৎস্যজীবিদের মৌসুমী ডিম সংগ্রহের চলছে প্রস্তুতি। নদীতে মা মাছের ডিম দেয়ার এমন পরিবেশের মধ্যেও চলমান আছে হালদার মুখে বালুবাহী বড় বড় যান্ত্রিক নৌযানের উৎপাত।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায় কর্ণফুলী ও হালদার সংযোগস্থলের (হালদা-কর্ণফুলীর চড়) চর থেকে বালু উঠিয়ে ব্যবসায়ীরা বড় বড় যান্ত্রিক নৌযানে হালদার মুখ দিয়ে বালু পরিবহন করছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে এই নদীর জীব বৈচিত্র নিয়ে গবেষনা করেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এই সময়ে হালদার সাথে সংযোগ আছে এমন মিঠা পানির নদী ও জলাশয় থেকে ডিম সম্ভবা মা মাছ এই হালদায় আসে নিরাপদে ডিম প্রসব করতে। মাছের প্রজনন মৌসুমে হালদার মুখে যান্ত্রিক নৌযানের উৎপাত সত্যিই উদ্বেগজনক। নদী পাড়ের মৎস্যজীরা বলেছেন নদীর মুখে প্রতিনিয়ত যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের কারণেই নদীর ডলফিন ও মা মাছ মারা যাচ্ছে।
নদী বিশেষজ্ঞদের মতে পার্ব্বত্যঞ্চল লুসাই পাহাড় সৃষ্ট কর্ণফুলী নদীটি কাপ্তাই, রাঙ্গুনিয়া হয়ে রাউজান,বোয়ালখালী দুটি উপজেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে এসে কালুরঘাট হয়ে চলে গেছে বন্দরের দিকে। অপর দিকে কালুরঘাট-মোহরা এলাকায় কর্ণফুলীর সাথে যুক্ত হয়ে হালদা নদীর প্রবাহ উত্তর চট্টগ্রামের রাউজান, হাটহাজারীর বুক চিরে ফটিকছড়ির দিকে। হালদার মুখে যান্ত্রিক নৌযানের উৎপাত ও বালু উৎস সম্পর্কে বিভিন্ন সূত্র থেকে খবর নিতে গিয়ে জানা যায় দুটি নদীর সংযোগস্থলে বিশাল বালু মহল খন্ড খন্ড করে প্রতি বছর সরকারি ভাবে ইজারা দিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট ইজারাদাগণ নদীতে শক্তিশালী ড্রেজার ফেলে রাত দিন বালু কেটে বড় বড় যান্ত্রিক নৌযানে বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করছে। বালুর বিশাল একটি অংশ হালদার মুখ হয়ে নিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় কালুরঘাট ও মোহরার বিভিন্ন পয়ন্টে।
পেশাগত ভাবে অভিজ্ঞ নদী পাড়ের মৎস্যজীবিদের অভিযোগ হালদা নদীতে এই পর্যন্ত যত ডলফিন ও মা মাছের মৃত্যু হচ্ছে তৎমধ্যে বেশিরভাগ জলজ প্রাণির মৃত্যু নদীর মুখে চলাচলকারী নৌযানের ডুবন্ত পাখার আঘাতে। তারা মনে করেন পাখায় আঘাত পাওয়ার পর আহত জলজ প্রাণি স্বাভাবিক ভাবে বিরচণ শক্তি হারিয়ে ফেলার পর দুর্বল হয়ে মারা যায়। আঘাতপ্রাপ্ত কিছু কিছু ডলফিন ও মা মাছ বিচরণ শক্তি হারিয়ে নদীর মাছ চোরদের পেতে রাখা জালে আটকা পড়ে। জেলে সম্প্রদায়ের এমন যুক্তি সমর্থন করেন হালদা গবেষক চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শফিকুল ইসলাম। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন মেজর কার্পজাতীয় মাছের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা একদিকে জলবায়ু পরিবর্তণের অশুভ প্রভাবে আক্রান্ত, অন্যদিকে দুষণ, নদীর যান্ত্রিক দানব, মৎস্য সম্পদ দুস্যুতা মত মানব সৃষ্ট দুর্যোগে আক্রান্ত। তিনি মনে করেন হালদার মুখে নৌযানের উৎপাত দ্রুত বন্ধ করার পাশাপাশি নদীর দুষণ উৎস গুলেঅ চিহ্নীত করে দায়িদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নদীতে রাতে জাল নিয়ে তৎপর দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও প্রশাসনিক অভিযান চলমান রাখতে হবে। হালদা পাড়ের জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে জনসচেতনতা বাড়াতে পারলে রূপালী সম্পদের খনি খ্যাত আমাদের হালদার ঐতিহ্য ধরে রাখা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণি বিদ্যা বিভাগের প্রধান, হালদা রিচার্জ সেন্টারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মঞ্জুরুল কিবরিয়া বলেন চলমান মৎস্য প্রজনন মৌসুমে হালদা নদীর মুখে যান্ত্রিক নৌযান চলাচলের ঘটনা সত্যিই উদ্বেগজনক। প্রতিবছর নিরাপদ প্রজননে বিভিন্ন নদী থেকে মা মাছ হালদায় প্রবেশ করে এই হালদায়। মাছের নিরাপত্তায় নদীর বিভিন্নস্থানে সিসি ক্যামরা বসানো আছে। এসবের মধ্যে স্থানীয় মৎস্যজীবিরা প্রতি প্রজনন মৌসুমে ডিম সংগ্রহ উৎসব করে আসছে। এর মধ্যে নদীর মুখে নৌযানের উৎপাতের কথা শুনে উৎকন্ঠা প্রকাশ করে এই বিশেষজ্ঞ বলেন নদীর প্রবেশমুখ নৌযানমুক্ত রাখতে নৌ পুলিশকে জোড়ালো ভুমিকা রাখা দরকার।
দুটি নদীর সাথে থাকা বালু মহাল ইজারা দেয়ার অশুভ প্রভাব হালদায় পড়ছে কিনা জানতে চাইলে ড. কিবরিয়া বলেন বালু মহল ইজারা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে তেমন কিছু জানি না, এই বিষয়টি জেনে ক্ষতিকারক হলে বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদাকে রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে বালু মহালের ইজারা বাতিলের জোড় দাবি জানানো হবে।
রাউজান থানা পুলিশের বাজার মনিটরিং
রাউজান :: চট্টগ্রামের রাউজানের বড় বানিজ্যিক কেন্দ্র নোয়াপাড়া পথেরহাটে বাজার মনিটরিংয়ে নেমেছে রাউজান থানা পুলিশ। পবিত্র রমজানের ১১ তম দিবস সোমবার এই অভিযান চালানো হয় নোয়াপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবুল মিয়াকে সাথে নিয়ে। অভিযানে নেতৃত্বদানকারী সহকারি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হুমায়ূন বলেছেন বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার সতর্ক বার্তা দিতেই এই অভিযান। চেয়ারম্যান বাবুল মিয়া বলেছেন যারা রমজানের দিনে মানুষকে জিম্মী করে অতি মোনাফা করবে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। অভিযানের সময় কম দামে তরমুজ কিনে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগে এক ব্যবসায়ীর মওজুত করা প্রতিটি তরমুজ ষাট টাকা করে তৎক্ষনিক বিক্রির নিদেশ দেন।
এসময় অভিযানে ছিলেন রাউজান থানার ওসি আবদুল্লাহ আল হারুন, থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই অজয় দেব শীল, এসআই জয়নাল, মেম্বার নুরুল ইসলাম, ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জিয়াউর রহমান প্রমুখ।