বুধবার ● ৬ এপ্রিল ২০১৬
প্রথম পাতা » অপরাধ » ঝিনাইদহে গ্রাম্য মাতুব্বরদের অদ্ভুত আদেশ
ঝিনাইদহে গ্রাম্য মাতুব্বরদের অদ্ভুত আদেশ
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :: “গাছ ফসলের ক্ষেত নষ্ট করে, তাই কেটে সাবাড় করে দিতে হবে”৷ ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামে মাতুবররদের এমন আদেশ পেয়ে গ্রামের মানুষ বৃক্ষ নিধনের উত্সবে মেতেছে৷ গ্রামের মাতৃব্বররা মিটিং করে তাদের গ্রামের মাঠ থেকে সকল প্রকার গাছ কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন৷ মাতুব্বরদের এই নির্দেশে গাছের মালিকরা মাঠে থাকা গাছগুলো কেটে সাবাড় করে দিচ্ছেন৷ গত ২০ দিনে লক্ষিপুর গ্রামে মাঠের তিন হাজারের বেশি নানা জাতের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে৷ এখনও চলছে গাছ কাটার কাজ৷ আগামী এক সপ্তার মধ্যে মাঠটি বৃক্ষশুন্য করার ফরমার জারী করেছে মাতুব্বররা৷ গ্রামবাসির অভিযোগ ফসল ক্ষতির অজুহাতে গোটা মাঠের গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন মাতুব্বররা৷ ফলে গাছগুলো কেটে ফেলার কারণে চরের মাঠ বলে পরিচিত এই মাঠে আর কোনো সবুজ বৃক্ষ থাকবে না৷ থাকবে না গাছের শীতল ছায়া৷ আর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, একটি গ্রামের মাঠ থেকে এভাবে সব গাছ কেটে ফেলতে কেউ নির্দেশ দিতে পারেন না৷ এটা পরিবেশের জন্য মারাত্বক ক্ষতি৷ সরেজমিনে দেখা যায়, ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার লক্ষিপুর গ্রামের বিশাল মাঠে গাছ কাটার কাজ চলছে৷ গ্রামের মানুষগুলো শুধু বলছে মাতুব্বরদের নির্দেশে তারা গাছ কেটে নিচ্ছেন৷ এর বেশি কিছু তারা বলতে নারাজ৷ গ্রামবাসি জানান, গত ১৭ মার্চ মাতুব্বররা লক্ষিপুর বাজারে গ্রামের লোকজন নিয়ে মিটিং করেন৷ মজিবর রহমান নামের এক মাতুব্বর সভায় সভাপতিত্ব করেন৷ সেখানে নানা আলোচনা শেষে মাতুব্বররা গ্রামের মাঠে থাকা সকল গাছ কাটার সিদ্ধানত্ম দেন৷ সময় দেওয়া হয় আগামী ২০ দিনের মধ্যে মাঠে যার যা গাছ আছে কেটে নিতে হবে৷ এরপর শুরু হয় গাছ কাটার কাজ৷ গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি গ্রামের সভায় উপস্থিত ছিলেন৷ সেখানে মাতবররা গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এরপর কাটা হচ্ছে গাছ৷ তিনি বলেন, এ পর্যনত্ম তিন হাজারের অধিক গাছ কাটা হয়েছে৷ তিনি জানান, সদ্যলাগানো থেকে শুরু করে ১৫ বছর বয়সী এমন সব গাছ কাটা হচ্ছে৷ ঝিনাইদহ পরিবেশ আন্দোলনের আহবায়ক মাসুদ আহম্মদ সনজু জানান, এটা খুবই অন্যায়৷ এ জাতীয় নির্দেশ মাতবররা কিভাবে দেন তা তার জানা নেই৷ তিনি বলেন, প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে বাকি গাছগুলো রক্ষা করা৷ ঝিনাইদহ জেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সাংবাদিক জাহিদুর রহমান কে জানান, একজনের গাছ অন্যজন কাটার নির্দেশ দিতে পারেন না৷ তাছাড়া গাছ কেটে এক এলাকা ফাকা করতে হবে এটা খুবই অন্যায়৷ বিষয়টি দ্রুত খোজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান৷ এ ব্যাপারে গ্রামের মাতবর মজিবর রহমান জানান, ফসলের ক্ষতির কথা চিনত্মা করে তারা এই গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছেন৷ এটা তার একার সিদ্ধান্ত নয়, গ্রামের মানুষের সিদ্ধানত্ম৷ তিনি আরো বলেন, মাঠে গাছ থাকলে ফসলের ক্ষতি হবেই৷ যে কারনে গ্রামের মানুষের অনুরোধে এই সিদ্ধানত্ম তারা দিয়েছেন৷ সেখানে গোলাম মোসত্মফা, ইউপি সদস্য আব্দুর রাজ্জাক সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন৷